Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Thriller

3  

Shyamasree (শ্যামশ্রী)

Horror Thriller

ট্রেন যাত্রা (দ্বিতীয় পর্ব)

ট্রেন যাত্রা (দ্বিতীয় পর্ব)

5 mins
279


আমার যখন ঘুম ভাঙ্গলো দেখি একপাশে বৌদি আর একপাশে দাদা বসে রয়েছে। অবশ্য তারা দুইজনই রয়েছে গভীর ঘুমে। আমি উঠতে যেতেই বৌদির ঘুম ভেঙে গেল। বৌদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো "কোথায় উঠছো তুমি? শুয়ে থাকো। কাল যেভাবে রাত কাটলো তা আমরাই জানি।"

আমি অবাক হয়ে বললাম "কে কি হয়েছে আমার বৌদি?"

" আর বলোনা, তুমি যখন কাল এলে তখন তুমি পোশাক পরিবর্তনের জন্য ঘরে এলে। তারপর ভাইঝিকে নিয়ে সোহাগও করলে, তারপর কি হলো কে জানে? ভাগ্যি বাবু তখনও স্কুলে যায়নি, তাকে পাঠিয়েই তো ওর বাপ কাকাকে ডাকিয়ে আনলাম।"

দাদা ততক্ষণে উঠে গিয়েছিল, সে বৌদির কথা শেষ হওয়ার আগেই দাদা বললো " আমি এসে দেখি তোর বৌদি তোর চোখে মুখে জল দিচ্ছে। আমি, ভাই আর বৌদি ধরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। ভাই গিয়ে ডাক্তার ডাকতে গেছিল। তুই তো জানিস এখান থেকে কতদূর, তাছাড়া হাতে গুনে দুটো ডাক্তার। একজনকে কোনো মতে ধরে এনেছিল। তারপর সারারাত গেল তোর জ্ঞান ফেরেনি, মাঝে মাঝে কিসব বলছিলি, চিৎকার করে উঠছিলি। আমি আর তোর বৌদি জোর করে বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছিলাম।সারারাত ধরে জলপটি দিয়েছি,আর মাথায় হাওয়া দিয়েছি,তোর বৌ আর আমি মিলে।"

আমি চারিদিকে খুঁজতে লাগলাম।

" কিগো কাকে খুঁজছো।"

" রিতা, রিতমরা কই?"

" ওদের কাকার সাথে জোর করে শুতে পাঠিয়েছি কাল রাতে৷ কিছুতেই যাবে না। তোমাকে পড়ে থাকতে দেখে মেয়ের কি কান্না কি বলবো!"

আমার খুব খারাপ লাগলো, দুধের শিশুদুটোকে মা-বাবাকে ছেড়ে শুতে হয়েছে, আর আমার জন্য তাদের সারারাত বিনিদ্র কেটেছে।

আমি বললাম " দাদা কি দরকার ছিল রাত জাগার, ইস্ আমার জন্য এতোটা কষ্ট করলে,খুব খারাপ লাগছে আমার।"

" খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি বোন, তুই কি আমার পর? তোর জন্য করবো নাতো কার জন্য করবো? তাছাড়া তুই কি আমার জন্য কম করেছিস? আমার কত বোনের সাধ ছিল, যখন সবাই ভাইফোঁটা নিতো, আমি দূর থেকে তাকিয়ে থাকতাম। আমার এখনো মনে আছে মা যখন বোন হওয়ার সময় মামাবাড়ি গেছিলো, তখন কত খুশী হয়েছিলাম। কিন্তু বোন এলোনা। কি ঘটেছিল জানিনা, মা খালি হাতে ফিরেছিলো। তারপর থেকে মা কেমন যেন চুপচাপ থাকত। কোথাও যেতো না, এমনকি মামাবাড়ি না। তারপর তো বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেল। মা আরও চুপচাপ হয়ে গেল। কাজ করে যেতো, কিন্তু হাসতো না। সেবার কার যেন বিয়ে ছিল, মামী জোর করে মাকে নিয়ে গেল সাথে করে। আমিও সাথে গেলাম।তারপর বরযাত্রীতে গিয়েছিলাম কোথায় একটা মনে নেই, রাতের লগ্নে বিয়ে। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, সকালে উঠে দেখলাম ভাই আর তোকে কোলে মা। হাসছে খেলছে। অনেক দিন পরে মাকে হাসতে দেখলাম। সেদিন আসার কথা ছিল, কি একটা হয়েছিল তাই দুই দিন পরে ফিরি আমরা। "

আমার যেন আবারও মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো, আবার যেন চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটা দৃশ্য। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। সেই দৃশ্যে অনেক মানুষ ছিল,কিন্তু কাউকে চিনতে পারলাম না। কিন্তু একটা মেয়ে হঠাৎ পেছন ঘুরে তাকালো, মনে হলো কালকের মেয়েটা,মুখটা আজ আরও স্পষ্ট। কপালে একটা কাটা দাগ দেখলাম, নিজে থেকে নিজের কপালে হাত উঠে এলো। তারপর তারপর আর কিছু মনে নেই...

" কি কেমন লাগছে শরীর, ভালো আছো তো এখন মা?" একটা কন্ঠস্বর শুনে ধীরে ধীরে চোখ খুললাম।চোখ খুলে দেখি আমার আবল্য পরিচিত গুণীণ জ্যাঠা। একটু অবাক হলাম। আমাদের বাড়ি গ্রামে হলেও এসবে একদমই বিশ্বাস নেই। হঠাৎ উনাকে ডেকে আনা হলো কেন?

" আপনি? "

" হ্যাঁ আমি, তা এখন কেমন লাগছে?"

" আমি তো ঠিকই আছি।"

" তা ভালো, এখন বিশ্রাম নাও, আমি আসি,কাল আসবো আমি আবার।" বলে তিনি দাদাকে বাইরে ইশারা করে নিয়ে চলে গেলেন। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। কি হচ্ছে না হচ্ছে। দেখি দূরে বৌদির কোল ঘেঁষে রিতা আর রিতম দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি কাছে ডাকলাম, তবুও এলো না। আমি কষ্ট পাওয়ার চেয়ে অবাক হলাম বেশি। বৌদি রিতা আর রিতমকে বাইরে খেলতে পাঠিয়ে আমার পাশে এসে বসলো, আমি বৌদির দিকে তাকালাম। নিজের অজান্তে আমার চোখ জলে ভরে গিয়েছে।

" এমা বিনু কাঁদছো কেন? শরীর থাকলে অসুস্থ হয়।"

আমি বৌদির স্নেহের পরশে কেঁদে ফেললেম। বৌদিকে

" বৌদি আমার কি হয়েছে? কেন ডেকেছিলে গুণীণ জ্যাঠাকে?"

বৌদি তার আঁচল দিয়ে আমার চোখ মুছিয়ে বললো "ধুর বোকা মেয়ে, কিছুই হয়নি তোমার, আমি ডাকিনি উনাকে, এদিক দিয়ে উনি যাচ্ছিলেন। চিৎকার শুনে এসেছিলেন।"

" আমি তোমাদের বড় জ্বালাচ্ছি তাই না?"

" তুমি কক্ষনো এমন ভাববে না, আমার জন্য কম করেছ তুমি? যখন রীতম হয় তখন মা সুস্থ ছিলেন , উনি যেতে দেয়নি মামাবাড়ি, নিজে যত্নে রেখছিলেন আমায়।রীতির সময় মা অসুস্থ দেখে তুমি নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলে মা আর আমাকে। আর দেখাশোনার লোক রাখার পাশাপাশি নিজেও কম খেয়াল রেখেছ আমাদের? রীতমেরও যত্ন নিয়েছ।"

আমি বললাম " ধুর বৌদি তোমাদের জন্য করবোনা তো কার জন্য করবো। "

বৌদি আমার গলা নকল করে সেরকম করেই বললো " আমরা তোমার জন্য করবো না তো কে করবে?"

তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললেন " তুমি তাড়াতাড়ি উঠে স্নান সেরে নাও দেখিনি, কিছু মুখে তো দিতে হবে।"

আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম " তুমি যাও আমি এখুনি আসছি।"

তিনি চলে গেলেন, কিন্তু উনার মুখের চিন্তাটা আমার দৃষ্টি এড়ালো না। আমি তাড়াতাড়ি করে স্নান সেরে নিলাম। স্নান সেরে শরীরটা অনেক ভালো লাগলো,ঝরঝরে লাগলো। আমি স্নান সেরে ঘরে আসতেই দেখি দাদা দাঁড়িয়ে আছে ঘরের সামনে।আমাকে দেখেই বললেন "এটা তাড়াতাড়ি পড়ে নে। " দেখি উনার হাতে একটা গাছের শেকড়। আমি অবাক হয়ে গেলাম, বললাম "এটা কি দাদা?"

" একটা ওষুধি শেকড়। "

" তুমি এসবে কবে থেকে বিশ্বাস করতে শুরু করলে?"

" সে সংসারী মানুষদের অনেক কিছুতেই বিশ্বাস করতে হয় বুঝলি? যা বোন পড়ে নে, আমার জন্য পর।"

আমি আর দাদার কথা ফেরাতে পারলাম না, ধারণ করেই নিলাম শেকড় খানা। দ্রব্যের গুণের জন্যই হোক আর শরীর সুস্থ হয়ে যাওয়ার জন্যও হোক আমার সেদিন আর কিছু হলোনা। হাসলাম খেললাম, সবার সাথে বসে খেলাম। তারপর গ্রামের বন্ধু বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে গেলাম।সাথে আমার দুই সাঙ্গ পাঙ্গ গেল, মানে রীতি আর রীতম। প্রথমে ওরা কোনো কারণে আমার থেকে দূরে থাকলেও আমি মানিয়ে নিলাম,যতই হোক ওরা আমাদের তো ভালোবাসে।

বান্ধবীর বিয়ে হয়েছে হাওড়া,অবশ্য ওর বর আমার পরিচিত। আমার সাথে ফেসবুকে ছবি দেখেই আগ্রহ দেখায়,আমি যোগাযোগ করে দিই। যাইহোক সে কথা, ও এসেছে বাড়ি, নতুন প্রাণ আসতে চলেছে তাই।আমিও শুনে দেখা না করে পারলাম না।

আমি গল্প করে বাড়ি চলে এলাম। বৌদি সেদিন খুব ভালো করে হাঁসের মাংস রেঁধেছিলো। অসাধারণ রান্না করে আমার বৌদি। সাধারণ জিনিস বৌদির ছোঁয়ায় অসাধারণ হয়ে যায়।

পরের দিন সকালে উঠেই ফেরার জন্য তোড়জোড় করছি, রীতম ছুটে এসে বললো মিতাকে নিয়ে নাকি হাসপাতালে গিয়েছে। কাল আমরা আসার পরে থেকে নাকি রে অসুস্থতা অনুভব করে।আমার মন এক্কেবারে খারাপ হয়ে গেল, আমি যতক্ষণ ছিলাম সব ঠিকই ছিল, গল্প করলো আমার সাথে কতক্ষণ। নিজেকে কেমন জানি দোষী মনে হলো।

" কি বললি খোকা, মিতা অসুস্থ। "দেখলাম বৌদির মুখখানা কেমন হয়ে গিয়েছে। বিড়বিড় করে কি বলছিল যেন, তবে আমার পেছনেই দাঁড়িয়েছিল তাই আমার কানে কথাগুলো ঠিক পৌঁছালো। "ওর সবে চারমাস, সবই ঠিক ছিল। হঠাৎ করে.. গুণীন জ্যাঠা যা বললেন তাই কি ঠিক? "

আমার মাথাটা আবার কেমন করে উঠলো, আমি উঠে বৌদির দিকে একবার তাকিয়ে ঘরে গিয়ে আমার সবসময়ের সঙ্গী ব্যাগখানি নিয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা বেড়িয়ে গেলাম বাড়ি ছেড়ে...

চলবে...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror