Drishan Banerjee

Crime Thriller

2  

Drishan Banerjee

Crime Thriller

রহস্য যখন সিংহ পাহাড়ে (পর্ব-১)

রহস্য যখন সিংহ পাহাড়ে (পর্ব-১)

4 mins
9.4K


"দেশের নাম সিংহ পাহাড়, দেশের জাতীয় সিম্বল তিন খানা সিংহ অথচ তুমি বলছ দেশে সিংহ নেই!! আফ্রিকায় সিংহ নেই একথা কি মানা যায়?" সাহানা বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে পিয়মের দিকে।

-"দেশটার নাম হয়েছিল পশ্চিম উপকূলের এক পাহাড়ের নাম থেকে। আসলে পাহাড়ের মাথাটা ছিল দেখতে ঠিক সিংহের মতো। আর সমুদ্রপথে নাবিকরা দূর থেকে মেঘের গর্জন শুনেছিল। যা ছিল অবিকল সিংহের ডাকের মতো। তাই এই দেশটার নাম দিয়েছিল-সিয়েরা লিওন, মানে সিংহের পাহাড়। অবশ্য সেই সময় হয়তো সিংহ ছিল এ দেশে। পুরো পশ্চিম আফ্রিকায় তো এখন সিংহ বিপন্ন। কমতে কমতে এখন আর দেখাই যায় না। " পিয়ম হাসতে হাসতে বলে।

পিয়ম সাহানার মাসতুতো ভাই, প্রায় সমবয়সী দুজন। তাই বন্ধুত্বটাও গাঢ়। পিয়ম ডাক্তার, ২০১৪ থেকে আফ্রিকার সিয়েরা লিওনের রাজধানী এই ফ্রি-টাউনে আছে। ও এক এনজিওর হাত ধরে এই সিয়েরা লিওনে এসেছিল । সে সময় 'ই-বোলা'ভাইরাসের প্রকোপে সিয়েরা লিওন শ্মশানের মতো। সেই থেকে পিয়ম এখানের আদিবাসীদের উপর কাজ করছে এনজিওর হয়ে। সাহানা আর আলোক ছুটি কাটাতে এবার এখানে এসেছে। দেশটা ছোট হলেও খুব সুন্দর৷ সমুদ্র পাহাড়, ঝরনা, জঙ্গল, বন্যপ্রাণী কি নেই। সিয়েরা লিওনের উত্তর সীমান্তে গিনি, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে লাইবেরিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দিকে আটলান্টিক মহাসাগর ঘিরে রয়েছে। এ দেশে বৃক্ষহীন তৃণভূমি অঞ্চল থেকে রেইন ফরেস্ট পর্যন্ত একটি বিচিত্র পরিবেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু বিদ্যমান। সিয়েরা লিওনের মোট আয়তন ৭১,৭৪০ বর্গকিলোমিটার , এ সব সাহানা আসার পথেই জেনেছে।

 -" যখন ব্রিটিশ ক্রীতদাস প্রথা অবলুপ্তির পথে, ঐ সব ক্রীতদাসদের এখানে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তাই এই শহরের নাম ফ্রি টাউন।" পিয়ম বলে।

-"আচ্ছা দেশটার দ্বিতীয় সরকারী ভাষা যে বাংলা সেটা শুনে প্রশ্ন জাগছে না মনে?" আলোক বলে ওঠে।

-"আসলে দেশটা খনিজ সম্পদে ঠাসা , বহুদিন পর যখন ১৯৬১ তে স্বাধীন হয় তখন বিশ্বের সবচেয়ে গরীব দেশ। এই সব সোনা, হিরে আর নানারকম খনিজের সন্ধানে বারবার গৃহযুদ্ধ বেধেছে। সেই যুদ্ধ তুমুল আকার ধারণ করে ১৯৯১ থেকে। এরপর ১৯৯৯ সালে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তেরোটা দেশের সৈন্যরা এসে দেশটিতে অবস্থান করে। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর বাংলাদেশি সৈন্য এসেছিল। যারা লোকাল লোকদের সাথে বাংলায় কথা বলত।এদের থেকে খুব তাড়াতাড়ি ইয়ং ছেলে মেয়েরা বাংলা শিখে ফেলেছিল। স্থানীয়রা ক্রেওল অর্থাৎ ইংরাজির সাথে নিজেদের মেন্দা মিশিয়ে ক্রিও ভাষায় কথা বলত, যা কয়েকটা ভাষা মিলে তৈরি। কিন্তু জনগণের মধ্যে বাংলা প্রীতি দেখে এই সব বাঙ্গালীরা ওদের বাংলা শেখায়। ওদের গৃহযুদ্ধের পর শান্তি ফিরিয়ে আনায়, বাংলাদেশের এই ভূমিকায় খুশি হয়ে তৎকালীন সরকার বাংলাকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়। বর্তমানে প্রচুর লোক শুধু বাংলা ভাষ নয় এদের সংস্কৃতিকেও আপন করে নিয়েছে। একেক জায়গায় গেলে বোঝাই যায় না এটা যে বাংলার বাইরে একটা আফ্রিকান দেশ।"পিয়ম বলে।

-"সে তো দুপুরে খেতে বসেই বুঝলাম। তোমার রাঁধুনী মিশাই এতো ভাল ইলিশ রেঁধেছিল যে, বুঝি নি যে ওটা এদেশের লোকের রান্না। আমাদের সাথে বাংলায় গল্পও করলো তোমার ঐ রাঁধুনী।আমরা তো ওকে বাংলাদেশি ভেবেছিলাম। পরে শুনলাম ও 'তেমনে' উপজাতির লোক" আলোক বলে।

-"ও আমার রাঁধুনী ছাড়াও ড্রাইভার কাম ম্যানেজার। দারুণ ছেলে। কয়দিন থাকলেই বুঝে যাবে।" ,পিয়ম হাসতে হাসতে বলে।

-"তা সিংহ না দেখাতে পারো, ওয়েস্টার্ন গ্রিন মাম্বা, শিম্পাঞ্জি, চিতা এসব তো আছে শুনেছি। আর ঐ সব সোনা আর হিরার খনি!! উফ, ভাবলেই বেশ রোমাঞ্চ হচ্ছে। চাঁদের পাহাড়ের শঙ্করের মতো আমরাও চলেছি হিরা আর সোনার খনির খোঁজে।" সাহানা বলেই হেসে ফেলে।

-"সে সব দেখা যেতেই পারে, তবে খনি গুলো বেশির ভাগ ইললিগ‍্যাল। কোথাও প্রপার নিয়ম মেনে সোনা বা হিরে তোলা হয় না, মেশিনারিও নেই। নদী পথেও ভেসে আসে অপরিশোধিত হিরা এবং সোনার আকরিক। অথচ এত সম্পদ থাকার পরেও দেশের বেশিরভাগ লোক খুব গরীব। দেশটি বিশ্বের মোট পাঁচটি সবচেয়ে গরীব দেশের একটি। দেশের অধিবাসীরা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে মারা পড়ে। কদিন আগেও একটা সোনার খনিতে ধ্বস নেমে বহু লোক মারা গেছিল। চাইল্ড লেবার ও মারা গেছে প্রচুর। এ সব খবর সরকার প্রচার করতে চায় না ৷" পিয়ম বলে।

-"এখনো বিদেশীরা আসে সোনা বা হিরার খোঁজে?" আলোক প্রশ্ন ক‍রে।

-"এখন কম আসে, সরকারি বহু বিধি নিষেধ আছে। চোরা পথে কিছু অভিযান হয় অবশ্য।তবে এখানে বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে মাত্র দু ফুট খুঁড়লেই অপরিশোধিত হিরা পাওয়া যায়। কিন্তু খোঁড়া বারণ। সরকারি অনুমতি নিতে হবে। বেশ কিছু আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় এমন বহু খনি লুকিয়ে আছে। দেশটায় এখনো বহু এমন জায়গা আছে যেখানে সভ্য মানুষের পায়ের ছাপ পড়ে নি।" পিওম এবার উঠে পড়ে। বলে -"এসব পরে হবে, সামনেই একটা দারুণ সি বিচ আছে। চল তোদের ঘুরিয়ে আনি।" সাহানা আর আলোক ঘুরতেই এসেছে। ওরা বেরিয়ে পরে কিছুক্ষণ পরেই।

সার সার নারকেল গাছ পার করেই বালুকা বেলায় আছড়ে পড়ছে আটলান্টিকের নীল জলরাশি। বিচের নাম প্রিষ্টাইন সৈকত।এ এক অপূর্ব সুন্দর সৈকত। বেশ ভালই কাটল বিকেলটা। বাঙ্গালীদের এখানকার সবাই খুব সন্মান করে। আর পিয়ম ডাক্তার হিসাবে সবার চেনা মুখ। অনেকেই এসে বাংলায় কুশল বিনিময় করছিল। ভালই লাগছিল আলোক আর সাহানার। বাঙালিরা বাংলা ভুলছে আর এরা শিখছে।

পরদিন পিয়মের হসপিটালে জরুরি কাজ ছিল। ওর গাড়িতে চড়ে সাহানারা শহর ঘুরতে বেরিয়েছিল। প্রথমেই শহরের মাঝখানে বিখ্যাত তুলা-গাছ যা শহরের ঐতিহ্য। এরপর গেল টাকুগমা শিম্পাঞ্জী অভয়ারণ‍্য দেখতে। সবুজ খোলা প্রকৃতির মাঝে শিম্পাঞ্জী গুলোর দুরন্তপনা দেখতে বেশ লাগছিল। প্রচুর টুরিষ্ট এসেছে, তবে বাঙ্গালী খুব কম। এরপর রেলের মিউজিয়াম, জাতীয় জাদুঘর, সেন্ট জর্জ ক্যাথিড্রাল, পিস মিউজিয়াম, রাজার গেট কয়েকটা বিচ ঘুরে ওরা সন্ধ্যায় ফিরল। পিয়ম ফিরে এসেছে ততক্ষণে। পরদিন ওদের সমুদ্র বক্ষে ঘুরতে যাওয়ার কথা।

পরদিন সমুদ্র বক্ষে বেশ সুন্দর রোমাঞ্চকর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ওরা যখন বাড়ি ফিরছে হঠাৎ বাড়ির গেটের সামনে এক আদিবাসী ব্যক্তি গাড়ির সামনে এসে পড়ল। পিয়ম রেগে দু চার কথা বলতে গিয়েই দেখল লোকটা স্বাভাবিক নয়। ওকে কেউ গুলি করেছে। ওর পিঠ দিয়ে রক্ত স্রোত নেমেছে। পিয়ম আর আলোক বেরিয়ে ওকে গাড়ির সিটে বসাতেই ও ভাঙ্গা বাংলায় বলে উঠল,-"বিপদ..... বাঁচাও ডক্টর,  বাঁচাও"(চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime