Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Sonali Basu

Horror

3.3  

Sonali Basu

Horror

অপেক্ষা

অপেক্ষা

6 mins
2.0K


গ্রীষ্মের সন্ধ্যা। কদিন ধরে তাপপ্রবাহে অতিষ্ট শহরবাসী কিন্তু তা বলে তো কাজ থেমে থাকে না। অপর্ণাও অফিস থেকে বেরিয়ে রুমালে একবার ঘাম মুছলো তারপর আকাশের দিকে একবার তাকালো। অন্যদিন আকাশ দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায় ওর, কারণ ও আশা করে মেঘের ছায়া দেখা যাবে আকাশে কিন্তু কোনদিনই চোখে পড়ে না। আজ অফিস থেকে একটু দেরীই হয়ে গেলো বেরোতে ওর, শেষ মুহূর্তে কিছু কাজ এসে যাওয়াতে। একেই মারাত্মক গরম তার ওপর দেরী হল বেরোতে তাই মেজাজটাও বেশ গরম ছিল কিন্তু আকাশের দিকে তাকিয়ে মনটা ভালো হয়ে গেল। আকাশ ছেয়ে গেছে কালো মেঘে হাওয়া উঠতে শুরু করেছে, মনে হচ্ছে দু এক ফোঁটাও হয়তো পড়বে। বৃষ্টির কথা মনে হতেই একটু তাড়াতাড়ি হাঁটা লাগালো ও। তাড়ার কারণ মায়ের প্রেসারের ওষুধ নিতে হবে পাড়ার মোড়ে রায় মেডিক্যাল হল থেকে। সকালে আসার পথেই নিয়ে নিতে পারতো কিন্তু আজ বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিল তাই সেটা বিকেলের জন্য সরিয়ে রেখেছিল।


তাড়াহুড়ো করে এগোলেও বৃষ্টি ওকে ঠিক ধরে ফেলল বড় বড় ফোঁটায় নামতে শুরু করে। বাধ্য হয়ে ছুটে গিয়ে সামনের বাসস্ট্যান্ডের শেডের তলায় এসে দাঁড়ালো। ভাগ্যিস তাড়াতাড়ি এসে পৌঁছেছে নাহলে কাকভেজা ভিজতে হতো, ভাবলো অপর্ণা। বৃষ্টিতে ভিজতে ওর দারুণ লাগে আর বৃষ্টিতে ভেজার কথা মনে পড়লেই মনে পড়ে যায় ঋকের কথা। ঋক ওর স্কুলবেলার বন্ধু, একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়তো ওরা, টিউশনিও যেত একই স্যারের কাছে। বন্ধুত্বের মধ্যে কোন অন্য সম্পর্কের কথা কোনদিনই ভাবেনি ওরা কিন্তু সেই ঋক কলেজ জীবনে এসে হঠাৎই ওকে বলে বসলো,


“পর্ণা আমি তোকে ভালোবাসি”।


সেদিনও ছিল বর্ষা, তবে গ্রীষ্মের বৃষ্টি নয়, বর্ষার বৃষ্টি। ও অপর্ণার বাড়িতে এসেছিলো কিছু নোটসের জন্য। পর্ণা প্রথমে কোন উত্তর দিতে পারেনি তারপর বলেছিল কদিন পরে উত্তর দেবে। সেই উত্তর দেওয়ার সুযোগ আর পায়নি পর্ণা, ঋকই হঠাৎ সরে গেলো ওর জীবন থেকে। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও ও জয়েন্টের রেজাল্টের অপেক্ষা করছিলো। দারুণ নম্বর পাওয়াতে ডাক্তারি পড়তে দিল্লী চলে গেলো।


অপর্ণার মনে সেই দিনটার ছবি অমলিন রয়ে গেলো তবে আজ এই মুহূর্তে ওকে জিজ্ঞেস করলে ও বলতে পারবে না ও কতটুকু ভালবেসেছিল ঋককে। আর ঋক সেই যে শহর ছাড়লো তারপর আর ফিরে আসেনি এখানে। পর্ণা জেনেছে ও একজন সফল ডাক্তার, মুম্বাইতে নামী হাসপাতালের সাথে যুক্ত। তাই ওর মনে ও কতটুকু রয়ে গেছে তা পর্ণা জানেনা।


বৃষ্টির ধারা একটু কমেছে মনে হচ্ছে, অপর্ণা বাইরে হাতটা বাড়িয়ে দিলো বৃষ্টি কমেছে কতটুকু বুঝতে। “তুমি একই রকম রয়ে গেলে পর্ণা, সেই একইরকমের সাবধানী” অপর্ণা চমকে উঠে তাকালো ওর ডানদিকে। দুজন দাঁড়িয়ে আছে তবে বেশ দূরে। তারপর বাঁদিকে তাকালে চোখাচোখি হয়ে গেলো ভদ্রলোকের সাথে। পর্ণা বলল, “আপনি আমাকে চেনেন?”

“সে কি তুই আমাকে চিনতে পারলি না? আমি অর্কপ্রভ রায়চৌধুরী মানে তোর বন্ধু ঋক রে”।

পর্ণা বেশ মনযোগ দিয়ে দেখল, ও ঋক তো? অবশ্য চেহারায় বেশ মিল আছে বৈকি, তবে আগের থেকে একটু মোটা হয়েছে। কিন্তু ও এখানে? প্রশ্নটা মনে উঠলো অপর্ণার। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ঋক বলল,


“ভাবনায় পড়ে গেলি তো আমি মুম্বাই ছেড়ে এখানে কি করে”?

“না মানে আপনি... তুমি তো দিল্লী চলে গিয়েছিলে তারপর কাকু কাকিমার যাওয়ার খবরও পেয়েছিলাম তাই একটু অবাক হয়েছিলাম”।

“কি আপনি-তুমি করছিস, তুই বলতে অসুবিধা হচ্ছে? হ্যাঁ বাবা মাকেও নিয়ে গিয়েছিলাম আমার কাছে মুম্বাইতে কিন্তু বাংলার মানে কলকাতার পরিবেশ ছেড়ে হিন্দী বলয়ে ওদের বেশীদিন ভালো লাগলো না তাই ফিরে এসেছিলো এখানে। বয়েসও তো হয়েছিল তাই প্রথমে মা গত হল তারপর বাবা। বাবার বাৎসরিক শ্রাদ্ধের কারণে এসেছিলাম। তাছাড়া আমার তো আর এখানে ফেরার নেই তাই বাড়িটার যদি একটা গতি করতে পারি সেটাও আসার একটা কারণ”

“ও খুব দুঃখিত হলাম। কাকু আর কাকিমা দুজনেই যে মারা গিয়েছে এটা জানতেই পারিনি”।

“চল কোথাও গিয়ে বসি, এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তো বেশিক্ষণ কথা হয় না”ম

“বৃষ্টি তো বন্ধ হয়নি তাছাড়া কোন বাসের টিকিও দেখা যাচ্ছে না। যাবো কি করে?”

“বাসের অপেক্ষায় থাকার দরকার কি? ওই তো আমার গাড়ি, চল”।


অপর্ণা এতক্ষণ খেয়ালই করেনি যে একটা গাড়ি বাসস্ট্যান্ডের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। ও বলল, “চল”।


গাড়িতে উঠে এলো দুজনে, ঋকই বসলো চালকের সীটে। ওরা গেলো সেই কফিশপে যেখানে ওরা প্রায়ই যেত স্কুলের শেষের দিনগুলো আর কলেজের প্রথমদিকে। কোণার দিকের টেবিল পছন্দ করে বসলো। অপর্ণা দেখলো দোকানে ভিড় মাঝামাঝি, আর যারা বসে আছে সবাই নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। কেউ ওদের বিশেষ খেয়াল করলো বলে মনে হল না। ঋক বলল,


“কিছু অর্ডার করি, ভীষণ খিদে পেয়েছে”।

“আরে দাঁড়া দাঁড়া আমি করছি। সেবার তুই ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ার পর আমাকে দারুণ খাইয়েছিলি আর আমি বলেছিলাম ডাক্তারি পাশ করে আসার পর আমি তোকে খাওয়াবো কিন্তু সেটা তো তখন হল না। আজ যখন সুযোগ পেয়েছি তখন সেটার সদ্ব্যবহার করতে দে। আমি আজ খাওয়াবো”।


বলে পর্ণা ইশারায় ওয়েটারকে ডাকলো। তারপর অর্ডার দিলো দুটো চিকেন বার্গার আর দু কাপ কফির। ঋক বলল,


"বার্গার আমার দারুণ প্রিয়। তবে ডাক্তার মানুষ তো! খাই কম, আসলে মানুষকে উপদেশ দেবো একরকম আর নিজের আচরণ হবে আরেকরকম তা কি হয়”?

“বাবাহ!ডাক্তার হিসেবে তাহলে তোর কদর দারুণ হবে রোগীদের মধ্যে, কি বল”?

“তা হয়েছে খানিকটা ঠাকুরের আশীর্বাদে” ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে যাওয়ার পর ঋক বলল,

“এবার তোর কথা কিছু বল? কেমন করছিস সংসার আর চাকরি?”

“চলে যাচ্ছে এটুকুই বলতে পারি। তোকে তো আমার মনের কথা জানানো হয়নি। ভেবে রেখেছিলাম তুই ফিরলে জানাবো কিন্তু সে সুযোগও গেলো। পড়া শেষ করতেই বাবা মা পাত্রের সন্ধান শুরু করলো আর আমি চাকরির। কপাল গুণে টুক করে একটা চাকরিও পেয়ে গেলাম কিন্তু বেশীদিন চালাতে পারলাম না বিয়ের পিঁড়িতে বসার কারণে। বিয়ের পর এসে দেখলাম এদের চাকরিতে আপত্তি নেই তখন আবার নতুন করে খোঁজা শুরু হল। এখন যেখানে করছি সেটা অতীনের এক পরিচিতের সাহায্যে ঢুকেছি। অতীনও ভালো কাজ করে। আমাদের আয়ে সংসারে অভাব নেই তবে একটাই দুঃখ রয়ে গেলো এখনো সন্তানের মুখ দেখলাম না। অতীন আর আমার মধ্যে এই নিয়ে মাঝেমাঝে মন কষাকষিও হয়ে যায়। অনেক ডাক্তার দেখালাম কিন্তু কোন ফল পেলাম না এই অব্দি”!


ঋক খানিক চুপ করে রইলো। পর্ণা বলল,


“আমারটা তো বললাম তোরটা বল এবার”।

“আমার বেশি কিছু বলার নেই ডাক্তার হলাম, ভালো হসপিটালে কাজ পেলাম। দু তিনটে জায়গায় চেম্বার আছে। আয় ভালোই। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা বাঙালি পরিবারের মেয়েকেই বিয়ে করেছি। তোর নামের সাথে বেশ মিল আছে, ওর নাম সুপর্ণা। ওকে তোর মতোই পর্ণা বলে ডাকি। তোর স্মৃতি ওই নামের মধ্যেই ধরে রেখেছি”।


অপর্ণা কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ঋক এখনো ওকে ভালোবাসে? প্রশ্ন করলো,

“ছেলেমেয়ে?”

“একটাই ছেলে অরিত্র। বাবা মা মারা যাওয়ার আগে অবশ্য নাতি দেখে যেতে পেরেছে এটাই শান্তি”।

“বাহ”!


হঠাৎ ঘড়ি দেখে ঋক বলল,

“এই এবার উঠি রে। রাতের ফ্লাইটে ফেরত যাচ্ছি। আর চিন্তা করিস তুইও এবার সন্তানের মুখ দেখবি” ।


অপর্ণা মাথা নাড়লো।

আর কোন কথার সুযোগ না দিয়ে ঋক চলে গেলো। বিল দিতে গেলে ওয়েটার দৌড়ে এসে বলল,

“দিদি আরেকটা বার্গার কি প্যাক করে দেবো, বাড়ি নিয়ে যাবেন?”


অপর্ণা বলতেই যাচ্ছিলো আরে ওটা তো আমার বন্ধু খেলো কিন্তু কথাটা মুখেই রয়ে গেলো। ততক্ষণে ওর দৃষ্টি পড়েছে টেবিলের ওপর ভর্তি প্লেটটার ওপর। তাহলে ঋক খায়নি, কিন্তু মনে হল তো কথার ফাঁকে খাচ্ছিলো। কি ব্যাপার হল, বুঝতে পারলো না ও। তবে আর কিছু না বলে টাকাটা দিয়ে বেরিয়ে এলো ও।


পরেরদিন সকাল চায়ের সাথে ওর কাগজ পড়ার নেশা। চায়ে চুমুক দিয়ে কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতেই চোখে পড়লো একটা খবর:


"গত রাত সাড়ে সাতটার সময় ঝড়বৃষ্টির মধ্যে মুখার্জি লেনের কাছে একটা গাড়ি দুর্ঘটনা হয়। গাড়ির মালিক অর্কপ্রভ রায়চৌধুরী মারা যান সাথেসাথেই"।


আরও অনেক কিছু লেখা ছিল কিন্তু অপর্ণার আর কিছু পড়া হল না। ঋকের সাথে দেখা হওয়া কথা বলা একেএকে মনে পড়ে যেতে লাগলো। তবে কি ঋক সশরীরে আসেনি? ওর আত্মা এসেছিল পুরনো বান্ধবী আর প্রেমিকার সাথে শেষ দেখা করতে? ওর মাথাটা ঘুরে উঠলো। আর যাওয়ার আগে ও কি বলে গেলো তুই এবার সন্তানের মুখ দেখবি। তাহলে কি ঋক আসবে নূতন জন্ম নিয়ে ওর মাধ্যমে? পেটটা চেপে ধরে ও মনে মনে বলল,


"আয় তুই আয়, তোর অপেক্ষাই করছি।"


(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

More bengali story from Sonali Basu

Similar bengali story from Horror