STORYMIRROR

Sanchaita Roy Chowdhury

Abstract Romance Classics

4  

Sanchaita Roy Chowdhury

Abstract Romance Classics

অন্যরকম ভালোবাসা

অন্যরকম ভালোবাসা

7 mins
8

অন্যরকম ভালোবাসা 

পর্ব-২৪


পরদিন সকালে বেরানোর সময় ইন্দ্রনীল অদৃতের ঘরে এসে বলল ,'অদৃত, তুই ব্যস্ত?'

অদৃত বলল,'না , এই তৈরী হচ্ছিলাম। 

একি তুমি এখনও তৈরী হওনি?'

ইন্দ্রনীল বলল,'সেটাই বলতে এলাম। বলছিলাম আমি আজকে যাবো না, শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না। তুই আর্যকে নিয়ে ঘুরে আয়।'

অদৃত কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,'কি হয়েছে বাবা তোমার? চলো ডাক্তার দেখাতে যাবে।'

ইন্দ্রনীল বলল,'আরে না না ওতোটাও শরীর খারাপ করেনি। আজকে ভালো লাগছে না,একটু দুর্বল লাগছে এইযা। '

অদৃত বলল,'তোমাকে কতবার বলেছি ঠিক করে ডাক্তার দেখাও তুমি আমার কোনো কথাই আজকাল শোনোনা।'

ইন্দ্রনীল বলল,'সত্যি বলছি আমি ঠিক আছি, সেরকম শরীর খারাপ করেনি । আজকে সত্যিই যেতে ইচ্ছা করছে না।'

অদৃত বলল,'ঠিক আছে, ভালো করে বিশ্রাম নাও তাহলে।'

অদৃত নীচে নেমে দেখলো আর্য তৈরী হয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে।

অদৃত বলল,'বাবা-মা আমরা বেরোলাম তবে।'

আর্য বলল,'আঙ্কেল যাবে না?'

অদৃত বলল,'না।'

ইন্দ্রনীল বলল,'আমার আজকে শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না । সিরিয়াস কিছু নয়, শুধু একটু দুর্বল অনুভব করছি।'

আর্য বলল,'তাহলে আমরা অন্য কোনোদিন যেতে পারি আজকে থাক।'

ইন্দ্রনীল বলল,'একদমই না। ওর অনেকদিন ব্যাডমিন্টন প্র্যাকটিস হয়নি। আমি অন্য কোনোদিন তোমাদের সাথে যোগ দেবো, আজ তোমরা ঘুরে এসো ।' 

অদৃত বলল,'চলো, এবার আর্য।'

আর্য বলল,'হ্যাঁ,আসছি।'

শ্রেয়সী এবং ইন্দ্রনীল বলল,'সাবধানে যেও। আর এই যে তুই আর্যর খেয়াল রাখিস।'








ব্যাডমিন্টন প্র্যাকটিস সেরে বাড়ি ফেরার পথে আর্য বলল,'তুমি এতো ভালো ব্যাডমিন্টন খেলো!'

অদৃত হেসে জিজ্ঞাসা করল,'কেমন লাগলো?'

আর্য আনন্দিত হয়ে বলল,' দারুণ লাগলো। তুমি কতো কি পারো। আমি তো কিছুই পারি না।'

অদৃত বলল,'কে বলেছে তুমি কিছু পারোনা? কত সুন্দর আঁকতে পারো তুমি। 

আর্য তোমার কাছে কিছু চাইলে তুমি তা দেবে আমাকে?'

আর্য বলল,'নিশ্চই।'

অদৃত বলল,'তুমি আমাকে একটা প্রকৃতির ছবি এঁকে দিতে পারবে?'

আর্য বলল,'অবশ্যই। এ আর এমনকি।'

অদৃত বলল,'কিন্তু আমি যেমনভাবে বলবো তেমনভাবে।'

আর্য বলল,'আচ্ছা। 

কিন্তু এটা আমরা কোথায় এলাম?'

অদৃত বলল,'আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন এখানে খুব আসতাম। স্কুল জীবনের পর এখানে আর সেভাবে আসা হয়নি। এটা আমার খুব প্রিয় একটা জায়গা।'

আর্য গাড়ি থেকে নেমে দেখলো সামনেই একটা বড়ো ঝিল রয়েছে, এখানের পরিবেশটা খুব শান্ত।

আর্য আর অদৃত ঝিলের সামনে এসে বসলো। ঝিলের চারপাশটা খুব নিরিবিলি, খুব একটা কেউ সেভাবে আসে না বললেই চলে।

আর্য বলল,'এখানে এখন আর কেন আসো না?'

অদৃত বলল,'সত্যি বলতে সেভাবে কোনো সঙ্গী পাই না ,তাই এখানে এখন আর খুব একটা আসা হয় না।আর তাছাড়া এমনিতে এখন আর সময়ও পাই না।অনেক বছর পর আবার এলাম।'

আর্য বলল,'স্কুল জীবনের পর আর কখনো আসোনি?'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ, একবার যদিও বাবার সাথে এসেছিলাম।'

কিছুক্ষণ পর অদৃত বলল,'কিছুদিন পরই তো তোমার রেজাল্ট বেরাবে , কি করবে কিছু ঠিক করলে? পড়াশোনা করবে না চাকরি?'

আর্য বলল,'আমি আর পড়াশোনা করতে চাই না। আমি এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।'









অদৃত বলল,'কেন ? উচ্চশিক্ষা লাভের ইচ্ছা নেই? তুমি যদি দেশের বাইরে গিয়ে পড়তে চাও আমি তার সমস্ত ব্যবস্থা করে দিতে পারি। আর ওখানের পড়াশোনা অনেকটাই আলাদা , সেটা তোমার ভবিষ্যতের উন্নতিতে যথেষ্ট কাজে লাগবে।'

আর্য ভাবলো,'আমাকে কি কোনোভাবে তাড়িয়ে দিতে চাইছে? নয়তো, হঠাৎ করে কেন বিদেশে পাঠানোর কথা বলছে ?'

আর্য বলল,'না, তুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছো, আমি না চাইতেই তুমি অনেক কিছু দিয়েছো আমায়। আর সত্যি বলতে বিদেশে গিয়ে পড়ার ইচ্ছা আমার নেই,পড়লে আমি এখানেই পড়বো, এখানের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। আর এমনিতেও এবার কোথাও গিয়ে আমার নিজের ব্যবস্থাটা তো নিজেকেই করতে হবে। কতদিন থাকবো আমি তোমাদের বাড়িতে আর কি পরিচয়েই বা থাকবো। আমি কারোর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না, আর না চাই কারোর দয়ায় বেঁচে থাকতে। তাই আমি ঠিক করেছি আমি চাকরি করে এখান থেকে চলে যাবো।'

অদৃত বলল,'দাঁড়াও, কি বলছো এসব তুমি? কোথায় যাবে তুমি? আর কে তোমাকে যেতে দেবে? তুমি কি ভাবছো আমি তোমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছি?'

আর্য এই কথার কোনো উত্তর করল না।

অদৃত বলল,'তোমার কোথাও যাওয়া হবে না।'

আর্য কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,'তুমি কে আমাকে যেতে না দেওয়ার? কেন আটকে রাখতে চাইছো আজ না হোক কাল আমাকে তো এখান থেকে ফিরতেই হবে। তাই আমি চাকরি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে চলে যাবো।' 

অদৃত বলল,'তোমার কোথাও যাওয়া হবে না। আমি তোমার মাস্টার্স পড়ার ব্যবস্থা করবো।'

আর্য রেগে গিয়ে বলল,'তোমার দয়া আমার লাগবে না।'

অদৃত বলল,'কি? দয়া?? তোমার মনে হয় আমি এই সমস্তকিছু তোমার জন্য দয়া করে করছি?'

আর্য বলল,'হ্যাঁ, তা নয়তো কি। আর যদি দয়া না করে করো তাহলে কিসের জন্য করছো?'

অদৃত বলল,'আর্য হঠাৎ করে তোমার কি হল? আমার মনে হয় অনেকটা দেরী হয়ে গেছে কথা না বাড়িয়ে আমাদের এবার বাড়ি ফেরা উচিত।'

আর্য বলল,'আগে উত্তরটা দাও তবেই আমি বাড়ি ফিরবো নয়তো না।'

অদৃত এবার রেগে গিয়ে বলল,'আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখছি এবার খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। চলো।' অদৃত আর্যর হাত ধরে তাকে যখন নিয়ে যাচ্ছে , তখন আর্য বলল,'তার মানে তুমি আমাকে দয়া করে এইসব করছো, তাই তোমার কাছে কোনো উত্তর নেই।' 

সে এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,'আমি যাবো না তোমার সাথে। আমি তোমার দয়ায় থাকতে চাই না।'

অদৃত এবার খুব রেগে গেল। আর্য ছলছল চোখে অদৃতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে হাটতে শুরু করল।

অদৃত বলল,'আর্য এগুলো কি ধরনের ছেলে মানুষী হচ্ছে? কোথায় যাচ্ছো তুমি?'

আর্য বলল,'জানি না। আমি আর তোমার সাথে থাকবো না , তোমার বাড়িতেও যাবো না, তুমি যাও এখান থেকে।'









আর্য ভাবলো,'আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো না। আমারই ভুল তুমি আমাকে সবকিছু ভুলে যেতে বলেছিলে; বরং তাও আমি ভুলতে পারি নি আমি আরো বেশি করে আশা করেছি হয়তো তুমি ভালোবাসবে। সত্যিই তো আমি তোমার কাছে বোঝা ছাড়া আর কিচ্ছু না। ' 

আর্য হঠাৎ অনুভব করলো কেউ যেন তার হাতটা পিছন থেকে টেনে ধরলো। সে পিছন ঘুরে দেখলো অদৃত,অদৃত তার মাথার পিছনের অংশ ধরে টেনে নিয়ে নিজের কাছে এনে তার ঠোঁটের ওপর ঠোঁট রাখলো। প্রথমে আর্য অবাক হলেও, পরে তাকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু কোনো লাভ হল না। 

একটু পরে অদৃত আর্যর ঠোঁটের ওপর থেকে ঠোঁট সরিয়ে নিয়ে রাগী স্বরে বলে উঠলো,'আমি তোমাকে দয়া করিনি। আর্য একটা কথা জেনে রাখো,তুমি আমার দয়ার যোগ্য নয়, তুমি আমার ভালোবাসার যোগ্য। ভবিষ্যতে আর এরকম কথা বলবে না, আর না বলবে ছেড়ে যাওয়ার কথা। তোমার বিদেশে গিয়ে মাস্টার্স পড়ার ইচ্ছা না হলে পড়বে না, কিন্তু ভুলেও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববে না। আমি তোমাকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার কথা বলেছি তোমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে,তোমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য নয়। তোমার যদি মাস্টার্স করার ইচ্ছা না হয় নাও করতে পারো কেউ জোর করবে না, শুধু একটাই অনুরোধ আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি।'

আর্য ধরা গলায় বলে উঠল,'তু....মি...ভা....ভালোবাসো আ....'

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই অদৃত বলল,'হ্যাঁ,আমি ভালোবাসি তোমাকে। কোনোদিনও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববে না তুমি।' 

আর্য বলল,'তাহলে সেদিন কেন বলেছিলে আমাকে সমস্ত কিছু ভুলে যেতে?'

অদৃত বলল,'কারণ আমি তখন এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম না, আমি দোটানায় ছিলাম। আর আমি নিশ্চিত না হয়ে কোনোভাবেই এগোতে চাইনি।'

আর্য বলল,'সরি ! আমি কথাগুলো না বুঝে বলে ফেলেছি। '

অদৃত হেসে বলল,'ধুর্ পাগল! আমি কিচ্ছু ভাবিনি। শুধু একটু ভয় হয়েছিল তোমাকে হারিয়ে ফেলার। আচ্ছা এবার তো আপনি বাড়ি ফিরবেন নাকি না?'

আর্য হেসে বলল,'হ্যাঁ।'









বাড়ি পৌঁছে খাবার টেবিলে শ্রেয়সী জিজ্ঞাসা করল,'আর্য কেমন লাগলো আজকে?'

আর্য বলল,'ভালো লাগলো।'

শ্রেয়সী বলল,'আজকে আমি বিশেষ করে আর্যর জন্য আলুর পরোটা বানিয়েছি।'

অদৃত ওর মায়ের দিকে তাকালে, তার মা বলল,'ওইভাবে তাকাতে হবে না আমি জানি তুই এইসব খেতে পছন্দ করিস না। তোর জন্য টোস্ট রাখা আছে।'

অদৃত বলল,'বাহ্ রে! এটা কেমন হল?'

শ্রেয়সী বলল,'কি কেমন হল?'

অদৃত বলল,'এই যে আমার জন্য একরকম ব্রেকফাস্ট আর তোমাদের তিনজনের আরেকরকম ব্রেকফাস্ট।'

ইন্দ্রনীল ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে বলল,'কি হল ব্রেকফাস্ট টেবিলে এতো রাগারাগি কিসের?'

শ্রেয়সী বলল,'আরে দ্যাখো না আমাদের জন্যে আলুর পরোটা বানিয়েছি আর ওর জন্য যেমন টোস্ট হয় সেটাই হয়েছে। এইজন্য বাবুর রাগ হয়েছে।'

ইন্দ্রনীল বলল,'তুই তো এইসব খাস না তাহলে? 

তুই কি কোনোভাবে আর্যকে হিংসা করছিস?'

অদৃত বলল,'না তো ,আমি কেন হিংসা করবো? একদম না।'

আর্য অদৃতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

শ্রেয়সী বলল,'এই হয়েছে। আমি যদি কাউকে একটু বেশি খেয়াল করি বা ভালোবাসি অমনি ওনার মুখ ভার।'

এই কথা শুনে সকলে হেসে উঠলো।










সন্ধ্যাবেলায় আর্য অদৃতের ঘরে থাকা অ্যাকোরিয়ামের মাছেদের খেতে দিচ্ছিল। 

অদৃত ঘরে ঢুকে বলল,'কি করছো?'

আর্য বলল,'মাছেদের খেতে দিচ্ছিলাম। তোমার অ্যাকোরিয়াম খুব পছন্দের? ফ্ল্যাটেও একটা ছিল।'

অদৃত বলল,'হ্যাঁ। আমার অ্যাকোরিয়াম খুব ভালোলাগে। তবে এটা আমার কাছে একটু বেশিই স্পেশাল।'

আর্য বলল,'তাই। কেন?'

অদৃত বলল,'এটা আমার প্রথম করা রোজগারের টাকায় কেনা। বাবা বলেছিলেন, উনি কিনে দেবেন কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল আমি নিজে কিনবো।'

আর্য অদৃতের কাঁধে মাথা রেখে বলল,'অ্যাকোরিয়ামটা খুব সুন্দর।'

অদৃত আর্যর দিকে তাকিয়ে হাসলো এবং বলল,'কে পছন্দ করেছে দেখতে হবে তো।'






অদৃত আর্যর মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞাসা করল,'আর্য তুমি যেদিন প্রথম নিজের পায়ে রোজগার করবে , সেই রোজগারের টাকায় তুমি কি করতে চাও?'

আর্য বলল,'আমি আমার কাছের মানুষকে কিছু উপহার দিতে চাই।'

অদৃত বলল,'বাহ্!খুব ভালো। আমিও আমার বাবা-মা'কে উপহার দিয়েছিলাম।'

আর্য বলল,'কি উপহার?'

অদৃত বলল,'বাবাকে ফোন কিনে দিয়েছিলাম। আর মা'কে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম, মা খুব একটা শাড়ি পড়েননা কিন্তু আমার দেওয়া শাড়িটা কোনো অনুষ্ঠান হলে পড়েন।'

আর্য বলল,'আপনার মা-বাবা খুব ভালো। আমার খুব ভালো লেগেছে।'

অদৃত হেসে বলল,'ওনাদেরও তোমাকে খুব ভালো লেগেছে।'

আর্য বলল,'আচ্ছা তুমি বললে নাতো তোমার কেমন পেইন্টিং চাই।'

অদৃত বলল,'আমি তোমাকে অল্প একটু বলে দিচ্ছি বাদ বাকিটা তুমি নিজের মতোন আঁকবে।'

আর্য বলল,'ঠিক আছে।'

অদৃত বলল,'সামনে সমুদ্র থাকবে আর চেয়ার দুইজন ছেলে পাশাপাশি একটা গাছের নীচে বসে থাকবে। পারবে?'

আর্য হেসে বলল,'পারবো। তুমি আমার কাছে কিছু চেয়েছো আর আমি দেবো না তা কখনো হয় না কি। খুব পারবো।'









To be continued............


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract