সন্দেহ
সন্দেহ


অফিসে গিয়ে কিছুতেই কাজে মন বসছিল না প্রদীপ্তের।মণিকার চিন্তাটা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল।বারকয়েক উঠে গিয়ে বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে মাথায় ঠান্ডা জল দিয়ে এল সে,তবু শান্ত হতে পারল না।বাধ্য হয়েই কম্পিউটারের মাউসটাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে খানিকক্ষণের জন্য চোখ বুজল প্রদীপ্ত।
প্রদীপ্তের সাথে মণিকার বিয়েটা হয়েছিল পুরোপুরিই সম্বন্ধ করে।বাবা মায়ের সঙ্গে মেয়ে দেখতে গিয়ে এক দেখাতেই প্রদীপ্তের মনে ধরে গিয়েছিল মণিকাকে।আসলে প্রদীপ্তের মনে বরাবরের ইচ্ছা ছিল, সে নিজে যেমন শান্ত ভদ্র এবং নম্রভাষী,তার ভবিষ্যৎ সহধর্মিণীও ঠিক সেরকমই হবে,তাহলে সংসারও যেমন সুখের হবে তেমনি তাদের পারস্পরিক মেলবন্ধনটাও ভালোভাবে গড়ে উঠবে।বাবা মায়ের শাসনেই হোক বা নিজের জন্মগত মুখচোরা আর গুটিয়ে নেওয়া স্বভাবের জন্যই হোক,প্রেম যাকে বলে সেটা কোনদিনই করে হয়ে ওঠা হয়নি প্রদীপ্তের।তাই তার একান্ত ইচ্ছে ছিল, তার বৌ যে হবে, তার সাথে সে চুটিয়ে প্রেম করে পূর্বের সমস্ত আক্ষেপ মিটিয়ে ফেলবে। ছেলের পছন্দ দেখে প্রদীপ্তের বাবা মাও মত দিতে বিশেষ দেরি করেননি। ফাল্গুন মাসে একটা শুভদিন দেখে চার হাত এক হয়ে গিয়েছিল তাদের।
প্রদীপ্ত দের পৈতৃক বাড়ি বাঁকুড়া জেলায়,কিন্তু প্রদীপ্তদের অফিস সল্টলেকে হওয়াতে প্রদীপ্ত কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট কিনেছিল এবং সেখানেই থাকতো।বিয়ের পর নতুন বৌকেও নিয়ে প্রদীপ্ত চলে এল কলকাতায়।আর সেখানেই শুরু হল তাদের বিবাহ পরবর্তী জীবন।
সবই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু হঠাত দেখা দিল সমস্যা।ইদানীং প্রদীপ্ত লক্ষ্য করেছে, মণিকা যেন আগের থেকেও বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে।এমনিতেই মণিকা প্রচন্ড মুখচোরা,প্রদীপ্তের থেকেও বেশি।অকারণে বেশি কথা বলে না এবং যতটুকু বলে অত্যন্ত মারজিতভাবে,হিসেব কষে।তাতে অবশ্য প্রদীপ্তের বিশেষ সমস্যা হয়নি, তার কারণ কথা কম বললেও প্রেমের ব্যাপারে এবং শারীরিক দিক দিয়ে মণিকাকে কোনদিনই তার শীতল বলে মনে হয়নি।এই একবছরে তারা বহু সুখের সময় কাটিয়েছে,কখনো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে কখনো বা মালদ্বীপের সমুদ্রসৈকতে কিংবা বাড়ির নরম বিছানায়।
কিন্তু দু তিনদিন ধরে যে মণিকাকে প্রদীপ্ত দেখছে,সে যেন অন্য এক মণিকা।প্রদীপ্তের সাথে কথা টথা বলা প্রায় বন্ধ।প্রদীপ্ত অফিস থেকে ফিরে দু তিনবার ডাকার পর দরজা খুলছে।সারাদিন অন্যমনস্ক।প্রদীপ্ত যখন তাকে ভালবেসে ডেকে কিছু বলতে চাইছে, তখন যান্ত্রিক মানুষের মতন ব্যবহার করছে,যেন সে এতক্ষণ অন্য কোন জগতে ছিল।মণিকার এই হঠাত পরিবর্তনে স্বভাবতই বিস্মিত হয়েছিল প্রদীপ্ত।বারংবার সে মণিকাকে জিজ্ঞেস করেছিল তার সবকিছু ঠিক আছে কিনা।কিন্তু মণিকা প্রতিবারই কিছু না কিছু বলে দায় এড়িয়ে গেছে।
স্বভাবতই প্রদীপ্ত সবিশেষ চিন্তিত।ইতিমধ্যে তার মনের গভীরে একটা সম্ভাবনাও উঁকি মারছিল তার কারণ সে এই কদিনে যতবারই ঘরে ঢুকেছে, প্রতিবারই মনে হয়েছে মণিকা কারো না কারো সাথে ফোনে কথা বলে।এপ্রসঙ্গে মণিকা কোন কথা অবশ্য তাকে বলেনি অথবা বলতে চায়নি।ফলে প্রদীপ্ত মনে প্রবল অস্বস্তি নিয়েও চুপ করে ছিল।
তবে কাল রাতে যে ঘটনাটা ঘটেছে, তারপরেও তার চুপ করে থাকাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটা ঈশ্বরই বিচার করতে পারেন।
তখন মধ্যরাত।আজকাল প্রথম বিয়ের পর পরের সেই উত্তেজনাটা আর নেই, তাই বিছানায় দুজনে দুজনকে গুডনাইট বলে একপাশ ফিরে শুয়ে পড়েছিল।সারাদিনের পরিশ্রমে তাড়াতাড়িই চোখে ঘুম চলে এসেছিল প্রদীপ্তের। হঠাত ঘুমটা কোন এক অজ্ঞাত কারণে ভেঙ্গে গেল তার।চোখ মেলে দেখল রাত এখনো কাটেনি, বিছানার পাশে রাখা টাইমপিসটাতে তিনটে বাজে। নিজেকে একটু সইয়ে নিয়ে প্রদীপ্ত একবার বাথরুম থেকে ঘুরে আসবে ভাবল।সেইসময়েই উঠতে গিয়ে হঠাত আবিষ্কার করল মণিকা তার পাশে নেই।“বাথরুমে গেছে হয়তো” ভেবে প্রদীপ্ত সাবধানে মশারি থেকে নেমে পা বাড়াল বাথ্রুমের দিকে। হঠাত কিচেনের কাছে এসে থমকে দাঁড়াল সে।ভিতর থেকে একটা আওয়াজ আসছে না? সন্তর্পণে বন্ধ কিচেনের বাইরে দাঁড়িয়ে আড়ি পাতল সে। হ্যা, কোন সন্দেহ নেই, মণিকার গলা।মণিকা যেন কাউকে বলছে, “ওকে জানতে দেওয়া যাবে না কিন্তু।কয়েকদিন যাক, তারপর কোন একটা ব্যাবস্থা নেওয়া যাবে।এই মুহূর্তে আমার বাড়ি আসার তোমার দরকার নেই। যা করার খুব গোপনে করতে হবে, যাতে ও টের না পায়।এখন রাখছি, পরে সুবিধামত আবার ফোন করব।ঠিক আছে,বাই।“
ফোন রেখে কিচেনের দরজা খুলে সামনে প্রদীপ্তকে দেখে ভূত দেখার মতই চমকে উঠেছিল মণিকা।পরক্ষণেই অবশ্য সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল সে,”তুমি এখানে?”
মনের মধ্যে অনেক প্রশ্নই ভিড় করে আসছিল প্রদীপ্তের, কিন্তু ওই মুখচোরা স্বভাবের জন্য তার কোন কিছুই বলে উঠতে পারল না সে।কোনরকমে অপ্রস্তুত ভাবটাকে কাটিয়ে নিয়ে সে বলল,”না,মানে... এই বাথ্রুমে যাব বলে উঠেছিলাম।পাশে দেখলাম তুমি নেই তাই...কি হয়েছে?কেউ ফোন করেছিল?”
একটু হাসার চেষ্টা করে মণিকা বলেছিল,”ওহহো...এই ফোনের কথা বলছো?আরে তোমার মনে নেই, আমার সেই বন্ধু পিয়ালি,গেলমাসে যার বিয়ে হল?ওর বর তো আমেরিকায় থাকে কাজের সূত্রে, ওকেও নিয়ে গেছে এইবার। ওই ফোন করেছিল আরকি।তুমি তো জানোই, এখন ওখানে বেলা তিনটে কি চারটে বাজে, দিনের বেলা। বেচারী জানে না এখন ইন্ডিয়ায় মাঝরাত্তির।তাই সময়টা গুলিয়ে ফেলেছে।“বলে আবার একটু হাসল মণিকা্,”তুমি যাও বাথরুম থেকে ফিরে এসে শুয়ে পড়। বেশি রাত কোর না, কাল অফিস যাওয়া আছে।“বলে আর দাঁড়ায়নি মণিকা। সোজা ঘরে চলে গেল।
সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারেনি প্রদীপ্ত।আর আজ এখন অফিসে বসে তার এই অবস্থা।কোন কিছুই স্থির করে উঠতে পারছিল না সে।মণিকা রাতে তাকে যা বলেছে তা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।প্রদীপ্তের মনে দৃঢ় বিশ্বাস, মণিকা তার কাছ থেকে অনেক কিছু লুকিয়ে যাচ্ছে।সম্ভবত অন্য কারুর সাথে ওর...নাঃ আর ভাবতে পারে না ও।এই কয়দিনে যে অস্বস্তিটা মনে দানা বাঁধছিল, সেটা এক লহমায় বদলে গেল বিমর্ষতা এবং অসহায়তায়। কেন,কিসে ঘাটতি থেকে গেল তার ভালোবাসায়?কোনদিনো তো কোনরকম অভিযোগ করার সুযোগ সে দেয়নি মণিকাকে।অফিসের প্রবল কাজের চাপ সামলেও কখনো তো মণিকার জন্য সময় বের করে রাখতে ভোলেনি সে।তবে আজ মণিকাই বা কেন এমনভাবে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে?
প্রদীপ্ত বুঝতে পারে না সে কী করবে। হয়তো অন্য কেউ হলে এতক্ষণে মণিকাকে সরাসরি চার্জ করত,কিংবা কিছু না কিছু একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়ত।কিন্তু স্বভাবভীরু মুখচোরা প্রদীপ্তের এক্তিয়ারের বাইরে সেসব।মনে অনেক কিছু এলেও মুখে প্রকাশ করতে পারে না সে।তাই ঠিক করে উঠতে পারে না যে সে মণিকাকে কি বলবে,কিভাবে বলবে আর সেসব শুনে মণিকার প্রতিক্রিয়া কী হবে?
কিন্তু চুপ করে কতদিনই বা এসব চলতে দেওয়া যায়?
চেয়ারে হেলান দেওয়া অবস্থা ছেড়ে সোজা হয়ে বসল প্রদীপ্ত।ভেবে ভেবে মনটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছি্ল,তাই সাময়িক ভাবে মনটাকে অন্য দিকে ব্যস্ত রাখার জন্য মোবাইল বের করে ফেসবুকটা ওপেন করল সে। হোমপেজটা খোলার পরই চোখে পড়ল অজস্র মেসেজ আর সাথে খানকুড়ি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট।কৌতূহলী হয়ে সে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গুলো চেক করা শুরু করল।প্রথম নামটা দেখেই প্রদীপ্তের চোখ আটকে গেল।
অঞ্জনা সেন,কলকাতা,ইন্ডিয়া।
প্রোফাইল পিকচারে যাকে দেখা যাচ্ছে তাতে তাকে ছাব্বিশ সাতাশ বছরের তরুণী বলেই মনে হয়। চোখে দামী গগলস, মাথায় বয়কাট চুল,সাথে মিষ্টি হাসি। কিন্তু সর্বোপরি মেয়েটির মধ্যে এমন কিছু ছিল যাতে মেয়েটিকে আরো ভাল করে জানার জন্য তীব্র আকর্ষণ অনুভব করল প্রদীপ্ত।প্রোফাইল খুলে মেয়েটির সম্পর্কে আরো তথ্য দেখা শুরু করল সে। বর্তমানে কলকাতায় থাকেন,হোমটাউন বহরমপুর,মহারানী কাশীশ্বরী গার্লস স্কুলে পড়েছেন, পরবরতীকালে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে কেমিস্ট্রিতে স্নাতক।বিয়ে করেছেন ডাঃ অনুপম সেনকে।স্ক্রল করে খানিকটা নামিয়ে প্রদীপ্ত দেখে অঞ্জনা সেন ও একজন লম্বা সুদর্শন ব্যক্তির পাশাপাশি দাঁড়ানো ছবি।সম্ভবত ইনিই ডাঃ অনুপম সেন।ছবিটা তোলা হয়েছে ইকো পার্কের ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার এর সামনে।প্রচুর লাইক পড়েছে, কারণ ছবিতে দুজনকেই বেশ ভাল লাগছে।
কিছু না ভেবেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা একসেপ্ট করে প্রদীপ্ত।তারপর জলের বোতল বার করে খানিকটা জল খেয়ে আবার কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েছে,এমন সময় টুং করে একটা মেসেজ ঢুকল তার ফোনে।
অঞ্জনা সেন।লিখেছেন,”হাই।“
প্রদীপ্ত সেটা দেখে কি করবে প্রথমটায় বুঝে উঠতে পারল না।অজান্তেই তার হাত চলে গেল ফোনের কী বোর্ডের দিকে,সেও একটা কুশল সম্ভাষণ জানাল অঞ্জনাকে।তারপর আবার অঞ্জনার মেসেজ,”কোথায় থাকেন?”
প্রদীপ্তকে যেন চুম্বকের মত টানছে এই অজ্ঞাতকুলশীল মহিলা।একের পর এক মেসেজের রিপ্লাই দিতে শুরু করল সে। ব্যাপারটা হয়তো সেদিনই অনেক দূর গড়াতো,কিন্তু মাঝে হঠাত প্রদীপ্তের এক কলিগের ফোন এল। সম্রাট।
ফোনটা ধরার বিশেষ ইচ্ছে ছিল না, তবু ধরতেই হল। ফোন ধরতেই সম্রাট বলল,”দাদা, আমি সম্রাট বলছি। তোমার রুমে একবার আসলে প্রবলেম হবে?আসলে এই নতুন প্রজেক্ট রিপোর্টের কয়েকটা জায়গায় সমস্যা ছিল, বস বলেছে কালকের মধ্যেই সাবমিট করতে হবে।তোমার একটু হেল্প দরকার ছিল।“
প্রদীপ্ত একবার ভাবল না করে দেবে।পরক্ষণেই তার মনে হল,এটা করাটা উচিত হবে না।বরাবরই প্রফেশনাল লাইফের সাথে পার্সোনাল লাইফ মিলিয়ে ফেলা তার না পসন্দ।আর কয়েক মিনিটের আলাপের জন্য নিজের বা অফিসের কাজের ক্ষতি করাটা বোকামো।তাই একটু ভেবে ও সম্রাটকে বলল,”ওকে।তুমি এসো,তবে খুব বেশিক্ষণ টাইম দিতে পারব না।আমারো জরুরি কয়েকটা কাজ আছে।বেটার হবে তুমি যদি সেকেন্ড হাফে আসো।এখন একটু বিজি আছি।বাই।“বলে ফোনটা রেখে দিল ও।
প্রদীপ্তের দিশাহারা ভাবটা হঠাত করেই যেন অনেকটা উবে গেছে।একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখল ও।অনেকটা সময় কেটে গেছে, আর সময় নষ্ট করাটা উচিত হবে না।এই ভেবে সে অঞ্জনা সেনকে লিখল,”এক্সকিউজ মি মিঃ সেন,আমি এখন ডিউটিতে আছি, একটু বিজি। আপনার সাথে পরে কথা বললে কোন প্রবলেম নেই তো?”
“নট অ্যাট অল,”ওপাশ থেকে উত্তর এল।
প্রদীপ্ত ফোনটা অফ করে রেখে দিল।একটা অদ্ভুত স্বস্তি তার মধ্যে কাজ করছে,কিন্তু সেটা কেন সে বুঝতে পারছে না।তবে প্রদীপ্ত জানে, বাড়ি গেলেই তাকে আবার মণিকার মুখোমুখি হতে হবে এবং আবার কাল রাতের কথাগুলো মনে পড়ে যাবে।তখন আবার যে কে সেই।কিন্তু যাই হোক, আপাতত সেসব ভেবে আর লাভ নেই,কথাটা চিন্তা করে আবার কাজে মনোযোগী হল প্রদীপ্ত।
তিনদিন কেটে গেছে।এর মধ্যে প্রদীপ্তের প্রতি মণিকার আচরণের কোন পরিবর্তন হয়নি, প্রদীপ্তও আর মণিকাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।এর মধ্যে একদিন মাঝরাতে সেদিনের মতই হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেছিল প্রদীপ্তের।পাশ ফিরে দেখে মণিকা বিছানায় অকাতরে ঘুমোচ্ছে।একটা চাপা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল বটে প্রদীপ্ত,কিন্তু নিশ্চিন্ত হতে পারেনি।মনের মধ্যেকার যাবতীয় সংকোচ কাটিয়ে এক দিন সকালে মণিকা স্নানে গেলে তাকে লুকিয়ে তার মোবাইলটাও চেক করেছিল প্রদীপ্ত।কিন্তু সন্দেহজনক কিছু পায়নি।
ফলে মণিকার সমগ্র আচরণটা এখনও ধোঁয়াশার মতই রয়ে গেছে প্রদীপ্তের কাছে।তার দৃঢ় বিশ্বাস,সেদিন রাত্রে মণিকাকে যে ফোন করেছিল, তার সঙ্গে মণিকার সম্পর্কটা ঠিক স্বাভাবিক নয়। তার সাথে মণিকার ঘনিষ্ঠতা প্রশ্নাতীত,এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।সেদিনের রাতের ঘটনার পর মণিকা নিশ্চয়ই সাবধান হয়েছে,যার জন্য এই মুহূর্তে তাকে সন্দেহ করার মত কোন কারণ খুজে পাচ্ছেনা প্রদীপ্ত।কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল,মণিকার সঙ্গে ঐ ব্যক্তির ঘনিষ্ঠতার ভবিষ্যৎ কী এবং তারা এই সম্পর্ক অক্ষতভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য ঠিক কতদূর যেতে পারে।মনে মনে একটা ভয়ানক পরিণতির কথা ভেবে শিউরে ওঠে প্রদীপ্ত।
প্রদীপ্ত ঠিক করে রেখেছে,এরপর আর বিন্দুমাত্র সন্দেহজনক কিছু দেখলে সে সরাসরি মণিকাকে চার্জ করবে।এবং এর সমাধানের জন্য যা যা করণীয় সবকিছু করতে প্রস্তুত সে। যতই হোক ভালোবাসা,তবু সুখের চেয়ে স্বস্তি ভালো।আর তার পক্ষে চুপ করে থাকা সম্ভব নয়।
ইতিমধ্যে অঞ্জনা সেনের সাথেও ভালোই আলাপ এগিয়েছে প্রদীপ্তের।ভদ্রমহিলা গড়িয়ায় থাকেন,আগে একটা স্কুলে পড়াতেন,কিন্তু বিয়ের পর ছেড়ে দিয়েছেন চাকরি।এখন তাকে হাউস ওয়াইফই বলা চলে।স্বামী ডাক্তার, সারাদিন পেশেন্ট নিয়েই ব্যস্ত।সময় কাটে না একা একা,তাই সোসাল মিডিয়ার ভার্চুয়াল জগতে কিছুটা সময় ব্যয় করে মনোরঞ্জন করেন তিনি।
প্রদীপ্তের অঞ্জনা সেনকে ভাল লাগতে শুরু করেছিল।বস্তুত,প্রদীপ্ত নিজেও তো কয়েকদিন ধরে একাই।তার বৌ তার সাথে ভাল করে কথা বলেনা,জীবনটা সীমাবদ্ধ শুধু অফিস আর এই ছোট্ট ফ্ল্যাটের মধ্যে।অফিসে কাজের চাপে মাথা তোলার সময় নেই, বাড়ি ফিরলে শ্মশানের নিস্তব্ধতা।এই দুয়ে মিলে প্রদীপ্ত যেভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল তার থেকে অনেকটাই মুক্তি পেত সে অঞ্জনার সাথে কথা বলে।অফিসের ফাঁকে বা মণিকার আড়ালে সে যখনই সময় পেত তখনই সে এই মহিলার সাথে মেতে উঠত ভারচুয়াল আলাপে।অঞ্জনার কথা বলার মধ্যে একটা সুন্দর মার্জিত ভাব আছে,যেটা প্রদীপ্তকে খুব আকর্ষণ করে।ঠিক যেন মণিকার মতন।
ক্রমে প্রদীপ্ত জানতে পেরেছে,অঞ্জনাও অসুখী দাম্পত্য জীবনের শিকার।তার স্বামী ডাক্তার বলে এমনিই হাতে সময় কম, উপরন্তু যেটুকু সময় পায় সেটুকু বাইরে বাইরেই কাটায়,বৌয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন সে বোধ করেনা।অবশ্য অঞ্জনা সেসব নিয়ে ভাবিত নয় খুব একটা।তার নিজের জীবন সে নিজের মতন লিড করতে পারছে,এতেই তার আনন্দ।
প্রদীপ্ত ভাবে,একদিন এই মহিলার সাথে দেখা করে এলে কেমন হয়?
কিন্তু তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলায় সে।এখনো এত টাও পরিস্থিতি হাতের বাইরে যায়নি যে তাকে অন্য মহিলার শরণাপন্ন হতে হবে।আর যে কাজ জীবনে কোনদিনও করেনি সে কাজ কী এরকম ভাবে চট করে হয়।নিজেকে সংযত করে প্রদীপ্ত।
এর মধ্যে একদিন এক ঘটনা ঘটল।রাতে বড় একটা একটিভ থাকেন না অঞ্জনা সেন, তাই বাড়ি এসেই প্রদীপ্ত আড়াল করে শেষ কথাটুকু বলে গুডনাইট জানিয়ে দিয়েছিল অঞ্জনাকে।তারপর ঘরে ঢুকেই দেখে মণিকা নিবিষ্ট মনে কারুর সাথে হোয়াটস অ্যাপে চ্যাট করছে।
পিছন থেকে সন্তর্পণে ঘরে ঢুকল প্রদীপ্ত।
“কার সাথে কথা বলছ,মণিকা?”
আচমকা প্রশ্নে ঘাবড়ে গেছিল মণিকা।ঝট করে পিছন ফিরে প্রদীপ্তকে দেখে বলল,”তুমি? বাথরুম থেকে বেরোলে কখন?”
ঠান্ডা গলায় প্রদীপ্ত বলল,”যখনই বেরোই,তাতে তো তোমার বিচলিত হবার কারণ নয় মণিকা।আমার প্রশ্নটা শুনতে পেয়েছ আশা করি।কার সাথে তুমি কথা বলছিলে।“
ধীরে ধীরে আত্মস্থ হল মণিকা।সেও ঠান্ডা অথচ দৃঢ় গলায় বলল,”কি ব্যাপার বলত দীপু?গত কয়েকদিন ধরে দেখছি আমার পিছনে গোয়েন্দাগিরি করাটাকে তুমি অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছ।আমি কম কথা কেন বলছি,আমি কার সাথে কথা বলছি কোথায় যাচ্ছি,এসবে তোমার বড্ড কৌতুহল বেড়ে গেছে,তাই না?”
প্রদীপ্ত কিছু বলতে যাবে,তার আগেই মণিকা বলল,”আসলে কী বলত দীপু, তোমরা একটা জিনিস খুব ভুল কর।তোমরা ভাব,যে মানুষ শান্তশিষ্ট,একইসাথে সে গোবেচারা।তার কোন নিজস্ব সত্ত্বা থাকতে পারে না।অন্যের অনুগ্রহে জীবনটাকে কাটানোর জন্যই সে জন্মেছে।সেই ভুলটা আমার সঙ্গে অন্তত কোরোনা।হতে পারি আমি মৃদুভাষী,কিন্তু কারুর বন্দিনী নই।“
মণিকা আবার মোবাইলে মন দিল।থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল প্রদীপ্ত।অপমানে তার ভিতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিল,অনেক কথা সুনামির জলোচ্ছ্বাসের মত আছড়ে পড়ছে গলার মধ্যে,কিন্তু প্রদীপ্তর বাজে স্বভাবের জন্য আবার একবার সে নিজের কাছেই ঠকে গেল,একটা কথাও বলতে পারল না।মণিকার কথার পুরো ঝালটা হজম করে নেওয়া ছাড়া উপায় রইল না তার কাছে।
চলে যাচ্ছিল ঘর থেকে,এমন সময় পিছন থেকে মণিকা যেন তাকে উদ্দেশ্য করেই বলে উঠল,
“আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও।“
প্রদীপ্ত একবার পিছন ফিরে দেখল।কথাটা ধরতে পারল না।মণিকা তখনও নিবিষ্ট রয়েছে চ্যাটিং এ।তার আর কথা বলার আগ্রহ নেই দেখে প্রদীপ্তও আর কথা বাড়াল না।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে এল।নাঃ সন্দেহের আর কিছু নেই,পুরোটাই দিবালোকের মতন স্পষ্ট।এখন শুধু এই নাটকের চরিত্রের নাম জানার অপেক্ষা।ইতিমধ্যে সে এটা বুঝে গেছে, মণিকাকে চার্জ করে বা তার মোবাইল চেক করে কোন লাভ নেই,মণিকা অতীব ধূর্ত মেয়ে,সে সাবধান হয়ে যাবে।যা করার করতে হবে মণিকার অজান্তে।যাতে এই নাটকের নট আর নটীকে হাতেনাতে ধরা যায়।তারপর?
তারপর কী হবে সেটা তার নিজেরও অজানা।মোটকথা প্রদীপ্ত মনে মনে স্থির করে ফেলল,যে করেই হোক,এই ভন্ডামির অবসান ঘটাতেই হবে।এবং সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।প্রদীপ্ত সেভাবে কখনো রুখে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস রাখে না,তার সুযোগই এভাবে মণিকা নিয়ে যাচ্ছে,কিন্তু প্রমাণসহ শমন হাজির করলে মণিকার মুখেও কোন কথা থাকবে না।সেদিনই জমবে আসল খেলা।
কিন্তু সবার আগে প্রদীপ্ত মনে মনে ভাবার চেষ্টা করে,কে হতে পারে?
হতে পারে অবশ্য অনেকেই।সোসাল মিডিয়ার দৌলতে আজ পৃথিবী হাতের মুঠোয়,সুতরাং যে কেউ হতে পারে।কিন্ত তাও প্রদীপ্তের মনে হয়,যদি ঘটনাটার সঙ্গে তার চেনা জানা কেউ জড়িত থাকে তাহলে কার সম্ভাবনা বেশি?
প্রদীপ্ত নির্ঝঞ্ঝাট জীবন পছন্দ করে,স্বাভাবিক ভাবেই তার বন্ধুবৃত্ত সীমিত।বিয়ের সময় তার কয়েকজন স্কুল কলেজের বন্ধু নিমন্ত্রিত ছিল বটে কিন্তু এই একবছরে তাদের সাথে আর দেখা হয়নি প্রদীপ্তদের।তাছাড়া তাদের কারুর হওয়ার সম্ভাবনা কম,তার কারণ এক তো তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অনুপস্থিত ছিল,আর যারা ছিল তাদের মধ্যে প্রায় সকলেরই বিয়ে হয়ে গেছে,কারুর কারুর বাচ্চাও আছে।অবশ্য প্রদীপ্ত জানে তাতে কিচ্ছু যায় আসে না,তবু বন্ধুবান্ধবদের ব্যাপারটা তার মানতে মন সায় দিল না, তার কারণ ব্যাপারটা খুব ই দূরের হয়ে যাচ্ছে।বাকী থাকে অফিস কলিগ।তাদের মধ্যে তিনজনের সাথে প্রদীপ্তর ঘনিষ্ঠতা সবথেকে বেশি,অনন্ত,সম্রাট আর রজত। অনন্ত বসু প্রদীপ্তের থেকে সিনিয়র অফিসার,ব্যস্ত মানুষ সময় সুযোগ দুটোই কম।রজত আর সে একই পোস্টে আর সম্রাট তার জুনিয়র,বয়সেও এক দু বছরের ছোট। সবচেয়ে বড় কথা সম্রাট আর রজত প্রদীপ্তদের বাড়িও আসা যাওয়া করেছে বহুবার এবং মণিকার সাথে তাদের বিলক্ষণ ভাল আলাপ রয়েছে।কাজেই সন্দেহ যদি করতে হয় তাহলে এদের দুজনের মধ্যেই একজন হতে পারে।
অফিসে বসে এইসবই ভাবছিল প্রদীপ্ত।হঠাত করে প্রদীপ্তর মনে পড়ল এদের দুজনের এক জনও আজ অফিসে আসেনি। সন্দেহটা আরও বেশি ঘনীভূত হল তার।রজতের থেকে সম্রাটের দিকেই বেশি করে সন্দেহ পড়তে লাগল প্রদীপ্তের,তার কারণ সে দেখেছে সম্রাট বৌদি বলতে অজ্ঞান।মণিকা এমনিতে সংযত স্বভাবের হলেও সম্রাটকে সে বড্ড প্রশ্রয় দেয়।তখন এসব কিছু গ্রাহ্য করার প্রয়োজন মনে করেনি প্রদীপ্ত,নির্মল ভাবে সেও সবকিছু উপভোগ করেছে।কিন্তু আজ ঐ সব কথাই বারবার মনে পড়ে তার ভিতরটাকে তাতিয়ে তুলল।
আবার মনে হল,এই যে সম্রাট আজ আসেনি,এর মানে এই নয়তো মণিকা যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজই ব্যাপারটার নিষ্পত্তি করে ছাড়বে?যার চরম মূল্য চোকাতে হতে পারে প্রদীপ্তকে?কয়েকদিন ধরে সম্রাটকে যেন একটু অন্যরকম মনে হয়েছে তার... আর... আর..কাল রাতে মণিকা হোয়াটস আপ করছিল,এক ঝলকে যতটুকু দেখেছিল,নাম্বারটা সেভ করা ছিল না,কিন্তু চেনা চেনা.. সম্রাটেরই মনে হয়।
ঘেমে উঠেছিল প্রদীপ্ত।তখনই হঠাত তার ভাবনার জাল ছিঁড়ে হোয়াটস আপে একটা মেসেজ ঢুকল।
অঞ্জনা সেন।এর মধ্যেই কথাবার্তার সুবিধার জন্য অঞ্জনাকে নিজের হোয়াটস আপ নম্বর দিয়ে রেখেছিল সে।তিনি লিখেছেন,”কী করছ দীপু ডার্লিং?”পাশে দুটো হাসির স্মাইলি।
প্রদীপ্ত লিখল,”সেরকম কিছু নয়,অফিসে এসেছিলাম,ফ্রি টাইম ছিল,রিলাক্স করছি।তুমি কী করছ অঞ্জনা?”
“আমার আর কী কাজ বল।সারাদিন ধরে ভ্যারেন্ডা ভাজি আর মাঝে মধ্যে তোমার মাথা চিবিয়ে খাই।“আবার হাসি।
“মাথা চিবানোর তো কিছু নেই। কারুর সাথে বন্ধুত্ব করে দুটো কথা বললেই মাথা চিবানো হয় না।জান অঞ্জনা,তোমার সঙ্গে কথা বলে আমি কতটা শান্তি লাভ করি।তোমার প্রতিটা কথা আমাকে আকর্ষণ করে,এমন মনে হয় তুমি আমার বহুদিনের চেনা।“
“বাব্বাঃ খুব তো বললে বিয়ের আগে চোখ তুলে মেয়েদের দেখনি,বিয়ের পরে বৌয়ের নজর ঘুরেছে যেই একটু অমনি অন্য মেয়েদের ফ্লার্টিং শুরু?ইউ নটি গাই;” পাঁচখানা হাসির ইমো পাঠাল অঞ্জনা।
প্রদীপ্তও হাসল।আলাপ জমে উঠেছে।একসময় প্রদীপ্ত বলে,
“আচ্ছা অঞ্জনা, মনে কর এই সবকিছু একদিন আমার হাত থেকে চলে গেল।তখন কী তুমি আমার সহায় হবে?”
“মেলোড্রামাটিক না হয়ে ঝেড়ে কাশো তো,কী বলতে চাও?”
“তুমি তো জানোই,আমার এখন কী অবস্থা।তোমার কাছে আমার কিছুই লুকোনোর নেই।আজ বাদে কাল যদি আমার ডিভোর্স হয়ে যায়,তাহলে কী তোমায় পাশে পেতে পারি আমি?আই মিন,”বলে একটু সংকোচ বোধ করে প্রদীপ্ত,”আমি বলতে চাই..”কথাটা শেষ করে না প্রদীপ্ত।
কিছুক্ষণ চুপ।তারপরে অঞ্জনা সেন লিখলেন,”তুমি বোধহয় ভুলে গেছ দীপু,আমিও বিবাহিতা,আর আমার এখনো মোক্ষলাভ হয়নি।
লজ্জিত হয়ে প্রদীপ্ত বলে,”আই এম সরি,আসলে কী যে বলে যাচ্ছি তখন থেকে...আমার মাথাটা ঠিক..”
“তোমার লজ্জা পাবার কিছু নেই।তোমার মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি।কিন্তু তোমার কথামতন,আজ বাদে কাল তোমার ডিভোর্স হয়ে গেলে তুমি পাশে কাউকে না পেলে জীবনে এগোতে পারবে না, এই তো?আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমন হবে?”
“দীপু,আমরা জীবনের একটা পর্যায়ে এসে সবাই মনে করি যে আমি জীবনে এমন এক জন ব্যাক্তিকে পেয়েছি বা পাব যার সাথে নিজের জীবনটা এমনভাবে জুড়ে যাবে যাতে করে কিছুতেই আমাদের আলাদা না করা যায়।কিন্তু আদতে সেটা ভুল,একেবারেই ভুল।আমরা সবাই জীবন ময়দানে আলাদা আলাদা বৃত্তের উপর দাঁড়িয়ে আছি,এমন মনে করার কোন কারণ নেই,আমার রাস্তায় আরেকজনের আবির্ভাব হবে এবং সেও সেই একই বৃত্তে দাঁড়িয়ে থাকবে।আসলে সবাই নিজের আলাদা আলাদা রাস্তায় বিদ্যমান,প্রত্যেকের মধ্যে একটা সূক্ষ ব্যবধান আছে।দিনের শেষে প্রতিটা মানুষই দেখে তার রাস্তায় সে একাই রয়েছে,অন্য কেউ নেই।কাজেই আজ বাদে কাল কী হয়ে যাবে, তা নিয়ে ভাবিত হলে তোমার চলবে না।জীবন তোমার,চলতে তোমাকেই হবে,লড়তেও হবে তোমাকে,আর সে রাস্তায় আমিও থাকব না,তোমার বৌ মণিকাও থাকবে না।“
কথাগুলো বারবার পড়ছিল প্রদীপ্ত।সত্যি জাদু জানেন বটে অঞ্জনা সেন।এতক্ষণের চিন্তা দুশ্চিন্তা মুহূর্তে যেন উধাও হয়ে গেল।এখন মনে যেন অনেকটা সাহস ফিরে পাচ্ছে সে।মৃদু হেসে সে অঞ্জনাকে লিখল,”সত্যি অঞ্জনা,তুমি খুব ভাল কথা বল।মাঝে মাঝে মনে হয়, তুমি হাউস ওয়াইফ হয়ে জীবনটা না কাটিয়ে যদি একজন মোটিভেশনাল স্পিকার হতে তাহলে হয়তো অনেক দিশাহীন লোক জীবনের একটা মানে খুঁজে পেত।“
“আবার ফ্লার্টিং?”
হেসে উঠল দুজনেই।
সন্ধ্যা ছটা বাজতেই অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ল প্রদীপ্ত।অফিস থেকে বাসে তার বাড়ি ফিরতে লাগে বড়জোর আধঘন্টা।মনটা আবার বিমর্ষ হয়ে পড়েছিল তার।যতক্ষণ অঞ্জনার সাথে কথা বলে, ততক্ষণ তার সাংসারিক জটিলতার কথা ঘুণাক্ষরেও মনে পড়ে না।কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় হলেই তার মনটা উদাস হয়ে যায়।আবার আজ মণিকার কোন রূপ দেখতে হবে কে জানে?আর এতদিন যেটা ছিল ঠান্ডা লড়াই,কালকের পর থেকে তো সেটা একপ্রকার সম্মুখ সমরে দাঁড়িয়েছে।নিজের উপর রাগ হয় প্রদীপ্তর।অনেক আগেই ব্যাপারটার সমাধান সে ঘটাতে পারত।স্রেফ তার বোকামির জন্য এতদিন ধরে ব্যাপারখানা ঝুলে আছে।
আবার একটা কথা ভেবে ভয়ও হয় তার।অঞ্জনার ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে মণিকার দিকে কোন আঙ্গুলই আর তোলা যাবে না। মণিকা তখন ছেড়ে কথা বলবে না তাকে।তার উদ্দেশ্যে কাল রাতে মণিকার বলা শেষ কথাগুলো মনে পড়ে গেল তার।মণিকা কী এর মধ্যেই ব্যাপারখানা জেনে ফেলেছে?
ক্লান্তভাবে এসে বাড়ির গেট খুলল সে।তারপর বারকয়েক কলিং বেল বাজাল।কেউ এল না।বিরক্ত হয়ে দরজায় ধাক্কা মারলো প্রদীপ্ত।আশ্চর্য ভাবে দরজাটা খুলে গেল।তার মানে আগে থেকেই খোলা ছিল।
প্রদীপ্ত অবাক হয়ে গেছে।সারা বাড়ি অন্ধকার, দরজা খোলা।এর মানে কী?সঙ্গে সঙ্গে তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সক্রিয় হয়ে উঠল।এটা মণিকার কোন সর্বনাশা চাল নয় তো?সম্রাট আসেনি আজ,ও আর মণিকা মিলে এই বাড়িতে...না না কিছুতেই হতে দেবে না ও এটা।একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে।
চিৎকার করে “মণিকা,মণিকা” বলে সে সুইচবোর্ডের দিকে এগিয়ে গেল।
আর তখনই আলোটা জ্বলে উঠল।
একমুহুরত চোখটা ধাঁধিয়ে গেছিল তার, তারপরেই সে চোখ মেলল।কিন্তু কী দেখছে ও।সারা বাড়িটা সুন্দর করে সাজানো,বাড়িভরতি অজস্র লোক।অনেকেই আছে তাদের মধ্যে,প্রদীপ্তর বাবা মা,মণিকা, মণিকার বাবা মা আত্মীয় স্বজন আরো অনেকে।রঙবেরঙের কাপড় ফুল বেলুন আর আলো দিয়ে সাজানো ঘরের ঠিক মধ্যিখানে একটা টেবিল, যার উপর একটা সুন্দর তিনতলা ক্রিম কেক।তার উপর ক্রিম দিয়ে কিছু লেখা রয়েছে।
প্রদীপ্তর বিস্ময় কাটছিল না।হঠাত দেখে রজত আর সম্রাট ও ভিড়ের মধ্যে বসে আছে।মনটা আবার সন্দিগ্ধ হয়ে উঠতে যাচ্ছিল, এমন সময় মণিকা এগিয়ে এসে তাকে বলল,”হ্যাপি এনিভারসারি ডে টু মাই লাভিং সুইটহার্ট।
ঘরের মধ্যে সবাই হাততালি দিয়ে উঠল।
আরে তাই তো, আজই তো তাদের বিবাহবার্ষিকী। সারাদিন কাজের চাপে মনেও পড়েনি, কিন্তু ফোনও তো কেউ করেনি।
প্রদীপ্ত তখনো চুপ করে আছে দেখে মণিকা বলল,”কি মশাই, বুঝতে পারলে না কিছুই?সম্রাট তুমি তো ভাল বলতে পার, বুঝিয়ে দাও তোমার দাদাটিকে।“
সম্রাট আমুদে ছেলে,সোল্লাসে সে শুরু করল,”ওফ দাদা সে কী ঘটনা তোমায় বলে বোঝাতে পারবোনা।পুরো প্ল্যান বৌদির।তোমার তো আমরা সবাই জানি, হই হুল্লোড়ের প্রতি কোন ঝোঁক নেই,তাই এই এনিভারসারি পার্টির কথা তোমাকে বললে তুমি নির্ঘাত খারিজ করে দেবে।কিন্তু বৌদি ঠিক করেছিল, পার্টি সে করবেই,এবং বড় করে একটা গেট টুগেদার হবে। শর্ত একটাই, তোমায় জানানো যাবে না।সারপ্রাইজ।
সেইমত পুরো প্ল্যান আমরা করেছি।অবশ্য পুরো ক্রেডিট বৌদিরই, তার কারণ এত আত্মীয় দের ম্যানেজ বৌদিই করেছে,সবাইকে ইনভাইট করা,কখন আসতে হবে, তোমায় যেন আগে থেকে কিচ্ছুটি না জানায় সব বৌদিরই মস্তিষ্কপ্রসূত।ঐজন্যই তো বৌদিকে আমি মাঝরাতে ফোন করতাম,সব এরেঞ্জমেন্ট ঠিক করার জন্য,কারণ সকালে অফিসে আমি বিজি থাকি, আর তোমার সামনে ফোন করলে তুমি সন্দেহ করবে।ফাইনালি যখন সবটা মিটল,হাফ ছেড়ে বাঁচলুম দাদা।অনেক ধকল গেছে এই কদিন।একবেলার মধ্যে গোটা বাড়িটা সাজানো চাট্টিখানি কথা?তাও আগে থেকে তো কিচ্ছু করা যায়নি,সব তোমার ভয়ে।বৌদি,অনেক খাটিয়েছো কিন্তু আমায় দিয়ে।এবার আমার রেস্ট চাই।“
প্রদীপ্তর মুখে কথা সরছিল না।কোনরকমে বলল,”মণিকা,তুমি এত কিছু করেছ?আমাকে না জানিয়ে?”
“কেন মশাই?সব কিছু জানিয়ে করার হুকুম আছে নাকী আপনার?”বলে হাসল মণিকা,”আসলে ভেবেছিলাম যখন পুরোটাই সারপ্রাইজ রাখা হচ্ছে, তখন আরো কিছু মশলা তাতে ছড়িয়ে দেই।এই যেমন আমার সন্দেহজনক ব্যাবহার,যা তোমাকে কিছটা হলেও ছন্নছাড়া করে দিয়েছিল।আমার ভয় ছিল নিজেকে নিয়ে।সবকিছু যদি স্বাভাবিক রাখতাম,তাহলে কখন মনের ভুলে আমার মুখ ফস্কে সব কথা বেরিয়ে আসত, আর পুরো প্ল্যানের বারোটা বেজে যেত।এতে কী হল,বেশ একটা নাটকও হল,তোমার থেকে দূরত্বটাও বজায় রাখা গেল,কার্যসিদ্ধিও হল।এখন অবশ্য আর বাধা নেই।“
প্রদীপ্তর মাথা হেঁট হয়ে গেছিল।ইস এতদিন ধরে কী মারাত্মক ভুল সে করে চলেছিল।ব্যাপারটা আর কদিন চললে কোন পর্যায়ে যেত কে জানে।কিন্তু এখন বড্ড অসহায় লাগছে তার।মণিকার দিকে মুখ তুলে চাওয়ার সাহসটুকু পর্যন্ত নেই আর তার।
“কী হে ভাবুক কবি, কী ভাবছেন?এখনো হজম হয়নি ব্যাপা্রটা?মণিকা বলল,”অবশ্য একটা কথা বলা হয়নি তোমায়।এতদিন অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায় অকারণে।কী ভেবেছ আমায় নিয়ে তা জানিনা, তবে আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থী।পারলে আমায় মাফ করে দিও।“
মণিকার চোখের কাজল বেয়ে দুফোঁটা জল নেমে এলো।সুন্দর করে সেজেছে আজ মণিকা,পারপল কালারের শাড়ির সাথে ম্যাচিং ব্লাউস,কিন্তু চোখের জলটা বেমানান লাগছে।প্রদীপ্ত এতক্ষণে ধাতস্থ হয়েছে। এগিয়ে এসে আলতো করে চোখের জল মুছিয়ে দিল তার।
“কাঁদে না পাগলী।আরে আজ তো আনন্দের দিন,কেন তুমি কাদছ?”মণিকাকে জড়িয়ে ধরে বলে প্রদীপ্ত,”আর সত্যি কথা বলতে,আমিও কম ভুল করিনি মণিকা।তোমাকে সন্দেহ করেছি গোড়ার থেকে,তোমার চরিত্রের প্রতি সন্দিহান হয়েছি বারবার।আর পাঁচজন যে ভুল করে,সেই একই ভুল আমিও করেছি।কাজেই ক্ষমা শুধু তোমার নয় আমারো প্রাপ্য।“
দুজনে এগিয়ে গিয়ে গুরুজনদের প্রণাম করল। প্রদীপ্তর হাত ধরে মণিকার বাবা মাও বললেন,”বাবা আমরা সবাই সবটা জানতাম।কিন্তু আমার পাগল মেয়ের জ্বালায় কিচ্ছু জানাতে পারিনি তোমায়।আমাদেরকেও ক্ষমা কোর তুমি।
হাসি ঠাট্টা আর আনন্দাশ্রুর মধ্যে দিয়ে কেক কাটা আর উপহার বিনিময় পর্ব সম্পূর্ণ হল। সম্রাট মাঝখানে উঠে এসে বলল,”এখানেই কিন্তু শেষ নয়, আমাদের পরম পূজনীয় বৌদি আর দাদার অনারে আমি একটা হল বুক করেছি,আজ রাতের খাওয়াদাওয়া এবং পার্টির পরবর্তী অংশ সেখানেই সংঘটিত হইবে।আপনাদের সকলকে স্বাগত।
সবাই আবার একচোট হাততালি দিয়ে উঠল।
সারা সন্ধ্যা একটা ঘোরের মধ্যে কাটাল প্রদীপ্ত।দুশ্চিন্তার নয়,আনন্দের ঘোর।আর মনে কোন দ্বিধা নেই,দ্বন্দ্ব নেই।অদ্ভুত ভালোলাগার একটা আবেশ ছুয়ে যাচ্ছিল তাকে।এত লোক সমাবেশ,তাদের মুখের উপচে পড়া হাসি তার পূর্বের কটা দিনের তিক্ততাকে এক লহমায় ভুলিয়ে দিচ্ছে।সাথে মণিকার চিন্তা তাকে আরো বিভোর করে দিচ্ছে। এত খুশি, আর এত বাঙময়ী মণিকাকে সে কোনদিন দেখেনি।কেউ হয়তো কোনদিন জানবে না, মণিকাও নয়,যে প্রদীপ্ত এতদিন একটা ভিত্তিহীন ধারনার বশে কত বড় পাপ করেছে।নাঃ অঞ্জনা সেনের কথা ও কোন দিন জানাবে না মণিকাকে।আর অঞ্জনার সঙ্গেও আর কোনদিন সম্পর্ক রাখবে না ও।এই কদিনে একটা অবলম্বন হিসেবে ও অঞ্জনাকে আঁকড়ে ধরেছিল ঠিকই,কিন্তু আর তার প্রয়োজন নেই।এখন থেকে মণিকাই হবে তার জীবনের একমাত্র সত্য।কথাটা অঞ্জনাকে জানাবার জন্য সে ফোন বার করল এমন সময় মণিকা হল্রুম থেকে ছুটে ঘরে এসে তাকে বলল,”কী ভূতের মত একা একা বসে আছো?চল সবাই আমাদের খুজছে।“
“তাই? একটু ওয়েট কর আমি আসছি।“
“কোন ওয়েট নয়।উপলক্ষ্য আমরা আর আমরাই চোখের আড়ালে থাকব তাই কখনো হয়? চল, সবাই বলছিল আমাদের একটা কাপল ডান্স দেখবে।চল,চল।“
“আমি আর ডান্স!পাগল নাকি।“
“চল তো।“
প্রদীপ্ত কে জোর করে ধরে নিয়ে যায় মণিকা।
প্রচুর আনন্দ হুল্লোড় আর এলাহি খাওয়াদাওয়ার শেষে বাড়ি ফেরার পালা।আত্মীয় স্বজনরা অনেকেই বেরিয়ে গেছে,প্রদীপ্তর বাবা মা আর মণিকার বাবা মা গাড়ি করে আগেই ফিরে গেছেন প্রদীপ্তদের ফ্ল্যাটে।তারা একদিন থাকবেন।প্রদীপ্ত আর মণিকা যখন গাড়ি করে বাড়ির পথে রওনা দিল তখন প্রায় সাড়ে বারোটা।সারাদিনের পরিশ্রমে মণিকা ক্লান্ত, প্রদীপ্তর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল সে। তখন প্রদীপ্ত চুপিচুপি ফোন বার করল।অঞ্জনা সেনকে সে লিখল,
“তুমি আমায় দুঃসময়ে সাথ দিয়েছো সেজন্য অশেষ ধন্যবাদ।কিন্তু তোমাকে জানাতে বাধ্য হচ্ছি,আমার জীবনবৃত্তে আমি এখনো অতটাও একা হয়ে পড়িনি।মণিকা এখনো আমায় আগের মতই ভালোবাসে আর আমার বিশ্বাস সে ভবিষ্যতেও আমাকে একইভাবে ভালোবাসবে।তাই আমার দিক থেকে আর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখা সমীচিন নয়।এই হয়তো আমাদের শেষ কথা।ভালো থেকো,ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভকামনা রইল।“লিখে সে ব্লক করে দেয় অঞ্জনাকে। বুক থেকে একটা চাপা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল প্রদীপ্তের।পাশে দেখল মণিকার মাথাটা তার কাঁধ থেকে পিছলে যাচ্ছে।পরম আদরে ডানহাত দিয়ে মণিকাকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিল সে।
এই ঘটনার খানিকটা বাকি আছে।পরদিন সকাল সকাল অফিস বেরিয়ে গিয়েছিল প্রদীপ্ত।আজ আর কোন সংশয় নিয়ে নয়,বরং কপালে মণিকার স্নেহমাখা চুম্বন মেখে রওনা হয়েছিল সে।
”তোমার দেবর সম্রাটটির কথা তো বেমালুম ভুলে গেছিলাম,আমাকে লুকিয়ে তলে তলে এত কিছু করেছে, বাগে পেলে আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।“বলে হেসেছিল প্রদীপ্ত।
“দেখ আজ অফিসে পাও কিনা। যা ডুব মারতে ওস্তাদ, তোমার মুখেই তো শুনি।“মণিকা বলেছিল।
এখন বিকেলবেলা।বিছানা থেকে গায়ের অবিন্যস্ত কাপড়টাকে ঠিক করতে করতে উঠে এলেন অঞ্জনা সেন।পাশে ডাঃ অনুপম সেন এখনো অকাতরে ঘুমোচ্ছেন। সাবধানে তার গায়ে একটা চাদর বিছিয়ে দিল অঞ্জনা।
বারান্দায় এসে দাঁড়াল অঞ্জনা। পাঁচটা বাজে, সূর্য ক্রমশ পশ্চিমদিকে হেলে পড়েছে,একটা লাল গোল থালার মতন দেখাচ্ছে।বুক জুড়ানো বসন্ত বাতাস বইছে। অঞ্জনা একটা চেয়ারে বসল।তারপর মোবাইলটা অন করে ফেসবুক খুলল। তারপরে প্রদীপ্তকে মেসেজ করতে গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেল সে।কিছুতেই প্রোফাইল ওপেন হচ্ছে না,মেসেজ করা যাচ্ছে না। শুধু লাস্ট একটা মেসেজ প্রদীপ্তর কাছ থেকে এসেছে সেটা দেখতে পায় সে।পড়ে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে বসে রইল সে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল অঞ্জনা।শরীর টা হঠাত করেই যেন ভারী হয়ে গেছে,প্রচন্ড অবসন্ন লাগছে।ধীরে ধীরে সে ডাইনিং রুমের ভিতর এসে ঢুকে আয়নাটার সামনে দাড়াল।সন্ধ্যা নেমে আসছে, ঘরের জানালাগুলো বন্ধ তাই আয়নায় কাউকে দেখা গেল না।ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে অঞ্জনা ঘরের আলোটা জ্বালল।
এখন সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। একবার আয়নার দিকে তাকাল সে,একটা ক্রূর হাসি ফুটে উঠল তার মুখে।ধীরে ধীরে আয়নার ভিতর অঞ্জনা সেনের মৃত্যু ঘটল,তার জায়গায় প্রতীয়মান হয়ে উঠলেন মণিকা চক্রবর্তী।ফেসবুক প্রোফাইলটার কাজ শেষ,আর ওটার কোন প্রয়োজন নেই।মিসেস সেন এসে পড়বেন যে কোন মুহূর্তে,প্রদীপ্তর ও ফেরার সময় হল।এবার এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।