অবয়ব - New beginnings, New you
অবয়ব - New beginnings, New you


কখনও নিজেকে আয়নার সামনে মেলে ধরেছেন? নিজের হাসি-কষ্ট গুলোকে নিজের অবয়বের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন কোনোদিন? কখনও মনে হয়েছে আজ আপনাকে একটু অন্যরকম লাগছে কিনা?
এসব বলছি কারণ, আজ নিজেকেই একটু কেমন জানি অন্যরকম লাগছে। ভয় পাচ্ছি বটে নিজের এই অবয়ব দেখে, তবে বিস্ময়ে চোখে অন্ধকার আপাতত নামে নি। জামায় রক্তের দাগ লেগে আছে। মাথায় হালকা হালকা ব্যথা। কপাল বেয়ে রক্ত গড়াচ্ছে আর...
হাত নাকের কাছটায় ধরলে গরম বাতাসের স্পর্শ পাই বটে! অর্থাৎ, এখনো যে বেঁচে আছি, সে সম্মন্ধে আমার মনে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। কিন্তু... আমার শরীর যে বরফের মত ঠান্ডা!
কপাল অল্প চেপে ধরতেই মনে পড়লো, আমার অতীতের কথা, শ্রীয়ের কথা। ওর সাথেই যে ছিলাম আমি; বাইকের পিছনে শ্রী বসেছিল আমার হাতটা ধরে; গতি কমই ছিল; কালো কালো মেঘের মৃদু গর্জন ভেদ করে কখনও বা চমকে চমকে উঠছিলো আকাশ। দিব্যি শ্রীয়ের সাথে কথা বলতে বলতে বাইক চালাচ্ছিলাম, কিন্তু... আচমকা স্পিড ব্রেকারের সামনেটা ঐ কালো বিড়াল চলে না আসলে হয়তো...
মাথাটা হঠাৎ ঘুরে গেলো আমার। চারিপাশে ঘাড় ঘোরালে চেনা চেনা লাগে। এ যে আমারই শোবার ঘর!
কিন্তু, আমি যদি এখন আমার শোবার ঘরে উপস্থিত থাকি, তবে আমার শ্রী এখন কই?
তবে কি?
শরীরের রক্ত চলাচল কতটা স্বাভাবিক ছিল জানি না, তবে এই কথাটা মাথায় ঘুরতেই, উপলব্ধি করলাম, শরীরের সমস্ত রক্ত জল হয়ে গেলো।
সেই সময়ে রক্ত পরীক্ষা করলে হয়ত রক্তে হিমোগ্লোবিনের চিন্হমাত্র পাওয়া যেত না। চোখ থেকে শুরু করে পায়ের পাতা ক্রমশঃ হলুদআভায় ঢেকে যেতে লাগলো। বুকের দপদপানি স্তব্ধ হয়ে গেল নিমেষে। কিন্তু তবু আমি দাঁড়িয়ে। আয়নার সামনে দুই পায়ে ভর দিয়ে আমি দাঁড়িয়ে।
সময় থমকে যাওয়া সত্ত্বেও আর বিলম্ব করলাম না। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে যতক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছলাম, ততক্ষণে অনেক লোক ভিড় জমিয়েছে। পুলিশ এসেছে, সাথে অ্যাম্বুলেন্সও। রাস্তা রক্তে রক্তময়। রাস্তার এক কোণে শুয়ে আছে আমার বাইক। আর তার ঠিক সামনে শুয়ে আছে আমার শ্রী। আরও একটু কাছে যেতেই, বুকের বাঁ দিকটায় হাতুড়ির ঘা পড়লো বুঝতে পারলাম। শ্রীয়ের দক্ষিণে অনতিদূরে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে এক পুরুষ মূর্তি, যার পরনে রয়েছে আমারই মত ইয়েলো শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স। জামায় রক্তের দাগ।
অ্যাম্বুলেন্স থেকে স্ট্রেচার নেমে মূর্তির কাছে নিয়ে যেতেই মৃতের প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে মানি পার্স বের করে তার মধ্যে থেকে একটা আইডি কার্ড বের করে হাতে নিয়ে একটা নাম উচ্চারণ করলেন -" রক্তিম ঘোষাল। "
বুকটা কেঁপে উঠলো বিশ্বাস করুন। এই নামটা যে...
এক মেল নার্স নিথর মূর্তিটাকে সামনে চিৎ করে শোওয়াতেই মৃতের মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম এবার। চোখ বুজে নিতে বাধ্য হলাম আমি।
ঐ মৃত পুরুষ মূর্তিটা যে আর কেউ নয়... ও যে আমি।
সমাপ্ত।