The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sonali Basu

Tragedy

3  

Sonali Basu

Tragedy

উপপত্নী

উপপত্নী

5 mins
1.2K


নমিতা রান্নাঘরে কাজ সারছে এমন সময় দরজার বাইরে থেকে গম্ভীর গলার ডাক শুনতে পেলো “নমি…” এক ডাকেই নমিতা উত্তর দিল “যাই” তারপর তাড়াহুড়ো করে উঠে এসে দরজা খুলে দিলো। সুব্রত ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল “রাজু ফেরেনি?”

নমিতার উত্তর “না… আপনি বসুন। ও এসে পড়বে এর মধ্যেই”

“তুমি কি করছিলে… রান্না?”

“হ্যাঁ”

“ভোলা আর তিথি কোথায়?”

“পাশের ঘরে শুয়ে পড়েছে… ওদের তুলে কি দিদির ঘরের বারান্দায় রেখে আসবো?”

“থাক এখানে”

“কি খাবেন বলুন… গ্লাসে ঢেলে দিচ্ছি”

“আজ ওসব কিছু খাবো না। যদি তোমাদের খাবারে কম না পড়ে তাহলে ওখান থেকে কিছু দিয়ো। এখন আপাতত একটু বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করছে” বলেই যে চৌকির ওপর বসেছিল সেখানেই কাত হয়ে শুয়ে পড়লো।

নমিতা মাথা নেড়ে পাশের রান্নাঘরে চলে গেলো। উনুনে ভাত ফুটছে। হাতা দিয়ে কয়েকটা দানা বার করে দেখলো ভাত হতে এখনো বেশ দেরী। উনুনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনের ভেতর পুরনো গল্পগুলো পুকুরের মাছের মত ভেসে উঠে আর ডুবে যেতে থাকলো।

রাজুকে ভালোবেসে বাড়ি ছেড়েছিল নমিতা। ওর বাবা একটা লোহার কারখানায় কাজ করতো দুই মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রীকে বেশ সুখেই রেখেছিল। নমিতা তাই কোনদিন বাস্তবের কঠিন মাটিতে পা রেখে দেখেনি। কম বয়েস প্রেমের হাওয়ায় উথালপাথাল মন একবারের জন্যও ভাবেনি বাস্তবটা কত কঠিন হতে পারে। রাজুর বাবাও একই পাড়ার বাসিন্দা চাকুরে কিন্তু বেশ নাক উঁচু স্বভাবের আর নমিতাদের পরিবারকে একেবারেই সহ্য করতে পারতো না। এসব কিছুই ওদের প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়নি। রাজুর আশা ছিল বিয়ে করে বৌকে নিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই বাবা সব মেনে নেবে কিন্তু তা সত্যি হল না। বাবা দরজার গোড়া থেকেই তাড়িয়ে দিলো। রাজু নমিতাকে নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। সারাদিন রাস্তায় কাটানো গেলেও রাতে তো একটা আশ্রয় চাই যেখানে সাথে নতুন স্ত্রী। প্রথম কয়েকদিনের জন্য রাজু ওর বন্ধুদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে থাকলো কিন্তু এভাবে তো বেশীদিন চলে না। সেদিন ওদের আশ্রয় দিয়েছিল সুব্রত।

সুব্রতর সাথে কি ভাবে আলাপ হয়েছিল রাজুর নমিতা জানতো না, তবে অনুমান করে নিয়েছিল। সুব্রত বাড়ি বানানোর সরঞ্জাম বিক্রেতা আর রাজু তাতক্ষণিক রোজগারের জন্য ঠেলা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিল। যা ভাড়া পাওয়া যায় সেসব জিনিস পৌঁছে দিতে তা দিয়েই সংসারের মুখে কিছু গুঁজে দিচ্ছিলো।

আদরে মানুষ হওয়া নমিতা চেষ্টা করছিলো সেভাবেই মানিয়ে চলতে। দিন পেরিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু রাজুর রোজগার সেভাবে বাড়ছিলো না। তার ওপর বছর ঘুরতেই নমিতার কোলে এলো গোবিন্দ, এক জন্মগত অসুস্থ শিশু। নমিতা ওকে খুব ভালোবেসেছিল, একে প্রথম সন্তান তার ওপর কি মায়াময় আদরকাড়া চেহারা। রাজুও প্রথম সন্তানের মুখ দেখে খুব খুশি হয়েছিল কিন্তু এরকম অসুস্থ বাচ্চাকে বাঁচিয়ে রাখা খুব কষ্টকর যদি আয় বেশি না হয়। তবু নমিতা আর রাজু খুব চেষ্টা করেছিল গোবিন্দকে বাঁচাতে। কেউ কেউ এটাও বলেছিল বাবা মায়ের আশীর্বাদ না নিয়ে ওরা সংসার শুরু করেছে বলেই ওদের অভিশাপ নেমে এসেছে রাজু নমিতার সংসারে। ছেলেকে দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখে নমিতারও মনে হতে লাগলো পাড়া প্রতিবেশী যা বলছে তা ঠিক। কিন্তু রাজু রাজি ছিল না ছেলেকে এমনি এমনি মরে যেতে দিতে। সাহায্য চেয়েছিল সুব্রতর কাছে। সে যেটুকু পেরেছে সাহায্য করেছে কিন্তু তারপরেও গোবিন্দ রইলো না নমিতার কাছে, চলে গেলো। বোধহয় বাবা মাকে সব কষ্ট থেকে রেহাই দিতে চেয়েছিল।

গোবিন্দকে হারিয়ে যখন নমিতার চোখ থেকে শুধুই জলের ধারা নামছে তখন প্রথম এসেছিল সুব্রত ওদের বাড়িতে। প্রথম দিন এলেও ঘরে ঢোকেনি। বাইরে পাতা খাটিয়ায় বসে রাজুকে সান্তনা দিয়ে গেছে। রাজুর সেদিন খুব দরকার ছিল সেই সান্তনার। সান্তনার প্রয়োজনও একদিন ফুরিয়ে গেলো কারণ দুঃখকে আঁকড়ে ধরে মানুষ বেশীদিন চলতে পারে না। কিন্তু সুব্রতর যাতায়াত র‍য়েই গেলো এ বাড়িতে। মাঝেমাঝেই রাজু সুব্রতর টাকা দিয়ে বাড়িতে পানাহারের ব্যবস্থা করে আর নমিতাকে সব কিছু যোগাড় করে দিতে হয়। প্রথম প্রথম ব্যাপারটা ওর একেবারেই পছন্দ হতো না কিন্তু রাজুকে বলতো না কিছু। কারণ সুব্রত শুধু ওদের অন্নদাতা নয় আশ্রয়দাতাও বটে। তবে একদিন রাজু নিজেই বলেছিল “ওকে কি এমনি আসতে বলি নাকি বাড়িতে। গোবিন্দর চিকিৎসার জন্য অনেক খরচ হয়েছে সেটা ফেরত দেবো কিভাবে শুনি?”

নমিতা সব বুঝেছিল আর কথা বাড়ায়নি। তাছাড়া গোবিন্দকে হারিয়ে নমিতা খুবই মুষড়ে পড়েছিল। সারাদিন কোনভাবে পেরিয়ে গেলেও সন্ধ্যার পর ফাঁকা বাড়িতে মন একাবারে টিকতে চাইতো না। রাজু ফিরতো অনেক রাতে নেশাগ্রস্ত হয়ে। আগেও করতো তবে ছেলে মারা যাওয়ার পর নেশার পরিমাণ বেড়েছিল। আর এই নেশার হাত ধরে সুব্রত এসে দাঁড়ালো ওর ঘরের দুয়ারে।

প্রথমদিকে আপত্তি থাকলেও আস্তে আস্তে মেনেও নিলো নমিতা। খানিকটা ঘরের মানুষ হয়ে উঠলো সুব্রত। সুখ দুঃখের কথা চালাচালি হতে থাকলো। খেয়াল করলো সুব্রতও মনের দিক দিয়ে বেশ দুঃখী। ভালোবেসে বিয়ে করেছে কিন্তু সন্তানের বাবা হতে পারেনি। স্ত্রীকে নিয়ে সব জায়াগায় গেছে যে যেমন বলেছে ডাক্তার কবিরাজ তান্ত্রিক গুণিন কিছু বাদ দেয়নি কিন্তু ফল ফলেনি। ওর স্ত্রী ওকে অপবাদ দিয়ে বাপেরবাড়ি ফিরে গেলো।

এর মধ্যে নমিতা আবার দুই সন্তানের মা হয়েছে। এক বছরের ছোট বড় ভোলা আর তিথি। সুব্রত এখন ওদের টানেই এ বাড়িতে এসে বসে থাকে। বাচ্চারা জেগে থাকলে ওদের সঙ্গ দেয় খেলে গল্প করে রাস্তায় ঘোরাতেও নিয়ে যায়।

ইদানিং নমিতা লক্ষ্য করছে সুব্রত যত ওর মনের কাছাকাছি আসছে রাজু তত নিজেকে দূরে সরিয়ে ফেলছে। নমিতা জিজ্ঞেস করলে অবশ্য বলে “টাকা রোজগারের জন্যই তো বাইরে বাইরে ঘুরি। সংসার বেড়ে চলেছে কাজ তো করতেই হবে”

রাজুর কথা শুনে ও আর কিছু বলে উঠতে পারেনি। কথাটা খুব সত্যি! ভাতের হাড়ি উপুড় দিতে দিতেই ওর মনে হল আজ রাজু একটু বেশীই দেরী করছে!

খানিক পরে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পেলো নমিতা। রাজু এসে পড়েছে। ও উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। নেশাগ্রস্ত রাজু বাড়িতে ঢুকে সুব্রতকে চৌকিতে ঘুমোতে দেখেই চটে গেলো। ফুট কাটলো “ও প্রেমিকের সাথে আশনাই হচ্ছিলো তাই এতো দেরী দরজা খুলতে?”

নরম ঠাণ্ডা স্বভাবের নমিতা আজ আগুনের মতো জ্বলে উঠলো “মুখ সামলে কথা বলো”

“কেন মুখ সামলাবো। যা দেখছি তাই তো বলছি”

“এ রাস্তায় আমি নিজে আসিনি রাজু, তুমি নিয়ে এসেছো। ধারের টাকা শুধতে পারবে না বলে আমাকে ওর মনোরঞ্জনের পুতুল বানিয়েছ। তা পুতুল নিয়ে মানুষ কি করে… খেলে। ও তাই করে। এখন রেগে ওঠার আর কি মানে হয়, তুমিই বলো”

“চুপ কর মুখপুড়ি। তোকে শুধু সঙ্গ দিতে বলেছি। ওর সন্তানের মা হতে বলিনি। আমি রোজগার করে এই বেজন্মাগুলোর দায়িত্ব নিতে পারবো না”

“আমার সন্তানের বাবা কে তা আমি ভাল করেই জানি। তুমি দায়িত্ব নিতে পারবে না বলে হাত ঝাড়া দিচ্ছো বেজন্মা বলে! মুখে আগল দাও নাহলে…”

“নাহলে কি করবি রে হতচ্ছাড়ি! সত্যি কথাটা বলতে আমার বুক কোনদিন কাঁপেনি আর কাঁপবেও না”

এসব গোলমালের মধ্যে সুব্রতর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ও উঠে বসে স্বামী স্ত্রীর বিশ্রী ভাষায় কথা কাটাকাটি দেখে বলল “তোমরা নিজেদের মধ্যে কেন ঝগড়া করে মরছো নমিতা আমার মতো এক বাইরের লোকের জন্য। আমি বুঝতে পারছি আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে রাজুর কাছে। আমি জানি ও এখন আরও বড় গাছের সন্ধান পেয়েছে নিজের নৌকো বাঁধার জন্য। আমি চলি”

নমিতা বলে উঠলো “না তুমি যেও না। ভুল মানুষকে ভালোবেসে বিয়ে করে ঘর ছেড়েছিলাম। তখন বুঝিনি দরকার পড়লে সেই ভালোবাসার মানুষ আমাকে অন্যের কাছে বিকিয়ে দিতে পারে। এখন আবার তোমাকে ছেড়ে যার হাত ধরতে চাইছে এরপর সেখানে আমাকে বিকিয়ে দেবে। আমি একজনের উপপত্নী হয়েছি বারোয়ারী বেশ্যা হতে চাই না”

রাজু শাসাল “ভুল করছো নমিতা পরে পস্তাতে হবে”

নমিতা জোরের সাথে উত্তর দিলো “এবার আর পস্তাবো না, তুমি আসতে পারো”


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy