মায়া পুতুল
মায়া পুতুল
এই পুতুলটার দাম কত??? জিজ্ঞেস করল অনিল
গ্রামের এই নির্জন প্রান্তে আগে কখনো হাঁটতে আসেনি সে ।বিকেলে এদিকে হাঁটতে বেরিয়ে কালো কাপড় পরা একটা রোগা লিকলিকে কাপালিক গোছের লোক কে দেখতে পায় সে। লোকটি কালো কাপড় পরা, মাথাভর্তি জটা এবং মুখে লম্বা লম্বা দাড়ি। এই নির্জন স্থানে একটা ঢিপির পাশে ছেঁড়া মাদুর পেতে,, সামনে কি সব গাছ-গাছরা ,,মড়ার মাথার খুলি, জন্তু-জানোয়ারের হাড়গোড় ,,আরো ছোট ছোট ধাতুর জিনিস নিয়ে বসে থাকতে দেখে দাঁড়ায় অনিল। এমন পোশাক এবং জিনিসপত্র দেখে অনিল বুঝতে পারল এ কোন কাপালিক। । লোকটিকে উদ্দেশ্য করে এই প্রশ্নটা করে ওঠে সে।
তার সামনে একটা ঝুলি রয়েছে তার ঠিক সামনেই রাখা ছিল পুতুলটি।
সাদাটে মসৃণ একটা 7 ইঞ্চির মত সাইজের ছোট একটি মেয়ের পুতুল।
কাপালিক টি অনিলের কথা যেন শুনতেই পাইনি। অনিল এবার লোকটির কাছে গিয়ে আবার বলল "এই পুতুলটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে,, এটাকে কি আমার কাছে বিক্রি করবেন???""লোকটি তার দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ বলে উঠলো ""এই পুতুলটি বিক্রি জন্য নয়।""
অনিল ইতিহাসের শিক্ষক তার এসব পুরোনো অ্যান্টিক জিনিস খুব শখ ছিল।সে যখন স্কুলে পড়তো তখন থেকেই পুরনো জিনিসের সংগ্রহ করার একটা শখ জন্মায়,,, সেই তখন থেকে আজ অব্দি অনেক ধরনের পুরনো পুরনো জিনিস জমিয়েছে সে। এগুলির প্রতি যেন একটা অন্যরকমের ভালোবাসা কাজ করতো তার
পুতুলটি তার খুব পছন্দ হয়েছে বলে সে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল
""সবকিছুরই একটা নির্দিষ্ট দাম থাকে..
টাকা দিয়ে পাওয়া যায়না এমন কিছু হয় না।....""""
এবার লোকটি অনিলের দিকে তাকায়
এবং বলে"""" পুতুলটি ভালো নয়। যদি ভয় না পাও তাহলে বিনামূল্যে এটি দিতে পারি।
কিন্তু এই আমি আর ফেরত নেব না।""'"
অনিল অবাক হয়ে যায় তার কথায়।
সে মনে মনে ভাবল এ আবার কেমন পাগলের মত কথা। এই ছোট একটা পুতুলকে ভয় পাবার কি আছে।?
এখনকার সময়ে কেউ বিনামূল্যে কোন জিনিস দিয়ে দেবে এটা সে আশায় করেনি ।
অনিল বলল এটা না রাখার কি আছে?? খুব বড় না পুতুলটা যে রাখতে অসুবিধা হবে বাড়িতে।?
"""নিয়ে যাও তবে পুতুলটি , সাবধানে যত্নে রেখো।"""
অনিল খুশি হয়ে পুতুলটি তার হাত থেকে নেয়।
পড়ন্ত বিকেলের আলোয় সে প্রথমবার পুতুলটিকে হাতে নিয়ে ভাল করে দেখল।
মসৃণ ভাবে হাড়ের তৈরি একটা মেয়ের পুতুল।
পুতুলটি চোখগুলি এত নিখুত ভাবে বানানো যে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হয় যেন পুতুলটি ও তার দিকেই তাঁকিয়ে আছে। কি অদ্ভুত সুন্দর এই পুতুলটি ,,
একটি গ্রামের মেয়ের প্রতিরূপে বানানো এই মূর্তি। খুব সুন্দর তার দেহের গঠন।
অনিল লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে । পুতুলটিকে পকেট এ ভরে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
আজ অনেকদিন পরে নতুন কিছু সংগ্রহ করে মনটা তার খুশিতে ভরে ওঠে।
সে তাড়াতাড়ি পা চালাতে থাকে যাতে বাড়ি গিয়ে সে ভালোভাবে পুতুলটিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
___________
অনিল স্কুল শিক্ষক। তার বাবা-মা খুব অল্প বয়সে মারা যায়।
সে তার কাকা বাড়িতে মানুষ হয় এবং সেখান থেকেই পড়াশোনা শেষ করে।
কাকীর সাথে তেমন বনিবনা না থাকায় সে চাকরি পেয়ে এই দূরে চলে আসে.
এবং একাই একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। সে এখনো বিবাহ করেনি।
তাই রান্নাবান্নায় একটা ঝামেলা হতো। রাতে সে নিজে রান্না করতো। সকালে স্কুলে যাবার আগে
সে বাজারের একটা দোকান থেকে খাবার খেয়ে নিত।
_______
বাড়ি এসে হাত পা ধুয়ে পুতুলটিকে শোয়ার ঘরের মাথার কাছের টেবিলের উপর রাখে । এবং নিজের জন্য কিছু রাতের খাবার বানাতে রান্নাঘরে যায় অনিল।
রাতের খাওয়া শেষ করেই অনিল বিছানায় বসে যত্নসহকারে পুতুলটিকে হাতে নিয়ে ইলেকট্রিক বাল্বের আলোয় ভালো করে মনের মত করে পুতুলটিকে দেখতে থাকে।
প্রায় ১০ /২০ মিনিট পুতুলটিকে দেখার পর অবশেষে সারা দিনের ক্লান্তিতে তার চোখে ঘুম আসে সে পুতুলটিকে টেবিলের উপর রেখে শুয়ে পড়ে।
কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল ঠিক নেই।।। কিসের একটা খসখস শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘরে একটা মৃদু ফুলের গন্ধ তার নাকে এলো।
ঘরের জানলায় থেকে বাইরের জোস্নার আলো ঘরের মেঝেতে রুপালি চাদরের মতো ছড়িয়ে আছে। অনিলের মনে হলো বাথরুম থেকে একটা মেয়েলি গলার স্বর ভেসে আসছে ।কেউ যেন গুন গুন করে একটা গান করছে । অনিল কান খাড়া করে শুনতেই ,,,
হঠাৎ করে আওয়াজ থেমে যায় । কে যেনো খিলখিল করে আবার হেসে উঠলো,,, আলো জ্বেলে সন্তর্পনে বাথরুমের কাছে এগিয়ে যায় অনিল ।তখনো বাথরুমের শাওয়ার থেকে জলের শব্দ আসছে,,,
ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটা জ্বালে সে। বাথরুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল।
অনিল খুব সাহসী ছেলে তাই সে ভয় না পেয়ে।ভিতরে অজানার ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে কে আপনি আর কিভাবেই বা ঘরে ঢুকলেন .??
ভিতর থেকে কোন শব্দ এলো না ।শুধুমাত্র বাথরুমের ভিতরে শাওয়ার থেকে জলের আওয়াজ কানে এলো তার ।
ধীরে সন্তর্পনে হাত দিয়ে বাথরুমের দরজাটা ঠেলে দিয়ে ভিতরে উঁকি মারে সে। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না সে।
তখনো শাওয়ার থেকে অবিরাম জল পড়ে চলেছে।
ভিতরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোন কিছুই পেল না সে।তবে কি কাপালিকের সেই কথাগুলোর জন্য সে ভয় পাচ্ছে আর ভুলভাল শুনছে।
নিজের মনের ভুল ভেবে বাথরুম থেকে বেরিয়ে যাবে ঠিক এমন সময় পায়ের কাছে এক গোছা ভেজা চুল তার চোখে পরলো। এত বড় চুল তার মাথায় নেই অতএব এটা কোন মেয়েদের চুল।
সে এই বাড়িতে একাই থাকে তবে এত বড় চুল এলো কিভাবে।
নিজের মনকে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলো সে। হয়তো হাওয়ায় উড়ে এসেছে।
তবে এতে রাতে শাওয়ার কে চালালো।
তার ঠিক মনে আছে যে শেয়ার আগে সে সবকিছু বন্ধ করে গিয়েছিল।
হয়তো মনের ভুলে কখনো খুলে রেখেছিলো। এইসব ভাবতে ভাবতে সে বাথরুম থেকে বেরিয়ে শোয়ার ঘরে এলো।
ঘরে ঢুকতেই সে দেখতে পায় পুতুলটি তার বিছানার উপর শুয়ে আছে।
অবাক হয়ে যায় অনিল কারণ তার ঠিক মনে আছে পুতুলটিকে টেবিলের উপর রেখেছিল।
পুতুলটিকে হাতে নিতে সে বুঝতে পারে পুতুলটা পুরো জলে সপসপ করছে।
পুতুলটি বা ভিজলো কিভাবে ।??
এইসব ভাবতে ভাবতে তার মনে হলো সে হয়তো অজান্তেই এসব গুলি করেছে এখন এগুলো আর মনে পড়ছে না।
সেই তাড়াতাড়ি আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে রেডি হয়ে স্কুলে বেরিয়ে যায় অনিল ,,,,,
(ক্রমশ)

