STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Abstract Fantasy Others

4  

Nityananda Banerjee

Abstract Fantasy Others

অরাজনৈতিক

অরাজনৈতিক

3 mins
324

মহর্ষি বাৎসায়ন আসিয়াছেন আর এক ব্রহ্মর্ষি দুর্বাশা মুনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে । কামসুত্র রচনাকালে তিনি কয়েক সহস্র রমণীর সহিত সঙ্গম করিয়া চিরোদ্দীপ্তময়

সর্বকালীন পথের সন্ধান দিয়াছেন । সেই মহাসুখকথা শ্রবণ করাইবার নিমিত্ত প্রফুল্ল বদনে তিনি ব্রহ্মর্ষির আশ্রমে উপস্থিত হইয়াছেন । উদ্দেশ্য তাঁহার রচিত কামসুত্রের সার্থকতা বর্ণনা করিয়া ব্রহ্মর্ষির শরীরে কামোত্তজনা সৃষ্টি করিবেন ।

ঋষি দুর্বাশা ধ্যানরত অবস্থায় তাঁহার আগমন উপলব্ধি করিয়া ব্রহ্ম মন্ত্র উচ্চৈ:স্বরে উচ্চারণ করিতে লাগিলেন -

সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম তজ্জলানীতি শান্ত উপাসিত ।

মহর্ষি বাৎসায়ন ইহার সম্যক উপলব্ধি প্রাপ্ত হইয়া হতাশ মনে প্রত্যাগমন করিতে উদ্যত হইলেন ।

নির্নিমিলিত চক্ষে দুর্বাশা কহিলেন - কহ মহর্ষি ! আগমন কিবা হেতু ?

বাৎসায়ন থমকিয়া দণ্ডায়মান হইলে দুর্বাশা কহিলেন - প্রস্থানের পূর্বে আগমনের কারণ বর্ণনা না করিলে মহর্ষি যে পাষাণে পরিণত হইবেন ; আশা করি , তাহা সম্যক জানিবেন ।

করপুটে কৃতাঞ্জলি প্রদানের ন্যায় অধোবদনে মহর্ষি আগমনের হেতু বর্ণনা করিয়া কহিলেন - হে ব্রহ্মর্ষি ! মার্জনা করিবেন ; আমি যে শাস্ত্র রচনা করিতে সক্ষম হইয়াছি আপনার ব্রহ্মোপলব্ধিতে তাহা কতখানি সুখপ্রদ তাহা জ্ঞাত হইবার নিমিত্ত আমার এই আগমন ।

ব্রহ্মর্ষি কহিলেন - সর্বং দু:খম্ । আপনি সুখ কোথায় পাইলেন? বোধ হইতেছে আপনার সুখ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নাই ।

মহর্ষি বাৎসায়ন ক্ষুব্ধ হইলেন । ব্রহ্মর্ষি বলিলেন - বুঝিয়াছি আপনি আমার বাক্যে রুষ্ট হইয়াছেন । সুখী কে ? আপনি? আমি? কেহ না ।

মহর্ষি কহিলেন - হে মুনিবর ! আপনার কথা বলিতে পারিব না ; তবে আমি যে সুখী তাহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নাই ।

ব্রহ্মর্ষি হাসিলেন । গুম্ফ এবং পক্ক দাড়ির সঙ্গমস্থল হইতে শ্বেথশুভ্র দন্তকৌমুদী বাহির হইল । কহিলেন - অত:পর বলুন ' সুখ ' কি ?

তখন মহর্ষি বাৎসায়ন কহিলেন - হে ব্রহ্মর্ষি ! ত্রিসন্ধ্যা গায়ত্রী মন্ত্র জপের ন্যায় মনুষ্যকুল ত্রিকাল যাবৎ তিন বেলা মনোমত আহারাদি করিলে যে সন্তুষ্টি তাহাদিগের অন্তরে বিরাজ করে - তাহাই প্রকৃত সুখ ।

ব্রহ্মর্ষি বলিলেন - কি রূপ আহার ?

মহর্ষি বাৎসায়ন কহিলেন - হে মুনিবর , ধৈর্য্য ধরিয়া শ্রবণ করুন ; আপনিও সুখী হইবেন ।

আশ্রমের বৃক্ষলতা মন্দ বাতাসে দুলিতেছিল । পক্ষীসকল বৃক্ষশাখায় কিচিরমিচির করিতেছিল । সরযূর জলে যে সকল ক্ষুদ্র তরঙ্গ নৃত্য করিতেছিল তাহা অকস্মাৎ স্থির হইয়া গেল । বৃক্ষলতায় বায়ুর আঘাত বন্ধ হইয়া গেল এবং পক্ষীরব স্তব্ধ হইয়া গেল । সকলের মনোযোগ সুখকথা শ্রবণের দিকে ধাবিত হইল ।

মহর্ষি কহিতে লাগিলেন - যে মনুষ্য সকালের জলযোগে বেলুনের ন্যায় ফোলা- ফাঁপা লুচি, আলুর দম , এবং একটি কি দুইটি রাজভোগ গ্রহন করিতে পারে সে সন্তুষ্টি অর্জন করে ।

মধ্যাহ্নে বাসমতি চাউলের অন্ন, কাঞ্চনমুগের ডাইল, দুই খণ্ড বেগুন ভাজা, কচি পাঁঠার মাংস, এবং মিষ্টি দই সহযোগে ভক্ষণ করে সে পরিতৃপ্ত হয় ।

রাত্রিবেলায় দুই কাপ সোমরস, তিনখানা চাপাটি এবং বৃদ্ধ মেষে মাংসের সহিত আহার করে সে আপনাকে ধন্য মনে করে ।

ব্রহ্মর্ষি মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করিলেন এবং কহিলেন - ইহা কি সুখের ব্যাখ্যা ?

দুই করতল একত্রিত করিয়া মহর্ষি বাৎসায়ন বলিলেন - না ব্রহ্মর্ষি ! ইহার পর শয়ন কালে নগ্নবক্ষা রমণীর সহিত সঙ্গম করিয়া যে রতিতৃপ্তি হয় তাহাই চরম সুখ বলিয়া জ্ঞাত করিতেছি ।

ব্রহ্মর্ষি দুর্বাশা কুপিত হইলেন না । শুধু পুনরায় উচ্চারণ করিলেন - সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম । ইহাতে আপনার গবেষণার কোন কার্য্যকারণ দেখি না ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract