Sandipa Sarkar

Tragedy

3  

Sandipa Sarkar

Tragedy

আগুনের পরশমনি

আগুনের পরশমনি

2 mins
1.6K


সদ্য বাংলাদেশ থেকে আগত এক মুসলিম বাস্তুহারা পরিবার রাস্তার ধারে তাঁবু খাটিয়ে শুরু করলো বসবাস।চারজনের পরিবার।মা-বাবা-মেয়ে-ছেলে।মেয়ের থেকে ছেলে প্রায় পাঁচ বছরের ছোট।ওদের গ্রীষ্মকালটা কাটে কাঠ ফাটা রোদ্দুরের তাপে,বর্ষা কাটে প্যাচ প্যাচে বৃষ্টিতে আর শীতকালটা কাটে হাড় কাঁপুনি ঠান্ডায়।পরনের জন্য একখান করেও শীতের পোশাক ওদের জোটেনি।লজ্জা নিবারণের জন্য মেয়েটির দুটো সালোয়ার কামিজ তাও ভিক্ষের দান।ছেলেটিরও তাই।এদেশে উদ্বাস্তুর মত ওরা চলে আসে প্রান বাঁচাতে কাজের সন্ধানে।ওদেশে বন্যায় সব ভেসে গেলো,এমন কি মাটির বাড়িটাও জলের স্রোতে গলে গেলো।জল নামলো ঠিকই কিন্ত ফসল সব নষ্ট হয়ে জমির মালিকরাও সর্বস্বান্ত দশায় চলে গেলেন।ছেলে-মেয়ে দুটির বাবা হয়ে পড়লেন কর্মহীন।ওদেশে দু-মুঠো অন্নের জন্য ওদের মায়ের গায়ে বাবুদের হাত পড়েছিলো।তাও মেনে নিয়ে একজনের বাড়ি ঠাঁই নিয়েছিলো ওদের মা-বাবা,চারটে পেট যদি চলে একটা শরীরের বিনিময়ে ক্ষতি কি?বাধ সাধলো যেদিন মদ্যপ লোকটার নজর গিয়ে পড়লো মেয়েটার ওপর।


মেয়েকে বাঁচাতে লোকটাকে খুন করে ছেঁড়া পরণের কাপড় কটাকেও আনতে পারেনি সাথে করে।বাঁচার তাগিদে রাতের অন্ধকারে চারজনে প্রানপণ ছুটে পেড়িয়ে এলো কাঁটা তার।তখন থেকেই সম্বল এদেশের ফুটপাত।ভিক্ষে করে চলে এদের দিনযাপন।চেয়েচিন্তে চলে লজ্জা নিবারণ।নেই বন্ধু, নেই বান্ধবী।পেটের খিদের জ্বালাটাও গনগন করে মাঝে মধ্যেই, তবু আছে মনের উল্লাস, দুই ভাইবোনের অপার্থিব ভালোবাসা।শীতের বস্ত্রের অভাবে কাঁপুনি থামাতে আছে কাগজে আগুন জ্বালিয়ে তাতে হাত পোহানো।সেটার তাপেই নিবারণ করে ঠান্ডা,পুরো জীবনটা চলে এদের কষ্টে,পরিবর্তন হয় ঋতু, মুখের নিষ্পাপ হাসি খানা তবু লেগে আছে দুই কিশোর-কিশোরীর মুখে। কোন শীত, কোন কষ্ট কাবু করে কেড়ে নিতে পারেনি এদের মুখের হাসি।ওরা বাঁচে এই আশায় কোনদিনও ঠিক এমনি কোন আগুনের পরশমনিতে ওদের দারিদ্রতা পুড়ে গিয়ে,ওরা শুনতে পাবে নবদিগন্তের ডাক।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy