আঁচিল
আঁচিল


“এ অন্ধকে দুটি দান করো গো বাবুরা, ভগবান তোমাদের ভাল করবেন।“
ট্রেনের কামরায় একজন অন্ধ বৃদ্ধ ভিক্ষা করছিলেন। লাঠি ঠুকে ঠুকে এগিয়ে বাটিটা সবার দিকে আন্দাজে বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন। অধিকাংশেরই সেরকম ভ্রূক্ষেপ নেই, তবু মাঝেমধ্যে দু একটা পয়সা ফেলার আওয়াজ ভেসে আসছিল।
ট্রেনে বেশ ভিড়। জানলা থেকে চার নম্বর সিটে বসে ছিলেন মাঝবয়েসী এক অবস্থাপন্ন চেহারার ভদ্রলোক, কপালে একটা বেশ বড় আঁচিল। হঠাত অসাবধানতা বশত বৃদ্ধের বাটিসমেত হাতটা একবার ছুঁয়ে গেল ভদ্রলোকের হাতে। সাথে সাথে এক ঝটকায় তার সেই হাতটা সরিয়ে দিয়ে তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন,
“হাত সরাও। যতসব নোংরা ভিখিরির দল এসে গায়ে ঢলে পড়ছে। এরা মরেও না কেন কে জানে!”
ধাক্কার চোটে বৃদ্ধ মানুষটি প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়েই যেতেন, সিটের একটা ধার ধরে কোনরকমে সামাল দিলেন। কিন্তু তার হাত থেকে বাটিটা মেঝেয় পড়ে পয়সাগুলো ছড়িয়ে পড়ল।
অনেকেই চোখ তুলে দেখল, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করল না। বৃদ্ধটি নিজেই নীচু হয়ে এদিক ওদিক হাতড়ে পয়সাগুলো তোলার চেষ্টা করতে লাগলেন।
বাটি থেকে একটা কাগজের মত জিনিস উড়ে এসে ভদ্রলোকটির পায়ের কাছে পড়েছিল। অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সাথে সেটা তুলে হাতে নিয়ে দেখলেন তিনি।
দেখলেন সেটা একটা পুরনো ছবি। একজন মাঝবয়েসী লোক আর একটি ছোট ছেলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের মুখই খুব চেনা লাগল তার। ছেলেটার কপালের আঁচিলটা চকচক করছে।