STORYMIRROR

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Thriller Others

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Thriller Others

ট্রেন যাত্রা ( পর্ব -ছয়)

ট্রেন যাত্রা ( পর্ব -ছয়)

6 mins
240

" মৃণাল সবটা শুনলে।" বল্লেন প্রত্যয়বাবু।

আমি কিছু বললাম না। কিছুই বুঝতে পারছিনা বিগত প্রায় একমাস ধরে আমার সাথে এসব কি ঘটে চলেছে। চুপ করেই রইলাম তাই।

প্রতীম পাশে বসে সবটা শুনছিল, সে বললো "বাবা তুমি তো এসব আমাকে বলোনি কোনো দিনও। "

"এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম না আমরা পারতপক্ষে। "

আমি বললাম "স্যার আমি এখন একটু আসতে পারি?"

" হ্যাঁ মা এসো। আমি যেগুলো বললাম ভেবে দেখো।"

আমি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে চলে আসলাম। ঘরে এসে পায়চারি শুরু করে দিলাম। এখানকার এই মনোরম পরিবেশেও মাথাটা কেমন গরম হয়ে উঠলো।আমি বাথরুমে ছুটে গিয়ে মাথায় জল দিলাম।অতি সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি, এই জেনেই বড় হয়েছি। এখন যদি হঠাৎ করে শুনছি কয়েক কোটির সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, মাথার কি ঠিক থাকে কারো। তাছাড়া প্রত্যয়বাবুর কথায় কতটা বিশ্বাস করা যেতে পারে সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। আমি আমার নিজের প্রকৃত পরিচয় জানিনা, অন্যের বাড়িতে মানুষ। জানার যে খুব আগ্রহ রয়েছে তাও নয়। ও খুব ভালো আছি আমি পরিবারের সাথে। তার চেয়ে বড় কথা প্রত্যয়বাবু যে মেয়ে বলে মনে করেছেন সে হয়তো আমি নই। কারণ যে মালার ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে এসব বলছেন সেটা খুঁজে পেয়েছি আমি, আমার নিজের সেটা নয়। হ্যাঁ তবে পাওয়ার ইতিহাসটা বড় রহস্যময়।

কিছুউ ভালো লাগছিলো না।আমার অর্থের কোনো লোভ নেই। ও শান্তি করে জীবন কাটাতে চাই। নতুন কোনো পরিচয়ের ওর প্রয়োজন নেই আর।

বাথরুমে ঢুকে জলের ফোয়ারাটা চালিয়ে দিয়ে ওর তলায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। খুব অসহায় লাগছে আমার,ধীরে ধীরে মাথা চেপে ধরে বসে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষণ এমন করেই বসে থাকলাম। তারপরে কাকভেজা হয়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে চোখ পড়লো জানালায়, প্রকৃতি আমাকে যেন বলছে বেড়িয়ে আয়।আমি কোনো মতে পোশাক বদলে নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। আমি জানি প্রকৃতির মতো কেউ কোনো দিনও কিছু লুকোতে পারে না।

হাঁটতে হাঁটতে প্রাকৃতিক শোভা দেখে। রাস্তায় প্রচুর ছেলে মেয়ে।একটা বাচ্চা ছুটে আসছিল, আমার সাথে ধাক্কা খায়। সে বাচ্চাটাকে ধরে ফেলে কোলে তুলে নিই সস্নেহে, আমি বাচ্চা খুব ভালোবাসি। বাচ্চাটা আমার সাথে গল্প করতে শুরু করে দিল, আমিও কথা বলছিলাম ওর সাথে। এমন সময় পেছনে একজনের গলা শুনে পেছনে তাকালাম

" আপনি জানেন এই ভাষাটা? কোথায় শিখলেন?"

আমি অবাক হয়ে যাই, আমি যে এতোক্ষণ আমার অজান্তে এই ভাষায় কথা বলছিলাম বুঝতে পারিনি আমি। বাচ্চাটা কোলে ছটফট করতে শুরু করে।আমি নিচু হতেই ও ছুটে পালিয়ে যায়।

" কি উত্তর দিলেন না?"

আমি আমতা-আমতা করে বলি" এখানকার স্থানীয়রা কেউ বাংলায় কথা না বললেও ওদের ভাষা বুঝতে ওর অসুবিধা হয়না। বাংলা ভাষার সাথে বেশ মিল। তাই শুনে শুনে বলে ফেলেছি।"

" কি বলেন আপনি? আমি এই নিয়ে তিন চারবার এসেছি, কই শিখতে পারলাম, হ্যাঁ আমি বুঝতে পারিনা একদম সেটা বললে মিথ্যা বলা হবে।"

আমি হেসে হাঁটতে শুরু করলাম, আমার যেন মনে হলো ওই ভাষাটা আমি জানি, বলেছি আমি আগে কথা এই ভাষায়।

আমি কথা ঘুরাতেই বললাম " আপনি এই সময় বাইরে, কোনো কাজ আছে নাকি?"

" আমার আবার কি কাজ, আমি তো ছুটি কাটাতে এসেছি। বাবা এসেছে কাজে। ঘরে বসে কি করব? তাই বেড়িয়ে এলাম। "

আমি হেসে উনার পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করলাম।

প্রতীম আবার বললেন " একটা কথা বলব?"

আমি ভ্রু কুন্ঠিত করে বললাম, "এমন প্রশ্নের কারণ কি? করতেই পারেন প্রশ্ন।"

" আমার কেন জানি মনে হয় আপনি আমাকে এড়িয়ে চলেন, আপনি মনে হয় সেদিনের ব্যবহার আজও ভুলতে পারেননি।"

" না না, কি যে বলেন, আপনি উচ্চশিক্ষিত, বিদেশে পড়ে এসেছেন, আপনার সাথে কথা বলতে কি বলব, তাই সংকোচে কথা বলিনা।"

" এসব বলবেন না,আচ্ছা চলুন একটা জায়গায় নিয়ে যাই আপনার দারুণ লাগবে জায়গাটা।"

" কোথায়? "

" সামনে একটা ঝর্ণা আছে, দেখবেন কি সুন্দর জায়গা।"

আমি হেসে বললাম "চলুন।"

সত্যি জায়গাটি অসাধারণ, তিরতির করে একটা ছোট পাহাড়ি ঝর্ণা নেমে এসেছে।

প্রতীম বললেন "চলুন নীচে নামি, আরও সুন্দর লাগবে দেখবেন।"

আমি উনার কথা শুনে উনার পিছু পিছু এগোতে লাগলাম। ঝর্ণা এখানে নদীর রূপ নিয়েছে, এখানে নদীর পাশে অজানা বাহারী ফুল ফুটে রয়েছে। প্রতীম হাত দিয়ে দেখিয়ে বললেন "এখানে পিকনিক করতে আসে সবাই। আমার এখানে আসার সময় থেকে শরীরটা কেমন করতে শুরু করে।চোখের সামনে একটা দৃশ্য ভেসে উঠে, কতগুলো লোক। বেশ কিছু মহিলা ও বাচ্চাও রয়েছে। তারা খেলে বেড়াচ্ছে, কিছু পুরুষ ব্যাটমিন্টন খেলছে। মহিলারা বসে গল্প করতে করতে খাবারের প্রস্তুতি করছে। আমি যেন ওদের সব্বাইকে চিনি। হাত দিয়ে ছুঁতে ছুটে গেলাম। প্রতীমবাবু আমার নাম ধরে ডাকলেন। তারপর মনে নেই। চোখ খুলে দেখি উনি আমার চোখে জল দিচ্ছেন। আর বলছেন " হঠাৎ কি হলো আপনার, শরীর সুস্থ নেই। আমারই ভুল হয়েছে এখানে আনা।"

আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে বলি " না না, শরীর ঠিক আছে। "

" তবে এমন করে ছুটছিলেন কেন? তারপর জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।"

আমি চুপ করে থাকায়, উনি বললেন "চলুন ফিরে চলি, কোনো প্রয়োজন নেই থাকার।বাবা জানলে আমাকে ভুল বুঝবেন। আজকে কি ঘটতে যাচ্ছিল ভেবেই ভয় করছে আমার। "

আমি বুঝতে পারলাম উনি রাগ করেছেন। উনি চলে যাচ্ছিলেন৷ আমি উনার হাত ধরে আঁটকালাম। উনি দাঁড়িয়ে পেছনে তাকাতেই লজ্জিত হয়ে ছেড়ে দিয়ে বললাম " কিছু মনে করবেন না, রাগ করে চলে যাচ্ছিলেন তাই জন্য। "

" ঠিক আছে মিস মৃণাল, আমি কিছু ভাবিনি। "

আমি উসখুস করছি দেখে বললেন " কিছু বলবেন?"

" না মানে হ্যাঁ..."

" কি বলতে চান বলেন, এতো ভাবছেন কেন?"

আমি কিছুটা ঝর্ণার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম " কি বলব সেটাই বুঝতে পারছিনা আমি।"

কিছুটা দম নিয়ে বললাম, " আপনি সবটা না জানেন মা, তাই বুঝতে পারবেন কিনা জানিনা। এতোটুকু বলতে পারি আমার সাথে মাসখানেক হতে চললো যা ঘটে চলছে তার কোনো কারণ আবিষ্কার করতে পারিনি।অদ্ভুত ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে। যেমন কিছুক্ষণ আগেই ঘটল, মনে হলো এই জায়গায় আমি আগেও এসেছি। তারপর আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটা দৃশ্য... " এরপর আমার সাথে ঘটা সম্পূর্ণ ঘটনাটাই বললাম।

আমি আমার ঘোরেই কথাটা বলে যাচ্ছিলাম।

"আপনি সত্যি বলছেন? " এই কথাটা শুনে ঘোর কাটে আমার,ঘোর কাটতেই দেখি প্রতীম আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে অবাক দৃষ্টিতে।

আমি কিছু বলার আগেই সে আমাকে অবাক করে জড়িয়ে ধরলো। আমি আরও অবাক হয়ে গেলাম। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো " মান্তু আমাদের মান্তু, আমি সকালে বাবার কথা বিশ্বাস করতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে বাবা ঠিক বলেছে। তুমি আমাদের মান্তু।"

তিনি আমাকে হাত ধরে বসিয়ে বললো " এজন্য তুমি বাচ্চাটার সাথে স্থানীয় ভাষায় কথা বলতে পারছিলে। তখনই আমার মনে সন্দেহ হয়েছিল। তাই এখানে এনেছি। আমরা দুই পরিবার মিলে প্রতি শীতে এখানে আসতাম। শেষ যেবার এসেছিলাম, সেবারের বর্ণনা তুমি হুবহু দিলে। সেবারই তোমাদের সাথে আমাদের শেষ দেখা এই জায়গায়। তারপর কাকাবাবুদের সাথে ওই দূর্ঘটনা ঘটার পরে আমি আর আসেনি। এদিকের সবকিছু ছোটকাই সামলাতেন।"

আমি কিছু বুঝতে পারছিনা ঠিকই কিন্তু মন দিয়ে শুনতে থাকলাম কথাগুলো।

প্রতীমবাবু হঠাৎ আমার কপালের কাটা দাগে হাত দিয়ে বললো "সেই দূর্ঘটনায় এটা হয়েছে তাই না রে? এজন্য এতো কাছে থাকার পরেও তোকে চিনতে পারিনি।"

হঠাৎ আপনি থেকে তুমি, তারপর তুই বলায় আমি অবাক হলেও চুপ করে রইলাম।উনাকে দেখে মনে হলো উনি উনার মধ্যে নেই। এর পাশাপাশি আমার মনে হলো একে আমি চিনি। ভালো করেই চিনি।সে আরও কত কথা বলতে থাকলো। আমি শুনতে থাকলাম।

আমাকে হয়ে অবাক চেয়ে থাকতে দেখে বললো "তুই কিছু বলছিস না কেন মান্তু? "

আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না। আমার এসব কিছু জানা নেই এসব বলতেও খারাপ লাগলো। আমি এতোটুকুই বললাম "আপনার কথা শুনছি।"

" আরে আপনি কি রে, আমি তোর প্রীদা, কত ঘুরিয়ে বেড়িয়েছি একসাথে,সাথে অবশ্য মানা দা থাকত। "

এরপর হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, "চল আমাদের ওই প্রিয় জায়গাটাতে, দেখবি মনে হবে আমাদের ছোটবেলাটা আঁটকে আছে। "

আমি সম্মোহিতের মতো উনার সাথে সাথে চলতে থাকলাম।

চলবে....



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror