তুমি এলে কেন?
তুমি এলে কেন?
আনাকে অপুর্ব সুন্দর লাগছে। ওর অনেক খোলামেলা পোশাকের ছবি আমি দেখেছি। কিন্তু আজ শাড়ি পরা আনার শরীরী উষ্ণতায় তাবড় তাবড় বলি টলিউড এর অভিনেত্রীদের টেক্কা দিচ্ছেন। লাল শাড়ি কালো ব্লাউজ পড়েছে ও। কিলার লুকের দেখে ঘাম ঝরছে যেনো আমার।কালো ব্লাউজ ঠেলে বেরোচ্ছে ওর বক্ষযুগল, আর শাড়ির ফাঁক দিয়ে উঁকি মারেছে ওর ফর্সা পেট। কাঁপা কাঁপা ঠোঁট বললাম" শুভ সকাল"।
ও হাসলো, কারণ ও বুঝতে পেরে গেছে আমি ওর প্রতি দূর্বল হয়ে গেছি। ওর প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে যাবো সেইটা ওর আত্মবিশ্বাস । ওর আবেদনময়ী চাহনিতে চোখেমুখে ফুটে উঠেছে ওর জয়ের আনন্দ।
আনাকে শাড়ি পারা বাঙালি আদব কায়দা সব শেখাচ্ছে ওর দিদি রুকসানা। আমি খুব একটা ভালো মানুষ না। তাই সম্পর্কের এই জটিল সমীকরণ বুঝতে পারি না হয়তো। দূর্গা পূজা আমার কাছে একটা উৎসব যেখান থেকে বাড়তি আয়ের সুযোগ আসে আমাদের মতো মানুষদের। তাই চৌধুরী বাড়িতে আমি শেষ দূর্গা পূজাটা করতে দিয়েছি। তবে আনা আর ওর মায়ের সইটা তো দরকার এই বাড়ির দখল নেবার জন্য। একটা সময় এই বাড়ির থেকে আমার বাবা খুব অপমানিত হয়েছিল । বিদেশে থেকে যে টাকা আয় করেছি তা দিয়ে এই বাড়িটা কিনে নিলাম যদিও , আমি আবেগে ভেসে এটা কিনছি না। এটাকে হোটেল হিসাবে ব্যবসা করবো। দূর্গা পূজাটা কন্টিনিউ চলবে যদিও। এবছরের দূর্গা পূজাটা করা খরচ এবার চৌধুরী দিয়েছে পরে গ্রাম বাসীরা দেবে। আবেগে ওরা পূজা করবে। আমি অনুদান, বিজ্ঞাপন, মেলার থেকে সংগ্রহ টাকাটা পকেটে পুরেবো। অথচো বিনামূল্যে আমার ব্যবসার পাবলিসিটি হয়ে যাবে।
মা বাবা বলে "তুই বদলে গেছিস , তাই টাকা ছাড়া কোন সম্পর্কের মুল্য বুঝতে পারিস না।"আসলে বাস্তবটা খুব কঠিন টাকা না থাকলে সব সময় আপনি অপমানিত হবেন। পরাজয় গ্লানিতে ভুগবেন। পৃথিবীতে আমার কাছে সব সম্পর্ক লেনদেনের। কিন্তু আনা আর রুকসানা সম্পর্কটা তো শুধু ঘৃনার হবার কথা অথচ কেন ওরা এতো কাছে কাছে এলো।
আনা আর রুকসানা সৎ বোন। চৌধুরী বাড়ির আশ্রিতা রুকসানা। ওর বাবা রফিকুল খান এ বাড়ির আশ্রিত ছিলো। চাকরের ছেলে হয়েও পড়াশোনা ভালো ছিলো। আনা মা অরুন্ধতী দেবি রফিকুল খান এক সাথে পড়াশোনা করতো। অরুন্ধতী দেবি রফিকুল খান পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বিদেশে চলে যায় তারপর পঁচিশ বছর এ বাড়ির সাথে ওদের কোন সম্পর্ক ছিলো না।রফিকুল খান মুসলিম বলে যে চৌধুরীরা ওকে জামাই হিসেবে মানে নি তা নয়। রফিকুল খানের আসলে কম বয়সে নিকা হয়ে গেছিলো আমিনা চাচীর সাথে। আমিনা চাচীর মেয়ে রুকসানা। তাই অবাক লাগছে আমার রুকসানা আনা কিভাবে বন্ধু হলেও।
যদিও আনা মানে অনন্যা চৌধুরী কথাটা আলাদা।অরুন্ধতী দেবিকে আসলে ব্যবহার করেছিল রফিকুল খান । রফিকুল খান উচ্চাকাঙ্খী ছিলেন বিদেশে পড়তে যাওয়া অরুন্ধতী দেবী ওখানে চাকরী পেয়ে নাগরিকত্ব পেয়ে গেছিলেন।রফিকুল খান ওকে বিয়ে করছিলো শুধুমাত্র নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য। অরুন্ধতী দেবী সাথে রফিকুল খান বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বিবাহ বিচ্ছেদ করে। অরুন্ধতী দেবী সিঙ্গেল মাদার হিসেবে আনা মানুষ করেছেন। বেশ কঠীন মনের মানুষ অরুন্ধতী দেবী। আনা খুব শৃঙ্খলা বদ্ধ ভাবেই মানুষ করেছে।
অরুন্ধতী দেবী আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব কারো সাথে কোন সম্পর্ক রাখেনি। রফিকুল বাবু ওকে ঠকিয়েছে। অথচ সে অভিমান পুড়িয়েছে সে অন্য সম্পর্ক গুলো। তাই আনা এখানে এসে পরিবার কি জিনিস সেটা জানতে পেরেছে। আর এখন এই বাড়িটা বিক্রি করতে চাইছেন না। আমাকে বাজী নিয়েছে আমিও নাকি এই বাড়ি কিনবো না। সে এমন যাদু চালাবে আমার উপর। মহালয়া দিন ও প্রথম এ দেশে পা দিলো অথচ বাঙালি আদব কায়দা গুলো সব রপ্ত করে আমার মা বাবা প্রিয় পাত্রী হয়ে ওঠেছে। চৌধুরী বাবুরা চিন্তায় ছিলেন ওর এখানে দূর্গা পূজাটা কাটাতে পারবে কিনা। আধুনিক সুবিধাতো এখানে কিছুই নেই।
অঞ্জলী দিতে দিতে কয়েকটা ফুল দুষ্টুমি করে আমার গায়ে ছুঁড়ে মারলো ও। বিষয়টা চৌধুরী বাবুর চোখে পড়লেও উনি এড়িয়ে গেলেন। ওর খুনশুটি আমার ভালোলাগে নি। আমি এ বাড়ির প্রতিটি মানুষকে ঘৃণা করি।অরুন্ধতী দেবী আমার বাবার ভালো বন্ধু ছিলেন। বাবা কোলকাতায় কাজ করতেন। এই রকম এক দূর্গা পূজার সময় অরুন্ধতী দেবী রফিকুল বাবুর সাথে পালিয়েছিলেন। কিন্তু ওরা ভেবেছিলো আমার বাবা ওনাকে লুকিয়ে রেখেছে। তাই আমাদের বসত বাড়ি ওরা পুড়িয়ে দিয়েছিল। আমার ঠাকুর দা ঠাকুর মাকে অনেক অপমান করেছিলো। বাবা বলে ওটা নাকি আমাদের জন্য ভালো হয়েছিল নয়তো কোলকাতায় কি আমরা বাড়ি করতে পারতাম। আমি সেই প্রতিশোধ নিতেই এই বাড়িটা কিনতে চাই। ৭৫% শরিক টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। আনা টুকু নিতে পারলেই হবে।
কিন্তু টাকা পয়সার ব্যাপারে উদাসীন। ও খালি বলছে। ও এই বাড়িতে থেকে যেতে চায়। আমার মত ছেলেকে ও বিয়ে করতে চায়। আমি নাকি খুব কেয়ারিং কিন্তু ওকে বোঝাতে পারছিনা। হুঁ
আমি ওদের সব আত্মীয় স্বজনকে এক জায়গায় এনেছি অনেক কষ্ট। সবাই খুব ভালো ভাবে দেখেছি। কিন্তু সে তো একটা স্বার্থে। সমাজ সেবক নামে একটা সুনাম আছে আমার একারণ চৌধুরী বাবু আমাকে বাড়িটি এমনিতে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু দান নেওয়া আর কিনে নেওয়া এক নয়। আমি ও বাড়িটা কিনে নিতে চাই কারণ আমি বদলা নিতে চাই।
নবমী কেটে গেলো হই হুল্লোড় করে। আজ দশমী বেদনার ছোঁয়া আকাশে বাতাসে। আনারা আজ সই দেবার কথা। আজকে পর চৌধুরীদের সাথে আমার সব সম্পর্ক শেখ।চৌধুরীদের বংশ মর্যাদার অহংকার ওদের পতনের কারণ। তাই ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়া চৌধুরীরা আমার দেওয়া টাকা দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে নতুন করে আবার একটা শুরু করতে চায়। অথচ আনা এসে বললো, ও ওই টাকা ও আমাকে ফিরত দিয়ে দিতে চায়। কিন্তু বাড়িটা ও বিক্রি করতে পারবেনা। হুঁ অংশীদার হিসাবে আমি ব্যবসা করতে পারি বাড়ির কিছু টা অংশ নিয়ে।
কারণ এই বাড়ির প্রতিটি ধুলো কনায় লেগে বসবাস অনেক স্মৃতি। তবে আমাকে ও হারতে চাইছে না। কারণ ও আমার কাছে নিজেই হেরে গেছে। ও আমাকে নাকি ভালোবেসে ফেলেছে। ও বললো টাকা পয়সা আমার সবাই আয় করতে পারি। কিন্তু এ বিপুল সম্পদের কি লাভ যদি জীবন আত্মীয়হীন হয়। মৃত্যু সময় আমরা কোন কিছু নিয়ে যেতে পারি না আপন জনের কান্না ছাড়া।
আমার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন সবাই বুঝতে পেরেছিল ও আমাকে প্রেম প্রস্তাব দেবে। সবাই বলছিলো রাজকন্যা রাজত্ব তুই দুই একসাথে পেয়ে যাবি। সেটাই হলো ও আমার কাছে নিজেকে সঁপে দিতে চাইলো। কিন্তু প্রেম ভালোবাসা বড় না নিজের আত্ম সন্মান বড়ো। আমি ওকে প্রত্যাখান করলাম। হয়তো আমি বেহিসাবি। জীবনের সব টুকু সঞ্চয় দিয়ে বাড়িটা কিনে নেওয়াই আমার লক্ষ। অনেক তর্ক বিতর্ক পর ও হার মানলো। শুধু মাত্র একটা বাড়তি জিনিস ও চাইলো। আমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে চাইলো। অনুমতি দিলাম ।
ওদের যাবার সময় আমি , গ্রামের বাইরে চলে গেলাম কারণ দুর্বল যাতে না হয়ে যাই আমি । ওর জরিয়ে ধরাটা আমাকে সারা রাত ভাবিয়েছে। এ পোনেরো দিন আমরা অনেক সময় একসাথে কাটিয়েছি। অনেক ভালো লাগলো তৈরি হয়েছে। যাতে সত্যি একসাথে সারাজীবন থাকার একটা চাহিদা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
আমার চেয়ে বেহিসাবি আনা। আমার NGO তে আমার দেওয়া টাকাটা ফিরত দিয়ে গেছে । মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ও আমার চেয়ে মহৎ হয়ে গেলো সবার কাছে। খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই মাকে ফোন করলাম।আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস আমার মা। অশিক্ষিত মানুষটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরনা। ওনার কথা আমি কখনো ফেলি না। আমি যে কষ্ট আছি সেটা মা বুঝতে পারলো। মা বললো "পরাজিত জন্য চোখের জল ফেলা মানে , যুদ্ধে জয়ী হয়েও তুমি হেরে গেছো।ঘরে এবার লক্ষী নিয়ে আসার সময় হয়েছে এবার। বেশি দেরি করিস না আর কেউ দূরে চলে গেল তাকে ফেরানো সহজ নয়। মান অভিমান এর অনেক পাঁচিল তৈরি হয় যে।"
বুঝতে পারলাম না কি করবো। আমি তো ঠিক হিসেবে দিতে পারবো না কেন আমি ভালোবাসে ফেলেছি আনাকে? মনে মনে বললাম "আনা তুমি এলে কেন আমার জীবনে ফিরে। বিদেশে থাকাকালীন তোমার আমার সম্পর্কটাতো ছিলো সাপে নেউলে। এখানে এসে কেন এতো মায়া জরালে? তুমি এলে কেন এ জীবনে?? পাথর মন ভিজে গেছে আমার তোমার ভালোবাসায়, এখন শুধু পথ চেয়ে আছি তোমার অপেক্ষায়, তুমি আসে কি ফিরে? , সব অভিমান ভুলে।"
সাতপাঁচ প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। শেষ মেশ দেখলাম আর বেশি সময় বাকি নেই। চিরদিনের জন্য ওকে হয়তো হারিয়ে ফেলতে হবে আমায়। ফোনে ডায়াল করলাম আনার নম্বর , আর এ নিঃশ্বাসে বললাম " পিলিজ পিলিজ পিলিজ, তুমি ফিরে এসো। "
ওপার থেকে বললো " আমি তো কোথাও যাই নি, তুমিই চলে গেছো। তোমার মায়ের হাতের নুরকেল নাড়ু না খেয়ে যাবো কোথায় আমি? বাড়ি তাড়া ফিরে এসো নয়তো একটা নাড়ু তুমি পাবে না বলে দিলাম আগে থেকে।"
