অভিশপ্ত ট্যাটু
অভিশপ্ত ট্যাটু
অনেকক্ষণ থেকে এই লোকটার সাথে দাম দরা দরি করছিলো মিরা। লোকটা প্রথম থেকেই ট্যাটু টি বানাতে চাই ছিল না।
আচ্ছা মুশকিল তো ??! যা টাকা লাগবে আমি তো দেবো তবে কেন সে দিতে চাইছে না।টাকার জন্যই যখন সে দোকান খুলেছে তাহলে করে দিতে আপত্তি কোথায় বুঝিনা ।
আর এদিকে মীরার উপর রাগ হতে থাকলো তখন থেকে বলছি যদি এখানেই না হয় অন্য কোথা থেকে করে নিও ।কিন্তু ওর আবদার আর জেদের কাছে চিরকালই আমি শেষমেষ হেরে যাই।
এখানে হেরে যাই বলাটা হয়তো ভুল।না পেলে কানের সামনে সারাক্ষন যে চণ্ডীপাঠ চলবে তার থেকে বাঁচার জন্যই হয়ত সব কিছু শেষমেষ মেনে নিতে হয়।
লোকটি কে শেষ বারের মত বললাম দেখুন আমাদের এটা খুব পছন্দ হয়েছে বলেই আপনাকে এত করে বলছি এটা করে দিলে খুব ভালো হয়।
লোকটি সেই আগের মত মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে কি একটা বলে হাসল।এদিকে রাত হয়ে গেছে মেলার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর আরো দেরি করলে বাড়ি যেতে সমস্যা হবে। রাস্তায় লোকজন ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসছে। কিছুটা জোর গলায় বললাম
দেখুন এটা করে দিলে এমন কোন কিছুই হবে না।লোকটি এবার আমার দিকে তাকাল ভালো করে লক্ষ্য করলাম লোকটির ডান চোখ মনে হয় খারাপ।কারণ আধো আলো অন্ধকারে ডান চোখের ওই জায়গাটা কেমন কালো এবং শূন্যস্থান লাগছে।
তার গলায় কিছু রংচঙে পুরনো ধরনের মালা দেখেই হয়তো বুঝেছিলাম এই লোকটা ভন্ড হতে পারে। না হলে সাধুর বেসে কেউ কখনো ট্যাটুর দোকান খোলে।
অবশেষে লোকটি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল এটা আমি বানিয়ে দিতে পারি কিন্তু এতে যদি আপনার পরে কখনো কোন ক্ষতি হয় তার জন্য আমাকে দায়ী করতে পারবেন না। আরে মশাই tattoo তো আজকাল প্রায় সবাই কমবেশি আঁকে । সবাই যদি আগে ক্ষতির চিন্তা করে তাহলে পৃথিবীতে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যেত। চামড়ার কোন ক্ষতি যদিও হয় সেটা আমরা বুঝে নেব আপনি করে দিন।অবশেষে ফোন থেকে ডাউনলোড করা ছবিটা লোকটার সামনে দিলাম ।মীরা লোকটার সামনে একটা ছোট টুল এ বসলো। লোকটি এবার এক মনে আঁকতে শুরু করলো। ছবিটি বেশ কিছুদিন আগে ইন্টারনেটের ডার্ক ওয়েব সাইট থেকে ডাউনলোড করেছিলাম মীরার কথায়। এটা নাকি কোন এক মিশরীয় প্রেতাত্মার দেবীর ছবি।
অবশেষে সে বানিয়ে দিল।
অবশেষে লোকটি কে বিদায় বলে চলে এলাম।
ট্যাটু টি হাতে আঁকার পর মীরা কেও বেশ খুব খুশি দেখাচ্ছিলো।
এরপর থেকে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম।
বাড়িতে ইঁদুর বা টিকটিকি মারা যেতে লাগল প্রায় রোজই।
হঠাৎ করে এরকম ছোটখাটো প্রাণী মারা যাওয়ায় ঘরের বিভিন্ন জায়গা থেকে পঁচা ও আঁশটে ধরনের গন্ধ বার হতে থাকলো।
অনেক খোঁজার চেষ্টা করে গন্ধের কোন উৎস খুঁজে সেগুলিকে ঘরের বাইরে ফেলে দিয়ে আসার পরেও ঘর থেকে কেমন গন্ধ আসতে লাগলো।
এদিকে আমার স্ত্রীর শরীর ঘুরতে থেকে আসার পর কেমন একটু খারাপ হয়ে গেছে।
মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে কি সব অস্পষ্ট স্বরে কথা বলে। অন্য কোন এক ভাষায় যেহেতু ফিসফিস করে কথা বলে তাই ভালো করে বোঝার উপায় নেই যে কি কথা বলছে।
চোখের নিচে কালি পড়েছে, রাতে ওর ঘুম হয় না, মাঝে মাঝে দেখি এপাশ-ওপাশ করে ,,ঘুমাতে পারে না।
তাই ডাক্তার দেখিয়ে ঘুমের ওষুধ এনে দিয়েছি তাই খেয়ে ঘুমায়।
লক্ষ্য করলাম
আজকাল ওর খাবারের উপর কেমন একটা অরুচি জন্মেছে যার জন্য ঠিক করে খাবার খায় না ।প্রায় ভাতের থালা ফেলে উঠে যায়।
কিছুদিন পর পাড়ায় একটা নতুন সমস্যা দেখা দিল। শোনা যেতে লাগলো, হাঁস-মুরগি এমনকি বাচ্চাদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার নতুন গল্প ।
প্রায় নাকি পূর্ণিমার রাত হলেই এসব ঘটনাগুলো ঘটে ,অন্য দিন সব ঠিকই থাকে। পরপর সাতটা বাচ্চা নিখোঁজ হয়েছেন গত কয়েক মাসে । শহরের বাতাসে সন্ধ্যা নামলেই যেন কোন এক অশুভ ছায়া নেমে আসে।যার জন্য সন্ধ্যার পর লোকজন বাড়ি থেকে বেরোনো প্রায় বন্ধই করে দেয়।
কেমন একটা আতঙ্ক ছেয়ে যায় গোটা শহর জুড়ে।
সেদিন অফিসের কাজে আমাকে বাইরে যেতে হয়েছিল। প্রথমটা ভেবেছিলাম বস কে ফোন করে বলব যেতে পারব না কারণ মিরার শরীর দিন দিন কেমন ভেঙে পড়ছে।গত কয়েক মাসের ফাইল গুলি পড়ে ছিল সেটাকে কমপ্লিট করতে হবে। তাই আমাকে শেষমেষ যেতেই হলো।
দুদিন পরে যখন আমি বাড়ি ফিরছি তখন রাত হয়ে গেছে। আকাশে গোল চাঁদ উঠেছে। চাঁদের জোছনায় চারিদিক সাদা রুপালি চাদরে ঢেকে গেছে।
এত রাতে চারিদিকে গাড়ি তো দূরের কথা রাস্তায় কাউকে দেখতে পেলাম না একটা কুকুর অব্দি নেই। এতটা পথ আমাকে একাই যেতে হবে।
হঠাৎ আমার খেয়াল হল আজ কোজাগরী পূর্ণিমার রাত তাই এত ঝকঝকে আলো চারিদিকে।
মোবাইল বার করে দেখলাম ২:১৩ বাজে। ফাঁকা আছে রাস্তা দিয়ে একাই চলতে লাগলাম। কিছুদূর যেতেই হঠাত
পেছনে কিসের একটা খসখস আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হলো কেউ আমার পিছনে পিছনে হাঁটছে। পিছনে তাকালাম কাউকে দেখতে পেলাম না । সামনে ঘুরতে যাব ঠিক এমন সময় পাশের আধো অন্ধকারে অসত্য গাছের ছায়ায় দুটো চোখ জ্বলজ্বল করতে দেখতে পেলাম। বুকের মধ্যে দুরুদুরু করে উঠলো।
চোখ যতটা পারি তীব্র করে দেখার চেষ্টা করলাম দেখলাম একটা কুকুর কালো রঙের।
মনে মনে একটু সাহস হলো যে না এতটা পথ একা যেতে হবে না। কুকুরটা থাকলে একটু হয়তো সাহস থাকবে। মুখ থেকে চুক চুক শব্দ করে কুকুরটাকে ডাকলাম। কুকুরটা কাছে আসতেই আমি হাঁটতে শুরু করলাম।
কুকুরটা কখনো আমার আগে বাসে এবং পিছনে হাঁটতে লাগলো ।
কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎ কুকুরটা কেউ কেউ শব্দ করে দৌড়ে পালিয়ে গেল ।আমি আচমকা কুকুরটা এরকম শব্দ করায় ঘাবড়ে গেলাম।
কুকুরটা কি এমন দেখল বা কিসের এত ভয় পেলো যে ও আমাকে একা ফেলে পালিয়ে গেল।
আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম কুকুরটার ওখানে নেই পালিয়ে গেছে, এতটা পথ একা যেতে হবে ।তাই আমি না দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
অবশেষে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির কাছাকাছি যেতেই অনেক লোকের জমাট বাঁধা ভিড় এবং উত্তেজিত কন্ঠে কি সব বলছে শুনতে পেলাম।
যেটা আমার বাড়িতে কেন্দ্র করেই হচ্ছে।
আমি তাদের সরিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম।বাড়ির মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে লোকের মুখে অস্পষ্টভাবে শুনলাম কেউ বলল এই বাড়িতে ডাইনি থাকে।তাদের কথায় কান না দিয়ে বাড়ির সদর দরজায় এসে দাঁড়ালাম।
দেখলাম বাড়ির ঘরের সব দরজা বন্ধ। সারা বাড়ির সমস্ত লাইট অফ।
বাড়ির উঠোনে চারিপাশে পচা মাংস খন্ড খন্ড রক্ত এদিক সেদিক পড়ে আছে।
বুঝতে পারলাম না কি হয়েছে।
পিছন থেকে কেউ একজন চিল্লিয়ে বলে উঠলো এই বাড়িতে ডাইনি থাকে এদের জন্যই আমাদের এত সর্বনাশ হয়েছে।,,,,,
আমি ওদের কথায় কান না দিয়ে বাড়ির পেছনের জানালা দিয়ে ঘরের ভিতরে দেখার চেষ্টা করলাম।
দেখলাম ঘরের মধ্যে আধো-আলো অন্ধকারে হাঁটু গেড়ে বসে একটা বীভৎস প্রাণী, অনেকটা শেয়াল বা হায়না জাতীয় কিন্তু উপরের অংশ মানুষের মত।,, একটা বাচ্চার ছেলের গলায় দাঁত বসিয়ে রক্ত খাচ্ছে।আমার এই বীভৎস দৃশ্য দেখে সারা শরীর কাপতে লাগলো। প্রাণীটিকে এক দৃষ্টে যে কেউ দেখে বলে দেবে এ কোন সাধারন প্রাণী নয়। নরকের অন্ধকার থেকে উঠে আসা কোন এক নামহীন শয়তান। টলতে টলতে পেছনের জালনা দিয়ে কষ্ট করে কোন রকমে বাইরে বেরিয়ে এলাম। ওটা যেই প্রাণীই হোক
আমি একা ওই প্রাণী তার সাথে সাথে পেরে উঠব না।
তাই কয়জনকে ভিড়ের থেকে ডেকে আনলাম যাদের কাছে বন্দুক ছিল।
বাড়ির পেছনের দরজাটায় জোরে ধাক্কা দিতেই খটমট করে ভেঙে যায়
5 , 6 জন বন্দুক নিয়ে ঘরের ভিতরে ঢোকে এবং আমি ঢুকি ওদের পিছনে
ঘরে ঢোকা মাত্রই সেই প্রাণীটা আমাদের দিকে দাঁত বের করে গর্জন করতে থাকে। সে কি ভয়ানক গর্জন। শব্দ টা এতটাই তীব্র ছিল যে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো।
ওরা ঢুকে ওই বীভৎস জিনিস দেখেই ওরা গুলি চালায় পরপর আটটা গুলি চালায়। প্রাণীটি শেষবারের মত আর্তনাদ করে নেতিয়ে পড়ে ঘরের মেঝেতে। আমি কোনমতে সম্বিত ফিরে পেয়ে দৌড়ে দোতালায় উঠে যাই আমাদের শোয়ার ঘরে। তন্ন তন্ন করে চারিদিকে খুঁজি আমার মিরা কে ,,,, কোথাও খুঁজে পেলাম না তবে কি ওই প্রাণীটি আমার স্ত্রীকেও খেয়ে ফেলল।???? ভয়ে আতঙ্কে বুকটা দুরুদুরু করতে থাকলো।
সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে যেখানে মৃত প্রাণীটি ছিল
সেখানে চোখ যেতেই আঁতকে উঠলাম।
ওখানে রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে আমার স্ত্রীর।
সারা শরীর উলঙ্গ আর ঠিক বুকের উপর একটা গুলির দাগ।

