Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics

4.4  

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics

রাতের মায়াবিনী

রাতের মায়াবিনী

14 mins
406


সন্ধ্যা সাতটা দশের বর্ধমান লোকাল টা হাওড়া স্টেশনে নব কুমার ধরেছিল।শক্তিগড় স্টেশনে পৌঁছানোর সময় রাত নটার একটু পর,কিন্ত ট্রেন টা লেট রান করছিল। রসুলপুর পর, যেন গরুর গাড়ির গতি। মানুষ জন বেশ কম। রাতের ট্রেন,আর আবহাওয়াটা আজ গোলমেলে, দুপুর থেকেই আকাশ মেঘলা, মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছিল । নবর সঙ্গে ছাতা ছিল না। রাত দশটার পর শক্তি গড়ে স্টেশন যখন ট্রেন টা, দাঁড়াল। মাত্র জন কয়েক ট্রেন যাত্রী শক্তিগড় স্টেশনে নামল।বেশীরভাগ স্থানীয়,বা দুরের দু একজন, যাদের মটোর সাইকেল রাখা ছিল।

বর্ধমান থেকে বড়শুল যাবার শেষ বাস, তখন চলে গেছে।বৃষ্টিটা না পড়লেও ঘন মেঘে আকাশ কালো হয়েছিল।মাঝে মাঝেই বিদ্যুতের চমক আর মেঘের গর্জন।বৈশাখ মাস,কাল বৈশাখী যেন ঘন নিন্ম চাপের রূপ নিয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে, আগাম কোন সর্তক বার্ত্তা ছিল না।

শক্তিগড় স্টেশন সংলগ্ন রোডে চারটো রিকশা ছিল কোন অটো ছিল না।এত রাতে দুর্যোগ আবহাওয়া কোন রিকশা চার কিমি,আসা যাওয়া আট কিমি বড়শুল যেতে রাজী নয়।

কোন রিকশা চালক জ্ঞান দিল,

"এত রাতে একা হেঁটে যাওয়া ঠিক হবে না রাতটা স্টেশনের ওয়েটিং রুমে কাটিয়ে দিন।"

কেউ বলে "পরের ট্রেন ধরে বর্ধমান চলে যান, কোন হোটেলে রাত কাটিয়ে সকালে বাস ধরে বড়শুল যাবেন।"

আবার কেউ বলে, " হন্টন দিন , কত আর দুর!জোরে হাঁটলে বড়শুল বড়জোর পঁয়ত্রিশ চল্লিশ মিনিটের পথ, এখন বৃষ্টিটা ধরে আছে, দেরী না করে পা চালান। "

নবর তৃতীয় পরামর্শটি মনে হল ঠিক, ভারী তো চার কিমি পথ ,আবার বাস রোড,ঝক ঝকে পাকা রাস্তা।আর এ পথে বেশীরভাগ জন বসতি,মাঝে এক দেড় কিলোমিটার বড়জোর জনহীন। নবর মামা বড়শুল বিডিও অফিসে সরকারী কর্মী, ব্লক কোয়ার্টারেই ফ্যামিলি সহ থাকে।বেশ কবার সে এসেছে। পথ ঘাট মামার কোয়ার্টার তার রাতের অন্ধকারে চিনতে কোন অসুবিধা হবে না।মিনিট চল্লিশ একটু হাঁটা,কাল সকাল সকাল আবার বাড়ি ফিরতে হবে।

পুরাতন জিটি রোড অতিক্রম করে শক্তিগড় থেকে দক্ষিণ দিকে বাঁক নিয়ে বড়শুল রোড তখন খানিক টা গেছে ,আবার জোর বৃষ্টি শুরু হল।নির্জন অন্ধকার রাত লোডশেডিং চলছিল। পথে কোন মানুষের দেখা নেই । ঝড় বৃষ্টির এত রাতে দরজা জানালা বন্ধ করে সবাই গৃহে ।পথের কুকুর গুলো আজ এই দুর্যোগ পথে নেই, হয়ত কোন নিরাপদ আশ্রয়ে।

রাস্তার ধরে বাড়িগুলোর কোন,কোনটার বাহিরের বারান্দা থাকলেও বারেন্দার গ্রীলে চাবি।সাময়িক বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার আশ্রয় নেবার মত কোন স্থান নেই, ভিজে নব কাক ভেজা।পিচ রাস্তার একটু দুরে,নির্জন বিচ্ছিন্ন একটা ছোট একতলা পুরোন বাড়ির বাহিরে খোলা বারান্দা,সংলগ্ন জানালা দিয়ে ঘর থেকে মৃদু আলোর আভা দেখা যাচ্ছিল,নবর নজরে এল।তীব্র বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে, ঐ বাড়ির বাহিরের বারেন্দায় সে এসে আশ্রয় নিল।

ভয় হচ্ছিল, অজানা জায়গা এত রাতে কেউ তাকে এখানে দেখলে চোর ছেচোর ভাববে না তো! একটাই রক্ষা, মামার নাম পদ কর্মস্থল বলবে।এই তো বড়শুল আর দু কিমি বড়জোর! বাড়ির বারেন্দার সংলগ্ন জানালাটি খোলা, ঘরে হালকা আলো ,একবার উঁকি মেরে নব দেখতে চাইল, ঘরে কেউ আছে কীনা!

এক সুন্দরী কম বয়সের গৃহবধু, হ্যারিকেন আলোয় মনে হয় সোফায় বসে বই পড়ছিল।মুহূর্তেই তাদের চোখচোখি! নবকে ঘরের জানালার বাইরে দেখে বধূটি কেমন চমকে ওঠে ,আতঙ্কে বলে,

"কে আপনি ! এত রাতে ভদ্রলোকের ঘরে উঁকি মারছেন কেন?"

ঢিলেঢালা হাত কাটা পড়নে হালকা গোলাপী রাতের নাইটি,উচ্ছলিত যৌবনের গোপন অঙ্গ তার সচ্ছ মসৃণ পাতলা পোষাক ভেদ করে ঠিকরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল! চব্বিশ বছরের নব কুমার হতচকিত, লজ্জা সংকোচে অপরাধীর মত নব বলল,

"না আমি উঁকি মারি নি। বড়শুলের লাস্ট বাস চলে গেছে, শক্তিগড় স্টেশন থেকে তাই হেঁটেই বড়শুল যাচ্ছিলাম, হঠাৎই খুব বৃষ্টি নামল, তাই একটু আপনার বারেন্দায় আশ্রয় নিয়েছি।বৃষ্টিটা থামলেই চলে যাব। আমি উঁকি দি নেই!"

"কিন্তু আমার তো তাই মনে হচ্ছে।কী হাঁ করে দেখছেন আমাকে!"তার মুখ চোখে কেমন রহস্য ভাব,লজ্জা বা ভয় নয় যেন রসীকতা ভরা মুখে রহস্য ঘন আবেদন!বই সোফায় রেখে দুহাত উপরে তুলে ঢং করে মাথার খোঁপা ঠিক করছিল।লমপট কামুক পুরুষ তার রূপ যৌবন ও তার আচরনে আকৃষ্ট হতে পারে, আরও কথা বলার বাহানায় তার শরীর রূপ গোগ্রাসে গিলতে পারে। ভিতু সরল শান্ত নিরীহ নবর মনে ভয় গ্রাস করেছিল।

নব জানালা থেকে সড়ে এসেছিল, ভাবছিল এতরাত, অজানা অপরিচিত জায়গা, এক মহিলা আবার রাতের এমন স্বল্প পোষাকে, যদি উঁকি মেরে দেখার অভিযোগ করে।বাড়ির মানুষ তাকে মারধর করবে না তো! তার চেয়ে বৃষ্টির মধ্যেই ভিজে পালাই।

হঠাৎই বারেন্দার দিকে ঘরের দরজা খুলতে দেখে নব বেশ ঘাবড়ে গেল।ঐ মহিলা হ্যারিকেন হাতে বের হয়ে আগাগোড়া নবকে দেখে বলল,

"আপনি তো ভিজে কাঁথা কাচা হয়ে গেছেন!আসুন ঘর দিয়ে আসুন।"

নব ঘরে ঢুকতে দ্বিধা করছিল। কেমন ইতস্তত করে বলে,"বাড়ির অন্যেরা--"

কথা থামিয়ে মহিলা রহস্য হেসে বলে,"বাড়িতে আমি ছাড়া কেউ নেই ,কেউ আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার জন্য আপনাকে লাঠি পেটা করবে না।" তার পর খুব হাসতে লাগল।

নব লাজুক স্বভাবের, একটু সংকোচ নিয়ে বলল, "আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখিনি ম্যাডাম।"

"আবার ম্যাডাম!"গৃহবধূ খুব হাসছিল তারপর বলল

"আপনি দেখছিলেন, অনেক ক্ষন আমি বুঝতে পেরেছি। কম বয়স, এই বয়সে ঢিলেঢালা নাইটিতে এক সুন্দরী বৌকে দেখলে লজ্জার কী! সত্যি বলতে কেন ভয় পাচ্ছেন! বরং আমার রূপে আপনি মুগ্ধ ভাবলে আমারও ভালো লাগবে," তারপর খুব হাসতে লাগল।

নব মুখ নামিয়ে থতমত খেয়ে বলে,"এত রাত বাড়িতে আপনি একা, আমার ঢোকা কী ঠিক হবে!"

"জলে ভিজে তো সপসপে,আবার কোথায় এত রাতে আশ্রয় পাবেন!আরে ঠান্ডা লেগে নিমোনিয়ায় মরবেন তো! আর আপনাকে দেখে তো ভদ্র ঘরের ছেলে মনে হয়। আপনি দেখতেও বেশ, রাজকুমার না দেবকুমার কী বলব!" আবার মহিলা খুব হাসছিল।

নার্ভাস হয়ে নব বলে " আমি নব কুমার !"

রসীকতার সুরে গৃহবধু বলে,"বা, বেশ সুন্দর নাম। আমি সোনালি, সোনালি চৌধুরী।"

বাইরে তখন মুষলধারায় বৃষ্টি,থামার নাম নেই,সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া ,ঘন ঘন মেঘ গর্জন বিদ্যুতের চমকে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে।নব কুমার একটু নিরুপায় হয়ে মাথা হেঁট করে ঘরে ঢুকল।কেমন যেন সংকোচে ঘরের মেঝে দাঁড়াল ।

মহিলা ঘরের কপাট ভিতর থেকে খিল দেবার পর বলল "আপনি এক কাজ করুন ভিজে পোষাকটা আগে ছাড়ুন, না হলে শরীর খারাপ হবে।"

"আমার সঙ্গে তো আর পোষাক নেই, মামার বাড়ি বড়শুল যাচ্ছি,ওখানে আমার একটা সেট পোষাক থাকে, মাঝে মধ্যেই তো আসি।"

মুচকি হেসে গৃহ বধূ বলে ," ঠিক আছে, আমার পোষাক দিচ্ছি।" তারপর একটা চুড়িদার আর লেডিজ পাঞ্জাবী দিয়ে রসিক হেসে বলল,

"আপনার যেমন উচ্চতা আর ফ্যান্সি হালকা শরীর , আমার পোষাক হয়ে যাবে।আমি পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি আপনার চেয়ে খুব কম নয়!"

নব লজ্জা পাচ্ছিল, নীরবে দাঁড়িয়ে নত মুখে বলল, "আমার ভিজে পোষাকে অসুবিধা হবে না।"

সোনালি খুব হাসছিল বলে,"ঘৃণার কোন কারন নেই, এগুলো আমার পুরোন ঘামে ভেজা নোংরা পোষাক নয়!এসব নতুন ,আমার সখ ,অনেক সেট নতুন পোষাক কিনে রাখি।"

"আমি ঘৃণার কথা তো বলি নেই ম্যাডাম।"

"তা হলে আমি যা বলছি শুনুন, এ বাড়ীর আমার, তাই আমার কথাই অতিথিকে শুনতে হবে,কেমন যেন জোর দিয়ে বলল।"

নব আর কিছু বলে না। নকশা করা সিল্কের মসৃণ সাদা চুড়িদার, আর ম্যাচিং হালকা নস্যি রঙের লেডিজ পাঞ্জাবীর সাথে একটা পেন্টি ! কালো রঙের নরম মখমলের মত বেশ দামী মনে হয়! নব বিষ্ময়ে পেন্টি টা উল্টে পাল্টে দেখছিল।

সোনালি খুব হাসতে হাসতে বলল,"মশাই ওটা পরুন, আমার স্বামী একবার আমার পেন্টিকে ওর জাঙ্গিয়া ভেবে পরে অফিস চলে গেছিল। এসে যখন খুলছে আমি তো হেসে খুন! আর আমার স্বামী বুঝতেই পারেনি!"

তারপর গৃহ বধূ একটু রসীকতা করে হেসে বলল,

"ওটা না পড়লে ,আপনার অস্বস্তি,আর আমার আবার আপনার ও দিকে তাকালেই হাসি পাবে। এখন তো ছেলে মেয়েদের পেন্টি জাঙ্গিয়া একই মত, আপনার মত হালকা মানুষদের ওটা পরতে কোন সমস্যাই হবে না।"

নব বাথরুমে ঢুকে ভিজে পোষাক ছেড়ে সোনালীর দেওয়া পোষাক পরে নিল। মিথ্যা নয়, নবর কোন অস্বস্তির নয় বরং স্বস্তি লাগছিল।ভিজে পোষাক নব বাথরুমের আলনায় মেলে ছিল, সোনালী নবর ভিজে পোষাক বাথরুম থেকে নিয়ে এসে বলল, "এগুলো বরং একটু ধুয়ে নিকড়ে ও ঘরে মেলে দি, কারেন্ট এলে পাখার হাওয়ায় কাল সকালের মধ্যে শুকিয়ে যাবে, তখন পরে বড়শুল মামার বাড়ি যাবেন।এখন আরাম করে সোফায় বসুন,"

অন্য ঘর থেকে নবর ভিজে পোষাক ধুঁয়ে নিকড়ে মেলে দিয়ে, একটু পর সোনালী এ ঘরে এল, হ্যারিকেনের আলো ডাইনিং টেবিলে রেখে নবর দিকে একটু এগিয়ে এসে সোনালী দাঁড়াল, হেসে বলল, "গোঁফ দাড়ি সেভ করা, এক মাথা ঘন কালো চুল,কী সুন্দর চোখ মুখ, আপনাকে মেয়েদের পোষাকে ভারী মিষ্টি লাগছে,মেয়ে হয়ে জন্মালে কত ছেলের যে ঘুম কাড়তেন!"

সোফায় উপবিষ্ট নব যেন খুব সংকোচে মাথা নামাল । সোনালীর দিকে তাকাতে তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। সোনালীর পড়নে শুধুই ঢিলেঢালা স্বচ্ছ হালকা হাত কাটা নাইটি, আলত লেসের বাঁধন, অন্তর্বাস হীন সোনালীর এই রাতের পোষাক নবকে খুবই অস্বস্তি দিচ্ছিল।আবার বিপরীত দিকে হ্যারিকেনের আলো থাকায়,সচ্ছ পাতলা পোষাক ভেদ করে সোনালীর নগ্ন শরীরের স্পষ্ট গড়ন যেন ফুটে উঠছিল।নবর একবার নজরে আসতেই মাথা নামিয়ে এই সংকোচ । নবর এই লজ্জা সংকোচ সোনালী যেন বুঝতে পারছিল।তাই, পাশের ঘর থেকে সোনালী নাইটি পাল্টে খয়রী চুরিদার আর হালকা ধূসর কুর্তি পরে,ম্যচিং ওড়নায় বুক ঢেকে অনেকটা শালীন পোষাকে এল। ডাইনিং সেটের একটা চেয়ার টেনে নবর খুব কাছে মুখোমুখি বসে, একমুখ হেসে সোনালী বলল,

"তুমি করেই বলছি।তোমায় দেখে বয়স বেশি মনে হয় না ।"

"আমার বয়স চব্বিশ হল। "

"দেখে তো কুড়ি মনে হয়। তবু তুমি আমার চেয়েও ছোট ,আমার উনিশ বছরে বিয়ে,চার বছর স্বামীর সাথে ঘর করেছি,স্বামী প্রেম আদর সোহাগ অনেক করত।তারপর তিন বছর বিধবা,একা থাকি,মরন ভাগ্যি একটা সন্তান হল না!"

নব একটু ব্যথিত স্বরে সোনালীর দিকে তাকিয়ে বলে, "আপনি একা! বিধবা, সন্তানও নেই! সারাটা জীবন এভাবে কাটাবেন!"

সোনালী চোখ জলে ভিজে গেছিল, দুঃখ আর আবেগ কেমন খানিক নীরব থাকে। তারপর গম্ভীর হয়ে বলে, "রাত এগারোটা হতে চলল,আমি তো খেয়েদেয়ে গল্প বই পড়ছিলাম, লোডশেডিং টিভি দেখার উপায় নেই। তাড়াতাড়ি শুলে,আবার ঘুম আসে না,অনেক রাতে শুই ,আবার অনেক বেলা করে উঠি।তা নব বাবু তুমি এখন কি খাবে? ভাত চাপাব!"

"না না আমার তেমন ক্ষীদে নেই।"

"তাই হয় ! তুমি আজ আমার রাতের অতিথি,আর কোন দিন কী তোমায় এত আদর যত্ন করতে পারব!"

তারপর হেসে বলল," আমি রাত করে খাই, এখনও খাইনি, তোমাকে আগে যত্ন করে খাওয়াব, তারপর আমি খাব।বেচারী, মুখটা কেমন ক্ষীদে আর ক্লান্তিতে শুখিয়ে গেছে।"

নব দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বলে ,"না না,আমার জন্য আপনি কেন কষ্ট করবেন ! বরং আমাকে মুড়ি বা অন্য কোন শুখনো খাবার দিন। আপনার রান্নার খাবার আমি খাবো কেন!"

"তুমি এত পর পর ভাবছ কেন! এখনও আপনি! তুমি করে বলতে কষ্ট হচ্ছে!"

"আপনি ভদ্রমহিলা, আমায় আশ্রয় দিলেন, বয়সে একটু হলেও বড় ,তুমি বলাটা কেমন অশোভন নয়!"

"তুমি ভীষণ ভালো ছেলে, আমার দিকে চেয়ে কথা বলতেও লজ্জা পাচ্ছ, তুমি কী করো! পড়াশোনা করছ!"

"না আমি গ্রাজুয়েশন করেছি,বি কম, তিন বছর হল। বিভিন্ন চাকরীর দরখাস্ত করছি,প্রিপারেশন নিচ্ছি,আর একটা চ্যাটার ফার্মে কাজ করি,সামান্য কিছু পাই। আমার বাবা নেই।বাড়িতে মা, দুটো বোন, মা টেলারিং চালিয়ে কিছু আয় করত, এখন খুব অসুস্থ। মামা সরকারী কর্মী,বড়শুলে বিডিও অফিসে আছেন এখানেই কোয়ার্টারে থাকেন। মামা মাঝে মধ্যে কিছু টাকা সাহায্য করেন, এই জন্য আজ আমি আসছিলাম যাক আপনার কৃপায় দুর্যোগ রাতে আশ্রয় পেয়েছি।"

হঠাৎই বিদ্যুত আলো চলে এল।এ ঘরটা সোনালী ড্রয়িং রুম।টিভি সোফা, ডাইনিং টেবিল চেয়ার, আর একটা সিঙ্গেল খাট।

সোনালি বলল,"তোমাকে খেতে দি, আবার যদি লোডশেডিং হয় বিপদ ,হ্যারিকেন আলোয় পোকার বড় উৎপাত,আরাম করে খেতে পারবে না ।"

নবর খুব ক্ষীদে পেয়েছিল। ডাইনিং টেবিলে ভাত ঘী আলু ভাতে, পনীর তরকারি , ইচরের ডালনা, পোস্তর বরা,কাঁচা আমের চাটনী আর পায়েস।

এত আয়োজন দেখে নব রীতিমত অবাক,নব বলে "এত সব খাবার! আপনার আছে!"

সোনালি বলে,"আমরা বিহারী বামুন,যদিও দুপুরুষ এখানে, বাঙালি হয়ে গেলেও,একটু গোঁড়া ,ছোট থেকেই নিরামিষ খাই,আমি আবার বিধবা।আমিষ খাবার মাছ মাংস তোমায় খাওয়াতে পারলাম না।আর আমার কথা ভাবার দরকার নেই। অতিথি হয়ে যখন আশ্রয় নিতে এসেছ, আমার যত্ন নাও,না হলে আমার পাপ হবে।এ জীবনে তো সুখ পেলাম না। যদি তোমার মত সজ্জন অতিথি সেবা করে পরজন্মে একটু পুণ্যি হয়।"তারপর সোনালী একটু হাসল।

নব আর কিছু বলে না,খাবার গোগ্রাসে খেয়ে নিল।সোনালী কিছুক্ষণ অন্য ঘরে ছিল ,হয়ত খাচ্ছিল। একটু পর এঘরে এসে সোনালী দেখে,নবর চোখ ঘুমে জড়িয়ে যাচ্ছে।

এঘরে ই একক খাটে বিছানা করে নবকে শুতে বলল।

নব শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে গেছিল।

একটু রাতে নবর ঘুম ভেঙ্গে গেল,আতংকিত চিৎকার আর ভয়ার্ত্ত আর্তনাদ, নব ঘুম ভেঙ্গে দেখে সোনালী সোফায় বসে তার দিকে পিছু ফিরে, টিভিতে ভুতের সিনেমা দেখছে। এক অতিথি তার মত এক অজানা গৃহে আশ্রয় নিয়েছে ,রাতে আশ্রয় দাতা মহিলা ভয়ঙ্কর বীভৎস রূপ ধারন করে,ভয় দেখাচ্ছে। অতিথি ভয়ে চিৎকার করছে আর্তনাদ করছে,এঘর ও ঘরে ছুটে বেড়াচ্ছে ,আর বীভৎস নারী মূর্তি আনন্দে উল্লাসে বিকট হাসছে। দরজার কপাট খোলার চেষ্টা করতেই অতিথির পোষাক ধরে এমন টান দিল,অতিথি উলঙ্গ হয়ে গেল। তার শরীরেও নব কুমারের মতই মহিলার পোষাক ছিল। সোনালী উপভোগ করছে, হাসছে।

নব ভয়ে কেমন জড়সড় হয়ে,পেচ্ছাবের বেগ পাচ্ছিল আর নেই।বরং ভয়ে হাঁপাচ্ছিল।

কেমন একটা শব্দ শুনে সোনালী পিছু ফিরে, নবর দিকে তাকাল।সোনালী মুখে এক রহস্য হাসি,মুখের রূপ যেন ঘন ঘন বদল হচ্ছিল,কখনও বীভৎস কখনও মিষ্টি সুন্দর নরম ভাব, যেমনটা নব আগে সোনালীকে দেখেছিল ।

সোনালী বিস্মিত হয়ে বলে," তুমি ঘুমোয়নি!"

নব কেমন নার্ভাস বলে, "না, আমি অনেক ক্ষণ জেগে আছি,বাথরুম যাব ।"

সোনালী টিভির শব্দ কমিয়ে বলে, "ঐ তো বাথরুম যাও!"

নব ভয়ে ভয়ে বলে,"আপনি এত রাতে ভুতের সিনেমা দেখছেন!"

"হ্যাঁ আমার ভুতের সিনেমা খুব প্রিয়,এক একটা রাত ভুতের সিনেমা দেখতে দেখতেই ভোর হয়ে যায়। তুমি দেখবে!"

"আমার ভীষণ ভয় করে।"

"তাই ! ঠিক আছে তুমি বাথরুম থেকে এসে পাশের ঘরে শোও। নিরিবিলি ভালো ঘুম হবে,"

তার পর টিভি অফ করে সোনালী বলে,"তুমি ও ঘরে শোবার পর আবার টিভি চালাব।"

সোনালীকে দেখে এখন আর নব ভয় লাগছিল না।কিন্তু একটু আগে কেমন তার মুখ চোখের অভিব্যক্তি ভাবতেই নবর মন আতংকিত হচ্ছিল ।বাথরুম সেড়ে, পাশের ঘরে এসে নব দেখে সোনালী কি সুন্দর বিছানা।গদি যুক্ত, মশারী খাটানো ,ঘরে মৃদু সুগন্ধ। নব সমীহ করে বলে, "আপনার বিছানায় আমি শোব! "

"কেন কী সমস্যা তোমার!"

"না মানে আপনার বিছানা !"

"সে তো আমার নতুন পোষাক পরেছ, আমি কি ফেলে দেবো ! আমি পরে পরব। "

নব কেমন কিন্তু কিন্তু মনে দাঁড়িয়ে।

সোনালী বলে,"আমার ঘুম আসছে না।আমি এখনও অনেকক্ষণ টিভি চালিয়ে ভুতের সিনেমা দেখব।আমার খুব ভুতের সিনেমা দেখার ঝোঁক ,তাই অনেক ভুতের সিনেমার সিডি কিনে রেখেছি। ও ঘরে তুমি ভুতের সিনেমা চললে, বীভৎস চিৎকার শুনে ঘুমাতে পারবে তো!"

নব আর কিছু বলে না, বড় খাট,সাত বাই ছয়,এক পাশে ঘুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ল। একটু পর ঘুমিয়ে গেছিল।সকালে ঘুম থেকে উঠে নব দেখে বিছানার অন্য পাশে সোনালী ঘুমুচ্ছে।শেষ রাতে ভুতের সিনেমা দেখার পর ক্লান্ত শরীরে সোনালী শুয়েছিল কিন্তু একই বিছানায়! ঘুমে অচেতন সোনালীর মুখ টা নব বার বার দেখছিল। চোখচোখি হবার তো লজ্জা নেই! ঘুমন্ত সোনালীর মুখ টা ভারী সুন্দর, বিধবা ভাবতেই নবর মনে খুব দুঃখ হচ্ছিল।

গতরাতে নবর ভিজে পোষাক সোনালী ধুয়ে নিকড়ে এঘরের তারে মেলে দিয়েছিল, অনেকটাই শুখনো হাত দিয়ে নব দেখল, তারপর নব নিজের পোষাক পাল্টে, সোনালী পোষাক কেচে দেবে ভাবছিল। বালতির জলে তার রাতের পরা সোনালীর পোষাক ডুবিয়েছে।হঠাৎই সোনালী পিছন থেকে হেসে বলল,

"বাবু আমার প্রতি এত দরদ কেন! আমাকে বুঝি খুব ভালো লেগেছে!"

"আপনার জন্য সত্যিই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, একা সারাজীবন এ ভাবে!"

"আমার স্বামী সরকারী কাজ করত,পেনশন পাই।চাকরীর যোগাযোগ হচ্ছে , যদি পাই, একটা ভালো ছেলে পেলে বিয়ে করব,"বলে সোনালী খুব হাসছিল।

সাদা সিদে নব বলে "খুব ভালো প্রস্তাব ,তাই করবেন এত কম বয়স, এত সুন্দরী আপনি, আর মনটাও আপনার খুব সুন্দর।"

"আমাকে তুমি বিয়ে করবে!" বলেই সোনালী খুব হাসতে লাগল।

সরল লাজুক নবর সোনালীকে ভাললেগেছিল কিন্তু তাই বলে বিয়ে! বেশ বিব্রত ,কী উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছিল না।

সোনালী বুঝতে পারছিল নব তাকে ভালোবেসে অস্থির তাই নবকে পাবার আকাঙ্খা তার তীব্র হচ্ছিল বলল, "আমি জোর করব না। তোমার ভালো লাগলে মামার বাড়ি যাওয়া আসার পথে আমার ঘরে আসবে। তুমি ছাড়া আর কাউকে আপন করব না।" তারপর সোনালী  রহস্যময় মুখে অপলকে নবর দিকে কেমন তাকিয়ে থাকে।

সোনালীর মুখ চোখ কেমন ঘন ঘন রূপান্তর হচ্ছিল ঠিক রাতের মত। কখনও তা বীভৎস ,কখনও মিষ্টি সুন্দর।নব ভয় পেয়ে শোবার ঘর ছেড়ে ড্রয়িং রুমে পালিয়ে এল, কিন্তু সোনালী যে তার পিছন পিছনেই আসছে!নজরে আসতেই নব ভীষণ ভয়ে বিবর্ণ মুখে মাথা নামিয়ে সোফায় বসে পড়ল,কেমন অবশ দুর্বল, শরীরের কাঁপুনী আসছিল।ভয়ে আর সোনালীর দিকে তাকাচ্ছিল না ।

একটু দুরেই সোনালী সিঙ্গেল খাটে আয়েশ করে এসে বসল। সোনালীর রহস্যময় মুখ, আবেগ ঘন মায়াবী চোখ ,রসীকতায় হেসে বলল," তুমি কী আমাকে ভয় পাচ্ছ! "

নব কোন উত্তর দেয় না। শরীরের শেষ শক্তি দিয়ে ঘরের দরজার দিকে যায়,খিল খুলে কপাট খোলার চেষ্টা করলেও খোলা যাচ্ছিল না।

সোনালী খুব হাসছিল।কেমন বীভৎস হাসি থামতে চায় না।

নব তীব্র ভয়ে বিবর্ণ মুখে সোনালীর দিকে অসহায় ভাবে তাকাল!

মায়াবী চোখে লাস্যময়ীর সোনালী খুব হাসছিল,বলে

"আমাকে তুমি কী অশরীরী বা ভুত পেত্নি ভাবছ!"

তারপর সোনালীর ,হেসে দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা,হাসির চোটে চোখের জল শাড়িতে মুছতে থাকে।

" ভুত পেত্নী কেন ভাবব!"নব আপ্রাণ নির্ভীক হবার চেষ্টা করছিল।

সোনালী হাসতে হাসতে বলে"আমি কী কিছুই বুঝি না!

তবে হঠাৎই কপাট খুলে পালানোর চেষ্টা কেন!"

"না না আমি এবার মামার বাড়ি যাব। তাড়া আছে তাই!"

সোনালী রহস্য ভরা ভয়াল মুখে তীব্র রসীকতা,হেসে বলে, " সত্যি বলতে ভয় পাচ্ছ !"

নবর ,ভয়ার্ত্ত মুখ কেমন দিশেহারা বিবর্ণ। মুখ নামায়, কল কল করে ঘামছে।কেমন থর থর করে কাঁপতে শুরু করল। সোনালীর নজরে এল। সোনালীর মুখে সহসা আর সেই বীভৎসতার চিহ্ন ছিল না,মিষ্টি সুন্দর মায়া ভরা মুখ ।

সোনালী শান্ত ভাবে বলে "ভয় পেয়ো না,আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না।তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি।তুমি যখন আমার বিছানা ঘুমিয়ে ছিলে, তোমার ঘুমন্ত শান্ত মুখটা এত মিষ্টি সুন্দর লাগছিল মনে হচ্ছিল তোমাকে জড়িয়ে ধরে আপন করে নি।পারলাম না, তোমার মা আর বোন আছে।"

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোনালী বলে " সব পুরুষ বুঝলাম সমান নয়। স্বামীর মৃত্যুর পর এক ঠগ হিংস্র লমপটের প্রেমে পড়ি,পরে জানতে পারি তার দেশে একটা বৌ আছে,আমি সম্পর্ক ছেদ করে দি।তারপর সে একদিন রাতে ছাদের দরজা ভেঙ্গে, আমার সব গহনা টাকা লুঠ করে,বন্ধুদের সাথে, আমার উপর অকথ্য নির্যাতন ধর্ষন করে মেরে ফেলল।"

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোনালী কিছুক্ষণ চুপ থাকে।তারপর আবার বলল,

"এ বাড়িটা পরিত্যক্ত। রাতে তুমি বুঝতে পারোনি।আমার ছেলেদের প্রতি একটা ঘৃনা বিদ্বেষ ছিল।এ বাড়ীতে আমি থাকি,কেউ বোঝে না।ইচ্ছা ছিল কোন পুরুষ কোন দিন যদি আমার গৃহে আসে তাকে যত্ন করে ডেকে,রাতে বীভৎস রূপ ধারন করে ভয়ঙ্কর কষ্ট যন্ত্রণা দিয়ে মারব।তুমি যখন বৃষ্টিতে রাতে আমার বারান্দায় এলে,আমি তোমাকে প্রলোভন দেখাতে,খুব স্বল্প বেশে রাতের পোষাকে দেখা দিলাম। রসীকতা ভাব ভঙ্গীতে আরও আকর্ষণ করতে চাইলাম।কিন্তু তুমি এতে আকৃষ্ট নয় বরং ভয়ে বৃষ্টির মধ্যেই আমার বাড়ি ছেড়ে পালাতে গেলে।তখন বুঝলাম তুমি অন্য রকম।

তোমাকে ঘরে ডেকে নিলাম।প্রতিহিংসা নয়,তোমাকে আদর যত্ন দিয়ে, মনে ভালোবাসার অতৃপ্ত বাসনা পুরন হল। আমার সব চেয়ে প্রিয় পোষাক তোমাকে পরতে দিলাম, যত্ন করে আমার পছন্দের যত সব খাবার তোমায় খাওয়ালাম। এক মনের মত পুরুষ পেলাম,যে নারীর দেহ নয়, মনকে জয় করতে পারে।

কী ভাবে লমপট পুরুষ হলে তোমাকে মারতাম সেই একটা মহড়া ঐ সিনেমায় রূপ দিয়ে দেখছিলাম,তুমি ঘুম থেকে উঠলে, ভয়ে তোমার মুখ বিবর্ণ,ফ্যাকাশে। তোমাকে এভাবে দেখে,আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি সিনেমার দেখার উল্লাস আনন্দের বীভৎস মুখ মুহূর্তে পাল্টাতে পারছিলাম না।

এতই সরল সাদা সিদে তুমি,তবু আমাকে ভরসা বিশ্বাস করলে। না হলে কী হত জানি না। তোমার নিরীহ নিষ্পাপ সরলতা এত ভালো লাগল,আমার বিছানা যেখানে স্বামীর সাথে শুতাম, তোমাকে শুতে দিলাম। তুমি ঘুমিয়ে গেলে, কতক্ষণ তোমার ঘুমন্ত মুখটা আমি দেখছিলাম, মনে হল,আপন করে নি। আর তুমি যখন আমার ঘুমন্ত মুখটা দেখছিলে,খুব আবেগ নিয়ে বার বার,তোমারও যে আমাকে ভীষণ ভালোলেগেছে বেশ বুঝছিলাম।নিজেকে যেন কিছুতেই আর সামলাতে পারছিলাম না।ঘুমের ভান করে ছিলাম।

অনেক ভাবলাম তোমার মা ,তোমার দুই বোনের কথা তোমার উপর তারা খুব নির্ভর করে।নিজেকে অনেক সংযত করলাম,এই একটা শুধু রাত তোমার সাথে এক বিছানায় শুয়ে ,আপন মানুষ ভেবে ,খানিকটা সময় তোমায় স্মৃতিতে রাখব। আমার অতৃপ্ত আত্মার এটা শ্বান্তনা না দীর্ঘশ্বাস জানি না। আমার স্বামী তোমার মতই খুব ভালো ছিল।আমাকে একদিন ভুল বুঝে অভিমানে আত্মহত্যা করল। আমি কিন্তু তাকে ভীষণ ভালোবাসতাম। "

সোনালী কেমন আনমনা হয়ে গেল।দুচোখ জলে ভরে গেছিল, বিষন্ন মুখে তারপর আবেগ তাড়িত হয়ে বলে, 

"তোমার মধ্যে ওকে দেখতে পাচ্ছি,মন ছাড়তে চাইছে না।এখন আবার তুমি আমায় বিয়ের প্রস্তাবে দিশেহারা তুমিও তো আমাকে ভালোবেসেছ! তাই তোমাকেও অবুঝ মনে পাবার ভীষণ আকাঙ্খা হচ্ছিল,মনে হচ্ছিল আর এ ঘর থেকে তোমায় যেতে দেবো না।দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম,খিল খুলে তাই তুমি কপাট খুলতে পারছিলে না ।মনের লোভ লালসা ক্ষনিক মুখে ফুটে উঠেছিল,তুমি ভীষণ ভয়ে আতঙ্কে কাঁপছিলে, বুঝলাম এবার তুমি অচেতন হয়ে যাবে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম । প্রতিহিংসা নয়, মন থেকে ভালোবেসে তোমাকে আর ছাড়তে ইচ্ছা হচ্ছিল না।"

সোনালী খানিকক্ষন অপরাধী অনুতপ্ত মনে চুপ করে থাকে,নবর দিকে আর সে তাকায় নি, নতমুখে চোখের জল মুছতে মুছতে ভগ্ন হৃদয়ে অশ্রু সজল সোনালী উদাস মনে বলে,

" আমি অশরীরী জেনেও তুমি আমার উপর বিশ্বাস রেখেছ,আমার স্বামী,স্ত্রীর প্রতি সে বিশ্বাস রাখতে পারে নি। তুমি যেমন সুন্দর,তোমার মনটা যেন আরো সুন্দর। আমি তোমার কাছ থেকে চললাম। আমার মায়ার প্রভাব মুক্ত হলে এই ঘর আর এভাবে দেখতে পাবে না।দীর্ঘদিনের এ পরিত্যক্ত বাড়ীতে নানা বিষধর সাপ পোকা মাকর ভর্তি। এখুনি ঘর থেকে পালাও।আবেগ ভালোবাসার ভ্রমে ক্ষণিকের অবুঝ মনে তোমাকে তীব্র পাওয়ার আকাঙ্খাই তোমার এই তীব্র ভয় আতঙ্কের কারণ।আমি ভীষণ অনুতপ্ত, ক্ষমা করে দিও।

সোনালী অদৃশ্য হল। নব দেখল এক পরিত্যক্ত ঘরে সে দাঁড়িয়ে। সোনালীর কথা ভেবে তার চোখে জল এল। কোন দিন সে প্রেম না করলেও,এক রাতের এই সোনালীর আতিথেয়তা আর গভীর ভালোবাসা প্রেম , নব তাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছিল।হোক না সে অশরীরী! নারী হৃদয় তার নিষ্পাপ পবিত্র, নির্লোভ, নিঃস্বার্থ ,শুধু ভালোবাসায় আত্মসমর্পিত ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy