Rima Goswami

Tragedy Others

3  

Rima Goswami

Tragedy Others

সুখ যখন তীর্থের কাক

সুখ যখন তীর্থের কাক

4 mins
265


সকাল থেকেই এখানে নিত্য কলহ লেগে থাকে । কারণটা কোন ডিপ্রেশন নয় , আত্মকেন্দ্রিকতা নিয়ে বিবাদ না । কারণ নগ্ন সত্য ' অভাব ' । দুটো মানুষ ঠিক করে থাকা যায়না যে ঝুপড়িতে , সেখানে দলাপাকা করে পাঁচটা মানুষ থাকে । ধারাভি পৃথিবীর অন্যতম স্ল্যাম । এই ধারাভি ঘিরে কত মানুষের বাস । অসীমারাও থাকে এই ধারাভিতে একটা ছোট্ট ঝুপড়িতে । শীতে যেখানে কেঁপে মরতে হয় , বর্ষায় ভিজে আর রোদের দিনে গরমে তেতে পুড়ে । তারপরে তো বাথরুমের জন্য লাইন , জলের জন্য লাইন লেগেই আছে । অসীমার অভ্যাস আছে এগুলো নিয়ে বাঁচার । সমস্যা হয়েছে একটাই পাঁচটা মানুষ কুলাতে পারেনা ওই একচিলতে আশ্রয়ে । অম্বি আর অসীমার প্রথমে একটি মেয়ে , বয়স তেরো । দ্বিতীয় সন্তান যমজ দুই ছেলে । অম্বি মেয়ের কোলে ছেলে চেয়েছিল তাই দ্বিতীয় পরিকল্পনা । সেই পরিকল্পনা ওদের হাত উপুড় করে দুটি সন্তান দেয় । এখন সমস্যা ছেলেরা সাত বছর করে হয়েছে । পাঁচটা মানুষ ওই ঝুপড়ির মধ্যে কোথায় খাবে ? কোথায় ঘুমাবে ? তারপরে আছে জল জুগিয়ে রাখার ঝামেলা । এদিকে অম্বির লেদ কারখানার ঝাঁপ ও পরে গেছে হঠাৎ । রোজগারের অভাবে সংসারে ও অভাব দেখা দিয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই । নুন আনতে পান্তা নেই , এদিকে দুরন্ত বাচ্চাদের তুমুল খিদে । সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঝগড়া বিবাদ লেগেই যায় । অম্বি থৈ পায়না কি করে আবার এখন নতুন করে শুরু করবে ? অসীমা ও বাচ্চাদের অভুক্ত রেখে মরমে মরে নিজের বিবেকের কাছে । অসীমা ভাবে একটা বাইয়ের কাজ নিলে হয় , তারপর ভাবে মেয়েটা তেরো বছরের হয়েছে । এই মেয়েকে একা বাড়িতে রেখে যাওয়া মানে বিপদ ঘনিয়ে আসতে সময় নেবে না । তাই অসীমা এক পা এগিয়ে দুপা পিছিয়ে আসে । অম্বি হতাশায় ভুগে এখন মদ জুয়াতে মেতেছে । ওর কোন লক্ষণ নেই কাজ করার । ছেলে গুলোর রাতদিন দৌড়ঝাঁপ , মেয়েকে আগলে রাখার মাঝে আছে অসীমার জন্য শুধুই অভাব । অথচ অসীমা আর অম্বি মুম্বাই এসেই ছিল স্বপ্ন পূরণ করতে । আরব সাগরের ঢেউ যে ওদের স্বপ্ন গুলো আছড়ে ফেলবে এভাবে ওরা ভাবতেও পারেনি । সুখ কখন যেন ওদের জীবনে তীর্থের কাক হয়ে গেছে । টাকা পয়সার যথেষ্টতা না থাকলে হয়ত আজকাল সুখ তীর্থের কাক হয়েই থাকে । অপেক্ষমান থাকে অর্থের আগমনের । মানে ব্যাপারটা এরকম আর কি যে অর্থের সমাগম হলেই সুখ নামক কাকটি উড়তে শুরু করবে । এই অবস্থায় যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় সংসারে সেখানে অম্বির কাজ না থাকাটা আরেকটা দীর্ঘনিঃস্বাস হয়ে নিয়ত ঝড়ে পড়ছে অসীমার উপরে । একটা ফাস্ট ফুড স্টল দিতে পারলে ভালো হয় চৌপাটির ধারে । তার জন্য পুঁজি চাই সেটাও তো নেই অসীমার কাছে । পরিস্থিতি এতই খারাপ যে অসীমাকে ভাবতে হলো এক অন্য পথ ।


সেই পথ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত স্পষ্ট করে বললে তা হলো ষড়রিপুর প্রথম রিপুই হলো কাম । অবশ্যই কামের বাসনা অপরাধের কিছু নয় । এই প্রকৃতিতে কামশক্তির দ্বারাই নতুন জীবনের উৎপত্তি হয়, এটি অপরাধ তখনই হয় যখন এর প্রভাব অতিমাত্রায় থাকে । প্রতিনিয়ত জীবনে কামের অর্থ অনেক কিছুই হতে পারে , তা আবার নারী পুরুষ নির্বিশেষে ভিন্নও হয়ে থাকে । তবে এখানে বর্ণনার হেতু -- লালসা শক্তি, যে নারী বা পুরুষের প্রতি তোমার অধিকার নেই সেই নারী বা পুরুষের প্রতি কাম আসক্তি । কাম এতোটাই ভয়ঙ্কর রিপু যা একজন মানুষকে পরিনত করে রক্ত পিপাসু দানবে । পরিবার পরিজন ছাড়াও স্বয়ং নিজেকেই ঠেলে নিয়ে যায় ধ্বংসের পথে । ধ্বংসের কান্ডারি মানবটি তখন অপ্রাকৃতিক কর্মে কলুষিত করে সমাজ । কাম রিপুর দাসত্বএ মোহিত হয়ে পথ চলতে থাকে অন্ধের মতো । নিজের ভাগ্যকেই পরিহাসের শিকার বানিয়ে তৃপ্ত করতে থাকে ক্ষুব্ধ কামের বাসনা । এই কামার্ত মানুষদের কামের ক্ষুদা মেটাতে এই পথে রোজকার তাই অনেক সুগম । অসীমা একজন কল গার্লের কাজে নিয়োজিত হলো । নিজেকে বিক্রি করার একটাই উদেশ্য তা হলো পুঁজির জোগাড় । স্বামীকে পুঁজির জোগাড় দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করা । মেয়েটা বড় হচ্ছে , অসীমা ভয় পায় । ও হয়ত এভাবে রাস্তায় না নামলে একদিন ওর মেয়েকে এপথ বেছে নিতে হত । না না মা হয়ে অসীমা কিছুতেই এটা সহ্য করতে পারেনি । মা নিজে বিক্রি হতে পারে নির্দ্বিধায় কিন্তু মেয়েকে পঙ্কিল শয্যায় শায়িত দেখতে পারেনা । একটা মিলে কাজ করে সে এই অছিলায় নিজেকে রোজ রোজ কণ্টক শয্যায় নিমজ্জিত করে সুখ কিনতে চায় অসীমা । সে যে সুখ নামক তীর্থের কাকের অপেক্ষায় আছে । স্বপ্ন কিনতে নেমে একটু একটু করে কত অসীমা ক্ষয়ে যায় কেউ খবর রাখে না ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy