হ্যাপি টেডি ডে
হ্যাপি টেডি ডে
'আচ্ছা বাবা আজকে সবাই এত বড় বড় পুতুল কিনে কেন নিয়ে যাচ্ছে?জানো তো বাবা ওই যে রাস্তার ওপর যে বড় পুতুলের দোকান , ওখানে আজকে খুব ভিড়, আবার দোকানের বাইরে কেমন সাজিয়েছে, আমি তো ইংরেজি পড়তে পারি না, কিন্তু বেলুন দিয়ে কি সুন্দর সাজিয়েছে আর ইংরেজিতে কিসব যেন লিখেছে। অনেক দাদা দিদিরা ভিড় করে ওই দোকানে আসছে, কি যেন বলছিলো ওরা টেডি ডে না কিসব। টেডি ডে কি বাবা? আর ওই দোকানে একটা গোলাপী রঙের কি সুন্দর পুতুল আছে একদম ভাল্লুক এর মত দেখতে আর কি সুন্দর করে তাকে সাজিয়েছে, আমাকে ওই পুতুলটা কিনে দেবে বাবা?'
মেয়ের এই আবদার শুনে অসহায় মুখে তাকিয়ে থাকে বিমল। তার কারখানা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়াটা তাদের জীবনটা বদলে দিয়েছে। স্বাচ্ছন্দ্য কোনদিনই না থাকলেও আর্থিক দুরবস্থা তাদের ছিল না। কিন্তু কারখানা টা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো। কোনো বকেয়া টাকাও সে পায়নি। এরই মধ্যে তার স্ত্রী শিপ্রা ৩ বাড়ি রান্নার কাজ করে কোনরকমে সংসার চালানোর ব্যবস্থা করে।মেয়েটার পড়াশোনার খরচও আছে।দারিদ্রের এই হঠাৎ আঘাতে জর্জরিত বিমল কিছুতেই ভেবে পায় না কি ভাবে সামলাবে সব কিছু। তবু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কষ্টে তার বুক ফেটে যায়। মেয়ে তার খুব লক্ষ্মী।কোনদিন মুখ ফুটে কিছু চায় না।আজকে প্রথম একটা আবদার করেছিল।কিন্তু অক্ষম বাবা এতটাই অসমর্থ যে মেয়ের সেই ইচ্ছেপূরণ করার ক্ষমতা তার নেই।শিপ্রা এখনো রান্নার কাজ করে বাড়ি ফেরেনি। বিমল তার মেয়েকে বলে - ' মা রে ওই দোকানের অত বড় পুতুল তো কিনে দেওয়ার ক্ষমতা তোর বাবার নেই, আর ওইসব টেডি না কি ওসব আমাদের কাছে মানায় না রে। তার থেকে বরং তোকে আমি একটা ছোট্ট পুতুল বানিয়ে দেব। ওরকম ভাল্লুকের মত দেখতে কিন্তু ওর গায়ে থাকবে আমাদের মত পোশাক। ওই দোকানের টেডি তো শুধু খেলার পুতুল, কিন্তু আমি তোকে যেটা বানিয়ে দেবো সেটা তোর বন্ধু হয়ে থাকবে, তুই তাকে খাওয়াবি, ঘুম পাড়িয়ে দিবি , তার সাথে খেলবি। আজকে আমরা বাপ মেয়ে মিলে বরং সেরকম একটা পুতুল বানাই চল'।
এই যে ম্যাডাম কোন স্বপ্নের রাজ্যে পাড়ি দিলেন? আজকের দিনটা ভুলে গেছেন। আজকে ১০ ফেব্রুয়ারি, আমাদের সেই প্রথম দেখা হওয়ার দিন। আর ভালোবাসার সপ্তাহে আজকের দিনটা তো খুবই স্পেশাল - টেডি ডে। আমার টেডির জন্য তাই তার সবথেকে প্রিয় রঙের টেডি টা তাই নিয়ে এলাম। দেখো তো অন্বেষা ,কেমন হয়েছে টেডি টা? একি অন্বেষা তোমার চোখে জল কেনো?' ' জানো সন্দীপন, আজকের দিনটিতে বাবার দেওয়া সেই ছোট্ট টেডি র কথা খুব মনে পড়ছে। সেই দিন বাবার ক্ষমতা ছিল না দোকান থেকে আমাকে টেডি কিনে দেওয়ার , কিন্তু যাতে আমার কষ্ট না হয়, বাবা সারাদিন সারারাত জেগে আমার জন্য ওই ছোট্ট একটা টেডি বানিয়েছিল। তোমার এই টেডি টা খুব সুন্দর সন্দীপন কিন্তু আমার কাছে এই টেডি ডের সেরা উপহার কিন্তু এখনো আমার বাবার হাতের বানানো সেই ছোট্ট টেডি টা। আসলে বাবাদের কাছে মেয়েরাই কিন্তু তাদের টেডি, তাই তাদের সেই টেডি ডের মনে যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্য বোধ হয় তাদের নিজেদের চোখের জলটা কখনো প্রকাশ করে না। সন্দীপন অনেকদিন তো হল আমরা এই দূরদেশে আছি, এবার দেশে ফিরলে হয় না? পরের বছর টেডি ডে টা বাড়িতে আমার বুড়ো টেডি টার সাথেই না হয় কাটাই'। কিছু কিছু ভালোবাসা বেঁচে থাক এইভাবেই