আপনার যাত্রা শুভ হোক
আপনার যাত্রা শুভ হোক
আমার মনটা বেশ ফুরফুরে আজ। আপনি যখন অর্থ উপার্জন করেন, অথচো আপনার অভিভাবকরা আপনার ঘুরতে যাওয়ার খরচ বহন করেন, তখন তো আপনি খুশি হবেনই। তবে এ জন্য আমার ধন্যবাদ দেওয়া উচিত আমার প্রাক্তনকে। সে হঠাৎ করে আমাকে না ছেড়ে গেলে বন্ধু বান্ধব , আত্মীয় স্বজন বাবা মা আমাকে নিয়ে যেতে ব্যাতি ব্যাস্ত হতো না। তাদের খরচায় আর আমার গোয়া যাওয়াও হতো না।
আমার এক বন্ধু বলতো বিবাহ হলো , একটা লাড্ডু যা না খেলেও পস্তাবে , খেলেও পস্তাবে। বিয়ে করে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি আমি।
আমার মা এমনিতে হাসি খুশি মানুষ।নতুন বউকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বরণ করে ঘরে তুলে, প্রথমেই বউকে বললেন" দেখো মা।এ বাড়িটা একটা সংসদের মতো কার কী পাওয়ার, কার কি পজিশন তা তোমার জেনে নেওয়া দরকার।
আমি হলাম,আমি এই বাড়ির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মানে সবকিছু দেখাশোনা করার দায়িত্ব আমার।তোমার বাবা হলেন প্রধানমন্ত্রী,তিনি এই পরিবারের কর্তা । তবে প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাঁর উপর । মানে আত্মীয় স্বজন তিনি সামলাবেন।
আমার বুবাই ,তোমার স্বামী এই বাড়ির অর্থ এবং খাদ্য মন্ত্রী। অর্থ মানে খাদ্যের যোগান তার দায়িত্ব।
তোমার একমাত্র ননদ হল
এই পরিবারের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তোমার পিছনে পরে,
এই বাড়ির সদস্যদের চালচলন, আদবকায়দা শেখানো তার দায়িত্ব।তুমি কোন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব নিতে চাও। বললো।"
তিনি মুচকি হেসে জবাব দিয়েছিলেন।"আমাকে মন্ত্রী সভায় না রেখে বরং বিরোধী দলের নেত্রীর পদটাই দিয়ে দিন মা ..."
এরপর আমার পালা। তিনি প্রথম দিনেই বলেন " স্ত্রী হিসেবে আমি মমতাজ বেগমের মতো তাজমহল চাই না। তবে আটা মাখা, চাল ধোয়া, বাসন মাজা, ঘর মোছা, কাপড় চোপড় ধোঁয়া , রান্না সাহায্য করা , সবজী কেটে দেওয়া, কাজ গুলো রোজ করবেন আর মাঝে মাঝে রান্না করে দিলেই হবে।"
যাইহোক সব শর্ত মেনে নিয়েছিলাম।
কিন্তু সে আমার অভ্যাস বদলে দিলো। আমি রাত পর্যন্ত গল্পের বই পড়তাম। দুই দিন তাই ঘরে ঢুকতে দেরি করেছি। তৃতীয় দিন যখন রাতে শুতে যাবো তখন বিড়বিড় করে বললেন" মন্টুদা এবারতো যাও। উনি এই সময় চলে আসে।"
পরেরদিন থেকে খাবার পরে ঘরে ঢুকে পড়তে থাকলাম। পাড়াতে কে মন্টুদা আছে তার খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম ও নামে কেউ থাকেনা এ পাড়ায়। আর উনি নিজেই বলে ফেললেন একদিন, ঐ মন্টুদার নাম করে আমাকে উনি তাড়াতাড়ি ঘরে ঢোকানোর অভ্যাস করিয়েছেন। এভাবেই জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন উনি।
যাইহোক আগের জন্মে অনেক পূর্ণ্য করেছিলাম তাই উনার অফিসে উনার সাথে উনার প্রাক্তন প্রেমিক দেখা হলো। আর উনি ও আমার প্রাক্তন হয়ে গেলো।
যাইহোক আত্মীয় স্বজন ভাবলো ছ্যাঁকা খেয়ে ছেলেটা না দেবদাস হয়ে যায়। তাই তাঁরা আমাকে ঘুরতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলো। আমি ভাবলাম এই সুযোগে স্বাধীন হবার আনন্দটা উপভোগ করে নিই।
এসি ক্যামরা কেবিনে আমি একা। গাড়ি চালু হবার ঘন্টা খানেক পর পর এক সুন্দরী তরুণী এলো আমার কেবিনে। মনে মনে লাড্ডু ফুটলো। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে গোয়া যাবে। কারণ পোশাকটা বেশ খোলামেলা, একটা ছোট ট্রলি ব্যাগ। আলাপ জমিয়ে গোয়া একসাথে ঘুরবো মনে মনে সেই কল্পনার জাল বুনছি। আর মাঝেমাঝে ওনার চোখের দিকে তাকাছি। চোখাচোখি হতে মিচকি মিচকি হাসছে। ঘটনা খানেক এই ভাবে চলার উনি হঠাৎ আমার পাশে এসে বসল।
আমার মন তো তখন খুশিতে ফুল বাগান হয়ে গেলো। আবার উনি আমার গায়ে গা লাগিয়ে বসলো। সারা শরীর কেঁপে উঠলো যেনো। মনে হলো ভুমিকম্প হচ্ছে। বুকের ভিতর হৃদপিন্ড শতাব্দী এক্সপ্রেস মতো ছুটতে শুরু করলো।
এমন সময় মেয়েটি কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো" মানিব্যাগটা বের করুন, হাতের আংটি আর গলার চেইন খুলে আমাকে দিয়ে দিন নয়তো। এখুনি চ্যাচামেচি করে লোকজন জড়ো করে দেবো।"
আমি শান্ত ভাবে ইশারা জানালাম। আমি কানে শুনতে পাই না, আর কথা বলতে পারি না। একটা কাগজ কলম দিয়ে বললাম , যা বলছে লিখে দিতে।
মেয়েটি ও লিখ দিলো। কাগজটি আমি ছিঁড়ে নিয়ে পকেটে পুরে নিলাম। তারপর বললাম " আপনার যাত্রা শুভ হোক,এ ক্যামারা ছেড়ে আপনি অন্য ক্যামায় চলে যান। কারণ আপনি চ্যচামেচি করে কোন লাভ নেই, আপনার কথা গুলো তো আপনি লিখেই দিয়েছেন।"