STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Tragedy Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Tragedy Inspirational

আলপথ

আলপথ

4 mins
167

শহর যাবার স্বপ্নটা স্বপ্ন থেকে গেলো আমার। ট্রাম গাড়ি, দোতালা বাস, পাতাল রেল চড়া হলো না। ঘড়া ব্যাথা করে দেওয়া উঁচু বাড়ি, দেখা হলো না। শহরে যেতে পারলে, হয়তো এতোটা কষ্ট হতো না। শুনেছি শহরে বাতাসে বিষ আছে, ওখানে আমাদের মতো মানুষরা জঞ্জাল মতো পরে থাকে ঘ্যাঁসাঘেসি করে। তবে দুই বেলা খেতে পারে ওরা , পড়নে ঠিক মতো কাপড় জোটে, এটাইতো অনেক কিছু। তবু গ্রামটাকে ছেড়ে যেতে মন কাঁদে।

শীতকালের শেষ শেষ । তবু রূপকথার মতো লাগছে এই মাঠটাকে । হলুদ সরষে ফুল , লাল শাক , সবুজ কড়াই শাক, আবার কোথাও কেটে নিয়ে সোনা রঙের ধানগাছের অবষ্টিত । নানা রঙের চোক চোক সারা মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে আছে, যেনো রঙিন দাবা খেলার বোর্ড । আল দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছে রূপকথার দেশে হারিয়ে যাই।

এই ভাবে আলপথে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করেছিলো বুবাইদার সাথে। ওরা বড়ো লোক , আমরা গরিব । আমি বলেছিলাম " আকাশ আর মাটির বন্ধুত্ব হয়না, ওরা সব সময় সমান্তরাল ভাবে চলে শুধু।"

বুবাই দাদা হাতধরে মাঠে এনে বলেছিলো " ঐ দেখ দিগন্ত রেখা । ওখানে আকাশ টা মিলে গেছে মাটির সাথে। এই সরু আলপথেই হেঁটে পৌঁছে যেতে পারি আমরা আমাদের রূপকথার দেশে।"

এই আল পথেই ধরে, আজও ঘরে ফেরে স্বপ্নরা। ওর দুপুরের খাবার দিতে যাচ্ছি এই আলপথে ধরে। মাটির তৈরি লিক লিকে , এই আলপথ খুব সামান্য দেখতে হলেও , এরা শুধু দুটো পরিবারের মধ্যে জমি ভাগ করে না। অনেক সময় একটা সম্পর্ক বেঁধে রাখতে সাহায্য করে। গত রাতে ঝগড়া করেছি ওর সাথে। দুপুরের ওর পছন্দের খাবার রান্না করে , নিয়ে যাচ্ছি ওর জন্য এই আলপথ ধরে।আশা করি ওর মান ভেঙে যাবে। এই আল পথেই বসেই একসাথে খাবো আমরা, তোমরা যেমন ভালোবাসা প্রকাশ করতে ক্যান্ডেললাইট ডিনার করো , তেমন আর কি। আলপথে হাঁটতে হাঁটতে বুবাই দার কথা বার বার মনে পরছে আজও ।

"আমি জন্মেছি বাংলায় আমি বাংলায় কথা বলি। /আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি। চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে। /তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে?'"সৈয়দ শামসুল হকের "আমার পরিচয়" কবিতা টা গোটা আবৃত্তি করতো বুবাইদা। জমির সীমানা বা আলের উপর দিয়ে তৈরি পথ এই আলপথ কে 'আমার পরিচয়' কবিতায় হাজার বছর ধরে বাঙালি জাতিসত্তার পথচলার ইতিহাসের কথা বুঝিয়েছেন।

একটা কথা বলে রাখি , এই বাংলাকে আর্যরা "বঙ্গ" বলতেন। তবে বঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানরা এই "বঙ্গ" শব্দটির সঙ্গে ফার্সি "আল" শব্দ যোগ করে। এতে নাম দাঁড়ায় "বাঙাল" বা "বাঙ্গালাহ্"।"আল" বলতে জমির বিভক্তি বা নদীর ওপর বাঁধ দেয়াকে বোঝাতো।

ইতিহাস বলে মোঘলরা বাংলা দখল করার পরে এই অঞ্চলটি বাঙাল বা বাঙালাহ নামেই পরিচিতি হয়।

শহরের ছেলে বুবাই দা আল পথ দিয়ে হাঁটার অভ্যাস নেই । জীবনে সঠিক ভাবে পথ চলতে হয় সব সময়। আল পথে সঠীক ভাবে না চললে পা মুচকে যেতে পারে ‌।হাত ধরলো তাই বুবাই দা আমার। বৃষ্টি শুরু হলো ভিজে জামা কাপড় আষ্টেপিষ্টে জিড়িয়ে ধরল শরীরটা। কিশোরী বয়সের ডাসা যৌবন, বুবাই দার লোভী চোখের চাহনিতে , কেন যেনো হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো আমার। বাঁশ বাগানে ঢুকতেই একটা বাজ পড়লো ধারে কাছে। একটা অজুহাতের তো দরকার ছিলো শুধু। বুবাই দা জড়িয়ে ধরলো আমাকে। নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না ওর হাত থেকে। ওর নরম ঠোঁটের বন্ধনে চুপ করিয়ে দিলো আমাকে।মুহুর্তের কিছু ভালো লাগাটা গোপন হলো সন্ধ্যার অন্ধকারে । জানালা দিয়ে দেখলাম আলটা হারিয়ে গেলো অন্ধকারে।

বুবাই দা হারিয়ে গেলো আমার জীবন থেকে। দোষটা বুবাইদা কিংবা আমার নয়। শহর থেকে প্রতি মাসেই দেখে করতে আসতো। আমদের সম্পর্কটা ও জেনে গেছিলো। তারপর থেকেই ও , আমাকে ভয় দেখাতো সবাইকে বলে দেবে আমাদের সম্পর্কের কথা বলে। একদিন ও জোরজবরদস্তি করলো। লোক জানাজানি হয়ে গেলো। পঞ্চায়েত বসলো। অবাক এই সমাজ ব্যবস্থা। মেয়ে এদের চোখে এখনো পন্য। তাই পুরুষ রা অন্যায় করলেও , লোকে বলে মেয়েদের নষ্ট। যাইহোক শাস্তি হিসেবে ওকে বিয়ে করতে হলো আমায়। কিন্তু ও অন্যাই করলো অথচ শাস্তি পেলাম আমি।

বুবাইদা এ গ্রামে এসেছিলো প্রথম আলেয়া দেখতে। আলেয়া কে ভুত বলে মানতে চাইনি কোনদিন বুবাই দা। বুবাই বলতো "জলে গাছপালা পচনের ফলে যে মার্শ গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা জ্বলেই থেকে আলেয়া এর উৎপত্তি খোল মাঠে ঘাটে।"

বুবাই দা আর একবার এসো এ গ্রামে, তুলসী মঞ্চ আজো রোজ প্রদীপ দিতে আসি আমি এই আল পথ ধরে।এ বাড়িতে আসলে আর কেউ নেই প্রদীপ জ্বালানোর মতো। সেই দিনে কথা আজও ভুলতে পারেনি আমি। কারখানা অনেক দিন বন্ধ। চাষবাস করে সংসার চালাতে চায়না। ওষুধ তো খায় না । তার ওপর ছাইপাশ খাওয়াও বন্ধ করছে না ও। ভীষণ পেটে ব্যাথায় কাটা ছাগলের মতো করছে ও । দেখে থাকতে পারলাম না। গ্রামের রাস্তা দিয়ে যেতে গেলে হয়তো দেরি হয়ে যাবে। ওদিকে মোল্লা পাড়া বিপদ আছে জেনেও, জমির আল পথ ধরেই ছুটলাম ডাক্তার আনাতে। কিন্তু পথে ওদের দেখা। যা করার করলো ওরা । স্বামীর নাম মুখে নিতে নেই, তবু নিলাম ও দিন, কারণ ওরা ওর বন্ধু যদি ছেড়ে দে আমায় । অনেক অনুরোধ করে ছিলাম বলেছিলাম " ছাড় আমার পথ । মদনটাকে বাঁচাতে পারবো না, ডাক্তার না আনতে পারলে।" ছাড়লো না ওরা আমায়। পরে রইলাম আমি আলের পাশে। রূপকথা নয় ছেলেপুলেকে ঘুম পারানোর গল্প হয়ে। আজকাল আমাকে সবাই ভয় করে যে,,,



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract