ব্যর্থতা
ব্যর্থতা
আমার জীবনে এখন নিষ্প্রদীপ চলছে |
মনের আঙিনায় প্রদীপ জ্বলছে না আর |
যে আলো জ্বলতে শুরু করেছিল তার
সমস্ত কোমনীয়তাকে আশ্রয় করে,
বিস্তৃত করতে চেয়েছিলো আপন মৃদু আলোকস্বত্তা,
পেলব পালক মসৃণতায় নিজেকে করেছিল উন্মোচিত;
আনন্দঘন মুহূর্তে
কেঁপে কেঁপে উঠে
নিজের প্রাণশক্তির উচ্ছ্বাস করেছিল প্রকাশ |
হঠাৎ নিভে গেলো |
দপ করে জ্বলে উঠেই নিভে গেলো |
বিচিত্র এক ঝড় উঠেছিল |
দিগন্ত জুড়ে ঘন কালো মেঘের দেখা মেলেনি,
বারোমিটারের পারা হঠাৎ নেমে গিয়ে
পূর্বাভাসও দেয়নি নিম্নচাপের;
তরুদল অজানা আতঙ্কে
নিজেদের গুটিয়ে ফেলে স্থানু হয়ে যায়নি |
গাভীকুল ধেয়ানে ধেয়ে যায়নি;
তড়িঘড়ি ঘরে ফেরার উন্মাদনা দেখা যায়নি কোথাও |
তবুও উঠেছিল ঝড় |
হঠাৎ-ই উঠেছিল |
সে ঝড় তার বিরাট চেহারায় আছড়ে পড়েনি |
সমস্ত কিছু চূর্ণ করার মানসিকতায় ওঠেনি মেতে |
উত্তাল আনন্দে ধ্বংসের উন্মাদনা পায়নি প্ৰকাশ |
তবুও এলো হঠাৎ-ই ক্ষুদ্ররূপে |
কিন্তু অন্তর্নিহিত এক বিশাল ক্ষমতা নিয়ে |
কেউ জানলো না, কেউ বুঝলো না;
অনুভব-ও করতে পারলো না তার অস্তিত্বকে |
পরিমাপ করতে পারলো না তার বিরাটত্বকে |
এলো হঠাৎ-ই, আর-
নিভিয়ে দিয়ে গেলো আমার
মনোআঙ্গিনায় জ্বলে থাকা প্রদীপটি |
হাওয়ার ফুৎকারে নিভে গেলো সে |
জানলাম, মানলাম আর অনুভব করলাম শুধু আমি |
এক ঝলক বিদ্যুৎ চমকের মতো
আমার মনে জেগেছিলো প্রেম,
দুরন্ত আশা নিয়ে;
ভেসে থাকার দুর্নিবার ইচ্ছে নিয়ে |
বিদ্যুৎ চমকের পর প্রগাঢ় অন্ধকারে
নিভে যাওয়া প্রেম-প্রদীপ নিমজ্জিত রইলো |
তরী বাইতে শুরু করেই ডুবলো |
নাও-তে কোনো ছিদ্র তো চোখে পড়েনি,
কোনো অস্থিতকর অবস্থার আভাস-ও পাইনি |
পালে হাওয়া লেগেছিলো সবে |
আপন মনে গান গেয়ে সেই আমি
ডুবেছিনু আনন্দ সাগরে |
নাও ডুবলো তীরেই |
আনন্দ ফুটতেই বেদনার যন্ত্রনা, ব্যর্থতার কান্না |
সাঁতারের কলাকৌশল সব মাঝির-ই জানা |
কিন্তু অদক্ষ, অপটু, নতুন মাঝির ক্ষমতা সীমিত |
রপ্ত করা হয়নি কৌশল |
তাই অনায়াসেই ডুবলো |
মুছে গেলো হাসি, আনন্দ গেলো ধুয়ে |
ব্যর্থতার কাহিনী লেখা রইলো জীবনের পাতায় |