অন্য ভালোবাসা
অন্য ভালোবাসা


"ফোন ধরছিলে না কেন?অনেকক্ষন থেকে চেষ্টা করছি।তুমি জানো আমি মা বাবার সঙ্গে আজকে কথা বলব তোমার ব্যাপারে।" ওপর প্রান্ত থেকে কিছুক্ষণের নিস্তব্ধতা। "তোমার কি মনে হচ্ছে তোমার মা বাবা মেনে নেবেন"? আমার তো মনে হয় এত সহজে ওরা মেনে নেবে না। শুধু শুধু অশান্তি করার কি প্রয়োজন আছে আদৌ।তার থেকে বরং এই ভালো যেভাবে চলছে চলুক"। " আরে চলছে চলুক বললে হবে নাকি।তোমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো এটা আমার কতদিনের স্বপ্ন।বিদেশে লোভনীয় চাকরির সুযোগ ছেড়ে ফিরে এসছি শুধু তোমার সাথেই থাকবো বলে।আর তুমি বলছে যেমন চলছে চলুক।আমার এতদিনের লড়াই টা মিথ্যে করে দিও না।আর মা বাবা যদি তোমাকে না মেনে নিতে পারে, তাহলেও আমিও তোমাকে নিয়ে আলাদা কোথাও থাকবো"। " এরকম কথা আর বল না শুভ্র। তুমি জানো আমি কখনোই চাই না যে তুমি তোমার মা বাবার থেকে আলাদা থাকো।তাই এই কথাটা আর কখনো আমার সামনে বোলো না"। ফোনের ওপারে কান্নায় ভেঙে পড়ে শুভ্র।" ঠাম্মি তুমি জানো আমি একথা বলতে চাইনি।তুমি কেনো বললে যে তুমি আমার সঙ্গে বাড়ি ফিরবে না?আজ কতবছর তোমার গায়ের গন্ধটা পাইনা।প্রতি মুহূর্তে মনে হয় ছুটে চলে যায় তোমার কাছে।সেই ছোটবেলায় যখন মা বাবা দুজনেই বেরিয়ে যেতো কাজে, তুমি নিজের হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দিতে,স্কুলের জন্য তৈরী করে দিতে,স্কুলে দিয়ে আসা নিয়ে আসা
সবই তুমি করতে।ছুটির দিনগুলো কত গল্প শুনতাম তোমার থেকে।আর শীতকালের দুপুরে তোমার আচারের বয়াম থেকে আচার চুরি করে খাওয়া।সেই দিনগুলো কত আনন্দের ছিল ঠাম্মী।তারপর হঠাৎ একদিন মা বাবা ঠিক করল তোমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে।তোমার সাথেই থাকলে আমি নাকি ব্যাকডেটেড হয়ে যাবো।আমি তখন বৃদ্ধাশ্রম মানে বুঝতাম না।শুধু বুঝেছিলাম তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। আমি কত কেঁদেছিলাম যেদিন তুমি চলে গেলাম।তোমার আঁচল ধরে আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম ।পারিনি ঠাম্মী।মনে হচ্ছিলো এক লহমায় কেও আমার সবথেকে কাছের মানুষকে আমার থেকে দূরে নিয়ে গেলো।আস্তে আস্তে মা বাবার সঙ্গে দূরত্ব বাড়লো আমার।তারা চেয়েছিল তাদের ছেলে সমাজের একজন কেউকেটা হোক।যাতে তাদের স্ট্যাটাস বজায় থাকে। তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ আমি করেছি। বিদেশে পড়াশোনা করে সেখানকার নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার উচ্চপদে কাজ করে আমি সমাজে প্রতিষ্ঠিত।কিন্তু প্রতিটা মুহূর্তে মিস করেছি তোমাকে, তোমার আদর, ভালোবাসা, তোমার গল্প, তোমার গান সবকিছু।তাই আজকে যখন দেশে ফেরার সুযোগ হয়েছে তখন তোমাকে না নিয়ে আমি ঘরে ফিরব না ঠামি।অনেক বছর নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে তুমি এই বৃদ্ধাশ্রমে কাটালে।আজ সময় হোয়েছে তোমার নিজের বাড়িতে ফেরার। দাদাই স্নেহলতা ভবন বানিয়েছিল তোমার নামে।তোমার জন্মদিনে ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে তোমার হাতে তুলে দিয়েছিল তোমার বাড়ি।আজ ভালেন্টাইনস ডে ঠামী- ভালোবাসার দিন।তাই আমার সবথেকে প্রিয় ভালোবাসার মানুষটিকে আমি ফিরিয়ে দেবো তার আশ্রয়, তার আলয়।এটাই আজকের দিনে তোমাকে দেওয়া আমার উপহার।" ফোনের ওপর প্রান্তে কান্নাভেজা গলায় স্নেহলতা দেবী বললেন -" পাগল নাতি আমার"। কিছু কিছু ভালোবাসা বেঁচে থাক এইভাবেই।