SABYASACHI BHATTACHARYA

Romance Tragedy

1.8  

SABYASACHI BHATTACHARYA

Romance Tragedy

ভালোবাসি তোমাকে

ভালোবাসি তোমাকে

3 mins
1.5K


   আজ বইয়ের তাক গোছাতে গিয়ে খুঁজে পেলাম তোকে লেখা সেই চিঠিটা।ধুলোর আস্তরণ পড়ে গেছে । ধুলোটা ঝেড়ে চিঠিটা আবার পড়তে বসলাম।সেই কতদিন আগের কথা।তোর ভাইয়ের হাত দিয়ে চিঠিটা পাঠিয়েছিলাম তোকে।তখন তো আর আজকের মত মোবাইল ছিল না।তাই চিঠিই ভরসা।কিন্তু চিঠিটা তোর হাতে না পৌঁছে তোর বাবার হাতে পৌঁছালো।তারপরে ঘটনা তো মনে আছে নিশ্চয়ই।তোর বাবা সোজা আমাদের বাড়িতে। খুব মজার মানুষ ছিলেন কিন্তু উনি।এসেই আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন - বেয়াই মশাই, বিয়ের দিনক্ষণ তাহলে পাকা করা যাক।তারপরে বাড়িতে প্রায় এক সপ্তাহ বাবা আমার সঙ্গে কথা বলেনি।তোকে কিন্তু বাবা খুব ভালোবাসতেন।সবসময় বলতেন - মামনি আমার মেয়ের অভাব পূর্ণ করে দিয়েছে।আর মায়ের তো বন্ধুই ছিলি তুই। বড় ভালো ছিল দিনগুলো।তোকে কোনোদিনও সেরকম কিছু দিতে পারিনি। সামান্য রোজগারে হয়ত কখনো একটা ছাপার শাড়ি, কখনো মেলা থেকে কেনা চুড়ি আর মাঝে মাঝে উত্তম বাবুর সিনেমার টিকিট।তুই কিন্তু তাতেই খুব খুশি ছিলি।কোনোদিন কোনো কষ্টের চিহ্ন তোর মুখে দেখিনি।অথচ আমি জানি যে তথাকথিত সুখ তোকে কোনোদিনও দিতে পারিনি।তবে তোর মুখের হাসিটা ছিল আমার এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।তারপর আস্তে আস্তে সময় কেটেছে। তুই থেকে তুমিতে পরিণত হয়েছে আমাদের ডাক।আমারও রোজগার বেড়েছে, আমাদের সংসারে নতুন অতিথি এসেছে।সময় চলে গেছে তার গতিতে।কিন্তু তোর মুখের হাসিটা সেই একই রয়ে গেছে। ছেলে মেয়েরা নিজেদের পড়াশোনা আর চাকরি নিয়ে দেশের বাইরে।যেদিন বাবু বিদেশে চলে গেল চাকরি নিয়ে, সেই প্রথম তোর চোখে জল দেখেছিলাম আমি।বাবু কথা দিয়েছিল রোজ একবার করে ফোন করে তোর সঙ্গে কথা বলবে।তারপর সেই ফোন দিনে একবার থেকে ৬ মাসে একবার এসে দাঁড়ালো।আমি অভিমান করলেও তুই কিন্তু বলতিস রাগ না করতে, কষ্টে তোর বুক ফাটলেও তোর মুখের হাসি তো কিন্তু কোনোদিন কমেনি।তারপর আস্তে আস্তে সুধা কাকী থেকে পাড়ার বাচ্চাদের সুধা দিদা হলি তুই।এই সবকিছুই আমি দেখেছি তোর পাশে থেকে।কিন্তু যতটা সময় তোকে দেওয়া উচিত ছিল সেটা বোধহয় আমি তোকে দিতে পারিনি।কত ভালো গান করতে পারতিস তুই ,সেটাও ছেড়ে দিয়েছিলি, এখনো ছাদে তোর গুন গুন শুনতে পাই মাঝে মাঝেই। একবার তানপুরা কিনে দিতে বলেছিলি, আমি পারিনি, তবে না পাওয়া নিয়ে তোর কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু আজকে তোকে কিছু দিতে চাই আমি।বাজার থেকে যখন ফিরছিলাম, দেখি একটা ছেলে গোলাপ বিক্রি করছে, এত গোলাপ দেখে জিজ্ঞেস করতে জানলাম আজকে নাকি গোলাপ দিবস।কি মজার তাই না। এখন যে সব ভালোবাসার দিবস, গোলাপ দিবস আমাদের সময়ে এসব ছিল না।তবে আমার বেশ ভালই লাগে।অন্তত ভালোবাসা প্রকাশের একটা মাধ্যম তো পাওয়া যায়।তাই এই গোলাপের তোড়া নিয়ে এলাম তোর জন্য।কখনো প্রকাশ করতে পারিনি তোকে কতটা ভালোবাসি, আজও তোর পান খাওয়া লাল টুকটুকে দুটো ঠোঁট দেখলে খুব আদর করতে ইচ্ছে করে তোকে। তোর গুন গুন শুনলে বলতে ইচ্ছে করে, একটা গান ধর না, একটা রবিঠাকুরের গান।কিন্তু সেটা আজ আর সম্ভব না, তোর লাল ঠোঁট, গলার গুন গুন সবই যে আমার স্বপ্ন, আমার অন্তরে থাকা তোর স্মৃতিগুলোর ভেসে ওঠা মাত্র।যদি সত্যি এই গোলাপ দিয়ে তোকে বলতে পারতাম সুধা তোকে আমি ভালোবাসি, যদি বলতে পারতাম এই গোলাপের সব কাটা সরিয়ে শুধু লাল নরম পাপড়ি ছড়িয়ে দেবো তোর ওপর, জড়িয়ে ধরে বলতে পারতাম এইভাবেই পাশে থাকিস চিরকাল। সেই সুযোগটা আমাকে না দিয়েই চলে গেলি না ফেরার দেশে।আমাকে একা করে চলে গেলি তুই। আমি কিন্তু বেশ আছি, হাত পুড়িয়ে খাই, বাচ্চাদের পড়াই আর মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়ি অজানার টানে।এই ভালো আছি। আমাদের ভালোবাসাটা তো অব্যক্ত ছিল এতদিন - আজ না হয় প্রথমবার তোর ছবির সামনে এই গোলাপের তোড়া হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে তোকে বলি - " I love you" সুধা। এটাই হোক আমাদের Happy Valentines Day। তোর সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে আবার।ভালো থাকিস।                

কিছু কিছু ভালোবাসা বেঁচে থাক এভাবেই।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance