Drishan Banerjee

Crime Thriller

2  

Drishan Banerjee

Crime Thriller

রহস্য যখন সিংহ পাহাড়ে (পর্ব-২)

রহস্য যখন সিংহ পাহাড়ে (পর্ব-২)

5 mins
9.5K


আলোক উঠে ওর পাশে বসতে বসতে পিয়ম গাড়ি চালিয়ে দিয়েছে। সামনে সাহানা। সোজা পিয়মের হসপিটালে। পুলিশে খবর দিয়েই পিয়ম ওকে পরীক্ষা করে দেখল, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। লোকটা অনেক গুলো গুলি খেয়েছিল। প্রচুর রক্ত পড়ে নিস্তেজ। সবার মন খারাপ হয়ে গেছিল। পিয়ম নিজে ও'টিতে নিয়ে ওর গুলি বের করলেও জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছুই বলতে পারছিল না। লোকটা এদেশীয় মেন্দা উপজাতির লোক। ওর পকেটে পরিচয় পত্র থেকে ওর নাম জানা গেছিল , আবদুল। এদেশের ৬০% লোক মুসলিম। এই লোকটার বাড়ি বো তে। ও কোনও গাড়ির ব‍্যবসা করে, এটুকুই জানা গেছিল আই কার্ড দেখে। একজন পুলিশকে পাহারায় রেখে অফিসার ফিরে গেছিল। পিয়ম রাতটা হসপিটালেই কাটাবে বলল।

সাহানা আর আলোক এক রাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘরে ফিরল। পরদিন ওদের 'বো' ঘুরতে যাওয়ার ছিল। পিয়ম না ফেরা অবধি কিছুই ঠিক নেই।

 

পরদিন সকালে পিয়ম ফোনে জানালো ভোর রাতে লোকটা মারা গেছে। পুলিশি ঝামেলা মিটিয়ে ও ফিরছে তাড়াতাড়ি। দুপুরেই সবাই 'বো' রওনা দেবে। সাহানার মনটা খারাপ হয়ে গেছিল। আলোক একটু চিন্তিত। ল্যাপটপ্ নিয়ে কি সব দেখতে ব্যস্ত। 

সাহানা কালকের ঘটনাটা মনে করছিল বারবার। ও গাড়ির সামনে বসেছিল। লোকটা একটা গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে গাড়ির সামনে এসে পড়েছিল। গেটের কাছে স্পিড খুব কম ছিল গাড়ির। ও বোধহয় পিয়মকে চিনত, ''ডক্টর'' বলেছিল যেন একবার!! নাকি গাড়ির রেডক্রসটা দেখে বুঝেছিল এটা ডক্টরের গাড়ি। অবশ্য পিয়মের এখানে বিশাল পরিচিতি।

পিয়ম আসতে আসতে বেলা দুটো। ওকে দেখেও বিধ্বস্ত লাগছিল। আলোক বলল যে পরদিন ভোরে 'বো' যাওয়া যাবে। আপাতত পিয়ম রেস্ট নিক। পিয়ম ও বোধহয় এটাই চাইছিল।

সন্ধ্যায় পিয়মের বাংলোর দোতলার বারান্দায় বসে কথা হচ্ছিল, একটু দূরেই আটলান্টিক সাগর থেকে নোনা হাওয়া ভেসে আসছে। এ দেশে ঠান্ডা তেমন পড়ে না। আরাম দায়ক ওয়েদার। আলোক জানতে চাইছিল ঐ লোকটা সম্পর্কে।পিয়ম বলল -" এখনো যা জানা গেছে ওর ট্রাভেলিং এর ব‍্যবসা, ফ্রি টাউনে আর 'বো' তে হোটেল রয়েছে পার্টনারশিপে। লোকটা নাকি সৎ। ওর পার্টনার এসেছিল। কিন্তু ওকে কেউ কেন মারবে ,এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারছে না। ওর তিন কূলে কেউ নেই।এক কাকা ছিল, কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পার্টনারকেই পুলিশ সন্দেহ করছে।কিন্তু ওর পার্টনার জো বলছে কয়েক দিন ধরে আবদুলকে কেউ ফোনে কোনও ব‍্যপারে চাপ দিচ্ছিল। ও নাকি খুব ডিস্টার্ব ছিল। কাল দুপুরে দু জন বিদেশিকে নিয়ে একটা লোকাল ছেলে ওর সাথে দেখা করতে আসে। ও তাদের সাথে বেরিয়ে গেছিল, এরপর এই দুর্ঘটনা।

-"আচ্ছা,ওর পার্টনার দেখেছিল লোকগুলোকে? কোন দেশের লোক?" আলোক বলে।

-"বলছে তো ব্রিটিশ। ও দেখেছে। লোকাল ছেলেটা একটা দালাল।"

-"এখন এ আলোচনা বন্ধ করে চল কালকের প্রোগ্ৰাম ঠিক করি।" সাহানা বলে ওঠে।

-"সে না হয় হল। কিন্তু আমার খুব একটা ভাল লাগছে না। লোকটা পিয়মের গাড়ির সামনেই এলো কেন? ও ডক্টর বলে ডেকেছিল। ও কি গুলি খেয়েও পিয়মের জন্য ওয়েট করছিল। স্ট্রেঞ্জ!! আমি আজ একবার ঐ গাছটার কাছে গেছিলাম হাঁটতে হাঁটতে, গাছের গায়ে রক্তের দাগ দেখে কিন্তু মনে হল ও ওয়েট করছিল। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল বলে রক্ত জমে গেছিল ওখানে। পিয়ম আবার কোনও ঝামেলায় না জড়িয়ে পড়ে ।" আলোক বলে ওঠে।

-"সেই, গুলি লাগলে যে কারো গাড়িতে হসপিটালে যেতে পারত। আমাদের গাড়িতেই এসে পড়লো কেন ও?" পিয়ম ও চিন্তিত।

এমন সময় পিয়মের ফোনটা বেজে উঠলো, ও ফোনটা ধরতেই ওর মুখের পেশি ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে গেল। একটাও কথা না বলে কয়েক সেকেন্ড পর ও যখন ফোনটা কাটল ওর মুখটা থমথম করছে।

কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে আলোক বলল -"কি বলল তোমায় ওরা?ভয় দেখাচ্ছে তো?"

-"তুমি বুঝতে পারলে!! একটা লোক আমায় ধমকাচ্ছিল, ঐ আবদুলের সাথে নাকি কিছু ছিল। সে সব চাইছে।" পিয়ম বলল।

-"লোকটা যখন আমাদের গাড়ির সামনে এসে পড়ে ওর সাথে কিছুই ছিল না।ওর জামা কাপড় আর পকেট নিশ্চই তোমরা ভাল করে দেখেছো, ঠিক কি জিনিস খুঁজছে ওরা কিছু বলল না?" আলোক বলে।

-" না, শুধু বলল আবদুল যা দিয়ে গেছে সেটা দিয়ে দিতে।"

-"চলো তো, গাড়িটা একবার খুঁজে দেখি। ও যদি গাড়িতে কিছু রেখে থাকে।" আলোক পিয়মকে নিয়ে নিচে গ্যারেজে চলে যায়। সাহানা ওদের পিছু পিছু যায়।

আবদুলের রক্তে সিট কভারে দাগ হয়ে গেছিল, পিওম সকালেই গাড়ি ধোয়ার লোক ডেকে কভার ধুতে দিয়েছিল। তাই গাড়িতে বিশেষ কিছু পাওয়া গেল না। পিয়ম গাড়ি ধোয়ার ছেলেটাকে ফোন করে জেনে নিলো ওরাও কিছু পায় নি।

-"লোকটা তোমার কাছেই আসছিল কেনো?এটাই একটা প্রশ্ন!!" আলোক বলে।

-"আসলে এই সব লোকাল লোকেরা আমাকে খুব বিশ্বাস করে বাঙ্গালী বলে। বাঙ্গালী দের এরা ভীষণ পছন্দ করে। তাছাড়া হয়তো লোকটা আমায় চিনত। এতো লোকের জীবন বাঁচিয়েছি সবাইকে তো আমার মনে নেই। রোজ কত পেশেন্ট দেখি, দেখতেও সব প্রায় এক রকম।"

-"বাদ দাও, কাল আমাদের সকালে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে তো?" সাহানা বলে।

এমন সময় মিশাই জানায় খাবার রেডি। সবাই খেতে যায় নিচে। গরম ভাত, পাতলা মুসুর ডাল, লেবু, ঝিরি আলু-ভাজা, ছোট মাছের চচ্চড়ি আর চিংড়ির মালাইকারী। কে বলবে পশ্চিম আফ্রিকায় বসে এক লোকাল লোক এ সব রেঁধে খাওয়াচ্ছে! কিন্তু খাওয়ার মাঝেই আবার ফোন এলো। আবার কেউ ভাঙ্গা বাংলা আর ক্রিও ভাষায় পিয়মকে বলছিল আবদুল কি বলে গেছে বা কিছু দিয়ে গেছে কিনা? এ অবশ্য ধমকায় নি। নিজেকে আবদুলের বন্ধু বলছিল, নাম বলেছে আতিফ।

মিশাই আমাদের পরিবেশন করছিল।ও হঠাৎ একটু উশখুশ করছিল দেখে পিয়ম ওকে বলল -"কিছু বলবে?"

-"আবদুল নামটা আজ কয়েকবার শুনলাম। আমার পরিচিত এক আবদুল ছিল। ওর সাথে বহুদিন যোগাযোগ নেই। আসলে আমার বাবা আর ওর কাকা বন্ধু ছিল।"

-"এই আবদুল কি করতো?কোথায় থাকতো?" আলোক প্রশ্ন করে।

-"আমার বাবা আর ওর কাকা সেনাবাহিনীতে ছিল। ও ছোটবেলায় আমাদের বাড়ি থাকত। ২০০৪ এর পর ওর কাকা ওকে নিয়ে 'বো' তে চলে যায়। গতবছর গ্ৰামে গিয়ে শুনেছিলাম ওর কাকা মারা গেছে।"

-"তুমি ওকে দেখলে চিনতে পারবে? আমার ফোনে ফটো আছে।" পিয়ম বলে।

-"২০০৪ এর পর দেখি নি, কয়েক মাস আগে একবার ফোনে কথা হয়েছিল।তবু মনে হয় পারবো।"

পিয়ম ফটো দেখাতেই মিশাই অনেকক্ষণ ধরে দেখে বলল -"মনে হচ্ছে এটাই আমার বন্ধু আবদুল। ওর কপালের এই কাটা দাগটা একবার খেলতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হয়েছিল। কয়েক মাস আগে আমি যখন গ্ৰামে গেছিলাম ও এক বন্ধুর ফোনে ফোন করেছিল। আমার সাথে কথা হয়েছিল। বলেছিলাম এখানে কাজ করছি। ও একবার আমার সাথে দেখা করতে আসবেও বলেছিল। কি নাকি দরকার, আর কাকার কি সব গল্প আছে বলেছিল। কিন্তু আর ফোন করে নি, আসেও নি।"

-"তাহলে ও কি তোমার সাথেই দেখা করতে আসছিল কিনা কে জানে। কিন্তু গাছের পিছনে লুকিয়ে ছিল কেনো তাহলে?" আলোক বলে।

-"হয়তো যারা ওকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছিল ও তাদের থেকে লুকিয়ে ছিল। ঐ লোকগুলো হয়তো গেটের দিকে লক্ষ্য রাখছিল, ও তাই গেটের কাছে আসতে পারে নি। আমাদের গাড়িটা দেখে ও বেরিয়ে আসে।" পিয়ম বলে।

-"তার মানে ও যখন আমাদের গাড়িতে ওঠে লোক গুলো ওকে দেখে ফেলে। ও রিস্ক নিয়েই গাড়ির সামনে এসেছিল।" সাহানা খেতে খেতে বলে।

-"ও বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু ও কেন এসেছিল আর কি ছিল ওর কাছে সেটা প্রশ্নই থেকে গেল।" আলোক আপন মনে বলে ওঠে।

কিছুক্ষণ গল্প করে সাহানা শুতে চলে গেল। আলোক ওর টেবিলে কিছু চিঠি আর মেডিক্যাল জার্নাল এসেছিল সে সব দেখছিল। আলোকের ঘুম আসছিল না। আসলে যা যা ভাবছে কিছুই মনোমত হচ্ছে না, 'হয়তো' শব্দটা বেশি ব্যবহার হচ্ছে, এত বেশি অনুমানের উপর নির্ভর করে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না। হঠাৎ পিয়ম বলল -"এটা কি!!" (চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime