অচেনা পথে(পর্ব- ১৬)
অচেনা পথে(পর্ব- ১৬)
ময়নার মুখ খুশীতে ভরে ওঠে বলে,
"আপনার মত এত ভাল মানুষ হয়,আমার আগে কল্পনা ছিল না।আমার যত, বাবা থেকে মামা পুরুষ আত্মীয়স্বজন দেখেছি যেন অন্য রকম মেয়েদের ছোট চোখে দেখত।আর পরবর্তী কালে পেশার কারনে যাদের সঙ্গ দিতাম তাদের কথা বাদ দিন।আমার শরীরটা ছিল তাদের খাদ্য, সে আর বলে লাভ নেই, খুব কষ্ট দুঃখ হত।"
"যাক ঐ সব অতীতের কষ্ট দুঃখ লাঞ্ছনা যন্ত্রনা, ভুলে বর্তমান আর ভবিষ্যত জীবন নিয়ে ভাব।গোপালকে নিয়ে ভাব।আমারও ছোট বেলা সুখের ছিল না।"
ময়না বলল,
"সে তো আপনি বললেন দাদা।আমি যা বোঝার বুঝে গেছি।আপনি নিজে নয় আপনার কাছের মানুষ, আশ্রিত মানুষদের আনন্দে আনন্দ পান।"
"ঠিক তাই ময়না।শিবানী যেটা তিনমাসে বুঝেছিল সেটা তুমি একদিনে বুঝলে।আসলে শিবানী মা মায়ের খুব আদরে মানুষ হয়েছিল। কষ্টের মর্ম বুঝত না।তুমি তো অনেক কষ্টে ছিলে কষ্ট দুঃখর মর্ম তুমি বোঝ।"
ময়না বলে,
"আপনার খাওয়া হয়ে গেলে,দাদা এঁটো বাসন যেন আপনি নিয়ে যাবেন না।খাওয়া হলে উঠে পড়বেন আমি সব পরিষ্কার করব।তা নাহলে আমি ঝগড়া করব।"
বিনয় খুব হাসতে হাসতে বলল,
"তুমি আবার ঝগড়া করতেও জানো!"
"খুব জানি ছোটবেলা বান্ধবীদের সাথে করতাম। নরম পেয়ে এবার আপনার সাথে করব।"তারপর খুব হাসতে লাগল।
বিনয় বলল,
"তুমি ঠিক শিবানীর মত,কেবল বয়সটা অনেক কম আর দেখতে অন্য রকম।"
"দিদি তো অপূর্ব সুন্দরী ছিলেন।ফটো দেখেই বোঝা যায় দিদি কত রূপসী!"
বিনয় কেমন আনমনা হয়ে কিছু ভাবছিল। ময়না ভাবল,বিনয় দার সামনে আগের দিদির কথা না বলাই ভালো খুব ভালবাসতেন দিদিকে মনে স্মরণ করে কষ্ট হল হয়ত।
বিনয়ের চোখ জলে চিক চিক করছিল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
"যা চলে গেছে আসবে না, তবে তুমিও খুব ভাল মেয়ে, দেখতেও তুমি সুন্দরী,অযত্নে মানসিক চাপ আর খারাপ পেশায় ছিল। তোমার শরীর দুর্বল ক্ষীণ, তাই ততটা এখন তোমার রূপ ফুটে ওঠে নেই।এখানে তুমি অনেক সুন্দরী হয়ে যাবে।তোর ঐ দুর্বল কম বয়স শরীরটার উপর কী করে দমন শোষণ অমানুষ গুলো করত কে জানে !"
ময়না মুখ নামাল। কান্না সংবরন করার চেষ্টা করলেও বিনয়ের নজর এড়াল না।
বিনয় বলল,"তোমার পুরোন কথা আর বলব না ভেবেও কথায় কথায় বেরিয়ে গেল, আমি সরি ময়না।"
ময়না মলিন হেসে বলল,
" কী যে বলেন দাদা! সরি বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না। আগে শত কষ্ট যন্ত্রনা অপমানেও চোখে জল আসত না।কাউকে আপনজন তো ভাবতাম! কেঁদে কী লাভ! বরং ভয় শঙ্কায় থাকতাম। আমার এই চোখের এই যে জল দেখছেন এ তো আপনার স্নেহ ভালোবাসার ভরসায়। আপনি ছাড়া নিজেকে আর ভাবতেই পারছি না।"
খাবার দাবার পর দুপুরে গোপালকে নিয়ে ময়না তার ঘরে ছিল। বিনয় অন্য ঘরে ছিল। একটুু ক্ষণ বিশ্রামের পর, বিনয় ময়নার ঘরে এল।
ময়না ঘুমায়নি, গোপাল ঘুমিয়ে আছে।বিনয়কে এঘরে আসতে দেখে ময়না শুয়েছিল সচকিত হয়ে উঠে বসে বলল,
"দাদা আমাকে কিছু বলবেন!"
"ঠিক তা নয়,একবার দেখতে এলাম কি করছ, ঘুমিয়ে গেলে কীনা!"
"কেন দাদা ঘুমুলে কী হবে!"
বিনয় হেসে বলল,
"তুমি সব কথায় এত চমকে যাও কেন! ঘুমলে কিছুই হবে না।গোপাল তো ঘুমুচ্ছে তুমিও ঘুমাতে পারতে।গোপাল জেগে থাকলে,আর আমি বাড়িতে না থাকলে, দিনে তোমার না ঘুমুলেই ভাল। ছোট ছেলে একা খারাপ লাগবে। সঙ্গী তো কেউ নেই। বিয়ের অনেক পড়ে যেন গোপাল হল।ওর বয়স তখন দুই বছর হঠাৎই সব গত দুবছরের লন্ডভন্ড হয়ে গেল।"
বিনয় ঘরের দেওয়ালে টাঙ্গানো স্ত্রীর সাথে তার পুরোন ছবিটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
ময়না কুষ্ঠা নিয়ে বলল ,সব ভাগ্য দাদা। দুবছর আগে আমার ভাগ্যেও ভয়ঙ্কর ভবিষ্যত নেমে এসেছিল।তখন আমার পনের বছরের কিছু বেশী বয়স হবে মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়েছিল, ফল বের হয়নি।"
বলতে বলতে ময়না চুপ করে গেল দুচোখ জলে ভরে এল। মুখ নামিয়ে সে কান্না আড়াল করতে চাইলেও বিনয়ের নজরে এল।
বলল,"স্মৃতি বড় কঠিন, হাজার চেষ্টা করলেও ভোলা যায় না।আর যদি দুঃখের হয়,অন্তরকে দগ্ধ করে।ময়না তুমি এমন সব সময় ভেবে কেঁদো না।তোমার তো আর ভবিষ্যত চিন্তা নেই।আমি বরং শিবানীকে আর জীবনে পাব না।গোপাল তোমাকে মায়ের মত ভেবে হয়ত ভুলে থাকবে।"
"দাদা আপনি এঘরেই শুতে পারেন। দিদির ছবি আছে দেখলে আপনার একটু সান্ত্বনা।আমি পাশের ঘরে শোব।"
"না ময়না।এঘরটা শিবানীর খুব প্রিয় ছিল।আর গোপালকে নিয়ে সারাদিন এঘরেই পড়ে থাকত।দুবছর আগে যখন ওর প্রথম ক্যান্সার ধরা পড়ল, তখনও এঘরেই থাকত।"
"কী ক্যান্সার হয়েছিল দাদা।"
ক্রমশ
