ট্রেন যাত্রা
ট্রেন যাত্রা
বিয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ঘোষবাবু বেড়াতে যাবেন ঠিক করেছেন ঘোষ গিন্নিকে নিয়ে। ঘোষ বাবুর যখন বিয়ে হয়েছিল তখন বিয়ের পর বেড়াতে যাওয়ার ভাবনা অনেক পরের কথা! বিয়ের আগে পাত্রি দেখতে যাওয়ারই কোনো নিয়ম ছিল না ওনাদের পরিবারে! ঘোষবাবুর বাবা বিয়ে ঠিক করে এসেছিলেন, আর ঘোষ বাবু পাত্রি দেখেছিলেন শুভ দৃষ্টির সময়। বিয়ের পর সংসার ধর্ম পালন করতে গিয়ে ঘোষ গিন্নির আর বাড়ির বাইরে কোথাও যাওয়া হয়নি। এর বাইরে যে.. একটা অনেক বড় দুনিয়া আছে ঘোষগিন্নির তা যেন ভাবনার বাইরে।
তবে এখন ছেলে ছেলের বৌ সংসার সামলাছে, ঘোষ গিন্নিকে আর দায়িত্ব নিতে হয়না সেই রকম ভাবে, তারপর সময়ের সাথে সাথে যুগের পরিবর্তন কিছুটা হয়েছে, তাই ঘোষবাবু গিন্নিকে নিয়ে পুরি বেড়াতে যাবেন ঠিক করেছেন। তাহলে এক কাজে দুই কাজ হয়ে যাবে, বেড়ানো হবে সাথে তীর্থ করাও হবে। ঘোষবাবুর এক বন্ধুর ছেলে ট্রেনের রিজারভেসনের টিকিট কাটা থেকে শুরু করে হোটেল ঠিক করা এই সমস্ত কাজ করেন তাই ঘোষবাবু ওনার বন্ধুকে দায়িত্ব দিয়েছেন সমস্ত কিছু ব্যাবস্থা করার।
যথারীতি বেড়াতে যাওয়ার দিন এসে উপস্থিত। আগের দিন রাত থেকেই ঘোষ গিন্নি খাবার দাবার জামা, কাপড় সব গোছগাছ করে ফেলেছেন। আর বাইরে বেড়নোর ভয়ে সারারাত ঘুমতে পাড়েননি। সকাল সকাল ঘোষবাবুর ছেলে মা, বাবা কে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে আসলেন। ছেলের অফিসের টাইম তাই বাবা মা কে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন। তার আগেই ঘোষবাবুর বন্ধু ট্রেনের টিকট হোটেলের ঠিকানা সব ঘোষবাবুকে দিয়ে দিয়েছেন। সমস্ত কিছু বুঝে নিয়ে ঘোষবাবু গিন্নির হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন ট্রেনের খবর হওয়ার অপেক্ষায়।
ঘোষগিন্নি চারিদিকে চেয়ে চেয়ে লোকজন দেখতে লাগলেন। নয় নয় করে প্রায় বছর কুড়ি আগে একবার হাওড়া স্টেশন এসেছিলেন বড় পিসিমার বাড়ি যাবেন বলে। ট্রেনের অ্যানাউন্সমেন্ট হতেই ঘোষবাবু সমস্ত কিছু ভালো করে শুনে এগিয়ে গেলেন ফ্ল্যাটফর্মের দিকে। কিন্তু হাতে টিকিট নিয়ে মেলাতে গিয়ে দেখলেন কোন সিট নম্বর দেওয়া নেই।
ঘোষবাবু সামনে একজন টিকিট চেকার কে টিকিটটা দেখিয়ে বললেন দেখুন তো কত নম্বর সিট আছে আমাদের!
টিকিট চেকার হাতে টিকিটটা নিয়ে দেখে বললেন আপনাদের রিজার্ভেসন কনর্ফোম নয় ওয়েটিং হয়ে আছে!!
ঘোষবাবু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা করলেন তার মানে!
টিকিট চেকার বললেন আপনাদের কোন সিট নেই!!! দেখি নতুন হওয়া লিস্টে নাম এসেছে কিনা!! যদি এসে থাকে তাহলে ভালো!
ঘোষবাবুর সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে তিনি কিছুই বুঝতে পারছেননা! আর ঘোষগিন্নি ব্যাগ নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন।
কিছুক্ষণ পর টিকিট চেকার এসে বলেন আপনাদের নাম নেই আপনারা যেতে পারবেন না!
ঘোষবাবু বললেন কেন আমি যে টাকা দিয়েছি টিকিট কাটার?
টিকিক চেকার হাসতে হাসতে বললেন যাকে দিয়ে ছিলেন তার থেকে ফেরত নিয়ে নেবেন এখন বাড়ি যান!
ঘোষবাবু মুখ চুন করে বললেন কেন কিছু করার নেই? এত বছর পর প্রথম গিন্নিকে নিয়ে বেড়াতে বেড়িয়েছি তাও যেতে পারবোনা আমার যে মান সম্মান সব ডুবে যাবে!!
টিকিট চেকার ঘোষবাবুর করুন অবস্থা দেখে বললেন দাঁড়ান দেখছি কোনো ব্যাবস্থা করতে পারি কিনা। আপনারা যে কি করেন!! যাকে তাকে দিয়ে টিকিট কাটান!
অবশেষে চেকার বাবু ঘোষবাবু আর ঘোষগিন্নির জন্য কোন রকমে একটা সিটের ব্যাবস্থা করে দিলেন। বহু কষ্ট করে ঘোষবাবু আর ঘোষগিন্নি ট্রেনের যাত্রা শেষ করে স্বর্গদ্বার পুরির মাটিতে পা দিলেন। আর ঘোষগিন্নির প্রথম বেড়াতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলেন।