Drishan Banerjee

Crime Thriller

2  

Drishan Banerjee

Crime Thriller

রহস্য যখন সিংহ পাহাড়ে ৪

রহস্য যখন সিংহ পাহাড়ে ৪

5 mins
9.1K


১৮/৩/২০০১

রবি চলে গেল। না ত্যাগ করি নি। আলি আর অরুণ শিকারের খোঁজে গেছিল। আমি ঐ সবুজ মাম্বা সাপটা দেখেছিলাম রবির ব্যাগে ঢুকছে। চেন খোলা ব্যাগটা ওর গায়ে রেখে দিয়েছিলাম। ওর একদিক অসার হলেও সাপটা বেরোতে দেখে ও নড়ে বসেছিল। আর ঐ নড়াচড়াটার জন্যই সাক্ষাত মৃত্যু ফণা তুলেছিল ওর সামনে। অবাক চোখে তাকিয়েছিল ও আমার দিকে। সেই চোখে ঠিক কি ছিল জানি না। আমি বলেছিলাম -"খুব কষ্ট পাচ্ছিস ভাই। বাড়ি ফিরলেও পঙ্গু হয়েই পড়ে থাকবি বাকি জীবন। এই তোর মুক্তির পথ।"

এ দেশে এসেই শুনেছিলাম এই সাপটা ভয়ানক বিষাক্ত, তবে ভিতু। ভয় পেলেই কামড়ায়। কিন্তু রবি তেমন নড়ছিল না, বাধ্য হয়ে একটা লাঠির খোঁচা দিতেই ও মোক্ষম ছোবলটা মারল। রবির কথা আগেই বন্ধ হয়ে গেছিল। ও একটা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে ছিল। আমি দেখলাম সাপটা ধীরে ধীরে ওদিকের হলুদ ফুলের ঝোপে ঢুকে গেল।

আধঘণ্টা পর দূরে অরুণ আর আলীকে দেখলাম। ওরা আমার গল্পটাই বিশ্বাস করেছিল। পাশেই একটা ফাঁকা জায়গা দেখে রবির জন্য গর্ত খোঁড়া হলো। এই গর্ত খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো এই পাথরগুলো। একদম অন্যরকম দেখতে , তবে অরুণ প্রথম দেখে বুঝেছিল যে এগুলো অপরিশোধিত হিরার টুকরো। কিন্তু আমাদের তখন একটাই লক্ষ্য, কি করে সভ্য সমাজে ফেরা যায়। সবাই স্মৃতি হিসাবে কয়েকটা পাথর পকেটে নিলাম। রবিকে চির শান্তির দেশে শুইয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম। পথে যা পেয়েছি খেয়েছি। ঝরনা পেলেই জল ভরেছি। পালা করে রাত জেগেছি। কিন্তু সেই রাতে আমরা আলীকেও হারালাম। ও যেন কোথায় উবে গেল। ঘাস জমিতে ওকে কেউ টেনে নিয়ে গেলে চিহ্ন থাকত, কিন্তু কোথাও কোনো রক্তের দাগ বা কিছু পাই নি। পরদিন বেশ কিছুক্ষণ ওকে খুঁজেও না পেয়ে আমরা দু জন এগিয়ে চললাম। আমার খালি মনে হচ্ছিল আলী একাই ফিরে গেছে ঐ হিরার টানে।

 

২১/৩/২০০১

অতি কষ্টে আজ তৃণভূমির জঙ্গল পার হয়ে একটা আদিবাসীদের গ্ৰামে পৌঁছেছি। কত দিন পর লোকেদের মুখ দেখলাম। কিন্তু এরা একেবারেই সভ্য নয়। ক্রিও ভাষাও বোঝে না। ইশারায় কথা বলতে হচ্ছে। তবে শতচ্ছিন্ন মিলিটারি পোশাক দেখে সন্মান জানালো। বহুদিন পর পেট ভরে খাবার খেয়ে ঘুমোলাম। কিন্তু ঘুম থেকে উঠেই আরেক বিপত্তি। পকেট থেকে হিরা গুলো বার করে রেখেছিলাম শোয়ার সময়। ওদের দলপতি দেখতে পেয়ে রেগে গেছে। ইশারায় যা বোঝাল, ওরা এ সব পাথর নেওয়া পছন্দ করে না। ওদের দেবতা রুষ্ট হয় এতে। প্রকৃতির ওপর লোভ করতে নেই। হিরা গুলো ছুঁড়ে ফেলে দিল আমাদের চোখের সামনে। আরো অনেক কিছু বলল, কিছুই বুঝলাম না আর। আমার জ্বরটা অবশ্য ওদের ওষুধেই ভাল হলো। পরদিন ওরা আমাদের এগিয়ে দিল ওদের গ্ৰামের সীমানায় এক নদীর ধারে। নদী বরাবর এগিয়ে যেতে বলেছিল। সেভাবেই আমরা হাঁটা শুরু করেছিলাম। বেশ কয়েক মাইল আসার পর আরেকটা ঝরণা এসে নদীতে পড়েছিল। সেখানেই হঠাৎ অরুণ দেখতে পেয়েছিল নদীর চরে পাথরের সাথে পড়ে রয়েছে হিরা, অপরিশোধিত বলে বোঝা মুশকিল।কিন্তু আমরা ঠিক চিনতে পেরেছিলাম। এগুলো একটু ছোট। অনেক খুঁজে পাঁচটা পাওয়া গেল। আবার হাঁটতে শুরু করলাম। বিকেলেই একটা গ্ৰামের কাছে পৌঁছে গেছিলাম। কিন্তু একটা চিতা যে আমাদের সঙ্গী হয়েছিল টের পাই নি। নদী পার হওয়ার আগেই অরুণকে টেনে নিলো ঐ হলুদ শয়তান। আমাদের গুলিও শেষ হয়ে গেছিল। কিছুই করতে পারলাম না। রাতটা ঐ গ্ৰামে কাটিয়ে পরদিন আবার হাঁটা শুরু, এরা ইংরাজি বোঝে কিছুটা। জানলাম কয়েক মাইল গেলেই মিলিটারি ক্যাম্প পাবো। এগিয়েও দিল কিছুটা। আজ পৌঁছে আগে মোটামুটি একটা ম্যাপ করে রাখতে হবে। এই জায়গায় সময় সুযোগ করে আসতে পারলে আর এই চাকরী করার প্রয়োজন পড়বে না।

২৩/৩/২০০১

অবশেষে একমাত্র আমি ফিরতে পারলাম নিজের লোকেদের মাঝে। এতদিন ধরে পায়ে হেঁটে কয়েকশো মাইল পেরিয়ে ফিরে এসেছিলাম। মোয়া নদী ধরে হেঁটে আজ একটা ক্যাম্পে ফিরতে পারলাম। এটা দেশের দক্ষিণ দিক। কেনিমা জেলা, আমাদের শান্তিরক্ষক বাহিনী র ক্যাম্পে পৌঁছলাম অবশেষে। হিরা গুলো সযত্নে  লুকিয়ে রেখেছি। এর পর দলবল নিয়ে আরেকবার যেতে হবে। ব্যাগের বালিটাও পরীক্ষা করাবো, ওটা সোনাই হবে। এতদিন ঠিক-ই শুনেছি। এ দেশ খনিজের ভাণ্ডার। সোনা হিরা ছড়িয়ে রয়েছে। খুঁজে নিলেই সব আমার।

পড়া শেষ করে আলোক তাকায় মিশাই এর দিকে, বলে -"তুমি জানো এগুলো কি? এত ভয় পাচ্ছ কেন?"

-"আমার বাবা আর আবদুলের কাকা সৈনবাহিনিতে কাজ করত। এ ডাইরি বিনয় বলে একজন শান্তি সেনার। লোকটা একটা ছোট দল তৈরি করে অভিযানে গেছিল। কিন্তু ঐ দলের একটা লোক ও বেঁচে ফেরেনি। মোয়া নদীর ঐ অঞ্চল দুর্গম আর হিংস্র জন্তুতে ভরতি। তবুও এই অভিযানের কথা শুনে অনেকেই গেছিল। আমার বাবা আর কাকার সাথে আমি আর আবদুল গেছিলাম ২০০৩ সালে। কিন্তু পথেই হিংস্র জন্তুর আক্রমণে , অজানা জ্বরে, সাপের কামড়ে প্রচুর লোকজন মারা যায়। অনেকেই ফিরে আসতে চাইছিল। একটা সোনার খনিও পেয়েছিলাম আমরা, কিন্তু সেটা ধ্বসে প্রায় ষোল জন ভেতরে চাপা পড়ে। দলে তেরো চোদ্দ বছরের কিশোর ছিল তিনজন। তারাও মারা যায়। আমরা হতোদ্যম হয়ে ফিরতে শুরু করি। একটা কঙ্কালের কাছে একটা ব্যাগে এই ডাইরি আর তিনটে হিরা পেয়েছিল বাবা। একধরনের জ্বর নিয়ে বাবা আর আবদুলের কাকা সহ মোট পাঁচজন ফিরে আসে আমাদের সাথে। বাবা বাংলা পড়তে পারত না। এক শান্তি সেনা বিজয় ছিল বাবার পরিচিত। সে ডাইরিটা পড়ে সব জেনে আবার অভিযানে গেছিল। এবার আর বাবা যায় নি। একমাস পর অসুস্থ হয়ে বিজয় ফিরে আসে। ওর দলে যুবক ছাড়াও তেরো চোদ্দ বছরের ছেলেরাও গেছিল। কেউ বাঁচে নি। ও বলেছিল এই ডাইরি পুড়িয়ে ফেলতে। এর সব কথা সত্যি নয়। একটা ম্যাপ ছিল ডাইরিতে। সেটাও নাকি ভুল। এ আলেয়ার হাত ছানি। সেদিন রাতেই বিজয় মারা যায়। আবদুলের কাকা ডাইরিটা পুড়িয়ে দেই সেই রাতেই। এখন বোঝা যাচ্ছে এই পাতা গুলো রেখে ওটা পুড়িয়ে ছিল। "

-"আর এই ডাইরির গল্প আবদুল কাউকে করেছিল, যারা ওকে মেরে এটা পেতে চেয়েছিল। কিন্তু ম্যাপ তো নেই। ম্যাপ ছাড়া কে যাবে এ ভাবে অভিযানে!!" পিয়ম বলে।

-"ম্যাপ ছিল। মুল ডাইরিতে ম্যাপ আঁকা ছিল।আলাদা একটা কাগজে।" মিশাই বলে।

-"এখন এ ডাইরির পাতা গুলো তাহলে পুড়িয়ে ফেলা হোক। " আলোক নিজের মোবাইলে প্রতিটা পাতার ছবি তুলতে তুলতে বলে-"তবে সরকারের ঘরে জমাও দেওয়া যায় এ পাতা গুলো। যদিও আমার মনে হচ্ছে এখানে সব পাতা পর পর নেই। গ্যাপ আছে। আর এতো বছর পর ঐ জায়গা গুলোর উন্নতি হয়েছে নিশ্চই। "

-" আমি ভাবছি অন্য কথা, কাল আমরা বো ঘুরতে যাবো, কয়েক দিন দক্ষিণ পূর্বেই ঘুরবো। এদিকে ডাইরি না পেয়ে ঐ বদমাশ গুলো আমাদের পিছু নেবে!! আক্রমণ করতে পারে। আবার মিশাই কে রেখে গেলে ওর ক্ষতি হতে পারে। মিশাই ভাল গাড়ি চালায়, ওকে যদি নিয়ে যাই অনেক হেল্প হবে। আর কেউ চাইলে পেজ গুলো আমরা দিয়ে দেবো। তাহলেই ঝামেলা শেষ।" পিয়ম বলে।

-" ঝামেলা শেষ নয় শুরু। পেজ গুলো দিলেই ওরা ভাববে আমাদের কাছে আরো কিছু আছে। ম্যাপ চাইবে। গোটা ডাইরি চাইবে। তাতে ঝামেলা বাড়বে। পুড়িয়ে ফেলি আর বলি কিছু দেয় নি। এটাই বেষ্ট আইডিয়া।" আলোক হাসতে হাসতে বলে। মিশাই ও খুশি হয়। ঠিক হয় পরদিন সকালে মিশাইকে নিয়ে ওরা বো রওনা হবে। পাতাগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।(চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime