এক পোলট্রির আত্মকথা
এক পোলট্রির আত্মকথা
আমাকে ছাড়া কারাে কারাে খাদ্যরুচী অসম্পূর্ণ। আমাকে ছাড়া তাদের মুখে রােচে না। বলতাে আমি কে? আমি হলাম এক নিরীহ পােলট্রি। ভােমরা কী শুনতে চাও আমার সুখ-দুঃখে ভরা কষ্টকর জীবনের কথা ? বলি শােনাে .
আমার জন্ম হয় রাইহাট নামক প্রত্যন্ত গ্রামের এক পােলট্রি ফার্মে। বহু কষ্টের পর আমি যখন একটু ফুলে ফেঁপে উঠেছি তখন এক বিড়ালের নজর পরে আমার ওপর আর একটু হলেই সে আমায় মেরে ফেলতাে। তাছাড়া আজকাল শেয়াল ও কুকুরের যা অন্যাচার আমার জীবনটা ভয়ে ভয়ে কাটাতে হয়। কয়েক সপ্তাহ পরেই এক হতচ্ছাড়া বিড়াল আমার ওপর হামলা করে। গোপাল কাকা তা দেখে আমার জন্য এক শক্তপােক্ত খাঁচার ব্যবস্থা করে। তখন আমি বেড়াল ও কুকুরের অত্যাচার থেকে প্রাণে বেচেছি। মাসখানেক পরে কৃষ্ণকাকা আমায় ফার্ম থেকে বের করে এবং তারপর আমাকে খুব বড় একটা ফার্মে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যান্য বন্ধুদের সাথে। সেখানে আমি এক থেকে দেড় মাস থাকি। বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন
হয়ে।
হঠাৎ একদিন মােটা কাকু আমাকে বাইরে নিয়ে আসে। তারপর ছােট্ট ভ্যানে করে আমাকে নিয়ে যায় এবং আমি আমার বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে পড়ি। তারা চলে যায় লরিতে করে অন্যান্য নানা জায়গায়। আমি এসে পৌঁছাই লােকপাড়ায়। সেখানে এক পােলট্রির দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থেকে আবার রিক্সা চেপে আমি মনসাতলা গ্রামে এসে পড়ি।
কাশীনাথ ঘােষ নামে এক কাকু আমাকে কিনে তার বাড়ি নিয়ে যায়। সেখানে আমার স্থান হয় এক মুরগি বাড়ির ভেতর। সেখানে দেশি মুরগিদিদি, মােৱগ মস্তান, গোলগাল ব্রয়লার প্রভৃতি গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আমার পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে আমার পাশ থেকে চলে যায় সে সব প্রতিবেশীরা। সবাই মারা যায় নিষ্ঠুর। বটির আঘাতে। আমি মনে মনে ভয়ে ভয়ে ভাবি হয়তাে এবার আমার পালা। পরের দিন দেখি কাশীনাথ ঘােষের ছেলে মিল্টু ঘােষ আমাকেও আমার কিছু বন্ধুদের একটি ঝােলায় ভরে সাইকেল করে তার বাড়ি নিয়ে এলাে। সেখানে নিষ্ঠুর বটির দ্বারা আমার বন্ধুদের কাটা হচ্ছে। কিন্তু পরের দিন পল্টু নামে একটি ছােট্ট ছেলে আমাকে ঝোলা থেকে নীচে নামিয়েছে। হঠাৎ করে আমি তার কাছ থেকে ছুটে পালিয়ে প্রাণে বাঁচলাম। কিন্তু তখন সব কুকুর বেড়াল সব লেগেছে আমার পিছনে। তাদের থেকে পালাতে পালাতে দুঘন্টা কেটে গেল। আমি আমার কাশীনাথ ঘােষের বাড়ি এসে পৌঁছেছি। আমাকে তারা ফন্দি করে ধরেই ফেললাে। তারপর
আমার পা ও গলা ধরা হল এবং তারা আমায় কাটার জন্যে প্রস্তুত। এই দুঃখজনক অবস্থায় মৃত্যুর মুখে
দাঁড়িয়ে আমার আত্মজীবনী লিখছি।