তিথি
তিথি
উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম হওয়া তিথিকে,
জবাব দিয়েছেন ডাক্তার।
আর মাত্র কয়েকটা মাস,
এ পৃথিবীতে থাকার, ছাড়পত্র আছে তার।
কেবল, আঠারোটি বসন্তের মিঠে রোদ মেখেই,
রোগ ক্লান্ত, তিথির কোমল তনু।
বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের ভিড় বাড়ে,
সুস্থ থাকাকালীন যারা একবারও খোঁজ নেয়নি,
তারাই হয় প্রধান অতিথি।
ডাক্তার বলেছেন, তিথির হার্টে বিশেষ কিছু সমস্যা রয়েছে।
দূরের আকাশ যেথা মুক্ত প্রান্তর কে করেছে আলিঙ্গন,
সে দিগন্তে চোখ রেখে কতবার তিথি নিয়েছে সবুজ শ্বাস।
তবুও তার হৃদয়ে ধরেছে ঘুন।
কত রাত জেগে পড়ার ফাঁকে, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে,
শরীরে মেখেছে রূপোলী জোৎস্না।
একাকী আকাশে, নি:সঙ্গ চাঁদের কাছে উজাড় করে দিয়েছে, অন্তরের গভীরতম কোটরে জমিয়ে রাখা রাগ, দুঃখ, অভিমান।
তবুও বুকের চাপ ধরা ব্যথাটা একটুও হয়নি ম্লান।
তিথির ইচ্ছে ছিল সে ডাক্তারি পড়বে,
কদিন পরেই নিটের রেজাল্ট।
ও জানে, ভালোভাবেই মেডিকেলে চান্স পাবে কিন্তু পড়াটা হবে না।
কখনও ভাবে কি হবে ডাক্তার হয়ে?
না জানি তিথির মতোই কত তাজা ফুল, অকালে ঝরে পড়ার অপেক্ষা করে, প্রতিনিয়ত।
তারই স্বীকারোক্তি লিখতে হয়, কত ডাক্তারকে কম্পন হীন কলমের গতিতে, অবিরত।
নিটের রেজাল্ট বেরিয়েছে,
এখানেও তিথি রয়েছে, প্রথম দশে।
হাঁটা চলার ক্ষমতা ক্রমশ কমে আসছে,
নি:শ্বাস প্রশ্বাসের বিরামহীন ধারাটিও, মাঝে মাঝে তার স্বাভাবিক ছন্দ হারাচ্ছে।
বাইরের জগত সম্পর্কে জানার সুযোগ বা ইচ্ছার অভাব ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে, প্রকট।
সকালের খবরের কাগজ থেকে কিছুটা জানলেও, বাকি খবরাখবর রোজ দু
টি শালিক তার জানলার গ্রিলে এসে শুনিয়ে যায়, তাদের অকৃত্রিম খুনসুটির মাঝে মাঝে।
আজকাল গাছপালা, পশুপাখির ভাষা, বুঝতে পারে তিথি, মানুষের ভাষা অদ্ভুত ঠেকে।
তবে কি ও প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে উঠছে?
প্রশ্ন জাগে তিথির মনে।
আষাঢ়ের প্রথম বারিধারায়, নিজেকে সিক্ত করতে ইচ্ছে হয় তিথির।
শীতলতার পরশে একটু জুড়িয়ে নিতে চায় মন ও শরীর।
এক একটা ওষুধ খাওয়ার পর, দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে শুরু হয় তীব্র দহন।
সে সকল দহন একত্রিত হয়ে, পুড়িয়ে খাক করে দেয় ওর দূর্বল মন।
ভিজতে চাইলেও তা অপূর্ণ থাকে।
ইদানীং সে সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী, উঠে বসার ক্ষমতা টাও হারিয়েছে।
আজকাল ঘুমোতে বড় ভয় হয় তিথির, যদি ঘুম আর না ভাঙ্গে।
প্রভাতের প্রথম রবি কিরণে ঝিলমিল করে ওঠা নারকেল পাতাগুলি, যদি না দেখতে পায় পরদিন সকালে।
তাই আর ঘুমোয় না তিথি, জেগেই থাকে।
সকাল থেকে রাত, রাতের পর রাত।
অদূরে একটি কাক চিৎকার করে তারস্বরে,
আমাদের ছেড়ে চলে গেছে তিথি, আজ ভোরে।
আগামীর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, অবাঞ্চিত কোনো আঘাতে, খসে পড়েছে মরুভূমির বুকে।
যে মরুতে সকলের চোখের জল গেছে শুকিয়ে।
তবে প্রকৃতি আজ অশ্রু সজল।
শ্রাবণের শেষ বারিধারা ঝরেই চলেছে অঝোরে,
জানলার গ্রিলে বসা শালিক দুটি স্তব্ধ একেবারে।
আন্দোলনরত দূরের বনানীর বিলাপ, বুঝি সৃষ্টি করে দাবানল।
হয়তো ফিনিক্সের মতোই আবির্ভাব হবে, তিথি নামক কোনো পাখির,
বিলাপের অনলে দগ্ধ, এক মুঠো ভস্ম থেকে।
হয়তো বা সে উড়ে গিয়ে বসবে, কোনো রোগ ক্লিষ্ট কিশোরীর, জানলার গ্রিলে।
বেঁচে থাকার রসদ জোগাবে বলে।