Suva Chakraborty [ অগ্নিদ ]

Drama Fantasy Others

3  

Suva Chakraborty [ অগ্নিদ ]

Drama Fantasy Others

রং-মরণ ( Holi Event )

রং-মরণ ( Holi Event )

16 mins
254


                                      


- কি রে কাল তো দোল? রং খেলবি তো?


- না, আমি রং মাখি না । রঙে আমার এলার্জি আছে, তা তো তুই খুব ভালো করেই জানিস । কোনোবছর মাখি না, এবারেও মাখব না ।


- কিন্তু আমি তো মাখাব !


- কি করে মাখাবি? ঘর থেকে বেরোলে তো ! দরজায় খিল দিয়ে রাখব । দেখব কেমন করে মাখাস !


- সে তুই ঘরে খিল দিয়েই থাক, আর ছিটকিনি দিয়ে, যেখানেই লুকিয়ে থাকিস না কেন, তোকে আমি রং মাখাবই । দেখে নিস্ !


- ঠিক আছে, ঠিক আছে, দেখব । মাখাতে পারলে মাখাস ।


 


এক বসন্তের সন্ধ্যায়, দুই বন্ধুর মধ্যে কথোপকথনের বিষয়বস্তু ছিল খানিকটা এরকম। একজনের নাম শ্রেয়া, আর অন্যজন, কাজল । শ্রেয়ার ঘরে বসেই কাজল শ্রেয়াকে রং মাখাবে বলে খ্যাপাচ্ছিল । কাল দোল যে ! রং যে মাখতেই হবে ! কিন্তু, শ্রেয়া যে নাছোড়বান্দা, কিছুতেই রং সে মাখবে না । চ্যালেঞ্জটা কাজল একপ্রকার বাধ্য হয়েই গ্রহণ করলো। দেখাই যাক না, জেতে কে?


মিষ্টি মেয়ে শ্রেয়া । উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সবে কলেজে উঠেছে । বাংলা অনার্স । আর অন্যদিকে কাজল তারই সাথে ভূগোলে অনার্স নিয়েছে । তার ওপর আবার একই কলেজ । দুজনকে কে দেখে? ছেলেবেলার সাথি যদি কলেজের গন্ডিটা একসাথে, পরস্পরের কাঁধে কাঁধ রেখে পার হতে পারে, তবে তো সোনায় সোহাগা !

আবার এই দুই বন্ধুর মতের মিলটাও দেখার মতন বটে! একজন আর একজনকে ছাড়া থাকতেই পারে না; এই ঝগড়া হল, তো এই ভাব। এই দুজনের মন পড়া মানে বিশ্বজয়ের সমান । কিন্তু প্রতি বছর এই একটা দিনেই যতসব ব্যতিক্রম ! এই দিনটা দোলের। শ্রেয়া রং মাখবে না, আর কাজল ওকে রং মাখিয়েই ছাড়বে ! শেষে দরজায় খিল দিয়ে সারাটাদিন না খেয়ে কাটাতে হয় । উঃ সে যে কি কষ্ট ! কিন্তু এ বছর মনে হয় না, শ্রেয়া আর নিজেকে বাঁচাতে পারবে বলে; কাজল এত সহজে তো চ্যালেঞ্জ হারবে না । যতই শ্রেয়ার রঙে এলার্জি থাকুক, কাজল রং ওকে মাখাবেই ।

রাতে শ্রেয়া যখন টিভি দেখে শুতে যাচ্ছিল, তখন সে শুনতে পেল, মা বাবা দুজনেই কথা বলছেন । বেশ উচ্চস্বরেই । শ্রেয়া কান পেতে পুরোটা না শুনলেও যতটুকু শুনল, তাতে কথোপকথনের বিষয়বস্তু শ্রেয়ার কাছে স্পষ্ট থেকে আরও স্পষ্টতর হতে লাগল ।

ঘরে ঢুকে শ্রেয়া বিষণ্ণমনে টিভি বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়ল । তার আর কিছু ভালো লাগছিল না । চোখ বন্ধ করে, পাশ বালিশটিকে কোনোরকমে দু'পায়ের মধ্যে গুঁজে ডানদিকে ফিরে শুয়ে রইল । চোখের দু'কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে বালিশটাকে ভিজিয়ে দিল । কত কিই না মনে পড়ছে তার এখন ! তার ছেলেবেলার কথা, বন্ধুর কথা, তার মা-বাবার কথা, এই ঘরের কথা ! এই ছোট্ট ঘরটিতে কম স্মৃতিই কি জড়ানো আছে? এই ঘর ছাড়া শ্রেয়া যে একমুহূর্তও থাকতে পারবে না; ভালো ঘুম হবে না; কিন্তু বিদায়ের সময় যে আসতে চলেছে; তার মা-বাবা যে শ্রেয়ার বিয়ের ব্যবস্থা করছেন !

হঠাৎ শ্রেয়ার চোখের জলের ধারা আরও বেড়ে গেল । চোখ বন্ধ করে পাশ বালিশটিকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদল সে। সে যে ভাবতেই পারছে না - আজ কি করে এত বড় হয়ে গেল সে?


পরদিন সকালে একটা খুট শব্দে নিদ্রাভঙ্গ হতে, চোখ খুলতেই চোখের সামনে একটা মুখ ভেসে উঠল শ্রেয়ার। আচমকা এক ভয়ার্ত শীৎকার দিয়ে ঠোঁটটা কেঁপে উঠলো শ্রেয়ার। স্বভাবতই সে ভয় পেয়েছে। তারপর - ভূত, ভূত, বাঁচাও বাঁচাও, দূর হয়ে যাও, দূর হয়ে যাও - বলে চেঁচিয়ে উঠে সারা বাড়ি মাথায় তুলতে লাগলো সে। শেষে শ্রেয়ার চিৎকার শুনে বেচারি ভূতেরও ভয় পাবার জোগাড়। ভূত সেজে শ্রেয়াকে ভয় দেখানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো দেখে, ভূতকেই শেষে মুখ খুলতে হল - আরে আরে, চুপ, একদম চুপ । আমি কাজল, ভূত নই ।

- তুই কাজল? তাহলে তোর মুখটা ঐরকম বাঁদরের মতো লাগছে কেন?

- ঐ ঐ, বাঁদর কাকে বলছিস? তুই বাঁদরী ।

- মুখটা একবার আয়নায় গিয়ে দ্যাখ ।

- আমার দ্যাখার দরকার নেই । আসলে তুই ভয় পেয়েছিস ।

- আচ্ছা, কাজল তুই আমার ঘরে ঢুকলি কি করে?

কিছুক্ষণের জন্যে শ্রেয়া ভুলেই গিয়েছিল আজ দোল । কাজল খানিক হাসতে হাসতেই জবাবটা দিল ।

- তুই কাল রাতে দরজা খুলেই শুয়েছিলি ।

শ্রেয়ার চট করে মনে পড়ে গেল গতরাতের কথা। যে ভয়ানক কষ্টে বুকফাটা কান্নায় রাত কাটিয়েছে, সেই রাতে শোবার আগে দরজা কি সে আদৌ বন্ধ করেছে?

- কিরে শ্রেয়া কি হল? কি ভাবছিস? আমার মুখে রং লেগেছে বলে আমার মুখটা বাঁদরীর মতো দেখাচ্ছে । আজ যে দোলপূর্ণিমা শ্রেয়া? আজ যে রং খেলার দিন।


কথাটা বলার পর হয়ত দশ সেকেন্ড অতিক্রান্ত হয়েছে, কিংবা তার থেকে হয়ত বা দুই সেকেন্ড বেশি, এমন সময় রং ভরা দুই কাজলের হাত শ্রেয়ার মুখের দিকে এগিয়ে এল । শ্রেয়া মুহূর্তের মধ্যে একটা বালিশ নিয়ে নিজেকে কোনোমতে বাঁচালো বটে, কিন্তু বালিশটা সরাতেই সে দেখল সাদা বালিশ রঙে ভিজে গেছে, আর তার রং এখন গাঢ় কালচে সবুজ । কিন্তু কাজল ছাড়বার পাত্রী একেবারেই নয় । সে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করল । কিন্তু শ্রেয়া এইবার নিজেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হল । মুখেচোখে রং লেগে একেবারে বিশ্রী করে তুলল । শ্রেয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কাজলকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল, আর সেই যে শ্রেয়া দরজা বন্ধ করল, তারপর হাজার ধাক্কাধাক্কি তেও কিছুতেই দরজা সে খুলল না ।


দরজায় ধাক্কা দেবার পরও যখন শ্রেয়া দরজা খুলল না, কাজল আর কিছু না বলে চলে গেল ।


ঠিক দশ মিনিট পর যখন শ্রেয়া দরজা খুলে বের হল, জামা কাপড় সব ভিজে চপচপ করছে তার। শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে নিজের গায়ের ওই রং ধুয়ে মুছে ফেলবার বৃথা চেষ্টা করে গেছে সে । কিন্তু বাঁদর রং, সহজে যে মুছবার নয়! তাই বাথরুম থেকে বেরিয়ে আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে নিবস্ত্র হয়ে, নিজের সারা শরীরটাকে খুঁটিয়ে দেখেছে সে। কোনো লজ্জা নেই । কিন্তু, নিজেকে এতো খুঁটিয়ে দেখবার যে কোনো কারণই নেই । নিজের শরীর যে ওর কাছে খুবই চেনা ! তবে আজকের দিনটা অন্যদিনের চেয়ে একটু আলাদা। এই আয়নার সামনে নিজেরই নগ্ন শরীরটা ওর নিজের কাছে আজ কেমন যেন অচেনা। একদৃষ্টে দেখলে, গাটা গুলিয়ে ওঠে। কোমল, ফর্সা, মেদহীন চামড়ায় সবুজ বাঁদর রং মিশে বিকৃত করে দিয়েছে। 

 

হঠাৎই সারা গায়ে চুলকানি ধরল শ্রেয়ার। গায়ে চাকা চাকা কিছু গোল গোল দাগ কোথা থেকে থাবা বসালো ওর নিজের অজান্তেই।

এক অসম্ভব ঘৃণা জন্ম নিলো শ্রেয়ার মনে । এলার্জি তো আছেই, তার সাথে কাজলের প্রতি রাগ ও ঘৃণার সংমিশ্রণ যেন শ্রেয়ার মনকে আরও বিষিয়ে দিল ।


দরজা ভেজানোই ছিল, নিজের গায়ে আবার পুরানো এক নাইটি গলিয়েই, দৌড় দিল, বাইরে । ডাইনিং রুমে পৌঁছেই দেখল কাজল ওর বাড়িতেই আছে এখনও, সোফায় বসে । শ্রেয়ার মা রান্নাঘরে রান্না করছিলেন, এমন সময় শ্রেয়াকে ওই অবস্থায় দেখে অবাক বিস্মিত হলেন । ভাবলেন হয়ত, এই মেয়ে সত্যি আমারই তো? যে মেয়ে রঙের নাম শুনলেই দশ হাত পিছিয়ে যায়, সেই মেয়ে কিনা আজ রং মাখল? সত্যি বিস্ময় !


কাজলের কাছে এগিয়ে গিয়ে কাজলকে কম খারাপ কথা সে বলেনি । সে বেশ ভালো ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে শ্রেয়া আজ ওর বন্ধুর এই ব্যবহারে কতটা কষ্ট পেয়েছে, কতটা শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে সে । দুই বন্ধুর কথোপকথনের মাঝে শ্রেয়ার মা খানিক নাক গলানোর চেষ্টা করলেও শ্রেয়া থামিয়ে দিয়েছে প্রায় তিন থেকে চারবার । মাকেও সে খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, দুই বন্ধুর মাঝে যেন কেউ না আসে কোনোদিন, কোনো ব্যাপারে ।


 


শ্রেয়া কথাগুলো কিছুটা আপন মনেই বলেছিল।

- তুই আজ থেকে আমার বন্ধু নস্, কথা বলবি না তুই ।


তারপর কেঁদে ফেলল । ঘরে ফিরতে ফিরতে জোর গলায় কিছুটা আর্তনাদের সুরেই বলতে লাগলো - আমার দিব্বি রইল কাজল, কথা বলবি না । তোর মুখ পর্যন্ত আমাকে দেখাবি না কোনোদিন। চলে যা, চলে যা তুই এখান থেকে । চলে যা ।


বলে দরজাটা বন্ধ করে দিল।


              ২


শ্রেয়া মন থেকে স্থির করেই ফেলেছে যে আর সম্পর্ক রাখবে না । ওর জন্যে মনের মধ্যে যে ঘৃণা জন্মেছে, সেই ঘৃণা ততদিন বেঁচে থাকবে, যতদিন শ্রেয়া বেঁচে থাকবে । রক্ত গরম তো আছেই, তার সাথে শ্রেয়ার গরম রক্তে এখন বিষ মিশেছে । সেই বিষ কাউকে মানসিক দিক দিয়ে বিধ্বস্ত করবার পক্ষে যথেষ্ট ।

শ্রেয়া দু'দিন তার মা ও বাবার সাথেও সেরকমভাবে কথা বলে নি । কাজল ইতিমধ্যে শ্রেয়ার বাড়ি কমপক্ষে কুড়ি থেকে পঁচিশবার এসেছে, কিন্তু, শ্রেয়া যে খুব জেদি, সে কারো ধার ধারে না । 

শ্রেয়ার শরীরে কালো চাকা চাকা দাগ কোথা থেকে যেন জুটে গিয়েছে আপনা হতেই । তবে শরীরের সবস্থানে নয়, কিছু কিছু স্থানে । দুই স্তনের ত্বকের নিম্নভাগের রং যেন সারা শরীরের সাথে বেমানান । এমনকি শুধু স্তন নয়, নাভির ঠিক নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত শ্যাওলা রঙে মিশে গেছে চামড়াটা । মাথার চুলও পড়ে যাচ্ছে স্নানের সময় । এক কথায় নিজের কাছে শ্রেয়া যেন অস্তিত্বহীন । অথচ মুখে, হাতে, পায়ে কোনো দাগই নেই । যে অংশ কাপড়ে লুকানো থাকে সবার চোখের আড়ালে সেই অংশেই এরকম শ্যাওলা রং? দেখলেই তো ঘেন্না জন্মাবে । বিয়ের পর স্বামী বলবে, সবাই ওকে ঠকিয়েছে । এমন অসুন্দর জানলে, কেউ বিয়েই করবে না!


 একসপ্তাহ এইভাবে একাকিত্বে দিনযাপনের পর, এক বিকেলে বাবা ও মায়ের পছন্দ করা এক ছেলে শ্রেয়াকে দেখতে এল । শ্রেয়া এখন মানসিক দিক দিয়ে প্রস্তুত । কিন্তু শারীরিক দিক দিয়ে নয় । তার মাথার চুল এখন অর্ধেক । কপালের কাছটা হালকা টাক পড়েছে। ডাক্তার দেখিয়ে, ওষুধ খেয়েও কোনো কাজ দেয় নি । কিন্তু আজ যে ছেলে আসবে শ্রেয়াকে দেখতে; তবে কি শেষে শ্রেয়াকে পরচুলা পড়তে হবে? 


চায়ের ট্রে হাতে যখন ছেলের বাড়ির লোকের সামনে শ্রেয়া হাজির হল, তখন শ্রেয়াকে দেখে বাড়ির সবার মুখ হাঁ হয়ে গেল । এত সুন্দর প্রতিমার মতো মুখ? এই মুখকে কি আর না বলে থাকা যায়? এ যে শুধু সুন্দরই নয়, এককথায় অপূর্ব ।

অগত্যা এককথাতেই বিয়ে ঠিক হল ঐ ছেলেটার সাথেই । ছেলেটার নাম রঞ্জন মিত্র । বাড়ি বসিরহাটে। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার বটে । আর্থিক দিক থেকে বেশ স্বচ্ছল । তাই মেয়ের বাড়ি থেকেও এইরকম ছেলে পাওয়া একপ্রকার দুঃসাধ্যই বটে ।


দুই মাস পর, যখন চৈত্র আসতে তখনও দেরি সাত দিনের মতো, ফাল্গুনের নয় তারিখ, আকাশ যখন বসন্তের রঙে রাঙা, কোকিলের কুহু কুহু শব্দে যে সকালের শুরু হব হব করছে, ঠিক সেই দিনটাই শ্রেয়ার জন্যে সবথেকে বড়দিন । শ্রেয়ার আজ বিয়ে ।


সানাই বাজার সাথে সাথে যে ছোট্ট মেয়েটি ছোটবেলা থেকে মা ও বাবার কাছে আবদার করে গেছে আমার এই চাই, ঐ চাই, সেই মেয়ের হাসিখুশি ভাবটা এখন উধাও । এখন সেই মুখে বিদায় নেবার যে কষ্ট চোখের জলে ভাসছে, সেই কষ্টে শ্রেয়া সকলের কাছ থেকে মুখ আড়ালের চেষ্টায় মুখ ঘুরিয়ে রয়েছে সেই সকাল থেকেই । না কারোর সাথে কথা বলেছে, না ওর সেই কষ্টে ভরা মুখটাকে কারও সামনে এনেছে । সে এখন লুকোতে চায়, সবার কাছ থেকে ।


বিয়ের সময়টাতেও শ্রেয়া পরচুলা পরতে বাধ্য হয়েছে। শ্রেয়া যে মুখ ফুটে বলতে পারছে না, যে তার এই রূপ বিশ্রী, কুৎসিত । সামান্য রং খেলার জন্যেই যে স্কিনে এলার্জির সমস্যা হয়ে মাথার প্রায় সমস্ত চুলই পড়ে গেছে । সামান্য কিছু অবশিষ্ট আছে । ওটাও হয়ত ঝরে যাবে আর কিছুদিন পর । তারপর সারা মাথায় টাক পড়বে । ইসস কি বিশ্রীই না বলবে ওকে । সুন্দরেরই যে খ্যাতি থাকে । আর অসুন্দরেরা পড়ে থাকে পাঁকে । কিন্তু ওর যে এই অসুন্দরতা, তা তো জন্মগত নয়? কোনো এক বিশ্রী দুর্ঘটনায় ওর এই অবস্থা হয়েছে । যার জন্যে ওর সবথেকে প্রিয় বন্ধু কাজলকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে সে পারে নি । এতে তো শ্রেয়ার কোনো দোষ নেই?


বিয়ের আগের মুহূর্তে দরজা বন্ধ করে একলা আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে পরচুলা খুলে নিজেকে একবার দেখে নিল শ্রেয়া । আর কতদিন, কতদিন তাকে এই মিথ্যের আশ্রয় নিতে হবে? কতদিন পরচুলা পড়ে দিন কাটাতে হবে? পরচুলা পড়ে রাস্তায় যেতে হবে? আর যার কাছেই হোক, স্বামীর কাছে তো আর মিথ্যে বলতে পারবে না। সে মিথ্যে ধরা পড়ে যাবে ফুলশয্যার দিনই । আর তারপর? 


- কিরে শ্রেয়া তোর হল? বর যে এসে গেছে । তাড়াতাড়ি কর ।

শ্রেয়া চটপট পরচুলাটা পড়ে নিল । নিজেই নিজেকে আবার কনের সাজে সাজিয়ে দিয়ে, চোখ মুছে দরজাটা খুলে বাইরে আসতেই দেখল বান্ধবী শ্রাবন্তী দাঁড়িয়ে আছে ।


- এই তো আমার বন্ধু বলে কথা । কিরে তুই কাঁদছিলিস? সত্যি করে বল?

- আমার বিয়ে, আর আমি কাঁদবো না? হ্যাঁ কাঁদছিলাম ।

- একটু শক্ত হ' । চ' বর এসে গেছে । যাই বলিস তোর বরটাকে কিন্তু হেব্বি দেখতে ।

- এতই যখন পছন্দ তখন তুইই তো বিয়ে করতে পারতিস ।

- তুই না? তোর সবসময় ট্যারা ট্যারা কথা । চল চল, সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের ।


বিয়ের পিঁড়িতে শ্রেয়া বসল। সানাই বাজলো । ভোজ বাড়িতে আমন্ত্রিত ব্যক্তি, পরিবার সবাই ভোজ সেরে বাড়িও ফিরল । কাজলও খবরটা পেল । বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়েতে আমন্ত্রিত না হতে পারাটা একপ্রকার প্রেস্টিজ ডাউন হবার মত। তবে কাজল কিছু খারাপ মনে করে নি । সে যে নিজেকেই এখনও ক্ষমা করতে পারে নি সেই দিনটার জন্য ।

কাজল একমাস হল একটা কাজের সূত্রে কলকাতার বাইরে চলে গেছে । মা বাবা, ভাইকে নিজের কলকাতার বাড়িতে রেখে শান্তিনিকেতনে একটা প্রাইমারি স্কুলে টিচারের কাজটা বেশ সাদরেই গ্রহণ করেছে । সোম থেকে শনি স্কুলে পড়িয়ে ওখানেই একটা পিজি তে থাকে । আর প্রতি রবিবার অন্তর কলকাতায় মায়ের কাছে আসে । সব পুরানো কথা যেন ভুলতে বসেছিল কাজল । সত্যিই বর্তমান অনেক কিছুই ভুলিয়ে দেয় ।


              ৩


বিয়ের পর বিদায়ী অনুষ্ঠানে শ্রেয়া অতটা কাঁদলো না, যতটা যে কোনো বঙ্গনারী কেঁদে ওঠে । একপ্রকার গোমড়ানো মুখ নিয়েই বাপের ঘর ছেড়ে শশুর বাড়িতে উঠল শ্রেয়া । নিজের হাতে করে গোছানো খাট, বিছানা, নিজের ঘর সবই এখন অতীত । এখন যা আপন, তা শুধুমাত্র ঐ অগোছালো, বিশ্রী একটা ঘর, যার মালিক এক বড়লোকি চালে গড়া বড়োলোকের সন্তানের । যে কিনা, স্নানের জলটাও গরম করতে জানে না । আদরে বাঁদর হওয়া ছেলের জন্যে শ্রেয়া যে উপযুক্ত তা বোধ করি ভগবান নিঃসন্দেহে জানতেন, তা না হলে এমন একটা সম্মন্ধ তিনি গড়তেন না । ঐ যে কথায় আছে, জন্ম মৃত্যু বিয়ে, তিন বিধাতা নিয়ে...

পরদিন বৌমার হাতের পালং শাকের চচ্চড়ি, আর মাছের মাথা দিয়ে ডাল ছাড়াও যখন পাঁঠার মাংসটা শশুড়বাড়ির লোকে চেটে পুটে খেলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ মেয়ে হয়ে উঠেছিল একেবারে চোখের মণি, যাকে চোখে হারানো যায় না । কালরাত্রি কাটার পর যখন রিসেপশন ও ফুলশয্যার রাত এল, বৌকে তখন কি সুন্দরই না লাগছে । আসলে লাগবেই তো, এখনও যে স্বামী তার স্ত্রীয়ের গায়ে হাত পর্যন্ত রাখে নি। সেই পরচুলা এখনও যে সাজের আড়ালে লুকিয়ে ।


ফুলশয্যার রাতে নৈশভোজের পর গোলাপ সাজানো পালঙ্কে যখন নববধূ হাঁটু মুড়ে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে তখন স্বামী এসে স্ত্রীয়ের পাশে এসে বসল । তারপর ঘোমটা নামিয়ে একটু থুতনি টা নাড়িয়ে দিয়ে একগাল হাসি নিয়ে বলল, কি মিষ্টি মুখ ।

শ্রেয়ার বুক এখন আরও বেশি কাঁপছে । বুকের ওঠানামা বেড়ে চলেছে ক্রমাগত। নিজের সাথে এতদিনের যে লড়াই শ্রেয়া করে এসেছে, তার নিষ্পত্তি চায় সে । সে মন খুলে কাঁদতে চায় । 


ঘড়ির কাঁটার টিকটিক শব্দ ছাড়া ঘরে আর কোনো শব্দ নেই। রঞ্জনের শরীরের ভিতরের পুরুষত্ব বোধটা হঠাৎ করে বোধ হয় ঠিকরে বের হতে চাইল। শ্রেয়াকে এক ধাক্কায় শুইয়ে দিয়ে ব্লাউজের হুক খুলতে লাগলো সে। তবে শ্রেয়া একটুও বাধা দিল না । শুধু চোখ বন্ধ করে রইল । তারপর যখন শ্রেয়ার বুক রঞ্জনের সামনে উন্মুক্ত হল, খানিক ভয়ে রঞ্জন পিছিয়ে এল । মুখ দিয়ে এক গোঙানির মতো শব্দ বেরোলো - এটা কি? কালো শ্যাওলা পড়া চাকা চাকা দাগ কেন?


শ্রেয়া একটুও বিচলিত না হয়ে উঠে বসল, তারপর মুখ নামিয়ে বলতে লাগল - আমি জানি তুমি অবাক হচ্ছো, কিন্তু এই দাগটা আমার জন্মগত নয়, এটা ইনফেকশনের দাগ । আরও কিছু আছে । আমাকে পারলে ক্ষমা করো ।

এই বলে পরচুলাটা খুলে ফেলল সে । পরচুলার আড়ালে যে কতক চুলের অধিকারিণী হয়ে এতদিন কাটিয়েছে, তা দেখে রঞ্জন ভয়ে আর্তনাদ করে উঠল । আর সেই আর্তনাদের ফলে সঙ্গে সঙ্গে দরজায় কতক ঘা পড়তে শুরু করল। রঞ্জন দরজাটা খুলতেই, কি হয়েছে? কি হয়েছে বাবু? - বলতে বলতে শ্রেয়ার শাশুড়ি মা ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর পিছন পিছন ঢুকলেন রঞ্জনের বাবা ।


ব্যাস, ওখানেই ইতি । ভাগ্যিস লোকজনের সামনে এই ব্যাপার হয় নি । নাহলে সকলের সামনে মাথা কাটা যেত রঞ্জনের পরিবারের । সেটা যে হয়নি সেটাই রক্ষে ।


 

              ৪


কাজলের বিয়ে ঠিক হয়েছে । একপ্রকার জোর করেই । মায়ের শরীরের অবস্থা ভালো নয় । ছেলের নাম অমল । শান্তিনিকেতেই থাকে । পেশায় শিক্ষক । একই স্কুলে শিক্ষকতা করে । এটাকে লাভ ম্যারেজ ও বলা যায়, কিন্তু ঐ যে চক্ষুলজ্জা বড় লজ্জা ! বাবা মার সন্মান যাতে নিচে না নামে, সেই কারণেই কাজলের মাথা থেকে এইপ্রকার বুদ্ধির আবির্ভাব । এমনভাবে ছেলে ঠিক হল যাতে কেউ সন্দেহই না করতে পারে যে ওরা প্রেম করে বিয়ে করেছে । 

একসপ্তাহের মধ্যেই অমল আর কাজলের বিয়ের সানাই বাজলো । কাজলের কর্ম জীবন আর বিবাহিত জীবন - দুইই যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল । দুইয়েরই গন্তব্যস্থল - শান্তিনিকেতন ।

অন্যদিকে শ্রেয়ার ডিভোর্স হয়েছে । নববধূর এই কুৎসিত চেহারাকে রঞ্জন চায় না । কত মেয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এইরকম ইঞ্জিনিয়াবের জীবনসঙ্গিনী হতে, আর এই কুৎসিত কিনা হতে চায় রঞ্জনের স্ত্রী? সখ কম নয় মেয়ের ! 


শ্রেয়াকে নিজের বাবা মাও থাকতে দিলেন না । ' মুখপুড়ি ' নাম দিয়ে এক ধাক্কায় বাড়ি থেকে বের করে দিলেন । সদ্যবিবাহিত স্ত্রীয়ের যৌবন শরীরকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়ার জন্যে রাস্তার কতক ছেলে ছোকরা ওঁৎ পেতে বসে রইল । কখন মেয়ে রাস্তায় নামবে, আর সেইসব ছেলেরা ওর শরীর নিয়ে খেলবে !

তাই শ্রেয়া এখন নিরুপায় । পাগলির বেশে, ঐ মাথায় সামান্য চুল নিয়েই রাস্তায় একা হাঁটতে লাগে সে । গন্তব্যস্থল - জানা নেই । চলতে চলতে এক গাছের নিচে বসে চোখের জল ফেলতে ফেলতে হঠাৎই তার মনে পড়ে, তার বন্ধু কাজলের কথা। কাজল কি এই দুর্দিনে ওর এই বন্ধুটাকে একটু হলেও সাহায্য করবে না?


 

             ৫


টিং টং ।


 

দরজা খুলতেই চমকে উঠলেন কাজলের মা, বাবা । চমকে ওঠবার কারণ অবশ্য দুটো হতে পারে - এক, শ্রেয়ার চুলবিহীন এই বিশ্রী মুখ ; অথবা দুই, এতদিন পরে, যে বন্ধুকে নিজের বিয়েতেও নিমন্ত্রণ করে নি, সেই বন্ধুর সে এখন খোঁজ নিতে এসেছে?


প্রথমে কাজলের মা, এখানে কেউ থাকে না - বলে দরজা বন্ধ করে দিতে চাইছিলেন, কিন্তু কাজলের বাবার ভয়ে সেটা করতে পারলেন না । শ্রেয়া ঘরে ঢুকেই দুজনকে প্রণাম করল । তারপর জিগ্যেস করল, কাজলের কথা । কাজলের বিয়ের কথা শুনে মনে মনে খানিকটা খুশি হলেও নিজের কথা ভেবে মনটা ভারী হয়ে গেল । নিজের অতীতের সমস্ত কথা তাঁদের জানিয়ে চোখের জল মুছলো শ্রেয়া। 


 

কাজলের বাবা, মেয়েকে একটা ফোন করলেন । ওপার থেকে কলটা রিসিভ হতেই, শ্রেয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল - আমি অনেক পাপ করেছি রে, আমায় ক্ষমা করে দে ।


কাজল বুঝলো, অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু তার মনেও যে অসম্ভব এক কষ্ট জমে ছিল, সেই কষ্টের নিবারণের সময় হয়ত আজ উপস্থিত।

কাজল ঠিক করল কালই অমলকে নিয়ে সে কলকাতা যাবে । শ্রেয়ার সাথে দেখা করবে । গলা জড়িয়ে খানিক কাঁদবে । ক্ষমা চাইবে । বলবে, বোন আমায় ক্ষমা করে দে ।


কিন্তু...ভগবান বোধ করি, দুই বন্ধুর দেখা হওয়াটা বাস্তবে রূপান্তরিত করতে চাননি । কাজল আজ সকালের ট্রেনেই ফিরেছে । বাড়িতে এসে দেখে ওর বাবা খুবই বিস্মিত, মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আছেন । আর মা রান্নাঘরে রান্না করছেন । কাজল বাবাকে জড়িয়ে ধরে খানিক আদর করে, রান্নাঘরে চলে ঢুকে মায়ের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল - মা, শ্রেয়া কোথায়? ও কি বাথরুমে? 

- ও চলে গেছে ।

কথাটা খুব একটা গম্ভীর না হলেও, কাজলের কাছে এই কথাটা খুব অযৌক্তিক। কারণ যে মেয়েটা গতকাল তাকে ফোন করেছিল, সেই মেয়েটার চোখ বেয়ে ঝরে পড়া অশ্রু অন্তত মিথ্যে হতে পারে না; যে মেয়েটার মুখ থেকে কান্নাভেজা গলায় ক্ষমার সুর ভেসে এসেছিল, সেই মেয়েটাই কিনা আজ ওর আসার আগে চলে গেল?


- মা, কি বলছো ? চলে গেছে? কোথায় যাবে এত সকালে? ও আমায় সব বলেছে মা । ওর যাবার যে কোথাও জায়গা নেই ।

- কোথায় গেছে আমি কি করে জানবো? আচ্ছা মেয়ে তো তুই ।

- মা, কিসব বলছো তুমি?


 

কাজল এক ছুট্টে ওর ঘরে এল । তারপর টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই দেখল, একটা চিঠি । হাতের লেখা চিনতে খুব একটা অসুবিধে হল না কাজলের ।


প্ৰিয় বন্ধু,


 

জানি তুই এসে আমার ওপর রাগ করবি, সকলের কাছে জানতে চাইবি যে আমি কোথায়? হয়ত খোঁজাও শুরু করে দিবি, কিন্তু, আমি বলব আমাকে আর খুঁজিস না রে । তুই নতুন বিয়ে করেছিস, নতুন সংসার । আর সেই সংসারে আমি আসতে চাই না । আমি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি বোন । সেই যে তুই আমায় রং মাখিয়েছিলিস? তার জন্যে আমার স্কিনে ইনফেকশন হয়েছিল বোন । তুই তো শুধু আমার বন্ধুই নোস্, আমার বোনও বটে । তাই অনেক রাগ হয়েছিল । এতবার করে বলা সত্ত্বেও তুই সেই রং দিলি । সেই থেকেই আমার জীবনের নতুন চ্যাপটার শুরু হল । বলা ভালো ধ্বংসের পথে বিলীন হয়ে যাবার দরজা খুলে গেল । আমার বুকে চাকা চাকা কালো দাগ জন্মালো রে । আর মাথার সমস্ত চুল পড়ে গিয়ে বাকি কয়েক চুলের অবশিষ্ট পড়ে আছে । নেড়া হতে গিয়েছিলাম, কিন্তু ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছিল, মাথায় ক্ষুর লাগানো যাবে না । তাতে স্কিনের আরও ক্ষতি হবে । এমন সময় আমার বাবা ও মায়ের হাতে একটা ছেলের সম্মন্ধ নিয়ে এল আমার পিসি । খুব বড়োলোক জানিস । আমার বাবার মনে লাভ জন্মালো । আমাকে একবারের জন্যেও জিগ্যেস করলেন না যে আমি এই বিয়েতে রাজি কিনা? অবশ্য এই মুখপুড়িকে কেই বা বিয়ে করত? রাজি না হয়ে উপায়ও যে ছিল না । তবে আমি কোনোদিনই মিথ্যার আশ্রয়ে থেকে কাউকে ঠকাতে চাই নি । কিন্তু আমার বাবা আমাকে পরচুলা পড়ালেন । বুকের ঐ কালো চাকা দাগটাকে হয়ত রঞ্জন স্বীকার করে নিয়েছিল, কিন্তু এই চুলবিহীন মাথাটাকে গ্রহণ করতে সে পারল না । চিৎকার করে বাড়ির লোক ডাকল । ওর বাড়ির লোকও আমায় দেখে অবাক হয়ে গেল । শেষে এই মেয়ে কিনা ওদের বাড়ির বৌ? ডিভোর্স দিয়ে দিল জানিস? রঞ্জন এমনিতে খুব ভালো মানুষ । কিন্তু ঐ যে, রূপ জিনিসটাই শেষ কথা; শুধু ফর্সা হলে হবে না, তোমাকে পুরোপুরি পারফেক্ট হতে হবে । আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম রে । এই ঘটনার পর আমার নিজের বাবা মা ও আমাকে আপন করতে পারল না । তারপর মনে পড়ল, কেউ থাকুক আর নাই থাকুক, তুই আছিস । তুই আমাকে ঠিক আপন করে নিবি । তুই যে আমার সেই বন্ধু রে, যাকে আমি বোন বলে ভেবে এসেছি । তাই স্বার্থপরের মতো চলে গেলাম তোর বাড়ি । কিন্তু ভুলে গেলাম জানিস, তোর ও যে একটা পরিবার আছে । কাকু আমাকে থাকার জায়গা দিয়েছেন । মন থেকে খুশি হয়েই, কিন্তু কাকিমা মনে হয় আমাকে এখানে থাকতে দিতে চান না । সত্যিই তো শুধু শুধু টাকা খরচ করার কোনো মানেই হয় না ।


আমাকে খোঁজার চেষ্টা করিস না । যেদিন আমায় খুঁজে পাবি, সেদিন আমি নড়বও না, চড়বও না । হয় নিথর দেহটাকে দেখবি, আর নাহয় আমার ফটোতে মালা পড়াবি ।


 


                                 ইতি,


তোর শ্রেয়া


গঙ্গায় তখন বাণ এসেছে । কাজলের বাড়ি থেকে গঙ্গা বেশ কাছেই । ইতিমধ্যেই কোলাহলের সৃষ্টি হয়েছে ঘাটের কাছে । কাজল আর অমল দুজনেই ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল । তারা যখন সিঁড়ির একদম কাছে এসে উপস্থিত হল, দেখল মানুষের ভিড় একদম শেষ ধাপে পৌঁছেছে । সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছে মানুষের ভিড় ঠেলে যখন সামনে এল, দেখল শ্রেয়ার দেহ চিৎ হয়ে শুয়ে আছে । সে দেহ নিথর ।


 


***********


 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama