STORYMIRROR

Suva Chakraborty [ অগ্নিদ ]

Children Stories Others

4.5  

Suva Chakraborty [ অগ্নিদ ]

Children Stories Others

বোঝো কান্ড

বোঝো কান্ড

4 mins
521


- এবার কি শোওয়া হবে? নাকি সারারাত গাঁজাখড়ি মাখানো গল্পগুলো পড়বি?

- দাঁড়াও না মা ? শোবো তো ! আগে এই গল্প টা পড়েনি ।

- ঠিক আছে । কিন্তু আজকের মতো যদি কালও দেরি করে উঠেছিস; তবে এই বেলুনের ঘা পড়বে বলে দিলুম ।

বলু এখন ক্লাস ইলেভেনে পরে । বুদ্ধি ও বাড়ের দিক থেকে তার দাঁড়িপাল্লা সমান অংক কষতে পারে না ।

বুদ্ধি তে বোকা বাক্সের মালিক র বাড়ের দিক থেকে তালগাছ । কিন্তু সে সখের রাজা। কোনদিন যে তার কি সখ চাপবে তা কেউ বলতে পারে না ।

ধরুন - যেদিন তার সখ চাপবে ডাক্তার হবার, সেদিন সারাক্ষণ মায়ের নাড়ি পরীক্ষা করে বলবে - জ্বর হবার সম্ভাবনা। আর তখনই দুই বেলুনের ঘা ।।

আজ , তার সখ হযেছে গোয়েন্দা হবার । এই ক'দিনে তার গোয়েন্দা হবার সখ এত বেড়েছে , যে প্রতিদিন একটা করে গোয়েন্দা গল্প না পড়লেই নয়। তবে জ্ঞান হবার পর থেকেই বলুর যে কতগুলো সখ মনে জন্মেছে , তা আমি ভুলে গেছি। কি অবস্থা ভাবুন -' আমি লেখক আর আমি যাকে নিয়ে লিখছি, তার কান্ড কলাপে আমিই পাগল হবার জোগাড় ।

আজ আমি বলু কে নিয়ে ঠিক এমনই এক ঘটনার কথা বলব যা বলু সম্পর্কে আপনাদের মনোভাব আরো সুদৃঢ় হবে ।

রাত ১১ টা বাজার পরও যখন বলু শুতে গেল না , পিঠে পড়ল অকস্মাৎ বেলুনের দুই ঘা । । চিৎকারে এক লাফে বলু বিছানা ছেড়ে নিচে নামলো । মা বেলুন নিয়ে বসে আছেন ! অগত্যা কি আর করার! বলু শুতে চলে গেল ।

নিজের বলতে বলুর মা ' বাবা , আর ঠাকুমা। দাদু অনেক বছর আগেই গত হযেছেন ।

ঠাকুমার সাথেই বলুর ভাব যেন খুব বেশি। ঠাট্টা , ইয। র্কি র সাথে সঙ্গী বানালেও শ্রদ্ধা , ও সন্মান ও করে ভালোবাসা দিয়েই । ।

ঠাকুমার দাঁত নেই , তবু কোথা থেকে দাঁত জোগাড় করে নিয়ে এসে ঠাকুমার মাড়িতে পরিয়ে দেবে । ঠাকুমা হয়ত তখন ঘুমাচ্ছেন আর তখনই নীচ থেকে কোন ডাক্তার এসে চেঁচাবেন - "হতভাগা , আমার চেম্বার থেকে দাঁত চুরি করলি ! - দে দাঁত দে "। আর তখনই চলবে "দাঁত ছিনোবার লড়াই" । একে তো ঠাকুমার দাঁত নেই , তার উপর দাঁত খুলে যাবার সামিল।

এমনই করে যখন দিন কাটছে , সেই রাতেই ঘটল এক ভীষণ কান্ড !

বলুর বাবা সেইদিন নিমন্ত্রনে গেছেন। ফিরতে তাঁর রাত হবে। তাই বাড়ির মেইন গেটে তালা না দিয়েই সবাই শুয়ে পড়েছে। রাত যখন প্রায় ২টো, তখন নীচ থেকে 'ঘুট' শব্দে বলুর নিদ

্রাভঙ্গ হল। -

"চোর নাকি? "

বলুর চোখ ঘুমে বুজে আসছে, তবু তো দেখতে হবে !

খাট থেকে নীচে নেমে দরজার পিছনের খিলটি নিয়ে বাইরে বেরোল।

দোতলার বারান্দায় গিয়ে থামের পিছনে নিজেকে আড়াল করে নিচে তাকাল। দেখল - একটি লোক চুপি চুপি চাদর মুড়ি দিয়ে গেট খুলে ভেতরে ঢুকছে।

আলো ওতটা ছিল না , তাই সে মুখ দেখতে পেল না।

বলু পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে করে সিঁড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। আর তখনই হঠাৎ করে তার মাথায় এক বুদ্ধি খেলে গেল। সে যদি এই চোর টাকে ধরতে পারে , তবে তো সে " বিকেম ফেমাস "। তার নাম হবে " ব্যোমকেশ জুনিওর_বলু সিকদার "। কি খাসা নাম হবে তার ! আহা !

ভাবতে ভাবতে বলু যখন নীচের বারান্দায় এলো, চোর তখন হাঁটু গেঁড়ে বসে কি যেন করছে। চোর সবে উঠে দাঁড়িয়েছে, আর তখনই বলু দিল চোরের পায়ে খিলের দুই বাড়ি । খিলের ঘা এর শব্দে বলুর মা, ঠাকুমার ঘুম তখন ঘুঁচে গেছে। তাঁরাও এলেন নিচের বারান্দায়। এসেই 'চোর চোর' করে চেঁচিয়ে সমস্ত পাড়াকে জাগিয়ে তুললেন। এদিকে চোরের অবস্থা খুবই খারাপ। বেচারা যখনই কিছু বলতে যাচ্ছে, তখনই বলু চোরের পায়ে খিলের ঘা দিয়েই চলেছে।

এদিকে বলুর মা হঠাৎ বলে উঠলেন , - "বলু, ব্যাটাকে পুলিশে দেব, ধর ব্যাটাকে, ব্যাটা চোর। "

এদিকে ঠাকুমা তখন বারান্দার আলো জ্বালিয়েছেন। আর তখনই বলুর মা আর ঠাকুমা আঁতকে উঠলেন। মা তো জ্ঞানই হারালেন! আর ঠাকুমা তো, ' ওরে আমার পল্টু রে ' - করে চেচাঁতে লাগলেন।

বলু তো চোরের চাদরের তলায় ঢুকে গেছে! যখন বের হল , তখন দেখল - এ তো চোর নয়, এ তার বাবা।

মায়ের যখন জ্ঞান ফিরল, বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল। এক সপ্তাহ পরে যখন বলুর বাবা বাড়ি ফিরলেন, তখন দুই পায়ে ব্যান্ডেজ করা, পুরোপুরি বেড রেস্ট।

বলুর গোয়েন্দা হবার সখ ঘুঁচে গেছে। ঘটনার এক মাস পরে বলু লাইব্র্রেরি গেল। বই হাতড়ানোর সময় সবার প্রথমে হাত গেল - বিভূতিভূষন বন্ন্দ্যোপাধ্যায় - "চাঁদের পাহাড়"।

ব্যাস! আমি আর কিছু বলব না। এরপর আপনারাই ভেবে নিন, যে ছেলের সখ চাপলে রাত্রে তা জেগে ওঠে, চাঁদের পাহাড় পড়লে শংকর হবার সখ যদি বলুর চাপে - তাহলে তার বাড়ি আফ্রিকায় পরিনত হবে - বুঝুন তাহলে কি কান্ডই না হবে !


সমাপ্ত......



Rate this content
Log in