অপেক্ষা
অপেক্ষা


1st january দিল্লির এক অভিজাত এলাকা, বিশাল বড়ো ফ্ল্যাট, এখন ঠিক রাত সাড়ে এগারোটা। আর কিছুক্ষণ পরেই রাত বারোটা বাজবে। একটা ফুরিয়ে যাওয়া বছর শেষ হয়ে আর একটা নতুন বছরের সূচনা হবে। সেই অপেক্ষা করে বসে আছে চার বন্ধু-- অর্ক, স্যাম, দীপ আর নাগার্জুন।
ওরা সবাই দিল্লির এক নামী কনভেন্টে পড়তো। একসাথে হোস্টেলে থাকত। এই ফ্ল্যাটটা স্যাম অর্থাৎ স্যামুয়েলের। চতুর্দিকে বর্ষবরণের উৎসব, রঙিন আলো আর হুল্লোড়। এই ফ্ল্যাট টাও রঙিন আলোয় সেজে উঠেছে, আরও মায়াবী লাগছে। কিন্তু কোন হুল্লোড় নেই, কোন আনন্দ নেই, দেখে মনে হচ্ছে যেন প্রাণহীন সাজে সজ্জিত।
স্কুলে পড়া থেকেই ওরা প্রতি বছর এই ফ্ল্যাটে নিউ ইয়ার সেলিব্রেট করত। তারপর চাকরি পেয়ে যে যার মতো আলাদা হয়ে গেল। যে যার মতো ভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিল। কিন্তু প্রতি বছর ৩১ এ ডিসেম্বর ওরা এখানে জড়ো হত। ওদের সাথে আর একজন বন্ধু ছিল রহমত, পাঁচ জনেই ছিল হরিহর আত্মা। পাঁচ জন পরস্পর কে কথা দিয়েছিল, যে যেখানেই থাকুক না কেন এই দিন ওরা এই ফ্ল্যাটে আসবে। আজ কুড়ি বছর ধরে ওরা কথা রেখেছে, সবাই আসে। শুধু রহমত বাদে। আজ পাঁচ বছর হয়ে গেল রহমত কথা রাখেনি। আজ থেকে ঠিক বছর পাঁচেক আগে এমনই এক রাতে রহমত আসছিল নিজের গাড়ি চালিয়ে, পথে এক ট্রাকের সাথে ধাক্কা, সেখানেই সব শেষ।
ওরা চারজন যখন রঙিন তরলের নেশায় বুঁদ, তখন ঠিক কাঁটায় কাঁটায় বারোটা তে ঘরের বাইরে শুনেছিল রহমতের কন্ঠস্বর, "ইয়ারা তেরি ইয়ারি কো ম্যায়নে তো খুদা মানা / ইয়াদ রাখেগি দুনিয়া তেরা মেরা আফসানা। "
ওরা রহমত কে পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ছিল। কিন্তু ভুল ভেঙে ছিল ভোর রাতে ফোন পেয়ে। ওরা ভীষণ অবাক হয়ে ছিল, ওটা তবে কে এসেছিল, তবে কি কথা রাখতেই সেদিন রহমতের আত্মা ওদের সাথে দেখা করে গিয়েছিল?
তাই আজও ওরা অপেক্ষায় থাকে, যদি আর একবার দেখা করে যায়......