অলৌকিক
অলৌকিক
আজ সকালেই মাসির চিঠি পেয়ে অবাক হয়ে গেল সুবীর। মাসি সাধারনত ফোনেই যােগাযােগ রাখেন। আজ হঠাৎ চিঠি কেন? সুবীর ভাবল হয়তাে গ্রামে নেটওয়ার্ক ঠিকমতাে আসছে না। মাসি লিখেছেন যে, তিনি তাঁর একমাত্র বােনপাের সঙ্গে দেখা করতে চান। সুবীর যেন যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি চলে আসে। সুবীরবাবু ব্যস্ত মানুষ। কলকাতার খুব বড় অফিসে সে চাকরি করে। তাও সে ঠিক করল ম্যানেজ করে আজ বিকেলে যাবে। মাসির বাড়ি ৩৩ কিমি। তাই আধঘণ্টার বেশি লাগা উচিৎ নয়। তবে তার পৌঁছাতে একটু দেরি হল কারন রাস্তায় একটা গাছ পড়ে যাওয়ায় তাকে একবার থামতে হয়েছিল। আর একবার একটা বাজারে থেমেছিল। মাসি ইলিশ মাছ খেতে ভালােবাসে তাই সে দামদন্তর করে ছয়শাে টাকায় এক কিলাে ইলিশ কিনে নিল। যখন সে পৌঁছাল তখন নটা বাজে। সে দেখল দরজা খােলা। ঢুকে দেখল আলাে জ্বলছে না, এমন কি মাসির সাধের লণ্ঠনটা যেটা তিনি সর্বদা জ্বালিয়ে রাখেন সেটাও জ্বলছে না। বেশ অবাক হলাে সুবীর। তারপর মাসির নাম ধরে তিনবার ডাকার পর মাসি উপর থেকে নেমে এল। দেখে তিনি বললেন, "বাবা, সুবীর আয়" তখন সে মাসির হাতে ইলিশ মাছটা দিল। তারপর খেতে বসে মাসির হাতের গরম ভাত, সােনামুগের ডাল আর ভাপা ইলিশ। সুবীর অবাক হয়ে ভাবল কীভাবে মাসি এত তাড়াতাড়ি মাছ রেঁধে দিল। খিদে পেয়ছিল তার, তাই সে অত সাত-পাঁচ না ভেবে খেতে লাগল। খেয়ে সুবীরের এত ভালাে লাগল যে তার মনে হল এত ভালো খাবার কখনও খায়নি। তারপর সে শুতে গেল। সে শুলাে খাটে, আর মাসি মেঝেতে। রাতে তার ঘুমটা হল না | বারবার অস্বস্তি হতে লাগল, অবশেষে ভােরের দিকে তার ঘুম এল। সকালে পাড়ার লােকের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে বাইরে বেড়িয়ে আসতে প্রতিবেশীটি অবাক হয়ে গেল। বললেন, সুবীরবাবু আপনি কখন এলেন? সুবীর বাবু জবাবে বললেন, "কাল রাতে হঠাৎ মাসির চিঠি পেয়ে এলাম”। এরপর মাসির প্রতিবেশীরা যা বলল তাতে সুবীরের হাড় হিম হয়ে গেল। তিনি বললেন "আপনি কী বলছেন? তিনদিন আগে আপনার মাসি মারা গেছে। | তিনদিন নেটওয়ার্ক নেই বলে খবর দিতে পারিনি। সুবীরবাবু চেঁচিয়ে বলল তাহলে কাল কে আমার সঙ্গে কথা | বলল? খেতে দিলই বা কে?" তিনি বললেন, "আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।” সুবীরবাবু অপ্রতিভ হয়ে বসে গেল মাটিতে। বিজ্ঞান যদি সত্য হয় তাহলে এ সম্ভব নয়। তাহলে কি সে ভুল ? কোনাে উত্তর না পেয়ে সে যেন আরও কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেল।

