STORYMIRROR

Sangita Duary

Fantasy Others

3  

Sangita Duary

Fantasy Others

আমসত্ত্ব

আমসত্ত্ব

4 mins
316


..... আর ভাল্লাগচেনিকো, ঐদিকে ভুতচন্ডির মাটে সেই মাঝরাত থিকে মেলা শুরু হইছে, ন্যাপলি, খেদি, হুদমি, কল্মি সব কেমনি মানুষদের মত রং চং মেখে হল্লা করচে!

ন্যাপলি গায়ে আগুন দে ছেলো। মানুষের চামড়ার সঙ্গে ওই চোখ ঠোঁটও পুড়ে গে ছেলো। সেই গত্ত গত্ত কুঠরো চোখে চিতার ঝুল আর খুলির ঘি মেক্কে কাজল করে পইরেছে। বাব্বা রে বাব্বা, একেই ভুত, তারউপরি ঐরকম ভুতরি সাজ দেইককে আমার বুকের ফাঁকা জায়গাটাও কেমন যেন আরো ধুকুর পুকুর কচ্চে গো! এক্কুনি না ভুতুড়ে পরানটাও হড়কে যায়!

আর ঐযে খেদি, ও তো নেললাইনে মাতা দে ছেলো। ধরে মুন্ডুতে আদাআদি, ও ও দেকি খালের ধার থিকে খড়ের সুতো এনে ধরে মুন্ডুতে বেঁধে দিব্বি নেত্য দিচ্চে।

হুদমি কে দেকলে আমার কঙ্কালটাও চিরবিড় করে ওটে। মরার আগে এক পাড়াতুতো দাদার সনে পীড়িত ছিল ওর। বউটা বাপের বাড়ি ছেলো, সেই সুযোগে নোকটা হুদমিকে ঘরে ডেকে...!

ওরা টেরই পায়নি, কখন বউটা ফিরে এসে দরজায় কড়া নারচে, হুদমি ভয় পেয়ে দৌড়ে যেয়ে ঘরের কোণে ফিরিজটায় সেঁদিয়ে গেল, ব্যাস, ওই মুখপোড়া তো বউকে নিয়ে সোহাগ করচে আর হুদমি ঠান্ডায় জমে গিয়ে বরফ হয়ে গেল।

ভুত হয়েও ওই সাদা ধবধবে রং ওর এখনও যায়নি, মরার পর যে-ই এই ভুতচন্ডিতে আসে, সেই আড়চোখে হুদমিকে দ্যাকে।

এই ভুতচন্ডিতে যত্ত গুনো মদ্দা ভুত রোইচে সবার নজর ওই হুদমির দিকেই।

হুদমিকে গোল করে সব্বাই এখন ফাঁকা মাটখানায় নেত্য কচ্চে, যেন ওরই বে নেগেচে।

আর আমি, আমসত্ত্ব, না, ভুতচন্ডিতে আসার পর ভৃঙ্গী মহারাজ আমায় এট্টা নাম দেচেন বটে, কিন্তু ওই আমসত্ত্ব নামকানা আমি মুচতে চাইনিকো।

সবাই এইকেনে যোগ্যি করচে, কিন্তু আমার মনটা পরে রোইচে ওই ঐদিকে, ওই দ‍্যাকোনা....

ওই যে, জানলার ভিতর এট্টা ছেলে কেমন মন দিয়ে বই পড়ছে... ওর নাম বোধিসত্ত্ব। ওকেই মরার আগে আমি ভালোবাসতুম। কতদিনের পেরেম আমার...সেই ছোট থিকে... ও তো আমার থিকে বয়সে বড়,তাই ওকে দাদা ডাকতুম... যকন তকন চলে যেতুম ওদের ঘরে...আমার মা ওদের ঘরে কাজ করত, আর বাপ রিস্কা চালাত... মা যখন কলতলায় এঁটো বাসন মাজত, আমি কপাটের আড়াল দিয়ে বদিদাদা কে দেকতুম...বদিদাদা কত নেকাপরা করে,কত্ত বই.....বদিদাদার মা আমাকে একদিন এট্টুকরো আমসত্ত্ব দেচিল, খেতে।

জিভ দিয়ে চাটতে চাটতে যখন রান্নাঘর থিকে বেইরে আসচি, বদিদাদা সামনে, "কি খাচ্ছিস রে, আমসত্ত্ব?"

সেই পথম বদিদাদা কতা কোয়েচিলো, আমিও ছুট্টে ঘরে এসে তক্তপোষে শুয়ে পড়েচিনুম, মনে মনে কোয়েছিনুম, তোমার নাম বোধিসত্ত্ব, আর আমি তোমার আমসত্ত্ব।

বদিদাদাকে আমসত্ত্ব খাওয়াতে কুব ইচ্চে করতো গো তখন, মাকে কইতুম, একটু আমসত্ত্ব দেবে গা?

মা মাতায় হাত বুইলে কৈত, ''গরিব মানুষ, ওসব পাবো কোতা?"

মাথায় এট্টা বুদ্ধি এলো। গিন্নিমার রান্নাঘরের বয়ামে ঠাসাঠাসা আমসত্ত্ব, একটুখানি বের করে বদিদাদাকে খাওয়ালে কে জানতে পারবে?

সবে বয়ামে হাতটা ঢুইকেচি, ওমনি পিচন থিকে...

সেদিন মা খুব পিটিয়েছিলো, মারের তোরে জ্বর... তারপর.....

আমি মরতে চাইনি, বিশ্বেস কর তোমরা, ওরা যকন আমায় চিতেই তুলছিল, আমি আমার শরীরটা টেনে নামানোর চেষ্টা করছিলুম, পাললুমনে।

সুড়ঙ্গ ধরে যকন সগ্গের পতে, ভৃঙ্গি মহারাজ জিগ্যেস কল্লে, "আর কিছু সাধ আছে নাকি?"

আমি বল্লুম, "হ্যা, বদিদাদা!"

ব্যাস আর আমার সগ্গে ওঠা হলনে। মরার পরেও মনে সাধ থাকলে মুক্তি সহজে মেলেনে।

রোজ বদিদাদার কাচে আমি যাই, ওকে দেখি।

একদিন দেকি, অন্য একটা বৌমানুষ বদিদাদার ঘরে, বদিদাদার পা টিপচে, জামা গোচাচ্চে, ভাত মেকে খাইয়ে দিচ্চে, কুব ইচ্চে করলো, মাগিটার ঘাড় মোটকে দিই, দিতুমও, খেদি আটকে দিলে, বল্লে, বউটা মোল্লে এইকেনেই আসবে, আমার পেরেমের ভাগিদার বাড়বে। 

আর যদি বদিদাদা মরে?

হ্যা, তাহলে তো বদিদাদাকে আমার নিজের করে পেতে আর কুনো বাধা থাকবেনে...!


বুকের কালো জায়গাটা অবাক ধুকপুক কচ্চে।

বদিদাদা তো মোল্ল, কিন্তু এইকেনেই আসবে তো, ভোঁ করে সগ্গে উটে যাবেনি তো?


ওই তো, বদিদাদা... কি যে আল্লাদ নাগচে, বদিদাদা ভুতচন্ডির মাটে আসচে...

আমি বরং পো করে একপাক মাটে ঘুরে নিই।

এবার যে আমি আটখানা হয়ে যাবো গো! ভুতমেলায়, ভুতপাব্বন, ভুতচতুর্দশীতে বদিদাদার হাত ধরে ঘুরবো, একসঙ্গে পচা খানায় ডুব দে গুগলি খাবো... উরি... উরি...উরি..কি মজা....

কিন্তু বদিদাদা সগ্গে না গে এই ভুতচন্ডিতে এলো কেন? তার মানে ওর মনেও সাধ আছে? কি সাধ গা?


-" জানো, কবে থিকে তোমার জন্যি পত চে বসে আচি...আমি গো, আমি তোমার আম...!"

কালোগত্তভরা চোখ তুলে বদিদাদা তাকায় আমার দিকে, যেন চেনেইনে, যেন আগে দেকেইনে কখনও। তারপর আবার তাকায় দূরে, আমিও বদিদাদার চাওনি ধরে দূরে তাকিয়ে দেকি ,বদিদাদা তার ঘরের সেই বউটাকে দেকচে, সেই বউটা, যে বদিদাদার পা টিপে দিত, জামা গুচিয়ে দিত, ভাত মেখে...!

সেই বউটার কপালে আর সিঁদুর নেই, গায়ে লাল কাপড় নেই, সাদা থান পরে এলোমেলো চুলে মেঝেয় বসে হাঁটুর ভিতর মুখ গুঁজে কাঁদছে।


এবার আমারও খুব কান্না পাচ্চে জানো, বদিদাদা আমায় চিনতে পাল্লনে, সেই জন্য!

 বদিদাদা মরে যেতে বউটার খুব কষ্ট হচ্চে সেই জন্য।


এবার যে আমি হাওয়া হয়ে যাবো, এটাই যে নিয়ম, আমাদের কষ্ট হলে, দুক্কু হলে আমরা.... হাওয়া....হয়ে....যাই...মানুষের চারপাশে ঘুরে বেড়াই.... আমিও হাওয়া হয়ে তোমার... পিছনে....এই তুমি.... হ্যা.... ঠিক.....তোমার পিছনেই.....ঘুরছি.....

দ্যাখো......

তুমিও যেন আমাকে দেকে....

আবার অক্কা পেয়ে যেওনি.......!!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy