STORYMIRROR

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Tragedy Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Tragedy Thriller

ট্রেন যাত্রা.. (পর্ব - চার)

ট্রেন যাত্রা.. (পর্ব - চার)

4 mins
151

" মিনু, ওই মিনু চোখ খোল"

আমি চোখ খুললাম, দেখি একজন ত্রিশ পঁয়ত্রিশ মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি ঠিক চিনতে পারলাম না। আমি চারিদিকে চেয়ে দেখলাম, আমি বুঝতে পারলাম না আমি ঠিক কোথায় রয়েছি।

তিনি আমাকে ইশারায় ডাকলেন।আমি তার পিছু পিছু এগিয়ে গেলাম, তিনি দরজা খুললেন, খুলে বাইরে আসলাম। মেঠো পথ দিয়ে এগিয়ে গেলাম, কোথায় চলেছি, কেন চলেছি আমি জানিনা। সম্মোহিতের মতো সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম। একটু এগোতেই দেখি সামনে সবুজে মোড়া চা-বাগান। কি সুন্দর চারিপাশ, দূরে দেখা যাচ্ছে পাহাড়। এই জায়গাটায় আমি আসিনি আমি জানি কিন্তু আমার জায়গাটা কেমন চেনা চেনা মনে হলো। আমি চা বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। বিশ পঁচিশ বছরের জনা ত্রিশ মেয়েরা চা বাগান থেকে চা তুলছে আর গান গাইছে। আমি বিভোর হয়ে এসব দেখছিলাম, কতক্ষণ কে জানে? হঠাৎ করে কি একটা কারণে আমার ঘোর কেটে গেল, আমার মনে পড়লো ওই ভদ্রমহিলার কথা।আমি চারিদিকে চেয়ে দেখলাম দেখতে পেলাম না তাকে। তারপর আমি ছুটতে লাগলাম। ছুটতে ছুটতে একটা বাড়ির সামনে এসে পৌঁছালাম। সামনে একটা বড় দরজা। অপূর্ব কারুকার্য করা,বাড়িটা বড় নয়, তবে বেশ সুন্দর দেখতে। বাড়িটা দোতালা কাঠের, সামনে অনেকটা জায়গা, সেখানে সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে রয়েছে। সেই বাড়ির সামনে সেই ভদ্রমহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমি যেন বাড়িটাকে ভালো করে চিনি আমার তা মনে হলো। আমি দেখলাম ভদ্রমহিলা বাড়ির ভেতরে ঢুকে যাচ্ছেন। আমিও উনার পিছু পিছু বাড়িটাতে ঢুকতে গেলাম, কিন্তু পারলাম না। পাটা যেন কেউ শক্ত করে ধরে রেখে। আমি সর্বশক্তি লাগিয়ে বাড়িতে ঢোকার জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম। একটা হাত আমার পেছনে এসে রাখলো। আমি কেন জানি ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলাম। চোখ খুলে দেখি আমি আমার বিছানাতেই রয়েছি। একদম ঘেমে নেয়ে গিয়েছি। আমি উঠে বসলাম, মাথাটা যন্ত্রণা করছে,আমি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে আমার সাথে। আজকে যা দেখলো তা হয়তো স্বপ্ন কিন্তু একটা পরিস্কার, যেন মনে হয় বাস্তবে সে সেই স্থানে গিয়েছিল। এমন হওয়া কি করে সম্ভব? ওর সবচেয়ে অদ্ভুত এই বিষয়টিতে লাগছে ওর স্বপ্ন নির্বাক নয়, সবাক ছিল। নইলে ও কি করে গানটা শুনতে পেয়েছিল। এখন মনে আছে গানের একটা লাইন। এটা হওয়া তো কোনো মতেই সম্ভব নয়।স্বপ্ন কোনো দিনও রঙ্গিন সবাক হয়না৷ যারা স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা করে, তাদেরই এইখানি মত। কাল রাতের কথা মনে করতে শুরু করে, কি কি ঘটেছিল সেটা নিয়েই ভাবতে শুরু করি আমি, আমার যতটুকু মনে পড়লো ওপর থেকে এসে রান্না করে খেয়ে বসলাম, মাথা যন্ত্রণা হলো, তারপর কিছু মনে নেই। যা মনে আছে সেটা সম্পূর্ণ স্বপ্নের জগত।

আমি মনের চিন্তাগুলোকে জোর করে দূরে সরিয়ে রেখে বিছানা থেকে নেমে ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে উঠলো, দেখি সাড়ে এগারোটা বাজে। আজ আমার দুটো জায়গায় ইন্টারভিউ ছিল, তাছাড়া পুরনো অফিসেও যেতে হবে। ফোন খুলে দেখি অন্তত পক্ষে ২০ টা ফোন এসেছে। আমি তাড়াতাড়ি করে স্নানঘরের দিকে ছুটলাম, অবশ্য তার আগে দাঁত মাজার জন্য বেসিনের কাছে গিয়ে চোখ মুখ ধুতে গিয়ে অবাক না হয়ে পারলাম না। আমার গলায় সেই মালাটি, কিন্তু আমি তো সেটা তুলে রেখেছিলাম। ঠিক মনে আছে, আমাকে কে পড়ালো। পরক্ষণেই ভাবলাম কে আমাকে পড়াবে? আমি তো একা থাকি। মাথাটা আমার কাজ করছিল না। আমি মালাটার খোলার জন্য s টা খুলতে চাইলাম। কিন্তু কিছুতেই খুলতে পারলাম না। এমন সময় একটা ফোন এলো, আমার পুরনো অফিস থেকে ফোন। তারা জানালেন আমাদের কোম্পানির CEO & Junior CEO আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি আমার কোম্পানির CEO কে বড্ড সম্মান করি। আমি আর মালা খোলার চেষ্টা না করে কোনো মতে স্নান সেরে, ঠাকুরের সামনে ধূপধুনা দিয়ে, Cab book করে সোজা অফিসে গিয়ে হাজির। আমার শরীরটা সুবিধার লাগছিলো না। আমি সেদিকে নজর না দিয়ে আমাদের তিনতলায় থাকা অফিসের উদ্দেশ্যে হাঁটা লাগালাম। এমন ভাগ্যমন্দ, লিফট চলছে না। আবার আমার অফিস থেকে ফোন এলো৷ তারা জানালো CEO স্যার মিনিট দশেকের মধ্যে বেড়িয়ে যাবেন। উনার ডাক্তারের কাছে appointment নেওয়া আছে। আমি দেখলাম আর লিফটের অপেক্ষা করে লাভ নেই,সিঁড়ি ধরে উঠতে, বলতে গেলে ছুটতে শুরু করলাম। যখন তিনতলায় অফিসের দরজার সামনে এসে পৌঁছালাম আমার চারিদিক কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে গেল, তারপর মনে নেই।

" কি মৃণাল তোমার কি হয়েছে? ঠিক আছো তো? জিজ্ঞেস করলেন CEO স্যার।

চোখ খুলে দেখি আমাদের কোম্পানির Junior CEO আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন। আর CEO সহ কিছু কর্মচারী আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমি উঠে বসলাম।

আমি বল্লাম "আমি ঠিক আছি।"

Junior CEO বললেন " মোটেও না বাবা, উনার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।"

CEO Sir বললেন "এতোটা শরীর অসুস্থ , কেন আসতে গেলে। জানিয়ে দিলে হতো। "

"দোষটা আমার বাবা, আমি কাল উনার সাথে বড় খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি।উনি আমাকে চাকরির পদত্যাগ পত্র মেইল করে দিয়েছেন। আমি তবু উনাকে অনুরোধ করেছিলাম কথা বলতে। উনি আসতেন কি না জানিনা, তাই তোমাকে আসতে বলেছিলাম। আমি জানি উনি কারো কথা না রাখুক, তোমার কথা রাখবে।"

" আহ্ খোকা এই কয়েকটি দিন দায়িত্ব নিয়েই তুমি কি শুরু করেছ?"

Junior CEO চুপ করে রইলেন।

আমার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন " ওর কাছে পদত্যাগ পত্র দিয়ে কি হবে? CEO তো আমি। শোনো তাড়াতাড়ি সুস্থ হও। একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তোমাকে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।"

আমি কি বলব সেটা বুঝতে পারলো না, খুশী হয়ে চাকরিটা করবো, নাকি ছেড়ে দেবো বুঝতে পারলাম না।

আমি চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ CEO স্যার আমাকে বললো দাঁড়াও।

আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। উনার গলায় কেমন একটা স্বর...

আমার সামনে এসে আমার গলার দিকে তাকিয়ে বললেন "এই মালা তুমি কোথায় পেলে"

আমি কিছু বলার আগে উনি বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লেন...


চলবে..



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror