আমার দেওঘর যাত্রার অভিজ্ঞতা
আমার দেওঘর যাত্রার অভিজ্ঞতা
ঘরগুলো বেশ ভালো। কিন্তু একটা জিনিস দেখে একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। স্বচ্ছ কাঁচের জানলা। পুরোনো দিনের মতোই খড়খড়ি দেওয়া। পর্দা নেই। এমনকি পর্দা টাঙানোর কোনও ব্যবস্থাও নেই। খুব অস্বস্তি বোধ করছিলাম।
চা পর্বের পর বৃন্দাবন কে রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞেস করা হল। সে লোক বললে, "আপনারা বাজার করে নিয়ে আসুন। রাতের রান্না আপনারাই করে নেবেন।" আমরা অবাক। ঘর বুকিং এর সময় বলা হয়েছিল, বৃন্দাবনই দোকান, বাজার, রান্না সব কিছুই করে দেবে। এখন তো দেখছি মিথ্যা কথা বলেছে। এরকম জানলে তো এখানকার ঘরই নিতাম না। আর তখন আমার রান্না করার অভ্যাসও ছিল না। বাড়িতে শাশুড়ি মা রান্না করতেন। বৃন্দাবনকে বুঝিয়ে বলা হল। "বাজার না হয় আমরা করে আনছি ।কিন্তু রান্না না করলে তো চলবে না।" ওর ওই এক গোঁ। "আমি কাল থেকে করে দেব। আজ রাতে দিদিমণিকেই রান্না করতে হবে।" কিছু করার নেই। মেনে নিতেই হল।
ঠিক হলো রাতে ডিমের ডালনা আর ভাত হবে। ওটাই মোটামুটি করতে জানতাম। বিকেলের আবছা আলো তখনও একটু লেগে রয়েছে আকাশের গায়ে। আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম সকলে মিলে, বাজার অভিমুখে। অনেকটা রাস্তা ।প্রায় পাঁচ মাইল। ফেরার সময় দুটো রিক্সা নিয়ে নেওয়া হল। বাজার অঞ্চল ছাড়াতেই অন্ধকারের রাজত্ব। রাস্তায় আলো আছে। কিন্তু লোডশেডিং চলছে । ঝুপসি গাছপালার ফাঁক ফোকর দিয়ে চাঁদের আলো চুঁয়ে পড়ে নকশা এঁকেছে পথের ওপর। ঝোপে ঝাড়ে জ্বলছে অজস্র জোনাকি ।খানিকটা যাবার পর শুরু হল মেঠো রাস্তা। লোক বসতির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। দেখতে দেখতে সেই রাবণ পোড়ানোর মাঠ এসে গেল। পেছনের রিক্সায় বাবা আর ভাই ছিল। ওদের রিক্সাটা বোধহয় পিছিয়ে পড়েছে। অফুরন্ত চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে রাবণ পোড়ানোর মাঠ। মুগ্ধ হয়ে চারদিক দেখছি। হঠাৎ ছন্দপতন। সড়াৎ করে কি একটা জন্তু চলন্ত রিক্সার সামনে দিয়ে রাস্তা কেটে বেরিয়ে গেল। ঠিক যেন একটা কালো ছায়া স্যাঁৎ করে সরে গেল। চমকে উঠলাম। "কি ওটা"! কর্তামশাই বললেন, "বিড়াল। কালো রঙের।" রিক্সা টা দাঁড়িয়ে পড়ল। চারিদিকে কেউ কোথাও নেই। ও আচমকা দাঁড়িয়ে গেল কেন! ওদিকে বাবাদেরও দেখতে পাচ্ছি না। এই ফাঁকা তেপান্তরের মাঠে আমাদের কোনো বিপদ হবে না তো! রিক্সা ওয়ালাকে বললাম, "কি হলো! দাঁড়ালে কেন! চলো। "নির্লিপ্ত ভাবে সে উত্তর দিল," পেছনের রিক্সাটা আসুক"। অসহ্য ভয়ে ভেতর থেকে একটা কাঁপুনি উঠে আসছিল আমার। কর্তামশাই বললেন, "ও। বিড়াল রাস্তা কাটল। তাই যাবে না"।
তখন সে লোক বলল, "হ্যাঁ বাবু। আপনি ঠিকই বলেছেন"। একটু পরে বাবাদের রিক্সাটা এসে পড়ল। ধড়ে প্রাণ এল যেন। এবার বাবাদের রিক্সাটা এগিয়ে গেল। আমরা পেছন পেছন চললাম।
রান্না করতে গিয়ে আমার কেঁদে ফেলার উপক্রম। দেখি বিরাট একটা হাঁড়ি, প্রায় দশ বারো জনের ভাত হওয়ার মতো। সেইরকমই একটা লোহার কড়াই। খুন্তি, সাঁড়াশি সবই বিশাল বিশাল। আর রয়েছে বড়সড় একটা পাম্প স্টোভ। বুঝলাম কপালে শনি নাচছে। স্টোভ তো জ্বালাতে পারি না। খুব ছোট থেকেই বাপেরবাড়িতে গ্যাসে রান্না হতে দেখেছি। আর শাশুড়ি মা উনুন জ্বেলে রান্না করতেন। কিন্তু আমি টুকটাক কিছু করতে চাইলে গ্যাসেই করতাম। যে রান্না করে অভ্যস্ত নয় তার কাছে এরকম সব জিনিস দিয়ে রান্না করা খুব কঠিন ব্যাপার। অবশেষে বাবা আর কর্তামশাই হাল ধরলেন ।অনেক জায়গায় ফিস্টি করার অভ্যাস আছে তো ওদের।
রাত দশটায় এখানে কারেন্ট অফ হয়ে যায়। বৃন্দাবন বলেই দিয়েছিল। সারাদিন অজস্র বার লোডশেডিং তো আছেই। তার ওপর রাতেও পাখা চলবে না, আলো জ্বলবে না। শুনেই বিরক্ত লাগছিল। এসব জানলে কি আর আসতাম এখানে! ভাবছিলাম, রাতে হয়তো ঘুমই আসবে না। সেদিন কিন্তু এক ঘুমেই রাত কাবার হয়ে গিয়েছিল।
পরের দিন আমরা আর কোথাও বেরোলাম না। লাঞ্চের পর কর্তামশাই নিজে একটু বেরোলেন। বারণ করেছিলাম। তিনি কথা শুনলে তো। বললেন, "মাঠ পেরিয়ে ওদিকে একটা গ্রাম আছে। একটু ঘুরে আসি।" বারণ না শুনে বেরিয়ে গেলেন। এটাই ওনার স্বভাব। এর জন্য বিপদেও পড়েছেন।
রাবণ পোড়ানোর মাঠ বিশাল বড়। তেপান্তরের মাঠের মতো। ওই মাঠ পেরোলে আর একটা গ্রাম আছে। ওই গ্রামে নাকি খুব ভালো ক্ষীর পাওয়া যায়। সেই ক্ষীরের জন্যে ওই গ্রামে যাওয়া। কিন্তু গ্রাম অবধি পৌঁছতেই পারেননি। সূর্যাস্ত হয়ে যাচ্ছে দেখে ফেরার পথ ধরেছিলেন। কিন্তু দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। এরকম জায়গায় যা হওয়াই স্বাভাবিক। অনেকক্ষণ ঘুরপাক খেয়েছেন মাঠে। হঠাৎ একজন স্থানীয় মানুষের সাথে দেখা হওয়ায় বেঁচে যান কর্তামশাই। সন্ধ্যা হয়ে আসছে দেখে ভীষণ চিন্তায় পড়েছিলাম আমি। মেয়েটাও বাবাকে অনেকক্ষণ না দেখে অস্থির হয়ে উঠছিল। অবশেষে সাতটা নাগাদ গলদঘর্ম হয়ে ফিরলেন তিনি।
সেদিন আর একটা পার্টি এসেছিল। স্বামী স্ত্রী। এতবড় বাড়িতে এতক্ষণ আমরা একা ছিলাম। চারিদিক একদম ফাঁকা। তার ওপরে রহস্যময় কেয়ারটেকার। ভয় একটু লাগছিল বৈকি। রায় দম্পতি আসাতে একটু ভরসা পেলাম।
সন্ধ্যার দিকে বাবা একটু বেরিয়েছিলেন। এবার বেশ একটা মজার ঘটনা ঘটল। কর্তামশাই ফিরে একটু রেস্ট নিচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখি বাবা চুপিচুপি কোথায় বেরোচ্ছে। তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে ধরলাম। "কোথায় যাচ্ছো"?
"এই সামনেটায় একটু পায়চারি করব"। ছেড়ে দিলাম। পায়চারি তো। করুক। শরীর ভালো থাকবে। কর্তামশাই জিজ্ঞেস করলেন, "বাবা কোথায় গেল"? বললাম, "বাড়ির সামনে পায়চারি করছে"। কথাটা বলেই মনে হলো এখন তো অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। বাবা বেরোলো, অথচ হাতে টর্চ দেখলাম না। আমিই একটা টর্চ নিয়ে দিয়ে আসি। টর্চ নিয়ে শান্তিকুঞ্জের গেটের সামনে এসে দাঁড়ালাম। কোথায় বাবা! কোনো দিকে তার কোনো চিহ্ন নেই। ভাবছি কি করব। কিছুক্ষণ থেকেই একটা ভারি সুন্দর গন্ধ নাকে ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে কোথাও রসগোল্লা তৈরি হচ্ছে। কালও এই গন্ধটা পেয়েছিলাম আমরা। কাছাকাছি কোনো মিষ্টির দোকান তো চোখে পড়েনি। কি জানি কোথায় কি হচ্ছে হচ্ছে। কর্তামশাই এসে দাঁড়ালেন, "বাবা কোথায়"?
"দেখতে পাচ্ছি না তো"।
"চলো, একটু এগিয়ে দেখি। অন্ধকারে কোথায় যে গেলেন"। রুমন কে ওর মামার কাছে রেখে গেটের বাইরে পা রাখলাম দুজনে। "অনেকক্ষণ ধরে একটা গন্ধ পাচ্ছি। মিষ্টি তৈরি হচ্ছে কোথাও। তুমি পাচ্ছো না"?
কর্তামশাই বললেন, "হ্যাঁ। আমার মনে হচ্ছে, তোমার বাবাও এই গন্ধের উৎস সন্ধানে গেছেন। যে জায়গায় দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো হচ্ছিল, সেই জায়গায় গন্ধের তীব্রতা বুঝিয়ে দিচ্ছে গন্ধের উৎস কাছেই কোথাও লুকিয়ে আছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি, রাস্তার বাঁ পাশে একটা সরু পায়ে চলা পথ, দুপাশে ফণীমনসার ঝোপ ।সেই পথ ধরে খানিকটা এগিয়ে একটা বাড়ির উঠোনে এসে হাজির হলাম। উঠোনের একপাশে রয়েছে মিষ্টির দোকান। সদ্য নেমেছে পান্তুয়ার কড়াই। সেখানেই বাবা রয়েছে। বাবার হাতে শালপাতার ঠোঙা। সবেমাত্র কসরৎ করে গরম পান্তুয়া মুখে পুরতে যাচ্ছে। পেছনে দাঁড়িয়ে আমরা। বললাম, বাবা! লুকিয়ে লুকিয়ে পান্তুয়া খাচ্ছো! তোমার না সুগার!"আমাদের দেখে যেন ভুত দেখার মতো চমকে উঠল বাবা," না না। এই তো, মোটে একটা খাচ্ছি"। ওদিকে হাতের ঠোঙায় রয়েছে চারটে পান্তুয়া । যাইহোক, গরম গরম আমরাও কয়েকটা খেলাম। ইয়াব্বড় সাইজ। আর কি তার স্বাদ। মেয়ের জন্য আর ভাই এর জন্যেও নিয়ে নিলাম কটা। মামা ভাগ্নীও চরম মিষ্টি খোর।
রাতে ঘটল ভয়ংকর এক ঘটনা। সেদিন ছিল কোজাগরী পূর্নিমা ।রাত দশটায় কারেন্ট অফ হয়ে গিয়েছে। রাতের খাওয়া সেরে ঘরে এসে রুমন কে ঘুম পাড়াচ্ছিলাম। পরদিন আমাদের উশ্রী ফলস দেখতে যাবার কথা। কর্তামশাই বাবাদের ঘরে বসে সেইসব নিয়েই আলোচনা করছেন। কাঁচের জানালা দিয়ে দেখি, দুধসাদা জ্যোৎস্নাতে ভেসে যাচ্ছে প্রকৃতি। হঠাৎ মনে হল জানলার নীচের দিকের খড়খড়িটা যেন একটু ফাঁক হয়ে আছে। আস্তে আস্তে জানলার ধারে গিয়ে দেখি, জানলার নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছে বৃন্দাবন। খড়খড়িটা ফাঁক করে ঘরের ভেতরে উঁকি মেরে দেখছে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে ওদের ডাকলাম। বাবা বলল, "না না, ভুল দেখেছো নিশ্চয়ই। এ কাজ ও করতে পারে না। রিপোর্ট করলে ওর চাকরি চলে যাবে। এটুকু বোধ নিশ্চয়ই ওর আছে। ঘরে এসে আবার শুয়ে পড়লাম। কর্তামশাই ও চলে এলেন ঘরে। ঘুম আসছিল না। খালি মনে হচ্ছে, এতটা ভুল দেখলাম আমি! খানিক পরে আবার গিয়ে দাঁড়ালাম জানলায়। দেখি হ্যাঁ। আবার এসে দাঁড়িয়েছে জানলার নীচে। খড়খড়িটা ফাঁক করে দেখছে। চুপিচুপি কর্তামশাই কে টেনে নিয়ে এলাম। উনি ব্যাপারটা দেখেই চেঁচিয়ে উঠেছেন, "এই! কি হচ্ছে! বদমাইশি করার আর জায়গা পাওনি!", বলতে বলতে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেন। বাবা ভাইও উঠে পড়েছে চেঁচামেচি শুনে । ওদিক থেকে রায় দম্পতিও বেরিয়ে এসেছেন। আর এদিকে আর এক বীরাঙ্গনা, "দুত্তু দুত্তু, বম্মাইছি কচ্ছে," বলতে বলতে হাতে পাখা নিয়ে দৌড় লাগালেন কর্তামশাই এর পেছন পেছন। গায়ে শুধু একটা টেপজামা। বাইরে বেরোতেই দেখা গেল, বৃন্দাবন বাগানের দিক থেকে দৌড়ে এসে বারান্দায় উঠল। সবাই মিলে চেপে ধরা হল ওকে, "বাগানের জানালা দিয়ে ঘরে উঁকি দিচ্ছিলে কেন "?
" না বাবু আমি কেন উঁকি দেব! আমি উঁকি মারিনি ।আপনারা ছায়া দেখেছেন। "
রায় বাবু বললেন, "মানুষ না থাকলে ছায়া আসবে কোথা থেকে"?
"ও বাবু গো, মানুষ চলে গেছে বলেই, ছায়া টা পড়ে আছে। আপনারা শহরের লোক তো, তাই জানেন না এসব।"
" আচ্ছা, ওটা না হয় ছায়া ছিল। তাহলে তুমি রাত দুপুরে বাগানে গিয়েছিলে কি করতে "? কথাটা কর্তামশাই জিজ্ঞেস করলেন।
আবোল তাবোল বকে যাচ্ছিল লোকটা। শেষে বিরক্ত হয়ে ঘরে ফিরে এলাম আমরা। যাইহোক, এই বিশ্রী ঘটনাটা নিয়ে আর বিশেষ কিছুই বলার নেই।
পরদিন গেলাম গিরিডিতে, উশ্রি ফলস দেখতে।" উশ্রি নদীর ঝর্ণা দেখতে যাব"। সহজ পাঠে সবাই পড়েছি। সেই উশ্রি নদী। বরাকরের উপনদী এটি। ঘন জঙ্গলে ঘেরা জায়গা, মনোরম পরিবেশ ।একটা ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে এখানে ।এই ওয়াচ টাওয়ার উঠলে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। ভীষণ ভালো লাগলো। সন্ধ্যা নাগাদ আবার ফিরে আসা। এসে দেখি, রায় দম্পতি পালিয়েছে। খুব ভয় পেয়ে গেলাম। পরদিন সকালেই চলে যাব এখান থেকে। এই রাতটা কোনো রকমে কাটিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত। রাতের খাওয়ার পর কর্তামশাই চারদিক থেকে দরজা গুলো বন্ধ করে দিলেন, যাতে ও ঘরে ঢুকতে না পারে। যেই ও ব্যাপারটা বুঝতে পারল, সঙ্গে সঙ্গে কি রাগ! "এ কি! দরজা বন্ধ করলেন কেন? আমি ঢুকব কি করে!" কর্তামশাই বললেন, তোমার তো ঢোকার কোনও প্রয়োজন নেই।" দরজা ধাক্কা দিতে শুরু করল বৃন্দাবন। কর্তামশাই বললেন,"কাল সকালের আগে তোমাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না"। প্রথমে তর্জন গর্জন, তারপর অনুনয় বিনয়। কিছুতেই কিছু হল না দেখে চুপ করে গেল।
সারারাত আমাদের কারো চোখে ঘুম নেই। মাঝেমধ্যেই দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে বৃন্দাবন। ওর কি উদ্দেশ্য ছিল! শুধুই মহিলার ওপর লোভ! জানি না।
ভোর হতে আবার দরজা ধাক্কা দিচ্ছে বৃন্দাবন। তখনও আলো ফোটেনি। কর্তামশাই বললেন, "আগে সবাই কে বাইরে বার করি। তারপর ঢুকবে তুমি।"
আবার শুরু হল তর্জন গর্জন। আমরা দ্রুত রেডি হচ্ছি। টাঙ্গা ওয়ালাকে বলাই আছে। নির্দিষ্ট সময়ে সে এসে পড়ল। তখন কর্তামশাই একদিকের দরজা খুলে আমাদের বার করে দিলেন বাইরে। লাগেজ বার করা হচ্ছে। ছুটে এল বৃন্দাবন। আমি, আমি জিনিসগুলো তুলে দিচ্ছি গাড়িতে। এক ধমক লাগলেন কর্তামশাই। আমাকে বলে দিয়েছিলেন, রুমন কে সামলে রাখতে। আমাদের আটকাতে ওকে কেড়ে নিতে পারে। আগলে রেখেছিলাম ওকে আমি। বৃন্দাবনের এরকম অদ্ভুত আচরণের কারণ আমি বুঝিনি।
ভোরের শিশিরে সদ্য স্নান করে উঠেছে মধুপুর। সোনা রঙের রোদে ঝলমলিয়ে উঠছে রাবণ পোড়ানোর মাঠের ঘাস। শান্তিকুঞ্জ ছেড়ে আমরা এগিয়ে চলেছি মধুপুর স্টেশনের দিকে বিশ্রী একটা অভিজ্ঞতার রেশ নিয়ে মনে । গন্তব্য আমাদের বাড়ি।
কিছুদিন আগে শুনেছিলাম, শান্তিকুঞ্জ বিক্রি হয়ে গেছে। বাড়ির মালিক বাড়ি টা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। কেন জানি না। দয়াল চন্দ্র মান্নার দোকানটাও আজ আর নেই।