উইলোর আড়ালে
উইলোর আড়ালে
সেদিন সন্ধ্যা নেমে এলেও স্যান ফ্রান্সিসকো সেজে উঠেছিল আলোর রঙে। আকাশটা মিটমিট করছিল তারা আর নক্ষত্রে। সব থেকে বড় যে খ্রিস্টমাস-ট্রি-টা তৈরি হয়েছিল সেটা ঠিক শহরের মাঝামাঝি রাখা হয়েছিল। সুসজ্জিত, খাড়া আটটি হেয়ারপিন বাঁক সহ একটি ব্লক বিভাগ; লম্বার্ড স্ট্রিট হয়ে উঠেছিল নগরের এক-নম্বর আলোকময়স্থান। নাথান এলেন এবার স্টিয়ারিং ঘোরালো বাড়ির দিকে। পিছনের সিটে এমিলি অকাতরে ঘুমোচ্ছে। সেই দিকে একবার তাকিয়ে স্টিয়ারিং হুইলের উপর নাথানের ডান-হাতে হাত রাখলো এলিনা। তার ছোঁয়ায় নাথানার মুখে একটুকরো হাসি দেখা গেলো।
মোড় বেকে উইলো গাছে ঘেরা রাস্তায় পড়তেই গাড়িটা বেগর্বাই শুরু করলো। নাথানের মনে হলো সে যেনো এর আগেও এই জায়গাটা দেখেছে। কিন্তু কবে বা কখন সেটাই মনে করতে পারছে না। মফস্বলের এই অঞ্চলটায় বড়ো-বড়ো উইলোর ঝার নেমে রাস্তার দুপাশে জঙ্গল সৃষ্টি করেছে। সরকার থেকে লোকও পাঠায় না যাতে সর্বত্র বিরাজমান উইলোর সাফ করা যায়।
পট করে একটা শব্দ হয় আর এলিনা বলে ওঠে, "এই নিয়ে দ্বিতীয়বার হলো। তোমার এই খাটারাটা তো এতই ভালো অবস্থায় আছে যে কোনো পুরনো কার কোম্পানির নেওয়া তো দূরের কথা, আবর্জনার স্তূপেও এটার স্থায়ী হবে না"। "ভেরি ফানি বাট ডিড ইউ সে দ্বিতীয়বার?" বলেই নাথান গাড়ি থেকে বেরোতে গেলে এলিনা বাঁধা দেয়। তার মন সায় দিচ্ছে না এই মাঝ রাত্রে এমন নির্জন জঙ্গুলে পরিবেশে নাথানকে একা গাড়ির বাইরে বেরোতে দিতে। তাছাড়া গাড়ির ভিতরে থাকলে কিছুটাতো সেফ থাকবে। নাথান বুঝিয়ে বললো যে এলিনা অযথাই দুশ্চিন্তা করছে। তার কিছুই হবেনা। সে গাড়ির টায়ারটা পাল্টে গাড়ির ভিতর ঢুকে পড়বে। আর এই কাজটুকু করতে তার অত্যন্ত কম সময় লাগবে। তবুও এলিনার মন সায় দিচ্ছে না দেখে ড্যাশবোর্ড থেকে তরল পানিওর বোতলটা বের করে তার সামনে ধরলো। নাথানের মনে হলো এলির হয়তো কোনো কারণে মুড অফ হয়ে আছে, তাই তার মুড ঠিক করার জন্য নাথানের এই আরেঞ্জমেন্ট। কিন্তু এলির ফেভারিট প্রিমিয়ামে তার অরুচি দেখে নাথান একটু ঘাবড়ে গেলো। এলিনা কপালে হাত ঠেকিয়ে বললো, "জর আসেনি তো। তাহলে কি সমস্যা"। এলিনা বললো, "কটা বাজছে খেয়াল আছে?" নাথান হাত ঘড়িতে সময় দ্যখে দুটো বেজে আটান্ন মিনিট। "তো কি হয়েছে" বলতেই এলিনা বলে, "ডেভিলস আওয়ার শুরু হবে। প্লীজ একটা ঘণ্টা ওয়েট করে যাও গাড়ির মধ্যে। এত সুন্দর এসি চলছে এক ঘন্টা দেখতে-দেখতে কেটে যাবে"। নাথান চোখ গোলগোল করে বলে, "আর ইউ ক্রেজি? তুমি, এসব গাল-গল্পে বিশ্বাস করো?" এলিনা চোখ কপালে তুলে বলে, "গাল-গল্পঃ হতে যাবে কেন? তবে উইলোর ঝোপের যে বর্ণনা খবরের কাগজে পড়েছি তা হুবহু এই অঞ্চলটার সাথে মিলে যাচ্ছে, অর্থাৎ সেই অজানা অভিশাপও এখানে বিরাজমান"। "এলি সিরিয়াসলি, তুমি না শিক্ষিত মেয়ে, এসব গুজবে কান দাও কেনো। এডিটর বাবুরা জাস্ট নিজের পত্রিকার দর বাড়ানোর জন্যে এসব গল্পের সূচনা করে মাই ডিয়ার ওয়াইফ"। এলিনা সতর্ক ভাবে বললো, "অনেকের সাথে তো ঘটনাও ঘটেছে, নইলে এমনি-এমনি কি ছাপা হতো"। নাথান কিছু বলতে গেলো কিন্তু কাঁচে চির ধরার শব্দ তাকে থামিয়ে দিলো। বিস্ফারিত চোখে দুজনেই দেখলো কোনো অদৃশ্য দেহের দুটো কাটা হাত সজোরে তাদের গাড়ির সামনের কাঁচে আঘাত হানলো আর তাতেই চির ধরার মতো আওয়াজটা শোনা গেলো। যদিও এখনও ওপদি সেখানে চির ধরেনি কিন্তু ক্রমাগত আঘাতের ফলে ওয়াইপার দুটো ঢিলা হয়ে গেছে।
বিশেষ লাভ না হওয়ায় হাত দুটো এবার পেছনের জানলার আঘাত হানলো। সেই আওয়াজের ফলে এমিলির ঘুম ভেংগে গেল। এলিনা একটুও বিলম্ব না করে এমিলিকে পিছনের সিট থেকে কোলে তুলে নিলো। নাথান ভাবলো কেউ হয়তো তাদের ভয় দেখানোর জন্য এসব করছে। সে একবার চিৎকার করে পুলিশের ভয় দেখলো। তাউ হাত দুটো কাঁচের উপর ধাক্কা মেরে যাচ্ছে দেখে সে গাড়ি থেকে নামার উদ্যোগ নিলো। কিন্তু এলিনার বারণে তাকে গারুবন্দি হয়েই থাকতে হলো।
এবার হাত দুটো সামনের দিকের ডানকাঁচের উপর আঁচড়াতে থাকলো। এমিলি ওর মায়ের কোলে বসে সম্ভবত ভয় পেয়েই কাদছিল। এই ঘটনার আকর্শিকতায়, ভয়ে নাথানের গায়ে ঘেঁষে বসলো এলিনা। কিন্তু হাত দুটো ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিল। তাই সে দুটো কাটা হাত এবার বাম দিকের জানলার কাঁচের উপর আঁচড়াতে আরম্ভ করলো। এমন ভাবে পনেরো মিনিট কেটে গেলো। এসির মধ্যে বসেও তারা গলদঘর্ম হয়ে উঠেছে।
সোয়া তিনটে নাগাদ আঁচড় থামিয়ে হাত দুটো বাইরের হাতল ধরে গাড়ি খোলার ইচ্ছা করলো। জোরে জোরে টানার ফলে গাড়িটা যেনো একটু দুলে গেলো, কিন্তু হাতলও ভাঙলো না আর গাড়ির দরজাও খুললো না।
এইভাবে আরো কিছুক্ষন অতিবাহিত হলো। এমিলি আবার ঘুমিয়ে পড়েছে তার মায়ের কোলে। প্রায় পঞ্চাশ মিনিট অতিক্রম হওয়ার পর হাত দুটো শিথিল হয়ে পড়লো। এখন আর কাঁচে আঁচড় পড়ছে না। অল্প-অল্প ধাক্কার সাথে কেমন যেনো মিলিয়ে যেতে লাগলো হাত দুটো। ভোর চারটে নাগাদ ধাক্কাও বন্ধ হয়ে গেলো আর তার সাথে-সাথেই হাতদুটোও অদৃশ্য হয়ে গেল। ওরা দুজনেই হাফ ছেড়ে বসলো। এমিলিকে আগেই পিছনের সিটে যত্ন করে শুইয়ে দিয়েছে নাথান। চাবিতে হাত দিয়ে একবার ঘোরাতেই ইঞ্জিন চালু হয়ে গেল। নাথানও আর দেরি করলো না, গাড়ি চালিয়ে দিল। শান্তির নিশ্বাস ফেলে কিছুদূর গাড়িটা চলতেই স্টিয়ারিং হুইলের উপর রাখা নাথানের ডান-হাতের উপর নিজের হাত রাখলো এলিনা। তার ছোঁয়ায় নাথানার মুখে একটুকরো হাসি দেখা গেলো। মোড় বেকে উইলো গাছে ঘেরা রাস্তায় পড়তেই গাড়িটা বেগর্বাই শুরু করলো। নাথানের মনে হলো সে যেনো এর আগেও এই জায়গাটা দেখেছে। কিন্তু কবে বা কখন সেটাই মনে করতে পারছে না। মফস্বলের এই অঞ্চলটায় বড়ো-বড়ো উইলোর ঝার নেমে রাস্তার দুপাশে জঙ্গল সৃষ্টি করেছে। সরকার থেকে লোকও পাঠায় না যাতে সর্বত্র বিরাজমান উইলোর সাফ করা যায়।
পট করে একটা শব্দ হয় আর এলিনা বলে ওঠে, "এই নিয়ে ত্রিতীয়বার হলো। তোমার এই খাটারাটা তো এতই ভালো অবস্থায় আছে যে কোনো পুরনো কার কোম্পানির নেওয়া তো দূরের কথা, আবর্জনার স্তূপেও এটার স্থায়ী হবে না"। "ভেরি ফানি বাট ডিড ইউ সে দ্বিতীয়বার?" বলেই নাথান গাড়ি থেকে বেরোতে গেলে এলিনা বাঁধা দেয়। তার মন সায় দিচ্ছে না এই মাঝ রাত্রে এমন নির্জন জঙ্গুলে পরিবেশে নাথানকে একা গাড়ির বাইরে বেরোতে দিতে। তাছাড়া গাড়ির ভিতরে থাকলে কিছুটাতো সেফ থাকবে। নাথান বুঝিয়ে বললো যে এলিনা অযথাই দুশ্চিন্তা করছে। তার কিছুই হবেনা। সে গাড়ির টায়ারটা পাল্টে গাড়ির ভিতর ঢুকে পড়বে। আর এই কাজটুকু করতে তার অত্যন্ত কম সময় লাগবে। তবুও এলিনার মন সায় দিচ্ছে না দেখে ড্যাশবোর্ড থেকে তরল পানিওর বোতলটা বের করে তার সামনে ধরলো। নাথানের মনে হলো এলির হয়তো কোনো কারণে মুড অফ হয়ে আছে, তাই তার মুড ঠিক করার জন্য নাথানের এই আরেঞ্জমেন্ট। কিন্তু এলির ফেভারিট প্রিমিয়ামে তার অরুচি দেখে নাথান একটু ঘাবড়ে গেলো। এলিনা কপালে হাত ঠেকিয়ে বললো, "জর আসেনি তো। তাহলে কি সমস্যা"। এলিনা বললো, "কটা বাজছে খেয়াল আছে?" নাথান হাত ঘড়িতে সময় দ্যখে দুটো বেজে আটান্ন মিনিট।

