STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Inspirational

তোমার রূপ সাগরে

তোমার রূপ সাগরে

5 mins
349

তিন মাসেই ছুটি পেয়েছি কিন্তু তবুও দেশে ফিরি নি আমি। এমনকি পাঁচ বছর পর দূর্গা পূজাতে আনন্দ করার লোডটাও আমাকে দেশে ফেরাতে পারলো না। কিন্তু মা বাবার চোখের জলের কাছে আমার জেদটা হার মেনে নিলো। দেশ ফিরে এলাম আমি। রুটিরূজীর তাগিদেতে যদিও বাড়িতে থাকা হলো না আমার।তবে আমি ওদের বলেই ছিলাম কোলকাতায় থাকবো না। তাই ঠিক করলাম বাড়িতে রবিবার করে আসবো। সেই মতো জমানো পয়সা দিয়ে তারাপিঠ অঞ্চলে একটা ভাত ডাল সবজির হোটেল লিজ নিলাম। আর রামপুর হাটের একটা থেকে বেড়াতেই একটা ছোট্ট বাড়িতে ভাড়া নিয়ে থাকার ব্যাবস্থা করলাম। লোকটি স্থানীয় কলেজের অধ্যাপক। উপরে তালায় পরিবারকে নিয়ে থাকে । আমি নিচের তালায় ভাড়া নিলাম। লেখালেখি করার আদেশ জায়গা।

কলকাতা শহরে আমাকে অনেক আঘাত করেছে। যদি দোষটা আমারই। গানটা মনে পরে গেলো। আমি ভালো গাইতে পারি না, গান শুনতে ও ভালো বাসি না। তবু প্রতিটা লাইন এই গানটা।

"দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

তারে ধরি ধরি মনে করি

ধরতে গেলে ধরা দেয়না

তারে ধরি ধরি মনে করি

ধরতে গেলে ধরা দেয়না

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ঘুরিতেছে পাগল হয়ে

সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ঘুরিতেছে পাগল হয়ে

মরমে জ্বলছে আগুন আর নেভে না

সে যে আমার আমার আমার বলে

আমার হয়ে আর হলো না

সে যে আমার আমার আমার বলে

আমার হয়ে আর হলো না

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

বহুদিন ভাবতরঙ্গে

ভেসেছি কতই রঙ্গে

বহুদিন ভাবতরঙ্গে

ভেসেছি কতই রঙ্গে

সুজনের সঙ্গে হলো দেখাশোনা

এখন বলে বলুক লোকে মন্দ

বিরহে প্রাণ আর বাঁচে না

এখন বলে বলুক লোকে মন্দ

বিরহে প্রাণ আর বাঁচে না

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

পথিক কয় ভেবো নারে ডুবে যাও রূপসাগরে

পথিক কয় ভেবো নারে ডুবে যাও রূপসাগরে

বিরলে বসে করো যোগসাধনা

একবার ধরতে পারলে মনের মানুষ

চলে যেতে আর দিওনা

একবার ধরতে পারলে মনের মানুষ

চলে যেতে আর দিওনা

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

তারে ধরি ধরি মনে করি

ধরতে গেলে ধরা দেয়না

তারে ধরি ধরি মনে করি

ধরতে গেলে ধরা দেয়না

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা"

গানটা অনেক গভীর মানে আছে কিন্তু প্রতিটা কথার মানে আছে। চাকরি বাকরি না পেয়ে বছর দুই পর আবার এম,তে ভর্তি হলাম। কলেজের প্রথম দিন ক্লাসে ঢুকতে যাবো হঠাৎ করে একটা মেয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ে বললো " কিরে তোর এতো বড়ো সাহস তুই আমার বয়ফ্রেন্ড বলেছিস, আমি তোর সাথেও লাইন মারি" আমি কিছু বুঝার আগেই গুন্ডি মেয়েটা আমাকে দুই চার হাত লাগিয়ে দিলো। যাইহোক ওর দুই জন বন্ধুবি এসে আমাকে শেষ রক্ষা করলো।

আমি স্কুল লাইফেও কোনদিন কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করি নি তাই ফ্ল্যাট করার প্রশ্ন ওঠে না। ও ওর প্রথম দিনের ভুল সংশোধন করতে গিয়ে, কিভাবে আমার বন্ধু হয়ে গেলো। আসলে ও খুব সুন্দরী ছিলো। আর নিজের রূপ নিয়ে অহংকারী ছিলো। প্রতিটা ছেলেই ওর রূপের প্রতি আকৃষ্ট হতো । কিন্তু আমি প্রথম দিন ধোলাইয়ের কথা মনে রেখেই আরো ওকে এড়িয়ে চলতাম। তাই ও হয়তো মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলো আমাকে ওর রূপের স্বীকার বাঁনাবে। আর সেইটা হলেও। ওর বাড়িতেই একদিন আমরা ঘনিষ্ঠ হলাম। একদিনে ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ থাকলে দূর্ঘটনা বলে ভুলে যেতে অসুবিধা হতো না। কিন্তু আরো অনেক বার ঘটতে থাকায় আমি ওকে বিয়ে প্রস্তাব দিলাম। ও আমাকে বিয়ে করবে না এমন কথা কখনোই বললো না। ও বললো, " মায়ের ইচ্ছা আমার কোন বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে হোক , যাতে অভাব কাকে বলে সেটা আমি যেনো না বুঝতে পারি। তুই কি আমার জন্য বড়লোক হতে পারবি না, চাকুরীর বদলে ব্যবসা করতে পারবি না?"

ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বিদেশে পাড়ি দিলাম। কারণ একটা ভালো ব্যবসার জন্য যে মুলধন দরকার মধ্যবিত্ত ঘরেতো সেটা থাকে না। বছর দুয়েক আমাদের সম্পর্কটা ভালোই চলছিলো। হঠাৎ ওদের সাথে আলাপ হলো বাবাইএর একটা বিয়ে বাড়ীতে আলাপ। ছেলেটা খুব একটা শিক্ষিত না। আবার খুব হেনসাম না। চাকরি বাকরি না করলেও বাবার প্রচুর টাকা আছে। কোনো রাজনৈতিক নেতার নাতি হওয়ায়টা আরো সুবিধা করে দিলো ওকে। আমাকে মাত্র দুই মাস সুযোগ দিয়েছিল ও । ও বলেছিলো " দুই মাস পর বাবাইএর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছে বাড়ি থেকে। আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস। তাই তোকে আমি বিয়ে করতে পারি পালিয়ে গিয়ে। কিন্তু তুই ভেবে দেখ ওর মতো কি আমাকে তুই একটা বিলাসবহুল জীবন দিতে পারবি?"

আমি ওকে দোষ দিতে পারি নি। কোলকাতা শহর ঘৃণা করছি আমি এ শহরে আজ চাকুরী হয় সুপারিশে। দুর্নীতি এতো বেড়ে গেছে ব্যবসা করতে গেলে আপনার অনেক বেশি মুলধনের প্রয়োজন। তাই এ শহরের রূপ সাগরে, মন গুলো সব সম্পর্ক গুলো সত্যি বড় কাঁচা।

যাইহোক নতুন শহরটা ভালো লাগছে। বাড়িটাতে কোন চিৎকার চেঁচামেচি নেই। অধ্যাপক মহাশয়তো কথা বলেই না। উনার স্ত্রী সম্ভবতঃ মাঝে মাঝে ওনাদের ছেলেকে ডাকে লাল্টু খেতে আয়। সেই সময় একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে এক থেকে দুই বার, বোধহয় জানিয়ে দেয় তাকেও খেতে দিতে হবে ‌। তাছাড়া বাড়িটাতে পিন পরার শব্দ আপনি পেয়ে যাবেন। তবে ওনাদের সাথে আলাপ হবার সুযোগ হয়নি আমার দুই মাসে।

আমি তো সময় সময় হোটেলে খেয়ে নিই বা ওখান থেকেই খাবার নিয়ে আসি। সেই দিন বৃষ্টি হচ্ছিল তাই হোটেল যাবো না ঠিক করলাম। রান্না ঘরে ঢুকে দেখলাম সব সামগ্রী থাকলেও। নুন ছিলো না। তাই বাধ্য হয়ে দোতালায় উঠলাম। উঠে আবিষ্কার করলাম ও বাড়িতে আসলে তিনটি মানুষ থাকি আমরা। ওই সুন্দরী মহিলা আসলে, অধ্যাপকের দত্তক কন্যা। গতবছর ওনার সাথে আমার মামা আমার বিবাহ প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি তখন ওনার ছবিটাও দেখি নি। লাল্টু ওদের কুকুর, ওই দশ মিনিট আমার ভালো বন্ধু হয়ে গেলো। কিন্তু উনি ভালো ব্যবহার করলেও। বন্ধু হতে ঠিক রাজী হলেন না। বললেন " আমরা দুই জনেই বড় একা তাই বন্ধুত্বের নামে কাছে আসবো সহজেই। তখন হতে পারে আসবে ভালোবাসা।আর ভালবাসা না পাওয়া, ভালবাসা না দেওয়া - দুইইই যে বড় কষ্টের , তাই বোধহয় বন্ধুত্ব না হওয়া ভালো.."

ঈশ্বরের এই সুন্দর পৃথিবীতে , সত্যি যা পাক্কা সোনার তৈরি তাকে ধরেতে গিয়েও ধরা যায় না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract