অন্য ভালোবাসা
অন্য ভালোবাসা
আজ বইয়ের তাক গোছাতে গিয়ে খুঁজে পেলাম তোকে লেখা সেই চিঠিটা।ধুলোর আস্তরণ পড়ে গেছে । ধুলোটা ঝেড়ে চিঠিটা আবার পড়তে বসলাম।সেই কতদিন আগের কথা।তোর ভাইয়ের হাত দিয়ে চিঠিটা পাঠিয়েছিলাম তোকে।তখন তো আর আজকের মত মোবাইল ছিল না।তাই চিঠিই ভরসা।কিন্তু চিঠিটা তোর হাতে না পৌঁছে তোর বাবার হাতে পৌঁছালো।তারপরে ঘটনা তো মনে আছে নিশ্চয়ই।তোর বাবা সোজা আমাদের বাড়িতে। খুব মজার মানুষ ছিলেন কিন্তু উনি।এসেই আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন - বেয়াই মশাই, বিয়ের দিনক্ষণ তাহলে পাকা করা যাক।তারপরে বাড়িতে প্রায় এক সপ্তাহ বাবা আমার সঙ্গে কথা বলেনি।তোকে কিন্তু বাবা খুব ভালোবাসতেন।সবসময় বলতেন - মামনি আমার মেয়ের অভাব পূর্ণ করে দিয়েছে।আর মায়ের তো বন্ধুই ছিলি তুই। বড় ভালো ছিল দিনগুলো।তোকে কোনোদিনও সেরকম কিছু দিতে পারিনি। সামান্য রোজগারে হয়ত কখনো একটা ছাপার শাড়ি, কখনো মেলা থেকে কেনা চুড়ি আর মাঝে মাঝে উত্তম বাবুর সিনেমার টিকিট।তুই কিন্তু তাতেই খুব খুশি ছিলি।কোনোদিন কোনো কষ্টের চিহ্ন তোর মুখে দেখিনি।অথচ আমি জানি যে তথাকথিত সুখ তোকে কোনোদিনও দিতে পারিনি।তবে তোর মুখের হাসিটা ছিল আমার এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।তারপর আস্তে আস্তে সময় কেটেছে। তুই থেকে তুমিতে পরিণত হয়েছে আমাদের ডাক।
যেদিন ক্লিনিকে ডাক্তার সেন জানালেন যে তুই কোনোদিন মা হতে পারবি না, হঠাৎ যেন পৃথিবীটা বদলে গেলো আমাদের। সেই হাসি খুশি মেয়েটা হঠাৎ যেন আমার চোখের সামনে পাল্টে গেলো। সবসময় চুপচাপ, মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখতাম তোকে। তুই আমাকে বলতিস আমি তোকে ছেড়ে যেন আবার আরেকটা বিয়ে করি।আমি তোকে বোঝালাম যে এই সমস্যা টা যদি তোর না হয়ে আমার হত, তুই কি পারতিস আমাকে ছেড়ে চলে যেতে? মা না হতে পারলে কোন মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যায় না। তারপর শুরু হলো তোর কাউন্সেলিং। প্রায় ৬ মাসের চেষ্টায় আসতে আসতে ফিরে পেলাম আমার আগের সুধা কে। আস্তে আস্তে পাড়ার বাচ্চাদের প্রিয় সুধা কাকী , আর তারপর সময়ের প্রবাহে পাড়ার সুধা দিদা হলি তুই।এই সবকিছুই আমি দেখেছি তোর পাশে থেকে।কত ভালো গান গাইতে পারতিস তুই ,সেই পূর্নিমার সন্ধ্যেগুলোয় চাঁদের জোৎস্নায় তানপুরা নিয়ে ছাদে গান গাইতিস তুই, আমি আজও শুনতে পাই তোর গলায় সেই ' জোছনা করেছে আড়ি, আসেনা আমার বাড়ী'। জানিস সুধা আজকে যখন বাজার থেকে ফিরছিলাম, দেখি একটা ছেলে গোলাপ বিক্রি করছে, এত গোলাপ দেখে জিজ্ঞেস করতে জানলাম আজকে নাকি গোলাপ দিবস।কি মজার তাই না।
এখন যে সব ভালোবাসার দিবস, গোলাপ দিবস আমাদের সময়ে এসব ছিল না।তবে আমার বেশ ভালই লাগে।অন্তত ভালোবাসা প্রকাশের একটা মাধ্যম তো পাওয়া যায়।তাই এই গোলাপের তোড়া নিয়ে এলাম তোর জন্য।কখনো প্রকাশ করতে পারিনি তোকে কতটা ভালোবাসি, আজও তোর পান খাওয়া লাল টুকটুকে দুটো ঠোঁট দেখলে খুব আদর করতে ইচ্ছে করে তোকে। তোর গুন গুন শুনলে বলতে ইচ্ছে করে, একটা গান ধর না, একটা রবিঠাকুরের গান।কিন্তু সেটা আজ আর সম্ভব না, তোর লাল ঠোঁট, গলার গুন গুন সবই যে আমার স্বপ্ন, আমার অন্তরে থাকা তোর স্মৃতিগুলোর ভেসে ওঠা মাত্র।যদি সত্যি এই গোলাপ দিয়ে তোকে বলতে পারতাম সুধা তোকে আমি ভালোবাসি, যদি বলতে পারতাম এই গোলাপের সব কাটা সরিয়ে শুধু লাল নরম পাপড়ি ছড়িয়ে দেবো তোর ওপর, জড়িয়ে ধরে বলতে পারতাম এইভাবেই পাশে থাকিস চিরকাল। সেই সুযোগটা আমাকে না দিয়েই চলে গেলি না ফেরার দেশে।আমাকে একা করে চলে গেলি তুই। আমি কিন্তু বেশ আছি, হাত পুড়িয়ে খাই, আর মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়ি অজানার টানে।
এই ভালো আছি। আমাদের ভালোবাসাটা তো অব্যক্ত ছিল এতদিন - আজ না হয় প্রথমবার তোর ছবির সামনে এই গোলাপের তোড়া হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে তোকে বলি - " I love you" সুধা। এটাই হোক আমাদের Happy Rose Day। তোর সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে আবার।ভালো থাকিস। কিছু কিছু ভালোবাসা বেঁচে থাক এভাবেই।
