Riya Singh

Abstract Tragedy Inspirational

3  

Riya Singh

Abstract Tragedy Inspirational

অন্য রাখী

অন্য রাখী

4 mins
274



- এই দিদিয়া কাল তো রাখি । কিছু ভেবেছিস!এই শুনতে পাচ্ছিস।

- হয় বল কি বলছিস।কাজ করছি তো নাকি ভাইয়া।

- ওই দেখো, আমি এতোক্ষণ ধরে এতো কথা বলে গেলাম ।এটা ঠিক সেই প্রবাদ বাক্যের মতো হয়ে গেল না " যার বিয়ে তার হুঁশ নেই,পাড়া-পড়শীর ঘুম নেই"।

- তুই সেই আবার বিয়ে নিয়ে পড়েছিস। কতোবার বলবো এসব বলবি না আমায়।

- বেশ করবো ,কি করবি বললে! আবার বলবো।তাছাড়া বলে নে বলেনে দুদিন পর তো আবার আর।আর্মিতে জয়েন করছি।দেখবো তখন কে এতো জ্বালায় তোকে।কে রাগ ভাঙায়।

- যা না যা , আমি ও শান্তি পাবো বাবা । অনন্ত এই দুপেয়ে বাঁদর থেকে তো বাঁচবো।

- ও আমি দুপেয়ে বাঁদর তাইনা। তুই কি ছিঁচকাদুনে একটা।

- ভাই লাগছে চুলে ছাড় আহ.. মাগো মা সব চুল ছিঁড়ে দিলো।

-আরে বলবি বল ,যা যা ছেড়ে দিলাম বাচ্চা মেয়ে কোথায় কাঁদবি ,তখন আমাকেই চকলেট ঘুস দিতে হবে।


কিছুক্ষণ পর

-এই দিদু,এই দিদুন,ওই ওই দিদিয়া,এই পেঁচি সরি উপস দিদিয়া আর হবে না ,লেগেছে রে।এই দেখ কান ধরছি।এই দি কথা বলনা।

- কিছু হয়নি ইটস ওকে।

-তুই কাঁদছিস।

-না বললাম তো।

-তাকা এদিকে ।ঘুরে বোস দেখি ।এই নে চকলেট,চোখ মোছ। একদম আর্মিতে জয়েন করার আগে রাখিটা একটু মনে রাখার মত রাখবো বলে একটু মজা আর কি।

- আহ লাগছে তো,একটু আস্তে মার রে পিঠে লাগে,কানটা গেলোরে।এই এইভাবে ছোটভাইটাকে মারবি এখনো।

-বড় দিদির সাথে ফাজলামি ,হ্যা । বেশ করবো আমিই মারবো ,আমিই ভালোবেসে কাছে টানবো।তোর কি রে, আমার ভাই আমি বুঝবো। ভাই আর্মিতে রাখির ছুটি পেলে আসবি তো রে এই দির কাছে।

জানিস তো মা বাবা মারা যাওয়ার পর তুই ছাড়া কেউ আপন নেই এই দুনিয়ায়,তোর জন্যেই মতো পরিশ্রম, 

- ছুটি পেলেই আসবো চেষ্টা করবো ছুটি নেওয়ার আমার জন্য তুই কিন্তু প্রতিবারের মত একটা করে গিফট রাখবি। এটার বদল চলবে না আর আমিও তোর জন্য একটা করে চকলেট আনবো।প্রমিশ করছি এই তোকে ছুঁয়ে। আর তুই তো জানিস দিদিয়া তোর ভাইয়া নিজের দেওয়া কথার খেলাপ করে না।

-বুঝলাম আমার ভাই টা বেশ পাকা পাকা কথা শিখেছে আর একজন দায়িত্ববান পুরুষ হয়ে গেছে খুশি তো।

-একদম হতেই হবে নিজের খেয়াল রাখতে হবে তো।। আমরো শখ আছে আমার মিত্তি দিদিয়ার বিয়ে হবে। দিদিয়া লাল টুকটুকে কনে বউ সাজবে , একটা ভালো মনের মানুষের সাথে বিয়ে হবে। একটা জামাই বাবু বাবু নিজের দাদার মতো।যে আমার দিদিয়াকে ভালোবাসবে , ভালো রাখবে।

-বাবাগো ছেলের কত শখ দেখো। আচ্ছা তুই খুঁজিস তোর জন্য জামাইবাবু কেমন।তোর পছন্দই আমার পছন্দ।

-দি বিয়ে হয়ে গেলে এই ভাইটাকে ভুলিসনা রে ।বড্ড ভালোবাসি তোকে।

রাখির দিন

- আজ কেই তোকে যেতে হবে।বললি তো কাল যাবি ,তাহলে হঠাৎ?

- আরে জয়েন করার লেটার তো এসে গেছে।নে রাখিটা বাদ জলদি,পরের বার রাখিতে একসপ্তাহের ছুটি নেবো তখন মজা করবো। কাঁদছিস কেন !ওই দেখো মেয়ের কান্ড।

- তোর হাসি পাচ্ছে ,পাজি ছেলে একটা দিকে কাঁদিয়ে কান মুলে দেবো শয়তান। চকলেট কোই আমার?

- এই রে একদম ভুলে গেছি।

- বাহ বেশ।

-এনে ধর,গাল ফুলিয়ে থাকতে হবে না।এনেছি রে মা।দেরি হয়েছে একটু আর্শীবাদ কর।চলি রে দি।

-উফফ চলি নয় আসি বলতে হয়। কতবার বলেছি পাগল ছেলে একটা।

-দিইইইইই জলদি দেরি হচ্ছে।

- দেখি আয় বাবা কত লম্বা হয়েছে ভাইটা আমার,নিচু হো বাপু। সাবধানে যাবে, ভালো করে থাকবে,সময়মতো ফোন করো।

-তুই সত্যি আমার মা,টাটা এলাম আমি।

-মা আর বাবা দুটোই, সাবধানে যাস কেমন।

একবছর পরে

-হ্যালো ভাই, কেমন আছিস?হ্যালো হ্যালো শুনতে পারছিস।

-হম পাচ্ছি বল জলদি।হাতে সময় নেই রে।

-খুব ব্যস্ত বল ।

-একটু...

-একটু নয় ভালোই।

- আসছিস তো রাখিতে।

-এইতো ফিরবো পরশু ।

পরশু সকালে

- হ্যালো দি ।

-উমম বল।

- ঘুমোচ্ছিস এখনো। কটা বাজে খেয়াল আছে তোর।

-হম কেনো!ওহ শিট !দশটা বেজে গেছে, এই তুই কোথায়?

- আমি তো এই দাঁড়িয়ে আছি সেন ম্যানশনের বাইরে।প্রায় আধঘণ্টা ধরে কলিং বেল বাজালাম দুবার। শেষে তিন চারবার কল করতে তুললি তুই।

-একটু দাঁড়া বাবু,সরি কাজ করতে করতে রাত হয়ে গেছিল তো তাই আর কি।

-আয় ঢোক ঢোক ,ফ্রেশ হয়ে নে। আমি কিছু খাবার বানাই।

- এই দি শোন না বলছি যে আমি পরশু ফিরে যাবো।

-আরে একসপ্তাহ তো থাক অন্তত।রাখি টা কাটিয়ে যাবি ।

-না রে জরুরি বার্তা এসে গেছে,তুই বললি একটু ম্যানেজ করে এসছি।

- কত রোগা হয়ে গেছিস,ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস নাকি...

- ওটা যুদ্ধের জায়গা, সবসময় সর্তক থাকতে হয় কে কখন হামলা করে দেবে । প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। চিন্তা করিস না।

- আচ্ছা ঠিক আছে,ছুটি কাটা ।

-সেই মজা করি চল আগের মতো, আমার জন্য গিফট কোই, রাখিতে থাকবো না বলে কি গিফট দিবি না।

-অত চিন্তা করতে হবে না।তুই না এলেও পাঠিয়ে দিতাম।

- আমি না থাকলে কে জ্বালাবে বলতো তোকে।

-দরকার নেই কারোর তুই যথেষ্ট ।

রাখির দিনে

-হ্যালো কে বলছেন?

-আপনি কি ভাস্বর চ্যাটার্জির বাড়ির লোক বলছেন??

-ওর দিদি বলছি ,কি বলবেন বলুন।

-আসলে আগে

একদিন আগে যুদ্ধে কিছু জোয়ান আহত হয় আর কিছু জন মারা গেছে তারমধ্যে ভাস্বর ও ছিল আমাদের দলের একজন অবশ্যই।কাল ডেডবডি নিয়ে যাবো।সেটাই কনফার্ম করে নিলাম।

-নাহহহহ.....


দু'বছর পর


জানিস ভাই আজ না তিনতারিখ, আবারো একটা রাখি পূর্ণিমা।আর তোর মৃত্যুর আরো একটা বছর কাটবে।দেখতে দেখতে দু'বছর হতে চললো।

  এই দেখ তোর প্রিয় পায়েস করেছি ।খাবি না কি রে

সাড়া দিবি তো।ওহ তুই তো ছবি ,ছবিরা কি কথা বলে।মৃতরা তো জড়বস্তু ফিরে আসে না।ভুলেই গেছিলাম,একটা যুদ্ধ সব ওলোটপালোট করে দিলো।

 আচ্ছা যুদ্ধটাই কি সব সমস্যার সমাধান?? শান্ত হয়েও তো সব মেটানো যায়। অনন্ত কারোর প্রিয়জনতো হারায় না।

  যুদ্ধ সবের সমাপ্তি নয় । শান্তি কে আপন করুন।অন্তত নিস্পাপ তরতাজা প্রাণের বলি হবে না।চলুন না এই রাখি পূৃণিমায় শপথ করি একটা ভালোবাসার পৃথিবী গড়ার।

সমাপ্ত।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract