উচিত শিক্ষা
উচিত শিক্ষা
ভজহরি মিত্র নামে একজন লোক চাকরি পাচ্ছিল না । ভজহরি তাই একদিন ঠিক করে, রজত সেনের কাছে যাবে।
রজত সেন একজন জ্যোতিষী ।
ভজহরি মিত্র যেখানে থাকে , তার পরের পারায় রজত সেন থাকতো ।
ভজহরি -- " দেখুন না দাদা...আমি কিছুতেই চাকরি পাচ্ছি না । অনেক চেষ্টা করেছি ।
খুব দরকার চাকরি।"
রজত সেন -- " দেখি হাতটা দিন ।
হমম্,,,, একটু সমস্যা আছে আপনার জীবনে ।
একটা পান্না আর একটা পোখরাজ দিচ্ছি । আংটি অবশ্যই করবেন । "
ভজহরি -- " আচ্ছা.......কতো দেব আপনাকে??
রজত সেন-- " দশ হাজার টাকা ।"
ভজহরি -- " এই নিন । আসছি ।"
আংটি করতে গিয়ে ভজহরির আরো দশ হাজার টাকা খরচা হয়ে যায় ।
ভজহরি ভাবল শান্তিতে এবার চাকরি পাবে।
দুই সপ্তাহ চলে যাওয়ার পরও যখন ভজহরি চাকরি পাচ্ছিল না । ভজহরি আবার তারাতারি রজত সেনের কাছে যায়।
ভজহরি-- " এখনো পাচ্ছি না চাকরি.......কি করব স্যার??"
রজত সেন -- " হমম্,, মনে হচ্ছে পলাও লাগবে আপনার । করে নিন ।"
ভজহরি....জ্যোতিষীর কথা অন্ধের মতন বিশ্বাস করে পলাও করে নেই।
ভজহরি একটা চাকরি তারপর পায় ।
পেয়ে তো ভজহরি আনন্দে দৌড়াতে দৌড়াতে জ্যোতিষীর কাছে ২ প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে যায়।
আর বলে ওঠে-- " দাদা আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ । আপনি না থাকলে.... আমার জীবনটাই নরকে চলে যেত। "
রজত সেন-- " না, এটা তো আমরা সবার জন্যই করি । মানুষের জন্যে করা আমাদের দায়িত্ব ।"
ভজহরি-- " চাকরিটা টিকবে তো??"
রজত -- " হাতটা দিন,,, হমম্, promotion ও হতে পারে ।"
ভজহরি-- " promotion।
কবে?"
রজত সেন -- " আপনি যদি আরো দশ হাজার টাকা দেন, তাহলে আপনার নামে আমি বড়ো করে পুজো দেব । আর পুজোটা করতে গেলে অনেক আয়োজনের দরকার পরে ।"
ভজহরি-- " ও তাই...........আমি দিয়ে দেব ।"
ভজহরি চাকরি পেয়েছিল ৮০০০ টাকার ।
ও একদিন তাই ভাবে। দশ হাজার টাকা দেওয়া তাই ওর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই যদি ৩০০০ এ করে দেয়,,, তাহলে ভালো হয়। জ্যোতিষী তো খুবই ভালো মানুষ ।
রজত সেন প্রতি সোম, বুধ ও শুক্রবার বসত।
সকলের মাঝে এই কথাটা জ্যোতিষীকে বলা যাবে না। এই ভেবে.......একদিন মঙ্গলবার বিকেলে ভজহরি রজত সেনের বাড়ি যায় ।
সেদিন, রজত সেনের বাড়ির দরজা অল্প খোলা ছিল । তাই দেখে ভজহরি আর বেল না বাজিয়েই ঢুকে পরে। ঢুকে, দূর থেকে,,,, দেখছিল রজত সেন কার সাথে ফোনে কথা বলছে । তাই ও ভাবল , কথা শেষ হয়ে গেলেই , ও ঘরে গিয়ে সব কথা বলবে । তারপর ভজহরি রজত সেনের কথা শুনে অবাক হতে থাকে ।
রজত সেন -- " আরে বিট্টু কেমন আছিস বল? বাহঃ ভালো তো।
আরে আমার কথা ছেড়ে দে । আমি যা আনন্দে ফুর্তি করছি বলার বাইরে । হমম ,,,,,,,, কি বলছিস?? আরে ড্রিঙ্ক না করে থাকা যায় । এতো আনন্দ তো কেউ চাকরি করলেও পাবে না । বলছি পলা করো, পান্না করো, সবাই করেও যাচ্ছে । আরে income করতে গেলে একটু তো ঠেকাতেই হয়।
আর একটা তো কি বোকা । পান্না আর পোখরাজ বললাম, সেটা তো করালই, পলা ও করল । অতি কষ্টে বোধহয় একটা চাকরি পেয়েছে, ভেবেছে আমার কৃপায় পেয়েছে । হমম্বোকা বলেই তো, একদম বোকা । ২০০০০ টাকা আপাতত পেয়েছি। বলেছি,, ভালো করে পুজো দেব ওর নামে । এরপর তো ৩০০০০ হবে ।"
ভজহরির সব শুনে মুখ লাল হয়ে গেছে। ও জুতো নিয়ে রজত সেনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ।
রজত সেন -- " একি,,,,,,,,, তু,,,, তুমি?? এখন তো আমি হাত দেখি না ।" রজত সেন ঘামছিল ভয়ে ।
ভজহরি-- " হারামজাদা,, শুয়োর, একে তো দেখছিস আমার চাকরি নেই , আর শয়তান, তুই ভাবলি আমার টাকা নিয়ে ফুর্তি করবি??
শালা,,, বানর, তোকে আমি জুতো দিয়ে পিটিয়ে মারব । দেখাচ্ছি মজা আমি তোর ।"
রজত সেন তো পালাচ্ছে,, আর বলছে -- " তুমি এইভাবে আমায় মারতে পার না । আমার সাহায্যেই তো তুমি চাকরি পেলে।"
ভজহরি-- " তাই নাকিরে শয়তান,,, তাহলে এতক্ষণ ধরে নিজের বন্ধুর সাথে কি কথা বলছিলিস ??? সোজা সাপটা টাকাগুলো দিয়ে দে ,,, নইলে তোর নামে আমি পুলিশ কেস করবো ।"
রজত সেন -- " পুলিশ কেস কোরোনা । সব দিয়ে দিচ্ছি ।"
ভজহরি ওর সব টাকা নিয়ে, আংটিগুলো রজত সেনের মুখে ছুড়ে দিয়ে চলে গেল ।।