আউল বাউল
আউল বাউল
পাখিরা তো ডাকতাছে সুর কইরা, ও গোঁসাই?
এইবার উইঠা পড়ো, মানুষ হয়্যা আর কতো ঘুমায়!
আঁন্ধার গিয়া যে আলো ফুঁটলো, পাখিই খবর দ্যায়।
মুখ ধুইয়া ঐ গেলাসটায় একটা লম্বা চুমুক দাও,
না, তুমার পছন্দের লাল চা না, কুনও ওষুধও নয়,
ওইটা তো গুলঞ্চের রস, দেখতে সবুজ রঙেরই হয়।
আমাগোর শরীল ঠিক রাখন চাই,
ডাক্তার বদ্যির শরণ না নিতে হয়, করি এই কামনাই।
ঈশ্বরের বাস এই শরীরে, শরীরটা তো চলন্ত মন্দির,
মনে তো তাই অশুচির কোনো বালাই নাই।
এই তো, জেগেই আছি, হ্যাঁ উঠছি, মুখ টুখ ধুয়ে নিই।
এবার চলো আগে নিজেরাও ঐ পাখিদের মতো গাই,
তারপর নাহয় দুজনে মিলে পাড়ায় মাধুকরিতে যাই।
এখন তো আর এই দেশে চালের অভাব নাই !
অন্ন চিন্তাও এক চিন্তা, আমরা তো পাখির মতোই, পেট খালি থাকলে তো আর চলার উপায় নাই।
আমরা তো করি সেবা, আমরা কি আর খাই?
নাকি কাল, পরশু, বা সারাবছরের খাবার জমাই !
কাল পৃথিবীতে থাকবো কি না তারই তো ঠিক নাই।
মানব জন্ম নিয়াও মানুষের মনে ক্যান্ এতো দুঃখ ?
তুমি কি তার কুনো উত্তর জানো গোঁসাই?
ঘুম ভাঙলেই তো তাই অগোরে গান শুনাইতে চাই,
মাধুকরি তো একটা উপলক্ষ, আসলে দুঃখ তাড়াই।
বাঃ, বেশ ভালো কথাই বলেছো, ঠিক তোমার কথাই,
দুঃখের কারণ আসলে মানুষের অসীম চাহিদাটাই।
মানুষ লোভে যা চায়, তা না পেলে ক্রোধের জন্ম হয়,
সাথে সাথে অন্য রিপু গুলোও জীবনে হানা দেয়।
বাউলের কাজ দেহের আধারে চেতনা খোঁজাটাই,
তাই তো সাধনার দ্বারা সহজেই শান্তি খুঁজে পায়।
এ কোনও আলাদা র্ম, দর্শন বা মতবাদ নয়,
মানুষ হয়ে, শুধু বেঁচে থাকাটাই তো আনন্দময়।
সূফীদরবেশ, আউলবাউল, বৌদ্ধসিদ্ধাচার্য, সকলেই,
একই কথা যুগ যুগ ধরে বোঝানোর চেষ্টা করে যায়।
মানবতাবাদের মরমীয়া কথা, সুর ও শব্দমালাই,
কিছু মানুষের হৃদয় অবশ্যই, ছুঁয়ে নেয় খুব সহজেই।