অজানা পথেপর্ব - ২৯
অজানা পথেপর্ব - ২৯
ময়না মাধ্যমিক পরীক্ষার পর দুমাস ছুটিতে সৎ মা তাকে কত আদর করে তার বাপের বাড়ি ময়নাকে নিয়ে যায়।ময়না সৎ মামীদের আদরে আর মায়ের পরামর্শে কদিন মামার ঘরে থাকতে রাজি হল।সৎ মা তাদের গ্রামের বাড়ি ফিরে এল।
ময়নাকে বলেছিল এক সপ্তাহের পর তার বাবা এসে বাড়ি নিয়ে যাবে।এখন লম্বা ছুটি গ্রামে না থেকে বরং কদিন শহরে আনন্দ করে থাক।
আর তাকে বাড়ি ফিরতে হয়নি।দুদিন পর ময়নার সৎ মায়ের বাবার বাড়ি থেকে সৎ মামারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুব দুঃখ ও মনমরা হয়ে খবরে জানাল ময়না গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে আজ বেলা এগারোটার সময় তলিয়ে গেছে। সব মা অভিনয় করে ডাক ছেড়ে এমন কাঁদতে লাগল পাড়ার যত প্রতিবেশী বাড়িতে হাজির হল।আত্মীয়স্বজনরা ময়নার জ্যাঠা জেঠি খুব কাঁদল।মামারা গ্রামের অন্য পাড়ার বাসিন্দা তারাও কাঁদল।তার মা তো পালিয়ে গেছে কোন অজানা স্থানে সে জানল না ময়নার এই গঙ্গার জলে ডুবে অকাল মৃত্যুর খবর।বাবার কাছে ময়নার তেমন আদর ছিল না।তার দ্বিতীয় পক্ষ স্ত্রীর দুই পুত্র এক কন্যা আর স্ত্রীকে নিয়েই ব্যস্ত। মাঝে দীর্ঘ দিন তো ময়না মায়ের কাছে থাকত।তার প্রথম স্ত্রী ময়নার মা বরং এ ভাবে পালিয়ে গেছে তার মান সম্মানের ব্যপার তাই ময়নার প্রতি অপ্রসন্ন ছিল। কথা খুব কম বলত। ময়নার সৎ মা নুরজাহান বরং ময়নাকে ভালবাসত আর তার জন্যই ময়না এ গৃহে রাখা না হলে বাবা কিছু টাকা দিয়ে ময়নাকে মামার বাড়িতে রাখার পক্ষপাতী ছিল। সৎ মা নুরজাহানের অভিনয়ের এই ভালবাসা কেউ টের পেতো না।ময়না নিজেই সৎ মাকে খুব বিশ্বাস ভরসা করত।শ্রদ্ধাশীল ছিল।চরম খল হিংস্র নৃশংস সৎ মা তার এমন সর্বনাশ করবে ময়না স্বপ্নে ভাবেনি। ময়নার মা খুব সুন্দরী আর ফর্সা মায়ের রূপ ময়না পেয়েছিল। ময়নাকে দেখার পর আর তার মামাদের ময়নার ভরোন পোষনের জন্য যখন তার মা পালিয়ে যাবার পর তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে,পঞ্চায়েতের অভিযোগ করার ভয় দেখায় নুরজাহানের ভীষণ রাগ ক্ষৌভের কারন হয় কিন্তু কিশোরী ময়নার রূপ দেখে তার মনে দুষ্ট বুদ্ধি আসে।এক ঢিলে দুই পাখী মরবে। ময়নাকে নারী পাচার চক্রে দালালদের বিক্রি করলে নগদ মোটা টাকা আসবে আবার তার দায় দ্বায়িত্ব বিয়ের খরচ পাতি লাগবে না।আবার গ্রামের প্রতিবেশীদের কাছে সুনাম হবে।পঞ্চায়েত থেকে ময়নার ভরোপোষনের জন্য কোনরকম আর্থিক চাপ আসবে না।
নুরজাহানের বাবা ভাই মস্তান গুন্ডা হলেও মেয়ে পাচার কারী ছিল না। নুরজাহানের তাদের পাড়ার দাদা সম্পর্কের দীপঙ্কর ডাক নাম দীপু সর্দার সাথে কথা বলে।সে মেয়ে পাচার চক্রে জড়িত।এ কথা তার সাথে বিয়ের আগে ঘনিষ্ঠতা সুত্রে জানত।
নুরজাহান লাখ টাকার বিনিময়ে ময়নার চরম সর্বনাশ করে। দীপু সর্দার এই অপারেশন চালায়।কলকাতার এক কুখ্যাত নিষিদ্ধ পল্লিতে ময়নাকে দুলাখ পঞ্চাশ হাজারে বিক্রি করে।নিজে একলাখ নিয়ে বাকী পঞ্চাশ হাজার ময়নার সৎ মামাদের দিতে গেলে ওরা টাকা নেয়নি।নুরজাহানকে দিয়ে দেয়।
তবে এই নিয়ে জলঘোলা করেনি।তারা গুন্ডা মস্তান হলেও এভাবে ময়নাকে বেশ্যাপল্লিতে পাচার করে দেবে মন থেকে ঠিক মানে নেই। বোনকে ভৎর্সনা করলে নুরজাহানের জানায় ,লাখ টাকা পেলাম সঙ্গে সৎ মেয়ের ভরপোষন যদি পঞ্চায়েত থেকে চাপ দিতো কত মাসে মাসে লাগত কে জানে, পরে বিয়ে থা কত খরচ নিজের তিন ছেলে মেয়েদের কথা আমি তো আগে ভাবব!ময়নার নিজের মা, মামারা দায় দ্বায়িত্ব নেয় নি আমার কী দায়!
এখন মস্তানী গুন্ডাগিরি করে নুরজাহানের দাদারা একটু সচ্ছল হলেও বোনের বিয়ের সময় তেমন আর্থিক সচ্ছল ছিল না তাই তাকে সাধারণ গ্রাম্য পরিবেশে তাদের সে সময়ের ব্যাবসা সুত্রে পরিচিত, দ্বিতীয় পক্ষ মনিরুলের সাথে বোন নুরজাহানের বিয়ে দেয়।বোন এই ধরনের কুকর্ম দীপু সর্দারের সাথে যুক্ত হয়ে করবে জানত না। মনিরুলের কিছু গ্রামে চাষজমি আছে, আর বাজারে মুরগী কেটে তার লাভ মন্দ হত না।
পাড়ার শান্ত স্বভাবের দীপঙ্কর এমন এটাও ঠিক মত ময়নার সৎ মামারা জানত না। নিজেরা দাগী আসামী গুন্ডা মস্তান তাই এই সব নানা অপরাধ দেখলেও নিজেদের স্বার্থে ও নিরাপত্তার কারনে চুপ করে যায়।
এসব কথা নুরজাহান জানলেও মনিরুল জানত না।সে জানত সত্যিই বুঝি ময়না গঙ্গায় তলিয়ে গেছে।গ্রামের মানুষ ময়না মারা গেছে জানত।
ময়না নিজেও এত সব জানত না।বেশ্যাপল্লির মাসী বলেছিল, তুই মরে গেছিস,গঙ্গার ডুবে তলিয়ে তোর শরীরটাই খুঁজে পাওয়া যায়নি।তোর সৎ মা যে কী ভয়ঙ্কর আমিও এতটা চালবাজ চালাক নয়।তোর গঙ্গায় ডুবে যাবার মিসিং ডাইরি আমার কাছে আছে তারপর তা দেখিয়ে বলেছিল। তোর কোন অস্তিত্ব নেই।তুই পৃথিবীতেই বেঁচে নেই।তোকে নিয়ে তাই যা খুশী করব।এই তল্লাটে পুলিশ ঢুকতে ভয়ে কাঁপে। তাই যা বলব শুনবি, নচেৎ ভিডিও তে যেমন দেখলি এক পাহাড়ি জঙ্গি মেয়ে আমাকে মারধর করে গায়ে থুথু দিল।তারপর কী তার হাল হয়েছিল দেখলি।
মেয়েটাকে একদিন অনাহারে উলঙ্গ করে হাত পা মুখ ভাল মত বেঁধে ফেলে রাখে।পরদিন তার দূর্বল শরীরটা ছাদের সিলিং ফ্যানের আংটা থেকে লোহার চেনের নিচে লোহার হুক ওর যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে ঝুলিয়ে রাখে তীব্র যন্ত্রণা আর রক্তপাতে সঙ্গে বেল্টের মার সহ্য না করতে পেরে অচেতন না হওয়া অবধি সে কষ্ট পায়।
