STORYMIRROR

Rima Goswami

Tragedy Inspirational Thriller

3  

Rima Goswami

Tragedy Inspirational Thriller

বধূ যখন বেশ্যা পর্ব পাঁচ

বধূ যখন বেশ্যা পর্ব পাঁচ

14 mins
673

সব মেয়েরাই একটা অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে এই পৃথিবীতে আসে ! আর তা হলো একটি ছেলের সাথে কিছুক্ষণ মিশবার পরই সে বুঝতে পারে ছেলেটি ভাল না খারাপ! কিন্তু উর্যার এই বিশেষ ক্ষমতা পুরুষ চেনার একটু দেরিতে হয়েছিলো বৈকি ! তাইতো ঋষিকে চিনতে পারেনি সে । যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেল তখন উর্যা মানুষ চিনতে শিখলো ।মেয়েরা যেন নিজেদের যেন তারা এই কঠিন পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখতে পারে, সেজন্যই প্রকৃতি তাদের এই বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে পাঠায়! সেটা হলো ধৈয্য আর প্রয়োজনে কালীর রূপ ধারণ করার ক্ষমতা । সেই বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে উর্যা সেদিন মেয়েকে আর নিজেকে বাঁচিয়ে ছিলো । আবার নতুন করে তাকে লড়াই শুরু করতে হবে এবার প্রতিপক্ষ রত্না মাসি ও তার নির্দয় অভিপ্রায় । মরে তো যেতেই হবে তার আগে দরকার হলে মেরে যাবে সব পাপীদের উর্যা । ওর আর মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী ছেড়ে যাবার ক্লান্তিকর অপেক্ষা! হিন্দুদের কাছে শ্মশান বন্ধুর গুরুত্ব অনেক! সেদিন প্রকৃত বন্ধুদের চেনা যায়! ওর জন্য সময় নষ্ট করে শ্মশানযাত্রী হবে কেউ ? ও যে একটা খুনি , একটা বেশ্যা ?


আচ্ছা ঋষির মতো শিক্ষিত ছেলে কেন বুঝলো না কন্যা সন্তান ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা পুত্র সন্তান । আমরা যেভাবে ওদের আগলে সামলে ভালো রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাই সারাজীবন, সেই একই ভাবে সেই কন্যা সন্তান ও মা বাপের আদরে-যত্নে ভালো রাখার দায়িত্ব নেয় । যখন বয়সের ভারে নুয়ে পরতে থাকা শরীর-মনের শক্তি হয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকে । চাপ-গ্লানিমুক্ত উচ্ছ্বল জীবনের আনন্দ এনে দেয় সে , যার নাম সন্তান । সে সন্তান কন্যাই হোক বা পুত্র । আজকে বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও যদি মানসিক ভাবধারায় একটুও পরিবর্তন না আসে, তবে তো কন্যা ভ্রূণ হত্যার পরিসংখ্যানে রদবদলের সম্ভবনা আরো ক্ষীণ হয়ে যায়। জাকগে ওসব ভেবে আর লাভ কি ? উর্যা নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে রমলার ঘরের দিকে একবার দেখতে যায় । মেয়েটার মানসিক পরিস্থিতি সত্যি খুব খারাপ ।


মার্কণ্ডেয় সকাল থেকে মা সতীর সাথে বাকবিতন্ডা করে চলেছে । সতী মার্কণ্ডেয়কে বলছে ...তুই কি সারাজীবন আমাকে একটু শান্তি দিবি না? বাপটা মরেছে দুদিন আগে আর উনি এখন কাকে না কাকে ঘরে এনে ঢোকালেন । জানিস তুই এসব মেয়েদের ঘরে ঢোকানোর ফল ? মরবি তুই আর আমাকেও নিয়ে মরবি এই বলে দিলাম । মাহির কথায় নাচা তোর বেরিয়ে যাবে দাঁড়া । মার্কণ্ডেয় আর সহ্য করতে পারে না চেঁচিয়ে ওঠে -"মা প্লীজ লীভ মি এলোন।"


সতী চায়না চিনি এবাড়িতে থাকুক আর মার্কণ্ডেয় চায় চিনিকে প্রোটেকশন দিতে । মাহি বুঝতে পারে ঝামেলাটা বাড়বে কিন্তু আপাতত কিছু করার নেই । মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে । কি আশ্চর্য না এই সমাজ নামক জায়গাটি। এই টুকু মেয়েটাকে বাড়িতে রাখতে মার্কণ্ডেয়র মায়ের কত সমস্যা অথচ এবাড়িতে গাদা গাদা কাজের লোক আছে কিছুটা অকারণে স্ট্যাটাস মেন্টেন করার জন্য । সেই কাজের লোকদের মোটা টাকা বেতন , স্টাফ কোয়ার্টার সব দিতে পারেন মহিলা কিন্তু চিনিকে রাখতে যেন খুব কষ্ট ওনার । মা ছেলের কথা গুলো কানে আসতে মনটা খারাপ হয়ে যায় মাহির , সে এসে দাঁড়ায় বারান্দায়। সেখান থেকে দেখতে পায় দূর আকাশের খানিকটা। মন খারাপ হলে সবসময় আশ্রয় খুঁজতে নেই । কখনো কখনো নিজেকেই নিজের কষ্টের কথা বলতে হয় । বারান্দা থেকে মাহি দেখে আকাশের ও মুখটা আজ গোমড়া। চিনির , উর্যার , রমলার দুঃখে যেন আকাশের ও হৃদয় ছুঁয়েছে, তাইতো সে ও আজ কাঁদতে চাইছে প্রাণ খুলে।


ফোনটা আবার বাজছে। মার্কণ্ডেয় মাহির ঘরে ঢুকে ফোনটা তোলে , মাহির মা ওর খবর নিতে ফোন করেছে । মার্কণ্ডেয় হবু শাশুড়ির সাথে ঘরের বাইরে চলে যায় কথা বলতে। মার্কণ্ডেয় জানে "মাহির মন ভালো নেই ,ও এখন কারুর সঙ্গে কথা বলার মত অবস্থায় নেই । চিনির জন্য চিন্তা ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে অনবরত ।

কথা শেষ করে ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ পরে মাহিরর কাছে এসে দাঁড়ায় মার্কণ্ডেয় ।আস্তে করে মাহির হাতটা তুলে নেয় নিজের হাতে আর বলে -"আন্টি ফোন করেছিলো মাহি । পাপা এভাবে মারা গেছে সবাই ওয়ারিদ । প্লিস মায়ের কথায় কিছু মনে করো না । আন্টির কাছে পাঞ্জাব একবার ঘুরে আসবে নাকি? তাহলে আন্টির ও হয়তো একটু ভাল লাগবে।


চিনির জন্য ভেবো না । ও আমার দায়িত্ব এখন । পাপাকে ওই স্ক্রাউন্ডেল গুলো মেরেছে আমি সিউর । আমি ওদের ছাড়বো না দেখো । চিনিকে ডাক্তার দেখে গেছেন আর ইন্জেকশন ও দিয়েছেন। চিনি ভালো হয়ে যাবে দেখো । মাহি মুখ তুলে মার্কণ্ডেয়কে দেখে । আনপ্রফেসনাল , কেয়ারলেস ছেলেটা বাবার মৃত্যুতে রাতারাতি যেন পাল্টে গেছে আমূল । মাহি বলে ,"না, আমি যাব না। এখন যেখানে আমার প্রয়োজন সেখানে থেকে আমি কেন পালিয়ে যাব বলো ? তোমার বাবা এভাবে চলে গেছে , এখন তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো এত স্বার্থপর আমি নই মার্কণ্ডেয় । আঙ্কেলের মৃত্যুর খবরটা আমার মা বাবাকে তো দেওয়া হয়েছে । ওদের কি কর্তব্য ছিলো না একবার হলেও মেয়ের হবু শশুর বাড়ীতে এসে দেখা করার ? আমাকে কোনদিন সময় দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি আমার মা ও বাবা। আমি কাজের সূত্রে এসে পড়ে ছিলাম এখানে আর তার পর তুমি এলে আমার জীবনে । আমাদের এনগেজমেন্টটা তো বিঘ্নিত হলো , বিয়েটা সুষ্ঠ ভাবে হবে তো গো ? এই- বলে মার্কণ্ডেয়র ঘাড়ে মাথা রেখে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে মাহি ।


চিনিকে রত্নার দলবল খুঁজে পায়নি , রমলাকে অত্যাচার করে কিছুই খবর মেলেনি । আজই ছিলো নেতা সাইফুল এর সাথে চিনির নথ তোরনি অনুষ্ঠান । এদিন সকালবেলায় একটা অচেনা গাড়ি বস্তি এলাকায় থামল । সকালে কেউ বাসি মুখে গামছা পড়ে কলতলাতে লাইন দিচ্ছে , কেউ আবার প্রাতঃকর্ম সেরে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ বা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজছে। জলের লাইনে আগে জল ভরা নিয়ে এ ওকে খিস্তি দিয়ে দিনের সূত্রপাত করছে। হ‍্যাঁ, এটাই যৌনপল্লীতে এদের জীবনযাপনের প্রণালী। সকাল থেকে সন্ধ্যা একে অপরকে বাক‍্যবাণে বিদ্ধস্ত করে ঘুমাতে যায় সকালে আবার শুরুর আশায়। অভাব , দারিদ্র্যতেই অভ‍্যস্ত মানুষগুলো। সন্মান ও শান্তি নিয়ে যে বাঁচা যায় সেটাই এরা ভুলে গেছে। মার্কণ্ডেয়কে মাহি পাঠিয়েছে উর্যার কাছে , গাড়ি থেকে নেমে মার্কণ্ডেয় জিজ্ঞাসা করে করে উর্যার ঝুপড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যায় । উর্যাকে ডাকতেই সে বেরিয়ে মার্কণ্ডেয়কে ঘরে ঢুকে আসতে বলে । অন্ধ ঘুপচি ঘরটায় ঢুকেই মার্কণ্ডেয়র মনে হল দমবন্ধ হয়ে যাবে। এই মহিলার সাথে ,এই ঘরে তার বাবার মতো মানুষ কি ভাবে ? চিন্তার জট কেটে যায় উর্যার ডাকে । বাবুর শ্রাদ্ধ শান্তি মিটে গেল বুঝি ? মার্কণ্ডেয় বোঝে উর্যা তার বাবার কথা বলছে । ও মাথা নেড়ে না সূচক উত্তর দেয় । তারপর বলে , বাবার শ্রাদ্ধ আমি তখনই করবো যখন তার খুনিরা ধরা পড়বে ম্যাডাম । আমি বোকাসোকা মানুষ কিন্তু আজ আপনাকে দেখে বুঝতে পারছি বাবা কেন এই ঘুপচিতে ছুটে আসতেন ? আপনি কোন অতিপাতি এই সাধারণ বাজারের মহিলাদের মতো নন । কে আপনি বলুন তো ? উর্যার চোখে চোখ রেখে কথা গুলো বলে মার্কণ্ডেয় । উর্যা অবাক হয়ে যায় , ছেলেটা কি ভিতর বাইরে সব দেখতে পারে ? অথচ মথুরা বাবু কত আফসোস করতেন যে ওনার ছেলেকে উনি মানুষ করতে পারেননি । উর্যা বলে , আপত্তি না থাকলে বসো একটু যে কথা কাউকে বলিনি তোমার বাবাকেও না সে কথা না হয় আজ তোমাকে বলি । মার্কণ্ডেয় চৌকিটাতে বসে । উর্যা বলে , আমি এক সাধারণ গৃহবধূ ছিলাম তারপর ভাগ্য আমাকে এখানে এনে ফেলে । আমি এক মেয়ে , এক স্ত্রী , এক মা থেকে বেশ্যা হয়ে যাই । বেশ্যা নামের কালো রং আমার সব সম্পর্কের রঙকে ঢেকে দেয় । আমার স্বামীকে খুন করে আমি এখানে চলে এসেছিলাম উড়িষ্যা থেকে । উপায় ছিল না যে ! ওকে না মারলে ও আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে দিত সেই রাতে মার্কণ্ডেয় ? এবার এখানে রত্না মাসির সেক্স রাকেট হাত বাড়াচ্ছে বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে গুলোর দিকে । ওই যে চিনি যাকে তুমি নিজের কাছে রেখেছো ওকে তো লোকাল নেতা সাইফুলের কাছে আজ রাতে বিক্রি করে দেবার কথা ছিলো রত্না মাসির । মেয়েটাকে খুঁজে না পেয়ে রমলা মানে চিনির মাকে কত অত্যাচার যে করছে ! তোমাকে এখানে মাহি কেন পাঠালো ? মার্কণ্ডেয় বলে , হ্যাঁ আমাকে পাঠালো কিছু টাকা আপনার হাতে দিতে । যাতে আপনি এই বস্তি ছেড়ে চলে যেতে পারেন । আপনার মেয়ের জন্য চিন্তা নেই , গুনগুনের দায়িত্ব আমার আর মাহির । আপনি কিছুদিন লুকিয়ে থাকুন কোথাও একটা । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই একটা ব্যবস্থা করবো । উর্যা হাসে মার্কণ্ডেয়র কথা শুনে । সে বলে , আমার দিন আর বাকি নেই বেশি যে । তাই পালিয়ে লাভ নেই । এটা সময় সোজাসুজি আঘাত হানার । আমার ক্যান্সার হয়েছে , বেশিদিন তো বাঁচবো না তাই মরার আগে কটাকে মেরে ফেলতে পারলে শান্তি পাবো । খুনি তো আগেই হয়েছি আমি । মার্কণ্ডেয় অবাক হয়ে যায় উর্যার কথা শুনে । কথা না বাড়িয়ে মার্কণ্ডেয় ফিরে যায় । গিয়ে মাহিকে সবটা খুলে বলে । মাহি অবাক হয়ে যায় উর্যার অতীত শুনে ।

সন্ধ্যার সাইফুল তার দল নিয়ে এলাকায় আসে । চিনিকে না পেয়ে রাগে ফেটে পড়ে সে । রত্না তাকে বলে এসবের মূলে রয়েছে উর্যা । সাইফুল উর্যাকে নিয়ে আসতে বলে তার বাড়িতে ।


রত্না উর্যাকে রেডি হয়ে পলাশের সঙ্গে সাইফুলের কাছে যেতে হুকুম করে । উর্যা বলে সে যাবে না । রত্নার রাগে সর্বাঙ্গে আগুন ধরে যায় ,বলে মেয়ের দেমাক দেখো। তা এখানে যখন এতো ঘেন্না, এলি কেন এই বেশ্যাপট্টিতে? তোর কথা আর জানতে বাকি নেই।" উর্যা বুঝলো যেতে হবে তাকে আজ । চিনিকে না পাওয়ার খেসারত সাইফুল ওর কাছ থেকে আদায় করবেই । রমলার কষ্ট লাঘব করতে উর্যা রত্নার অযাচিত মন্তব্য উড়িয়ে দিয়ে পলাশের সাথে চলল সাইফুল এর ডেরাতে । ওখানে গিয়ে উর্যা দেখলো একটা লোককে বেদম পেটাচ্ছে সাইফুল । সাইফুলের হাতে একটা মোটা কাঠের বাটাম । ওটা দিয়েই বেদম সে এতক্ষন বেদম পেটাচ্ছিলো নেতিয়ে পড়া লোকটাকে । উর্যাকে আসতে দেখে সাইফুল বললো , আসুন ম্যাডাম । তারপর পলাশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো , কি রে হাত লাগাবি নাকি রে ? পলাশ গদগদ হয়ে নিজের দাপট দেখাতে সাইফুলের হাত থেকে রক্ত মাথা বাটামটা নিয়ে নেয় । তারপর নেতিয়ে পড়া আহত লোকটার দিকে ভালো করে দেখে পলাশ বললো , স্যার এর বেঁচে নেই মনে হয় ! সাইফুল বলে , আছে রে আছে । নেতিয়ে পড়া আহত লোকটার মুখ চোখ সব কালো রঙের রক্ত মাখা । পলাশ ডান্ডাটা ভালো করে ধরে লোকটার বুকে পা দিয়ে চেপে ধরলো । লোকটার মুখ থেকে ভলকে রক্ত বেরিয়ে এলো পলাশের চাপে । উর্যার গা গুলোচ্ছে এসব দেখে , সে এটাও জানে ইচ্ছা করে সাইফুল এসব করছে । পলাশ এবার ডান্ডাটা নিয়ে সপাটে বারি বসিয়ে দিল লোকটার মাথায় । ফটাস করে শব্দ করে মাথাটা ফেটে চৌচির হয়ে গেল । ঘিলুতে রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে । পলাশ ডান্ডাটা ফেলে দিয়ে সাইফুলের দিকে এগিয়ে গেল । তারপর সাইফুল কে বললো , স্যার কেমন দিলাম ? মুখ থেকে পানের পিক ফেলে সাইফুল বললো , রত্নার জনা বেটা তুই পলাশ , রত্নার মতোই হারামি । তারপর পলাশের কাঁধে হাত রেখে বললো , সাবাস ... এরকম নৃশংস ছেলেই তো চাই আমার । কাজ করবি তো চলে আয় আমার দলে । পলাশ খুশি হয়ে ঘাড় নাড়ে আর তারপর বেরিয়ে আসে ওখান থেকে । সাইফুল ইশারা করলে বাকিরা ও ঘর থেকে বেরিয়ে আসে । এখন ঘরে উর্যা আর সাইফুল । সাইফুল পার্টির নেতা আর এ এলাকার ত্রাস । এই অঞ্চলে খুনোখুনি , চুরি যাই হোক না কেন কোন রকমের সমস্যা হলে কেউ পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়না , সাইফুলের কাছেই আসে । সেই এই অঞ্চলের বিধাতা । নিজের কালো দাগকে ঢাকতে সর্বদা সাদা পোশাকে নিজেকে আবৃত রাখে সাইফুল । উর্যাকে চুলের মুঠি ধরে টেনে নিজের বেডরুমের দিকে নিয়ে গেল সে । উর্যা কোন শব্দ না করে সাইফুলের কার্যকলাপ দেখতে লাগলো । উর্যাকে বিছানায় ফেলে হিসহিস করে সাইফুল বললো , খুব গরম না তোর ? আমি সব খবর লাগিয়ে ফেলেছি তোর ব্যাপারে বুঝলি ? তুই আমাদের বেঙ্গলের লোক না । কেন এই দুনিয়ায় এলি তুই শালী ? খুন করে তাই না ? উর্যা ফিসফিস করে বলে , তা হলে তো ভুল নারীকে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন বলতে হয় । যদি এখন আপনাকে খুন করি ? খিলখিল করে হেসে উঠল উর্যা । সাইফুল উর্যার হাতটা মচকে ধরলো কষে। তারপর নিজেকে মিশিয়ে নিলো মুহূর্তে উর্যার শরীরের সাথে । চিনিকে না পাওয়ার সব রাগ যেন উগরে দিচ্ছে সে । উদ্দাম পুরুষের অবাধ্য ছোঁয়াতেও জড় পদার্থের মত বিছানার এক প্রান্তে পড়ে থাকে উর্যা । খানিকটা অভ্যাসবশে পুরুষালি কাঁধে হাতটা উঠে এলেও তাতে অনুরাগের ছোঁয়া নেই একেবারেই , সবটাই যেন একটা অভ্যাস । সাইফুলের সূক্ষ্মকাঁটার মতো বিঁধছে শায়িতা নারীটির দেহগাত্রে । একতরফা মিলনে সাইফুলের এবার ধৈর্যচ্যুতি ঘটলো যেন, গতিবেগ শ্লথ হতে হতে একেবারে বন্ধ করে দিলেও উর্যার সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই,

~"কি রে শালী ?" প্রশ্ন করে বসলো সাইফুল, মিলনের এই সুখসময়ে উর্যার তরফ থেকে এরকম কোল্ড বিহেভিয়ার একেবারেই আশা করেনি সে । যেন এতক্ষন কোনো নিষ্প্রাণ নরম শরীরের সাথে একতরফা যুদ্ধে লিপ্ত ছিল সে । কি রে কেমন বেশ্যা রে তুই ? এত করে তোকে জাগানোর চেষ্টা করছি, আর তুই!" সাইফুল ঠিলে ফেলে দেয় বিছানা থেকে উর্যার নগ্ন শরীরটাকে । মাটিতে পড়ে যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে উর্যার সাড়া শরীরে । কোন মতে উঠে কাপড়টা জড়িয়ে নেয় সে । সাইফুল তাকে অর্ডার করে পাশের ঘরে বার থেকে মদ ঢেলে আনতে । উর্যা যন্ত্রনা চেপে গ্লাস নিয়ে বেরিয়ে আসে । সাইফুলের মন ভরে গেলে ভোর রাতে উর্যা বেরিয়ে আসে তার ঘর ছেড়ে । পলাশ তাকে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে আসে কাদারোড বস্তিতে । আধমরা শরীরটাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করে সে । আজ না হয় চিনির বদলে উর্যা নিজেকে সাইফুলের কাছে পেশ করে । কিন্তু এর পর ? ভাবতে ভাবতে দু চোখে ঘুম নেমে আসে ।


চিনি এখন ট্রমা কাটিয়ে অনেকটা সুস্থ । আর নিজের কাছে মাহি দিদিমণিকে দেখে অনেকটা সাহস ও পায় সে । শুধু মায়ের জন্য ভীষণ চিন্তা হয় ওর । আসলে আমরা প্রত্যেকটা দিন একটা করে সময় কে পার করি, কখনো খুব আনন্দের কখনো দুঃখের কখনো মিশ্র অনুভূতির। প্রতিদিন আরও একটু ভাল থাকার জন্য চেষ্টা করি । আমাদের শেষ গন্তব্য স্থল মৃত্যু।আমরা যে রাস্তা তৈরি করছি প্রতিনিয়ত তার শেষ সীমানা কিন্তু এই মৃত্যু। মৃত্যু অবধারিত তবুও আমরা প্রতিদিন লোভ হিংসা যন্ত্রণায় আনন্দে গভীরতা বারবার পাওয়ার লোভে আটকে যায়। রমলার জন্য কি লেখা আছে শেষপর্যন্ত ? রত্না সাইফুলকে খুশি করতে , মোটা টাকা আয় করতে চিনিকে পাতাল থেকে হলেও খুঁজে বের করতে চায় । মাহি চিনিকে বোঝায় ওখানে রমলাকে যতই রত্নার দল অত্যাচার করুক ওদের কিছুতেই জানতে দেওয়া যাবে না যে চিনি কোথায় আছে । আর চিনির উর্যা মাসি তো আছে ওখানে । কিছু মারাত্মক ক্ষতি উর্যা থাকতে কেউ করতে পারবে না রমলার । জন্ম থেকে ঝুপড়িতে বড় হয়ে ওঠা চিনি মার্কণ্ডেয়র বাড়িতে আপাতত মাহির রুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কিন্তু তবু এত আভিজাত্য দেখে ও অবাক হয়ে যায় । সব কিছু এত বড় আর সুন্দর হতে পারে তার কোন আন্দাজ চিনির ছিলো না । যে বাথরুমটা এই ঘরের সংলগ্ন আছে সেটাও চিনির মায়ের ঝুপরির থেকে অনেক বড়ো । কত ভালো ভালো সাবান , শ্যাম্পু এটা সেটা নাম না জানা জিনিস পত্র । মাহি দিদি খুব ভালো মানুষ আর তার হবু স্বামীটি ও বেশ রাজপুত্রের মতো । চিনির জন্য কি লেখা আছে ভবিষ্যতে ! যে রাস্তায় সে চলছে সেটা হয়ত অবশেষে মৃত্যুর সীমানায় এসে থমকে দাঁড়ায় ।কখনো সময়টা আচমকাই চলে আসে সীমারেখার শেষে আবার সেই সীমারেখা টা কখনওবা খুব ধীরে ধীরে আসে ,কিন্তু আসে ঠিকই । চিনিকে রত্না মাসি বলেছিলো , বেশ্যার মেয়ে বেশ্যা হবি আবার কি ! আজ বা কাল হবি তুই মায়ের গোত্র । ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবার ধান্দা করচিস নাকি লো ছুরি ? মাহি চিনির জন্য এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে চিনি বসে আছে উদাস । মেয়েটাকে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দুধটা খাইয়ে দেয় সে । হাজার হোক মা কেমন আছে সেটা নিয়ে দ্বন্ধে আছে চিনি । মাহি বলে , তুমি চিন্তা করবে না একদম আমরা সবাই মিলে একটা উপায় করবো যেটা রত্নাদের মতো মমতাহীন মানুষদের জন্য একটা শিক্ষা হয়ে উঠবে । বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের যৌন শোষণ পসকো আইনের আওতায় আসে জানো তুমি ? এই আইন বলবৎ করা হয়েছে বাচ্চাদের প্রোটেকশন দেবার জন্য । হ্যাঁ এটা ঠিক যে সাময়িক ভাবে লোকাল নেতা , পুলিস দের টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়ে রত্না নিজের হাতে সব কিছুই করে রেখেছে । তবে এটা ভুলে গেছে যে বাপের ও বাপ আছে চিনি । সব মানুষকে কিনে নেওয়া যায় না । কেউ কেউ কর্তব্য পালনে কোনদিন পিছপা হয়না জানবে । আর আমি তুমি হেরে যাওয়া মানে ওদের মত বদমাসদের জোর বেড়ে যাবে । ওরা আরো মায়েদের কষ্ট দেবে । রমলা নিজে অত্যাচার সহ্য করছে অন্য মা ও মেয়েদের বাঁচাবে বলে । নারী তো শক্তির উৎস , তার মধ্যেই অন্তর্নিহিত আছে সৃষ্টি । পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী যেখানে কোমল, ক্ষমতাহীন, যৌনতার প্রতীক সেখানে ‘শক্তি-রূপেন সংস্থিতা’ দেবী দুর্গার মহিষাসুর-মর্দিনী প্রতিমা স্মরণ করিয়ে দেয় আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজের নারী-নেতৃত্বের কথা। কিন্তু তারপর পুরুষ অধিকার দখলের চেস্টা করে নারীকে সর্বদা নিজের অধীনস্ত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছে ।


পরবর্তীতে পুরুষতন্ত্র যত শক্তিশালী হয়েছে তত পুরুষ দেবতারা ক্ষমতা লাভ করেছেন এবং প্রধান দেবীরা চলে গেছেন দ্বিতীয় অবস্থানে; কখনও প্রধান দেবতার স্ত্রী, কখনও কন্যারূপে। নারী শক্তির উৎস হলো দেবী দুর্গা । তিনি অসুরদলনী , দশভূজা । এই দুর্গাপূজা সকলের কারণ সব বর্ণের মানুষ এ পূজায় অংশ নিতে পারে। দেবীকে স্নান করাতে যে বিভিন্ন প্রকার মাটির প্রয়োজন হয় তার মধ্যে এমনকি বেশ্যাদ্বার-মৃত্তিকাও রয়েছে। এর অর্থ, সমাজের সকল শ্রেণির সকল স্তরের সকল পেশার মানুষ যেন এখানে অংশ নিতে পারে তা নিশ্চিত করা। তার মানে কি চিনি ? মাহি জিজ্ঞাসা করে । চিনি বলে , তার মানে দিদিমণি আমি আর তুমি সমান । আমরা জাতি , ধর্ম নির্বিশেষে শক্তির আধার । মাহি অবাক হয়ে যায় এই টুকু মেয়ের এত সুন্দর যুক্তিযুক্ত কথা শুনে । মাহি আবার বলতে শুরু করে , মানবমনের ভিতরে যে অসুর বাস করে তার বিনাশ করার মাধ্যমেই মহাশক্তির জয় ঘটে যুগে যুগে । চিনি বাবু জানিস জ্ঞান, বিদ্যা, মানসিক ঐশ্বর্য, বল ও বৈরাগ্যের মাধ্যমেই অসুর বিনাশ করে জগতের দুর্গতিনাশ করা সম্ভব। দেবী দুর্গা এই অসুর বিনাশের প্রতীক।


শিশু ও নারীর বিরুদ্ধে হিংস্র থাবা মেলে ধেয়ে আসা অসুর বিনাশ করেই আমি আর তুই বা আমরা সব নারীরা দুর্গার প্রতীক হয়ে উঠবো । নারীর উপর নির্যাতনকারী অসুর-রূপ অপশক্তির বিরুদ্ধে জয়ী হবেই শুভশক্তি। সকল নারীর মধ্যে জেগে উঠুবে অসুর-বিনাসিনীর পরম শক্তি।

যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতানমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ


মাহির কথা গুলো বাইরে থেকে শুনছিলেন সতী । সদ্য স্বামী হারিয়ে কিছুটা বিষণ্ন অবস্থায় থাকা সতী এই বারঙ্গনার মেয়েকে ঘরে এনে রাখাটা স্বাভাবিক মানতে পারেনি । তবে আজ ঘরের বাইরে থেকে হবু বৌমা মাহির কথা গুলো শুনে সারা গায়ে লোম খাঁরা হয়ে ওঠে সতীর । না মেয়েটা কিছু ভুল কথা তো বলছে না । সারাজীবন সতী তো কিছুই করেনি ভালোকাজ । স্বামীর টাকাতে আজীবন সন্মান কিনে নিয়েছে সতী । বাস্তবের মাটিতে পড়ে থাকা মানুষ গুলোকে আর চোখে দেখে সেই বা আজ কি পেলো ? মার্কণ্ডেয় কেও তো তেমন ভালো ভাবে মানুষ করতে পারেনি সতী । মাহি আসার পর ছেলেটা দায়িত্ব নিতে শিখলো । মথুরা যতদিন বেঁচে ছিলো ততদিন একবারও মানুষটার ভালো মন্দ ভাবেনি স্ত্রী হয়ে । উনি অন্য নারীর শরীরে সুখ খুঁজতে গেছেন । যাক যার শেষ ভালো তার সব ভালো । ভগবান যখন সতীর জ্ঞান চক্ষু উন্মোচন করেই দিয়েছেন তখন আর বসে থাকবে না সতী । সেও মাহিকে সাহায্য করবে এই যুদ্ধে । সমুখ সমরে নামলেই যুদ্ধ করা হয়না । পিছন থেকেও সাহায্য করতে পারে সতী , এই ন্যায় যুদ্ধে ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy