Rima Goswami

Tragedy Crime

3  

Rima Goswami

Tragedy Crime

অভাগা যেখানে যায়

অভাগা যেখানে যায়

5 mins
189


আস্তে আস্তে আমি তলিয়ে যাচ্ছি অতলে, নিঃশাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার.... ভুর ভুর করে জল ঢুকছে আমার নাক দিয়ে... কিন্তু তবুও আমার ভালো লাগছে.... জানি আর বেশি ক্ষণ এই রেশ থাকবে না জড়পদার্থ হয়ে যাবো আমি তবুও উপভোগ করছি জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ এর এই ভালোলাগা টাকে..


লক্ষ কোটি বীর্য র মধ্যে দৌড়ে আমি হয়েছিলাম প্রথম তাই তো জিতে ছিলাম জীবন যুদ্ধ.... জন্ম নিয়েছিলাম মাতৃগর্ভে... আশুতোষ এবং ভদ্রা তিলোতপানি র সন্তান বিয়াস তিলোতপানি.... উচ্চবিত্ত পরিবারের একমাত্র সন্তান বলে অভাব কি জানতে পারিনি.... সেন্ট লরেটো র স্টুডেন্ট.... এবং ক্রমে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি.... পথটা মসৃন ই ছিল... কিন্তু ইউনিভার্সিটি মাঝপথে ছাড়তে হলো.... বাবা আশুতোষ তিলোতপানি র ইচ্ছায় পারি দিলাম বিদেশে.... গন্তব্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি.... গেলাম পড়লাম দেশেও ফিরলাম.... বেঙ্গালুরু তে বড় কোম্পানি তে সিইও হিসাবে জয়েনও করলাম.... মা এর মধ্যে গত হয়েছেন.... কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিগত কয়েক বছর ধরেই.... আমি দেশে ফেরার আগেই চলে গেলেন.... কী আশ্চর্য আমার বাবা একবার মা র শরীরের অবনতি র তথা মৃত্যুর পর্যন্ত খবর আমাকে দেন নি.... অকাট্য যুক্তি আমার পড়ার ক্ষতি হত ..... আমি এই শাসনে এর জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম তাই কিছুটা ইচ্ছা করেই ব্যাঙ্গালুরু তে জব নিলাম...


শুধু মাত্র বাবার থেকে দূরে থাকার আকাঙ্খা তে.... আমার মা ভদ্রা ছিলেন অসম্ভব গুণী মানুষ... অপরের ইচ্ছা কে যত্নের সাথে পূরণ করার চেষ্টা করতেন... যাদবপুরে পড়ার ইচ্ছা আমার ছিল... মা চেষ্টা করেছিলেন আপ্রাণ ... সফল ও হয়েছিলেন ... কিন্তু আমার উচ্চবিত্ত মানসিকতা র বাবা র ইচ্ছা আমি বিদেশ এ পড়ি... আর এই নিয়ে দীর্ঘ অশান্তি তে মা আর পেরে উঠছিলেন না তাই আমি নিজেই মা কে মুক্তি দিতে বাবার কথায় রাজি হয়ে গেলাম... এয়ারপোর্টে মা কে শেষ দেখেছিলাম... সেই শেষ... ব্যাঙ্গালুরু তে নতুন জীবন ভালোই চলছিল যা আমি আমার দীর্ঘ ছাব্বিশ বছরের জীবনে পাইনি তা পেলাম.... নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার... বিদেশে থাকা কালীন মদ মেয়ে ড্রাগ সবই চেখে দেখেছি কিন্তু বাবার ভয়ে উপভোগ করতে পারিনি... অফিস আওয়ার্স টুকু বাদ দিয়ে সারাদিনই নতুন বন্ধুদের সাথে হৈ হুল্লোড় ... রাতে ডিস্কো থেক, লেট নাইট পার্টি , wanna হ্যাভ এ গুড টাইম বলে এসকর্ট সার্ভিস এর লাক্সারি সার্ভিস নেওয়া এই হলো আমার নিত্য জীবন


কিন্তু কথায় আছে না অভাগা যেখান যায় সাগর শুকায়ে যায়. তাই সুখের দিন গেলো একটি যৌন কর্মীর প্রেমে পড়লাম.. তৃনাশ্রী রত্নাকর নাম তার... সুন্দরী উত্তেজনাময়ী... কামদেবের আশীর্বাদ এ সৃষ্ট কামিনী .... এসকর্ট সার্ভিসের সাথে যুক্ত বছর খানেক ধরে... রোজকার মতো এ দিন ও সার্ভিস দিতে ওরা মেয়ে পাঠাবে বলে আমি সন্ধ্যা সময় অপেক্ষা করছিলাম নিউ ওপেন করা whisky র বোতল টা থেকে জাস্ট একটু গ্লাসে নিয়ে ছি আর ডোর বেল বেজে উঠলো... দরজা খুলে আবিষ্কার করলাম তৃনা কে... প্রথমে ভেবেছিলাম এত ভদ্র স্নিগ্ধ মেয়ে আর যাই হোক এস্কর্টে কাজ করতে পারে না তাই অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন... তৃনা র ডাকে সম্বিৎ ফিরে এলো... সে তার পূর্ণ পরিচয় জানালে কিছুটা হতাশ ই হলাম... যাই হোক সেদিন সন্ধ্যে থেকে রাত পেরিয়ে ভোর হলো  তৃনা র সাথেই.... যদিও সে প্রথমেই আমার ইচ্ছে র কথা জেনে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলো যে রাত যদি তাকে আমার সাথে কাটাতে হয় তা হলে দ্বিগুন মূল্য চোকাতে হবে... আমিও নির্দ্বিধায় রাজি হয়েছিলাম . ভালোলাগা টা সে দিনই শুরু হয়ে গিয়েছিলো ... আমি তোমাকে ভালোবাসি এ কথা টা বলতে যদিও তিন মাস সময় নিয়েছিলাম আমি.... এর মধ্যে আমি আর অন্য কোনো মেয়ে এসকর্ট থেকে বুকিং করাই নি... তৃনা আমার কাছে রোজ আস্ত কিন্তু এসকর্ট থেকে না নিজেই পার্সোনালি.. যে দিন ভালোবাসা র কনফেস করলাম তৃনা কান্নায় ভেঙে পড়লো.... আমার ফ্ল্যাট এ যেন চাঁদের হাট বসলো সে দিন রকমারি রান্না... আর আমাদের সংসার কী ভাবে আমরা গোছাবো সেই আলোচনা.... হু হু করে সময় পেরিয়ে গেলো...

আমরা বিয়ের দিন ঠিক করলাম বাবার অনুমতি বা তাকে জানানোর কোনো প্রয়োজন আমি বোধ করিনি... তৃনা একটা সমস্যা র কথা জানালো যে সে এসকর্ট সার্ভিস wanna হ্যাভ আমি গুড টাইম এর সাথে তিন বছরের চুক্তি তে আবদ্ধ আর তার ছয় মাস এখনো বাকি তাই সে বিয়ে টা আপাতত পোস্টপন করতে চায়.... কিন্তু আমার কথায় তর সইছিলো আমি ওকে বোঝালাম যে বিয়ে টা হোক আর বিয়ের ছয় মাস ও কাজ টা করুক চুক্তি অনুসারে... তৃনা অনুযোগের সাথে বলেছিলো যে এটা সম্ভব না... আমি ওকে বুঝিয়ে ছিলাম যে আমার কোনো অসুবিধা নেই আমি সব জেনে ওকে বিয়ে করছি আজ ও বিয়ের আগে যে কাজ টা করে সেটা কেন শুধুমাত্র চুক্তির খাতিরে ও ছ মাস করতে পারবে না... চুক্তি শেষ হলে ও শুধু আমার এ কথা ভেবে... বিয়ে সম্পন্ন হলো... গ্রান্ড পার্টি দিলাম অনেকে বাহবা দিলো অনেকে পিছনে হাসলো এক যৌনকর্মী কে বিয়ে করে এটুকু তো শুনতেই হতো... সো নো রিএক্ট...

আমি সকালে আমার জব এ যেতাম, তৃনা সু গৃহিনী র মতো সবটা গুছিয়ে দিতো... আর সন্ধ্যে বেলায় ও বেরোতো নিজের কাজে....  আমি রেডি করতাম আমাদের ডিনার অফিস থেকে ফিরে... ত্রিচি তে বেড়াতে গেছিলাম আমরা... নেক্সট পোগ্রামে লন্ডন আমি জানিয়ে ছিলাম তৃনা কে... আমাদের বিয়ের ছমাস কমপ্লিট হবে ওর চুক্তি ও শেষ হবে... ফ্রি হয়ে যাবে ও দেন we will go for our honeymoon... এই এক বছরের মধ্যে বাবার সাথে টোটালি ডিটাচ... তাই তার হাল হকিকত কিছুই জানতাম না.... প্রথম প্রথম অনেক চেষ্টা করেছিলেন যোগাযোগ রাখার আমার অবহেলা তাকে বাধ্য করেছিলা পিছু হটতে . মার জন্য আপসেট ছিলাম.. সে দিন ছিল আমার মা র প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী.. অফিস স্কিপ করে ছিলাম সেদিন... কিন্তু আর্জেন্ট কল এ তৃনা বেরিয়েছিল.. ও sms করে জানালো যে ও আজ রাতে ফিরতে পারবেনা... ইটস ওকে sms করে বসে রইলাম.... নেক্সট মর্নিং অফিস যাওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছি তখনি ফোন এলো ব্যাঙ্গালোর পুলিশ এর... আমার স্ত্রী তৃনা রত্নাকর এর মৃত্যু হয়েছে তার কাস্টমার এর কার এ করে রিসোর্ট থেকে ফেরার সময়... পায়ের তলার মাটি সরে গেছিলো তখন... উন্মাদ হয়ে গাড়ি ছুটিয়ে চলাম মর্গে... ওরা ভুলবশত হোক বা যাই কারণ এ তৃনা র বডি থেকে সাদা চাদর টা সরানোর সময় ওর সাথে মৃত ওর কাস্টমার এর চাদর টা ও সরালো... ধরণী দ্বিধা হলে হয়তো আমি রক্ষা পেতাম কিন্তু কলি যুগে তা সম্ভব নয় তাই কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়িয়ে রইলাম.... তৃনা র সাথে কাল রাতে কেউ না ছিল আমার চির শত্রু আমার বাবা আশুতোষ তিলোতপানি... আইডেন্টিটিফিকেশন করতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই স্বীকার করতে হলো একজন আমার স্ত্রী আর অন্যজন আমার জন্মদাতা পিতা.. ইন্সপেক্টর এর তাচ্ছিল্ল র হাসি আমার চোখ এড়ালো না.. আর কিছুই ভাবতে পারছিলামনা আমি তাই বডি দুটো ওখানেই ফেলে এসে আমি ভাবতে বসলাম এ কী হলো আমার সাথে... রাম ওহিস্কি স্কচ কিছু বাকি রাখলাম না... পড়ন্ত বিকাল এর মরা আলোতে ভাবতে ভাবতে আবিস্কার করলাম নিয়তির কুটিল খেলা কে.. হ্যা আমি আমি পারমিশন দিয়েছিলাম তৃনা কে ছমাস এর চুক্তি পূরণ করতে , আমি কোনোদিন ওকে আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে জানাই নি ও আমাকে জোর ও করে নি... বাবা বার বার যোগাযোগ করতে চেয়ে বিফল হয়ে মরিয়া হয়ে বেঙ্গালুরু অবধি ছুটে এসেছে... মাঝখানে র সময় টা একাকিত্ব মেটাতে হোক বা অভ্যাস বসত এসকর্ট থেকে আর্জেন্টলি মেয়ে চেয়ে পাঠিয়েছেন... আর নিয়তির ক্রুর খেলায় তৃনা সেখানে সার্ভিস দিতে গিয়ে রাতে আটকা পরে... রিসোর্ট থেকে ফেরার গন্তব্য দুজনের প্রায় এক হওয়ায়... তারা একই গাড়ি তে ফেরে... তৃনা যখন নিজের সমন্ধে কিছু তথ্য বাবা কে এমনি কথায় কথায় জানায়.... সন্দেহ হওয়াতে বাবা আরো ডিটেলস জানতে চান... সবটা বুঝেফেলে বাবা তৃনা কে নিজের পরিচয় জানালে... বাকবিতন্ডা ই হোক বা আচমকা হতবম্বটা গাড়ি বেসামাল হয়ে এক্সিডেন্ট... না জেনেও শেষ সর্বনাশ টা আমার বাবা ই করে গেলো... যাক গেলাম মর্গ থেকে বডি দুটো কালেক্ট করে চুল্লি তে দিয়ে... ফ্ল্যাটে ফিরে ওয়াটার ট্যাঙ্কার এ নিজেকে ছেড়ে দিলাম আর সত্যি নতুন করে শুরু করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy