Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Drishan Banerjee

Tragedy

2.3  

Drishan Banerjee

Tragedy

পরাণ সখা(শেষ পর্ব)

পরাণ সখা(শেষ পর্ব)

5 mins
7.8K


অনেকবার ভেবেছি পর্নাকে জিজ্ঞেস করবো ওর ছোটবেলা কোথায় কেটেছে। কিন্তু ভয় হত, ও যদি অন্য কিছু বলে। তাছাড়া ও শান্তিনিকেতনের মেয়ে , এখানেই পড়েছে। মিলুতো পূর্ব পাকিস্তানে চলে গেছিল শুনেছিলাম। তবে পর্নার সাথে মিলুর মিল গুলো দেখে অনেকবার মনে হয়েছে ওকে প্রশ্ন করি। বয়সের পার্থক্যটাই ছিল বাধা।

 

পর্নার সাথে আমার এই সখ্যতা নিয়ে কিছু অপ্রীতিকর মন্তব্য কানে আসত। আমরা কেউই পাত্তা দিই নি।আমি বহুবার ভেবেছি আমি কি পর্নার প্রতি আকৃষ্ট? আমার অন্তরাত্মা উত্তর দিয়েছে এ এক অন্য আকর্ষণ, অন্য ধরনের ভালবাসা। মিলুর জায়গা আমার হৃদয় জুড়ে। পর্না আমার বন্ধু, শ্রী যেখানে ছিল পর্না হয়তো সে জায়গাটা পূরণ করেছিল। দুজনে নিজেদের সুখ দুঃখ ভাগ করে নিয়ে বেশ ছিলাম। অনেকবার ভেবেছি পর্নাকে মিলুর গল্প করবো, কিন্তু হয়ে ওঠে নি। ও খুব অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়ে দুই ছেলেকে আঁকড়ে বহু কষ্টে ওদের বড় করেছিল। ছেলেরা মা কে নিতে চাইলেও ও যেতে চায় নি ।দুই বৌকে সব রকম স্বাধীনতা দিয়ে ও চলে এসেছিল এখানে। ছেলেরা নিয়ম করে মা এর খোঁজ নিত। আর ওর এক বোনের মেয়ে মাঝে মধ‍্যে ওর দেখাশোনা করত। দেখতে দেখতে আমাদের বন্ধুত্বর এক বছর পার হয়েছিল। সেদিন দুজনে ঝিলের ধারে বসে ছিলাম নীরবে। হঠাৎ নীরবতা ভেঙ্গে পর্না বলেছিল -"আজ তোমায় শুনতেই হবে আমার অতীতের গল্প। " আমি আর বাধা দিই নি।

ও শুরু করেছিল -"এই শান্তিনিকেতনেই আমার পড়াশোনা। বিয়ে হয়েছিল খুব অল্প বয়সে এক বড় ডাক্তারের সঙ্গে। সুখেই ছিলাম। কয়েক বছরের মধ্যে দুই ছেলে আসে কোল জুড়ে। কিন্তু সুখ আমার কপালে ছিল না। বড় ছেলে যখন সাত আর ছোটটা সবে পাঁচ তখন ধরা পড়েছিল আমার জটিল হার্টের অসুখ। অঞ্জন আমায় নিয়ে উড়ে গেছিল ভেলোর, কিন্তু ডাক্তার বলে দিয়েছিল হার্ট বদলাতে হবে যা আজ থেকে বাইশ বছর আগে আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। একটা সচল হার্ট পাওয়া ছিল সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমার স্বামী অঞ্জন ডাক্তার হওয়ার সুবাদে, সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও আমরা হার্ট পাই নি। ছেলেদের দেখতাম আর চোখের জল ফেলতাম, দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। অঞ্জন দুঃখ করতো কেন হার্ট নিয়ে পড়ে নি। ও ছিল নিউরো সার্জেন। অনেক বড় ডাক্তার। আমার অসুস্থতায় ওর প্র্যাকটিসে প্রভাব পড়ছিল। ও অপারেশন করাও কমিয়ে দিয়েছিল। আমি হসপিটালে ভর্তি ছিলাম। নানারকম লাইফ সাপোর্টের উপর নির্ভর করে যমরাজের সঙ্গে টাগ্ অফ ওয়ার খেলছিলাম, এর মধ্যেই খবর এলো হার্ট পাওয়া গেছে। অবশেষে অপারেশন করে আমার অকেজো হৃদয় কে বাতিল করে অন্যের হৃদয় নিয়ে নতুন জীবন পেলাম। ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলাম। ও আবার নিজের কাজে ডুবে গেছিল। ছেলেরা হোস্টেলে মানুষ হচ্ছিল। আমার তখন একটাই কাজ ছিল, কে আমায় হৃদয় দান করলো সেটা জানা। কিন্তু হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ছিল ভীষণ কড়া এ ব‍্যপারে। আমি কিছুতেই জানতে পারছিলাম না হার্ট ডোনারের কথা। অঞ্জনও এ ব‍্যপারে ছিল নিশ্চুপ। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও সারাক্ষণ একটা মন খারাপ আমায় ঘিরে থাকত। একটা ঘোরের মধ্যে থাকতাম সব সময়। একটাই প্রশ্ন ঘুরেফিরে মনে আসত, এ কার হৃদয়? আস্তে আস্তে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। নিজের স্বত্বাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ওর সাথেও ঠিক করে কথা বলতাম না। ও কেমন লুকিয়ে লুকিয়ে থাকত। আমার সামনে বিশেষ আসত না। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট হতে বসেছিল। প্রায় ছ- মাস পর একদিন আমি ওকে চেপে ধরেছিলাম যে আমায় বলতেই হবে এ কার হৃদয় নিয়ে আমি বেঁচে আছি। কি হয়েছিল সেই মহানুভবের যার জন্য আমি বেঁচে রইলাম। ও ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেছিল। পরদিন সকালে আমার ঘরের টেবিলে আমি একটা চিঠি আর ডাইরি পাই। চিঠিটা আমার স্বামীর, ডাইরিটা ওর এক পেশেন্টের।

 

চিঠিতে ও লিখেছিল ওর এক পেশেন্টের জটিল ব্রেন টিউমার হয়েছিল। বহুদিন ধরে চিকিৎসা চললেও সেই পেশেন্ট ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। দুবার অপারেশন করেও সফলতা আসে নি। সেই পেশেন্ট কে একদিন আমার গল্প করেছিল আমার স্বামী। উদ্দেশ্য ছিল তাকে আশা দেখানো। কিন্তু সে সব শুনে নিজের ইচ্ছায় নিজের হৃদয় আমায় দিয়ে যেতে চেয়েছিল। ডাক্তার হিসাবে অঞ্জন মেনে নেয় নি তার কথা। বলেছিল একমাত্র ব্রেন ডেড হলেই কোনো পেশেন্টের বাড়ির লোকের ইচ্ছায় হার্ট বা অন্য অঙ্গ নেওয়া যায়। জীবিত অবস্থায় কেউ এটা করতে পারে না। সেই রোগীনি শেষে এ কথা বলেছিল যে এই তৃতীয় অপারেশনে যদি সে সুস্থ না হয় সে হার্ট দিয়ে যেতে চায় আমায়। লিখিত ভাবে উনি এই ইচ্ছা জানিয়েছিলেন। উনি নাকি বলেছিলেন ওনার হার্ট নিয়ে যদি আমি বেঁচে থাকি আমার মধ্যে উনিও বেঁচে থাকবেন। ভদ্রমহিলা ছিলেন অবিবাহিতা। নিকট আত্মীয় ছিল না কেউ। চাকরী করতেন একটা স্কুলে। ওনার  বোনেরা সেভাবে দেখত না ওনাকে। এক মাস ধরে উনি অঞ্জনকে বুঝিয়েছিলেন যে দুজনেই মৃত্যুর দিকে যাচ্ছি আমরা, এই ভাবে একজন অন্তত বেঁচে উঠবো।

অবশেষে অঞ্জন অপারেশনটা করেছিল। তবে ওনাকে বাঁচাতে পারে নি। ওনার শেষ লিখিত ইচ্ছায় আমাকে বাঁচাতে পেরেছিল। কিন্তু অঞ্জন নিজের বিবেকের কাছে হেরে গেছিল। ওর সর্বদা মনে হত ঐ তৃতীয় অপারেশন না হলে উনি হয়তো আরো কিছুদিন বাঁচতেন। সুস্থ হতেন না ,কিন্তু আরো কয়েক মাস পৃথিবীর আলো দেখতেন।

চিঠিটা শেষ করে আমি ডাইরিটা পড়তে শুরু করেছিলাম। তক্ষুনি খবর এসেছিল অঞ্জনের গাড়ি একটা ট্রাকের নিচে ঢুকে গেছে। ওকে বাঁচানো যায় নি।

অঞ্জন বিবেকের সাথে যুদ্ধটা হেরে গেছিল। ওর পেশেন্ট মলয়া দেবীর ডাইরিটা পরে পড়েছিলাম। আমাকে উদ্দেশ্য করেই উনি লিখেছিলেন ঐ ডাইরির শেষটুকু। উনিও ভালবেসেছিলেন একজনকে। কিন্তু দূর থেকে। ছোটবেলার ভালবাসাকে যখন বড় হয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন তখন সেই ভালবাসা অন্য কারোর। তাই সারা জীবন দূর থেকেই ভালবেসে গেছিলেন। সামনে আসেন নি। তাদের সংসারে ভাঙ্গন ধরাতে চান নি।

এরপর যখন বুঝতে পেরেছিলেন দিন প্রায় শে্‌ তখন দেখেছিলেন অঞ্জন আমায় কতটা ভালবাসে। তাই অঞ্জন আর আমার ভালবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজেই অঞ্জনকে বলেছিলেন অপারেশনটা করতে।

অঞ্জনকে বলে গেছিলেন ওনার ডাইরিটা আমায় দিতে। বেচারা অঞ্জন। নিজেকে দোষী ভেবে কষ্ট পেয়ে চলে গেছিল।

মলয়া দেবীর হৃদয় কোনো ভালবাসাই পেলো না।"

 

আমি এতক্ষণ অবাক হয়ে শুনছিলাম। এবার কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম -" ডাইরিটা কি আমি একবার পড়তে পারি? ওটা কি পাওয়া যাবে?"

 

পর্না সজল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে দেখল। তারপর ওর ব্যাগ থেকে একটা ডাইরি বের করে আমার হাতে দিয়ে উঠে গেল ধীর পায়ে।

আমি পাগলের মতো পাতার পর পাতা উল্টে গেলাম। ঝাপসা চোখে পড়তে অসুবিধা হলেও বুঝতে অসুবিধা হয় নি। চিনতেও অসুবিধা হয় নি। আমার হৃদয় মিলুর হৃদয়কে ঠিক চিনেছিল। মিলুকে আমি খুঁজে না পেলেও ও আমায় খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু আমার সুখের সংসার ভেঙ্গে যাবে বলে সামনে আসে নি কখনো। দূর থেকেই ভালবেসে গেছে।

আমার পরিচয় লেখা ছিল ঐ ডাইরিতে। তাই পর্না আমার লেখা পড়তো, আমাকে দেখে পর্না ঠিক চিনেছিল প্রথম দিন। শুধু বলতে পারে নি।

 

ডাইরিটা শেষ করে চুপ করে বসে ছিলাম। অন্ধকার নেমে এসেছে বহুক্ষণ। নিয়ন আলোয় শেষ পাতা কটা পড়ে বুঝতে পারছিলাম ও বেঁচে থাকতে চেয়েছিল শুধু আমায় একবার কাছে পাওয়ার জন্য। ওর অতৃপ্ত হৃদয় তাই পর্নার মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিল ওর ভালবাসার প্রদীপটাকে। এই ডাইরিটার প্রতি পাতায় ছিল সেই আকুতি। যা আমি অনুভব করছিলাম অন্তর দিয়ে।

মন্দিরে সন্ধ্যা আরতির ঘণ্টা বাজায় আমি সম্বিত ফিরে পেলাম। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম ময়ূরাক্ষীর দিকে। আমার যে অনেক কিছুই বলার আছে মিলুকে। আর দেরি করা যাবে না। আজই সব খুলে বলব আমিও।

 

সমাপ্ত


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy