ঝুলবারানদা
ঝুলবারানদা


ঝুলবারানদা
আমি কলকাতার বাসিন্দা,
একটা দশতলা ফ্লাটের, সবথেকে
ওপরের তলাটা আমার।
দুটো রুম, একটা কিচেন, আর
পূর্ব দিকটায় একটা ঝুলবারানদা।
বেশ ছিমছাম , তবে আমার যে
খুব প্রিয়, তায নয়।
শহর কলকাতার সমস্ত ব্যস্ততা
যন্ত্রের স্পন্দন ও গতি,
বহু নীচে যেন পায়ের তলা দিয়ে,
বয়ে যাওয়া জীবনস্রোত।
মাঝেমাঝে একাকিত্বের মুহূর্তে
আমি একটা আরামকেদারা নিয়ে,
বারান্দায় বসে, দুরের আকাশটাকে দেখি-
স্থির, নিস্পন্দ, আমার
ঝাপসা হয়ে আসা শহর জীবনের
বিপরীতে, একটা রঙিনচিত্র যেন।
পায়ের তলার পৃথিবীটাকে রেখে মনে হয়,
আকাশটাকে ছুঁতেই পারি আমি।
কলকাতায় সেই যে বার দাঙ্গা হল,
আমি তখন ঝুলবারানদায় দাঁড়ানো।
একটা রক্তাক্ত দেহ দেখলাম,
লুটিয়ে পড়ল ফুটপাতে, কোলাহল চারপাশে।
দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন উর্ধ্বে, দেখলাম
নিরুততেজিত, নির্বিকার আকাশটাকে।
আরেকবারের কথা, যখন
পরিবর্তন পন্থিদের মিছিল স্রোতের মতন,
বয়ে চলেছে রাজপথ ধরে, নীচে,
স্লোগানে ভেসেছে বাতাস,
আমার ঝুলবারানদায় তখন,
বসে আমি একা,
সেই আকাশটার দিকেই চেয়ে,
সূর্য তখন অস্ত যাচ্ছে চলে,
দিনের আগুন শেষ, এখন
শুধুই সাঁঝের রক্তিম, স্নিগ্ধ আভা।
তারপর একদিন আগুন লাগল আমার ই ঘরে।
কত চিৎকার করলুম গগন বিদারী-
সেদিন ও যেন আকাশটাকে,
মনে হল নিথর, নিশ্চুপ।
আমার ঝুলবারানদাটা পুড়ে হল ছাই।
অনেক নীচের জগৎটা, মনে হল আপন।
লাফিয়ে পড়লাম আমার
পায়ের নীচের সেই জীবনের দিকে,
যেন আলোকবর্ষ পেরিয়ে এলাম আমি।
রুখখো, শুষ্ক মাটিটা নীচের, তখন সিক্ত
আমারই লহিত প্রবাহে।
ভীড় জমেছিল আমার ও চারপাশে,
সেদিন, দর্শকের ভীড়ে শুধু ছিলেম না আমি।