টর্ণেডো
টর্ণেডো
নিমেষে সব তছনছ করে দিয়ে গেল যে নাম হল তার টর্ণেডো। মেঘ ছিল আকাশে,তবে ততটাও নয় ঝড় আসার মত। ছিল না কোনো পূর্বাভাস,তাই জানলা দরজা খোলাই ছিল সব। ভীষণ আওয়াজে চমকে উঠি,যেন ১০-১২ টা পাঞ্জাব বডি হেবি লোডেড ট্রাক প্রচণ্ড জোরে রেষ করতে করতে ধেয়ে আসছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জানলার শার্সি ভেঙ্গে,ছাদের টিভির অ্যান্টেনা উড়ে,বাগানের গাছপালা সব তছনছ হয়ে গেল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই। তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আকাশ পরিষ্কার,ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি চারিদিক লণ্ডভণ্ড,সমস্ত গাছ বাগানে,রাস্তায়,লুটোপুটি খাচ্ছে,কেউ আর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে নেই। রাস্তায় বিদ্যুৎ সরবরাহের তারগুলি ছিঁড়ে পড়ে আছে,কোথাও বা ল্যাম্পপোস্ট ধরাশায়ী। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
গিয়েছিলাম রাঁচি,আত্মীয়ের বাড়ী বেড়াতে। হুড্রু ফলস,রাজারাপ্পা মন্দির সব ঘুরে সেদিন ফেরার কথা। শুনলাম এক বিশাল গাছ গুঁড়িশুদ্ধ উপড়ে,মানুষ সমান গভীর গর্ত করে,পড়ে আছে স্টেশন যাবার একমাত্র রাস্তার ওপর। তখন বেলা ১২-১২.৩০টা হবে,যদিও রাতে ট্রেন, চিন্তায় পড়ে গেলাম কিভাবে স্টেশনে পৌঁছাব এই ভেবে। কিছু পর লোক মুখে যা শুনলাম তাতে ফেরার চিন্তা হল উধাও। সেই মেয়েটার কথা কেবল ঘুরছে মনে যার স্বপ্ন পুড়ে হল ছাই,সেই সন্তানের কথা,বাবা কি জিনিস জানা হল না যার।
হঠাৎ এক অ্যাক্সিডেন্টে বাবা-মার একসাথে মৃত্যু হলে সহায় সম্বলহীন মেয়েটির ঠাঁই হয়েছিল দিদির অভাবের সংসারে। বিয়ের উপযুক্ত হলে দিদি-জামাইবাবুর উদ্যোগে একটা বিয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল তার যেখানে খেতে পরতে পাবে। তোড়জোড় চলছিল। দিদি তখন সন্তানসম্ভবা,উঠল তার ডেলিভারি পেইন,তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য যা হয় একটা গাড়ীর ব্যবস্থা করতে জামাইবাবু বেরিয়েছিলেন। হঠাৎ না বলে এসে পড়া এই ঝড়ে পথের মাঝে বেসামাল হয়ে ঐ গাছের নীচেই চাপা পড়লেন তিনি। সারাদিন পর গাছ সরিয়ে উদ্ধার হল তার থেঁতলানো,ছিন্নভিন্ন দেহ।
ওদিকে সেই তাণ্ডবলীলা মাঝেই জন্ম হল দিদির ছেলের,বাড়ীতেই। কাঁদল ছেলে হাসল মা,জানে না তখনও কান্না অপেক্ষা করে আছে হাসির পরই। ঝড় থামলে খবর এল,নেইকো সে'জন,ঘরের বাইরে ছিল যেজন,কাঁদল দিদি,কাঁদল বোন,কাঁদল ঘরের ছোট্ট জন। জানা হয় নি আর কি হল তাদের।
সন্ধ্যের মধ্যে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাস্তাঘাট পরিষ্কার,শহর আলো ঝলমল। দিনের বেলায় এতকিছু ঘটে যাবার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। স্টেশনে পৌঁছতে হল না কোনো অসুবিধে। সুন্দর বেড়ানোর পর বিষণ্ণ মনে ট্রেনে উঠলাম বাড়ী ফেরার তাগিদে।