বালুকাবেলায়
বালুকাবেলায়
সমুদ্র সৈকত মতোই আমাদের জীবনটা। শত ব্যাস্ততার মাঝে অনেক স্মৃতি হয়তো আমরা ভুলে যেতে চাই। কিন্তু পারি কি? পারি না। হঠাৎ করে সমুদ্রের স্রোত আমাদের সমুদ্র সৈকতে বালুচরে ধাক্কা মেরে তছনছ করে দেয় সব কিছু। হঠাৎ সেই অতীত মুখ মুখি করিয়ে দেয় যা আমরা ভুলে যেতে চাই।
অনেক দিন পরে দেখা আমার ছোটবেলার বান্ধবী রিমির সাথে। সুন্দরী শুধু নয় একটু নাক উঁচু স্বভাবের ছিল। খেলনা বাটি খেলার বয়স থেকে ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব। ওকে আমি ভালো চিনি। ও চেনে আমাকে সবার চেয়ে একটু বেশি। তবে এখনকার রিমি যেন নতুন মনের আর খুব নরম স্বভাবের হয়ে উঠেছে আগের ডানপিটে নেই। ও আমাকে আর আগের মতো তুঁই তুকারি করলো না।
অনেকক্ষণ কথা হলো কথায় কথায় বলেই ফেলল "তুমি নতুন করে সংসার করো নি কেন মানব? আজো কি তুমি নীলাঞ্জনার জন্য অপেক্ষা করছো? নীলাঞ্জনাকে তুমি এখনো এতো ভালোবাসো?"
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উওরে বললাম" আমি অবাক হয়ে গেলাম এত কথা আমার জন্য ভাবে??"
ও মাথা নিচু করে বললো " না মাঝে মাঝে কষ্ট হয়। যে ছেলেটি একটা সিগারেট খেতো না সে নাকি প্রচুর নেশা করে পরে থাকে নিজের ঘরে । বন্ধু বান্ধব সবাইকে ছেড়ে এক ঘর বন্ধ করে নিয়েছে শুরু মাত্র একটা মেয়ের জন্য। অথচ কতো মেয়ে তো পছন্দ করতো তোমাকে একদিন? তুমি নীলাঞ্জনা কে এতোটা ভালোবাসো সেটা ভেবেই কষ্ট হয়।"
আমি বললাম " ধারণাটা একটু ভুল হোল। আমি নীলাঞ্জনাকে নয়। আমি রিমিকে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে বোঝে নি আমার কথা"
রিমি মাথা নিচু করে বলল" তুমি আমাকে নাক উঁচু মানুষ ভাবতে। আমি অনেক ভেবেছি এই বোধ হয় তুমি আমাকে প্রপোস করবে কিন্তু না করে তুমি বিজয়ার সাথে বেশি মাখ মাখি করে ছিলে। জানো আমার বিয়ের আগের দিন মাকে বলেছিলাম তোমাকে ছাড়া আমার জীবনে অন্য কাউকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কি আশ্চর্য মনের বিরুদ্ধে গিয়েও আমি দুই সন্তানের মা। তাদের বাবা আমার না মেনে নেওয়া পুরুষ সৌরভ আজ আমার জীবনের মালিক। ছাড়ো আমার কথা। আর কেমন আছো তুমি নীলাঞ্জনার প্রাক্তন স্বামী হিসেবে?"
রিমির চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখ ছল ছল করছে। মনে হলো ওকে বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলি " তুমি আর একবার পারো না আমার কাছে ফিরে আসতে? তুমি তো জেনে গেছিলে ছিলে বিজয়া সাথে সব কিছু ছিলো তোমাকে জ্বালানোর জন্য অভিনয়। তোমাকে ভোলাতে নীলাঞ্জনা ছিলো আমার কাছে একটা মলমের "
কিন্তু কিছু বলার আগেই বলে ও বসলো -
" নীলাঞ্জনা যে তোমাকে ভালবাসে নি সেটা বিজয়াও জানতো, ও এখনো তোমার খোঁজ রাখে। তোমার ওর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির করিয়ে তোমাকে নীলাঞ্জনা বিয়ে করে ছিলো শুধু মাত্র তোমার অবস্থা ভালো বলে। কিন্তু পরে আরো উন্নতির আশায় তোমাকে ছেড়ে গেছে ওর বসের কাছে।যাক এবার সংসার করো। বল তো আমি পাত্রী দেখি। এখন আমার একটাই কাজ আমার সন্তানদের মানুষ করা। তুমি নিজের জন্য ভাব। কি চেহারা হয়েছে তোমার! একদিন এসো আমাদের বাড়িতে আমার ছেলেমেয়েরা খুশি হবে তোমাকে দেখে। ওরা তো ওদের বাবা কে ভীষণ ভয় পায়।"
আমি জিজ্ঞসা করলাম " কেন রিমি?"
রিমি উত্তরে শুধু ওর হাত দুটো দেখিয়ে বলল
" প্রতি রাতে আমাকে এই কালসিটে দাগগুলো উপহার দেয়। ওরা ভয় পায় এই উপহার গুলোকে। জানো আমার ছেলে মেয়েরা আমার এই দাগগুলোর ওপর আদর করে দেয়। আর আমার সব জ্বালা সেরে যায়। ও ওর অফিসের পিএকে বিয়ে করতে চায় । কিন্তু আমি চাই না আর একটা মানব তৈরি হোক।"
আমি আর থাকতে না পেরে বলি " রিমি আমি আসি কেমন! কাজ আছে অন্য কোনোদিন কথা হবে।"
রিমি কেমন যেন বিদ্রুপ হাসি হাসলো যা আমার হৃদয়ে কাপুরুষের ছাপ ফেলে দিলো। আসলে নীলাঞ্জনার বিশ্বাসঘাতকতা গল্পটা আমাকে ঘৃনা করতে শিখিয়েছে শুধু। নয়তো জীবনের বালুকাবেলায় রিমি নিয়ে কিছুটা পথ হাঁটতে যেতে মন চাইতো নিশ্চিত ভালোবাসার দাবি নিয়ে।