শিপ্রা চক্রবর্তী

Horror

4  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Horror

অজানা অনুভূতি

অজানা অনুভূতি

5 mins
503



আকাশে ঘন কালো মেঘ করেছে, যখন তখন মুষলধারে বৃষ্টি নামতে পারে পৃথিবীর বুকে। হাল্কা হাল্কা ঝোড়ো হাওয়া পথের ধূলো গুলোকে উড়িয়ে নিয়ে চলেছে নিজের সাথে। বিদ‍্যুত‍ের তীব্র ঝলকানি ঘন কালো মেঘের চাদর কে ভেদ করে বেড়িয়ে আসছে থেকে থেকে, আর তার কিছুক্ষন পর গুরুম গুরুম করে যুদ্ধের হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে। পল্লবী যত স্পীড তোলা সম্ভব ততটা স্পীডে স্কুটিটা চালাচ্ছে, যে করেই হোক বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই ওকে বাড়ি পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবেই!!! কিন্তু এখনও অনেকটা রাস্তা বাকি!!! তবে আজকে পল্লবীর শহর থেকে এত দূরে এসে অজয়ের সাথে দেখা করার কোন ইচ্ছে ছিলনা, কিন্তু আর একমাস পর ওদের বিয়ে তাই অজয় যখন দেখা করার প্রস্তাব দিল তখন মুখের ওপর না... করতে পারেনি পল্লবী!!! তবে সত‍্যি করে আজকে ওদের এই সময়টা একান্তে খুব সুন্দর কেটেছে, এবং এটা সারা জীবন পল্লবীর মনের মনি কোঠায় রঙিন হয়ে থাকবে।


পল্লবী আর বেশি রাস্তা এগোতে পাড়লোনা!!!মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে আর তার সাথে ঝড়ো হাওয়া আর শীলও পড়ছে। তবে একটাই সস্তি!!! পল্লবী বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে আর মিনিট কুড়ির রাস্তা বাকি আছে। একটা অর্ধভাঙ্গা ভগ্ন প্রায় বাড়ি দেখতে পেয়ে পল্লবী স্কুটিটাকে নিয়ে সেই খানে দাঁড়াল, যাতে একটানা বৃষ্টিতে ভিজতে না হয়!!! 


রাস্তায় লোক নেই, তবে গাড়ি গুলো তীব্র বেগে জলের ধারাকে ভেদ করে এগিয়ে চলেছে নিজেদের গন্তব‍্যের দিকে। চারিদিকে অন্ধকার তার ঘন জাল বিস্তার করেছে। রাস্তার ঘষা ঘষা নিয়ন আলো জ্বলেও, বৃষ্টির দাপটে আরও যেন আবছা হয়ে এসেছে সেই আলো। পল্লবী হাত ঘড়িটা উল্টে দেখল সাড়ে ছটা বাজে, কিন্তু বাইরে দেখলে মনে হচ্ছে রাত আটটা-নটা হবে। 


ঝড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টির ছাটে পুরো ভিজে চুপসে গেছে পল্লবী, তাই নিজেকে বৃষ্টির হাত থেকে আরও একটু বাঁচতে এক পা... এক পা.... করে আরও একটু ভিতরে এগিয়ে যেতে লাগল ভগ্ন বাড়ির!!!! হঠাৎ চোখের সামনে একটা কাঠের দরজা দেখতে পেল পল্লবী, দরজাটা একটু ঠেলতেই ক‍্যা... অ‍্যা... চ...., ক‍্যা..... অ‍্যা.... চ... শব্দ করে খুলে গেল। পল্লবী ভীতরে ঢুকবে কি.... ঢুকবেনা!!!! এই ইতস্তত করতে করতে ঢুকেই পড়ল। ভীতরের একটা সাইড পুরো ভাঙ্গা, তবে অন‍্যদিকটা কিছুটা হলেও ঠিক আছে তাই বৃষ্টি সেখানে ঢুকতে পারছেনা। ভীতরে ঢোকার সাথে সাথে পল্লবী ঠান্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগল, এবং পল্লবী একটা কোনে চুপ করে বসে পড়ল, পল্লবীর শরীর ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে যেতে লাগল এবং পল্লবী কিছুক্ষন মধ‍্যেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।


হঠাৎ পল্লবী অনুভব করতে পারল কারা যেন কথা বলছে.............


------------এই মাম..... মাম..... উঠে পর অনেক বেলা হয়ে গেছে আর কত ঘুমোবি? আর একটা বাচ্ছা মেয়ের হাসার শব্দ ভেসে আসছে, সাথে ছম ছম করে নূপুরের আওয়াজ।


--------------তারসাথে একটা পুরুষালি কন্ঠ......... কি..... গো খাবার হল???? আমাকে যে.... বাস ধরতে হবে, বাস মিস হলে আর রক্ষে নেই!!! বস কুচি কুচি করে কেটে ফেলবে কথার ছুড়িতে!!!!


----------একজন মহিলা হাসতে হাসতে বলল, জানি... আমি সব জানি!!! এই নাও... তোমার খাবার। লোকটা বাচ্ছা মেয়েটাকে কোলে তুলে আদর করতে লাগল, এবং জিজ্ঞাসা করল খাবার খেতে খেতে মাম কোথায়????? 


-----------মহিলাটি হাসতে হাসতে বললেন মহারানির এখনও ঘুম ভাঙ্গেনি!!!!!! 


পল্লবী সবকিছু পরিস্কার শুনতে পাচ্ছে!!!!! সবার উপস্থিতি অনুভব করতে পারছে, অথচ চোখ খুলতে পারছেনা!!!! পল্লবীর শরীরে যেন কোন শক্তি নেই!!! হাত পা.... তুলতে পারছেনা, কথা বলার চেষ্টা করছে অথচ বলতে পারছেনা, চোখদুটো কে.... যেন জোড় করে বন্ধ করে রেখেছে তাই মেলতে পারছেনা। পল্লবীর মস্তিষ্কের মধ‍্যে একটা চরম ভয়.... এবং উত্তেজনা কাজ করছে, পল্লবী ভীতরে ভীতরে ছটফট করছে কিন্তু কিছুই প্রকাশ করতে পারছেনা, কেমন একটা ঘোরের মধ‍্যে পড়ে আছে।


পল্লবী অনুভব করতে পাড়ল হঠাৎ চারিদিক কেঁপে উঠল এক প্রবল কম্পনে, এবং সাথে সাথে একটা চাপা চিৎকার ভেসে আসতে লাগল চারিপাশ থেকে, এবং ভেঙ্গে পড়ার বিকট শব্দ!!!আর তার সাথে সাথে ধূলো বালির মোটা আস্তরনে চারিদিক ঢাকা পড়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ‍্যে চারিদিকে হাহাকার ও করুন আর্তনাদ সাথে অ‍্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ির আওয়াজ পল্লবীর কানে ভাসতে লাগল। পল্লবী আপ্রান চেষ্টা করছে নিজের শরীরটাকে জাগিয়ে তোলার কিন্তু পারছেনা!!!! কোন এক অদৃশ্য শক্তি পল্লবীর শরীরকে অসাড় করে দিয়েছে, কিন্তু পল্লবীর মস্তিষ্ক সজাগ আছে!!!! তাই সবকিছু অনুভব করতে পারছে পল্লবী। সময়ের সাথে সাথে পল্লবীর ছটফটানি আরও বেড়ে চলেছে হঠাৎ করে একটা তীব্র আওয়াজে পল্লবীর শরীর জেগে উঠল, এবং পল্লবী চোখ মেলে দেখল, এক কোনে শুয়ে আছে চারিদিকে গাঢ় আন্ধকার আর মোবাইলটা বেজে চলেছে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পূর্নিমার চাঁদের আবছা আলোতে যেটুকু দেখা যাচ্ছে। জিন্সের পকেট থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল স্ক্রীনে লেখা আছে মম কলিং...........


--------------পল্লবী ফোনটা ধরে বলল, আমি এক্ষুনি আসছি!!! কাছেই আছি!!!! তুমি চিন্তা করোনা!!!


------------ওপার থেকে কথা আসল, এত হাফাচ্ছিস কেন??? সব ঠিক আছে তো...???? কোনো সমস‍্যা হয়নি তো....???? তোর পাপা কি...... যাবে???? 


---------পল্লবী বলল না.... তার আর দরকার নেই, আমি আসছি। ফোনটা কেটে পল্লবী ফ্ল‍্যাশ লাইটটা অন করে চারিদিকটা ভালো করে দেখে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে ভগ্ন প্রায় বাড়িটা থেকে বেড়িয়ে আসল। এবং ভগবানের উদ্দেশ্য একটা প্রনাম করল। 


বাইরের পরিবেশ তখন পুরোপুরি ঠান্ডা। প্রকৃতি তান্ডব নৃত‍্য করে এখন সম্পূর্ণ শান্ত হয়ে গেছে। রাস্তার আলো গুলো এখন অনেক উজ্বল। রাস্তায় দু একটা লোকেরও দেখা মিলছে!!! পল্লবী স্কুটিতে স্টার্ট দিল তারপর পিছন ঘুরে একবার ভগ্ন বাড়িটাকে অলো আঁধারি পরিবেশে ভালো করে দেখে এগিয়ে চলল নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য। কিন্তু পল্লবীর কানে ভাসতে লাগল এতক্ষন ধরে হয়ে চলা সমস্ত কথপোকথন, আর সেই নূপুরের ছম ছম শব্দ। পল্লবী এখনও বুঝতে পারছেনা!!! ওর সাথে আসলে কি হয়েছিল??? ওকি নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছিল!!! আর এই অদ্ভূত স্বপ্ন দেখছিল!!! নাকি.... কোনো অদৃশ্য শক্তি ওর শরীরকে অসাড় করে দিয়েছিল এবং পূর্বে ঘটে যাওয়া কোনো ভয়ংকর ঘটনার ইতিহাসের বর্ননা দিচ্ছিল!!!


কিছু কিছু অনুভূতিকে আমরা সঠিকভাবে ব‍্যাখা করতে পারিনা সকলের সামনে, তাই বলে অনুভূতি গুলো যে..... হয়না তা..... কিন্তু নয়!!!! সে.... যাই হোক কিছু কিছু বিষয় নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা না..... করাই ভালো। তাতে হয়তো আমাদেরই ক্ষতি!! কত কিছু অনুভূতি, ঘটনা আমাদের কাছে অজানা থাকে আর সে.... গুলো অজানা থাকাই হয়তো ভালো আমাদের জন‍্য!!!! যেমন পল্লবীর এই অনুভূতি মস্তিষ্কের মধ‍্যে সব সময় সজাগ থাকবে!!! কিন্তু কাউকে সেটা বোঝাতে পারবেনা পল্লবী, কারন এই অনুভূতি একান্তই ওর ব‍্যক্তিগত। তবে আজকের এই অন্ধকার ভগ্ন বাড়ির স্মৃতি কোনদিনও ভুলতে পারবেনা পল্লবী, এটা সবসময় ওর মনের মধ‍্যে থেকে যাবে!!!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror