অঙ্কে ঊনপঞ্চাশ
অঙ্কে ঊনপঞ্চাশ
ছেলেটা ছুটছে, ছুটছে, অবিরাম ছুটেই চলেছে,
ডান হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরা মাধ্যমিকের রেজাল্ট।
বাকি সব বিষয়ে একশোর কাছাকাছি হলেও, অঙ্কে ঊনপঞ্চাশ,
হ্যাঁ, ঊনপঞ্চাশ, বড্ড বেমানান।
ছোটার গতিতে একটু ভাঁটা।
টেস্টে অঙ্কে পয়তাল্লিশ হওয়ায়, বাবার হাতের শক্ত পাঁচটি আঙুলের দাগ বসেছিল, ওর নরম গালে।
দাগ পরে মুছে গেলেও, ব্যাথাটা আজও প্রকট।
অঙ্ক ওর কলম থেকেই শুধু বেরোয়, মন থেকে নয়,
কি করে বলবে এ কথা বাবাকে?
ওর মনের সাথে যে অঙ্কের বহুদিনের আড়ি,
অনেক চেষ্টাতেও তাদের ভাব হয়নি।
বাবা যদি না বোঝে, আবার যদি হয় নতুন কোনো শাস্তি?
হাজারো চিন্তার ঢেউ ক্রমাগত আছড়ে পরে হৃদয় বালুচরে,
ভয় যেন পুঞ্জীভূত মেঘের ন্যায়, দানবীয় রূপ নেয় মনের আকাশে।
না, ও আজ বলবে, সমস্ত শক্তি এক করে বলবেই,
বাবা, আই হেট ম্যাথ,
পারিনা, অঙ্ক আমি কিছুতেই পারিনা।
বাবা চায় ও সায়েন্স নেবে, আগামীতে ইঞ্জিনিয়ার,
তাই অঙ্কটা খুব দরকার।
কিন্তু ও কি চায়? কেউ জানতে চায় না।
মনের ইচ্ছেগুলো লুকিয়ে রাখে, শামুকের ন্যায় শক্ত খোলসে।
আজ, এ মূহুর্তে বন্দী ইচ্ছেরা ডানা মেলতে উদগ্রীব,
ও মাস্টার হতে চায়,
হ্যাঁ, ওদের স্কুলের অমল স্যারের মতো,
ইতিহাসের মাস্টার।
ক্লাস ভর্তি ছাত্রদের পড়াবে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম।
সারা শরীর, মন, মস্তিষ্ক জুড়ে একটিমাত্র শব্দের হিল্লোল.......
মাস্টার, মাস্টার, মাস্টার....... ও দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য।
খুব জোড়ে ব্রেক কষেও লরিটা পারে না বাঁচাতে,
পনেরো বছরের কোমল তনুটি দলা পাকিয়ে পরে থাকে এক পাশে,
হাতে ধরা সদ্য প্রকাশিত মাধ্যমিকের রেজাল্ট।
চাওয়া না পাওয়া, জীবন মরণ, সকলই এক পরিহাস,
রক্তের স্রোতে সব আবছা হলেও, উজ্জ্বল শুধু অঙ্কের ঊনপঞ্চাশ।
