AYAN DEY

Horror

0.8  

AYAN DEY

Horror

সময়ের ষড়যন্ত্র​

সময়ের ষড়যন্ত্র​

7 mins
1.0K


“ রৌণক , আমায় বাঁচা , আমায় বাঁচা ... ” আতঙ্কে চিৎকার করে উঠে ধড়ফড়িয়ে খাটের উপর বসে পড়ল মিত্রজিৎ | প্রচন্ড ঘামতে ঘামতে গেলাস এর জলটা হাতে তুলে নেয় | প্রিয়া কে যেন আর কিছু জানাতে না হয় তাই শেষ পর্যন্ত আর আলোটাও জ্বাললো না |

গত কয়েকদিন ধরেই ঘুমের মধ্যে একটা স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে | সে যেন চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে আর অনতিদূরেই তার বন্ধু রৌণক দাঁড়িয়ে | আজ বসার ঘরে সোফাতে ঘুমিয়ে পড়ায় প্রিয়া আর তাকে ডাকেনি কারণ সে জানে গত কিছুদিন ধরে রৌণক এর কথা ভেবে ভেবে সত্যিই মিত্রজিতের ঘুম হচ্ছে না | উপরন্তু ,প্রিয়া মেয়েটিকে মিত্রজিৎ এখনো বুঝে উঠতে পারছে না | আসলে পরশুদিন থেকে মিত্রজিতের জীবনটা কিরকম হয়ে গেছে তা সে নিজেই বুঝতে পারছে না | ব্যাপারটা বুঝতে গেলে আমাদের জানা দরকার সেদিনকার ঘটনাটা |


31 শে ডিসেম্বর কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাবার প্ল্যান করছিল মিত্রজিৎ আর রৌণক | তবে কিছুতেই ভেবে উঠতে পারছিল না ঠিক কোথায় যাওয়া যায় দুদিনের জন্য |

28 শে ডিসেম্বর 2018

বিবিসি নিউজ শুনছিল মিত্রজিৎ | ডাইরেক্ট টেলিকাস্ট না হলেও সেদিন তার খবরটাই তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভিডিও হিসেবে আপলোড করা ছিল | অফিস থেকে ফেরার পথে বাসে বসে মিত্রজিত একটি বিশেষ খবরে আকর্ষিত হয়ে পাশে বসা রৌণককে সেটা শুনতে বলে | খবরটা খোদ ভারতবর্ষে একটি ঘটনা বিষয়ে | ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাঁচি শহরের একটি বিখ্যাত আকর্ষণ হল হুড্রু জলপ্রপাত | সুবর্ণরেখার উপর অবস্থিত এই জলপ্রপাত দেখতে প্রতিবছর বহু পর্যটক এর সমাগম হয় | এই বছরও প্রচুর পর্যটক এর সমাগম হয়েছে প্রতিটি মাসে | তবে সুবর্ণরেখার পাড় বরাবর হুড্রু জলপ্রপাত এর নিকটবর্তী একটি জায়গায় গত দু মাসে 7 জন লোক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় একটি শান্ত পরিবেশে শোরগোল পড়ে গেছে | সুবর্ণরেখা নদীর নামকরণ এর সঙ্গে সাদৃশ্য আছে জায়গাটির বৈশিষ্ট্যের কারণ এর বালিকণা তে সোনা পাওয়া গেছে | নদীর উৎস স্থল এর কাছাকাছি পিসকা নামে একটি গ্রামে সোনার খনি থাকায় এমনটা সম্ভব হয়েছে বলে অনেকের মতামত | প্রথম ঘটনাটা ঘটেছিল এই বছর পুজোর সময় রঙ্গনাথন বলে একজন ভুবিশারদ এই নদীর জলের প্রকৃতি পরীক্ষা করতে এসেছিলেন | ওনার যে ডায়েরিটি হোটেলের ঘরে পাওয়া গেছে , তাতে উনি লিখেছেন যে , হুড্রু থেকে দু কিলোমিটার এর মধ্যে একটি অঞ্চলে নদীর বৈশিষ্ট্য আশ্চর্য রকম ভাবে আলাদা হয়ে গেছে নদীর বাকি অংশের থেকে | যে নদীর জলে এখনো স্বর্ণ কণা পাওয়া যায় সেই নদীর জলের ওই অংশে এবং তার দশ হাতের মধ্যে কোন স্বর্ণ কণা নেই | এমনকি তার বিশিষ্টতাও নষ্ট হয়েছে | তিনি পরীক্ষা করে দেখেছেন ওই অংশে জৈব বৈচিত্র বলতে যা বোঝায় তার বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই | যদিও পরিবেশ দূষণের ফলে বিগত কিছু বছরে নদীর চরিত্র হনন হয়েছে তবে তার মানে এই নয় যে তার সমস্ত জৈব বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার মধ্যে থাকা স্বর্ণকণা বিলুপ্ত হয়ে যাবে |

সম্ভবত এই কারণের জন্য অনুমান করা যায় তিনি নদীর ওই অংশে পা রেখে তার তলদেশ পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন আর কোন অজ্ঞাত কারণে ওই ব্যক্তিকে তারপর থেকে খুঁজে পাওয়া যায় না | এই ঘটনার বেশ কিছুদিনের মধ্যেই পরপর 6 জন বৈজ্ঞানিক বা গবেষক যাই বলা হোক না কেন , নিখোঁজ হয়ে গেছেন ওই একই অঞ্চলে | বলা বাহুল্য , রঙ্গনাথনের পর প্রত্যেককেই সাবধান করা হয়েছে নদীর অংশে না যাওয়ার জন্য | কিন্তু লোকচক্ষুর আড়ালে বিপদ সীমা লংঘন করে সকলেই ওই অংশে পা ফেলার চেষ্টা করেছেন এবং নিখোঁজ হয়েছেন | পুলিশ এখন সতর্ক হয়ে জায়গাটিকে ঘিরে ফেলেছে তবে এখনও পর্যন্ত ঘটনার কূলকিনারা কেউ করতে পারেনি | বিষয়টিকে এখনো লোকাল নিউজে বার করতে নিষেধ করা হয়েছে কারণ এ বিষয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াতে বেশিক্ষণ নয় |

সবটা শুনে রৌণক বলে , “ চল ভাই মিত্রজিৎ একবার জায়গাটা ঘুরে দেখে আসা যাক , ছোটখাটো আউটিং হয়ে যাবে | ”

মিত্রজিৎ বলে , “ আমি এমন প্রস্তাবই আশা করেছিলাম ভাই তোর থেকে | নিশ্চয়ই যাওয়া যেতে পারে | ”

রৌণক বলে , “ তাহলে 30 তারিখ বেরিয়ে পড়ি ?”

মিত্রজিৎ বলে , “ একদম | ”

30 শে ডিসেম্বর 2018

কোনরকম বুকিং না করেই ওরা দুজনে বেরিয়ে পড়ে রাঁচির উদ্দেশ্যে | বেশ মজা করতে করতে , প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ওরা গন্তব্যস্থলের দিকে এগোতে থাকে |

মিত্রজিৎ সমস্তকিছুকে ফ্রেমবন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে |

রৌনক মজা করে একবার বলে সালে , “ ভালো করে তোল মিত্রজিৎ সব ছবিগুলো বৌদিকে দেখাতে হবে তো | ”

মিত্রজিৎ বলে , “ ধুর হতভাগা আমি কবে বিয়ে করলাম ? যেই শুনেছিস মা আমার জন্য পাত্রী দেখছে অমনি শুরু করে দিয়েছিস ! আমি তো প্লেন বলে দিয়েছি কোন পাত্রী দেখতে আমি যাব না | ”

রৌণক বলে , “ কিন্তু ভাই মিত্রজিৎ , তুই না চাইলেও কাকিমা তো এখন তোকে বিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন | আর ভাই একদিন যখন করতেই হবে করেই ফেল এখন | আর ভাই আমি ছবি দেখেছি , তোর সাথে দারুণ মানাবে | ”

মিত্রজিৎ রেগে গিয়ে বলে , “ ও বাবা তুই ছবিও দেখে নিয়েছিস ? আমার তো মনে হচ্ছে তোর বেশি বিয়ে করার ইচ্ছে | ”

রৌণক বলে , “ ও ঠিক আছে ঠিক আছে | তো এখন ট্যুরের দিকে মন দে তো ! কবে বলতে কবে কার বিয়ে হয়ে যাবে তখন আমাদের আর এই স্বাধীন জীবন থাকবে না , তার মধ্যে ঘুরে নি | ”

দেখতে দেখতে চলে এলো রাঁচি স্টেশন |

31 শে ডিসেম্বর 2018

প্রথম দিন কয়েকটা জায়গা ঘুরে দেখার পর দ্বিতীয় দিন ওরা ঠিক করল খবরে শোনা সেই জায়গায় যাওয়ার | বিষয়টা সম্পর্কে যতটা সম্ভব গোপনীয়তা অবলম্বন করা যায় ততটা চেষ্টা করল তারা |

জায়গাটা সম্পর্কে যতটা জেনে রেখেছিল ইতিমধ্যে , তার থেকে জায়গাটা চেনায় কোন অসুবিধা হলো না তাদের | হুড্রু ফলস্ দেখতে লোক আসলেও এই অংশে পর্যটকদের দেখা গেল না |

একটা ঢিবির ওপরে দাঁড়িয়ে মিত্রজিৎ আঙুল দিয়ে একটা জায়গা দেখালো নদীর উপর | ওই জায়গাটিতে পরপর কিছু সাইনবোর্ডে লেখা আছে , “ নদীর জলে পা দেবেন না , বিপদ ঘটতে পারে | ”

মিত্রজিৎ বলল, “ একটা স্বাভাবিক জায়গা , নদীর জল নির্বিঘ্নে বয়ে যাচ্ছে সেখানে এমনকি থাকতে পারে ভাই যেখানে লোক গায়েব হয়ে যাবে ? আমার তো মনে হয় এই অঞ্চলে কোন বিশেষ রকমের ক্রাইম হচ্ছে যেটা কোন রকম খবরের চ্যানেল জানতে পারছে না | ওই 7 জন লোককে হয়তো এখনো খোঁজ করলে মিলতে পারে জীবিত কিংবা মৃত | পুলিশের অক্ষমতার কারণে কিছু গল্প বানানো হয়েছে | ”

রৌণক বলল , “ সে যা হয়ে থাকুক তুই ওই দিকে যাবি না | ”

মিত্রজিৎ বলল , “ তুই এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক | আমি চললুম | আজি প্রমাণ হয়ে যাবে বিষয়টা একটা বুজরুকি ছাড়া আর কিছু নয় | ”

রৌণক বলল , “ বাড়াবাড়ি করিস না , আমি তোকে খবরটা জানিয়েছি তাই জেনে বুঝে তোকে বিপদের মুখে ফেলে দিতে পারব না | ”

রৌনক এর কথার কোন ভ্রূক্ষেপ না করেই মিত্রজিৎ নিমেষের মধ্যে ওই জায়গায় পৌঁছে গেল | বিপদসীমা লাগানো সাইনবোর্ড তোয়াক্কা না করেই মিত্রজিৎ আরো এগোতে লাগলো | রৌণক ভয় পেয়ে ওর পেছনে পেছনে ছুটতে লাগলো এবং চেঁচিয়ে বলতে লাগলো , “ যাস না মিত্রজিৎ যাস না | ”

ততক্ষনে নদীর ওই অংশের জলে পা দিয়ে ফেলেছে মিত্রজিৎ | প্রথমটা তৃপ্তিভরে বলতে লাগলো , “ আহ কি ঠাণ্ডা জল ! আয় ভাই , কোন ভয় ... ” কথাটা শেষ হলো না মুহূর্তে তার পায়ের নিচ আলগা হতে লাগলো | মিত্রজিৎ জোর আর্তনাদ করে রৌণককে সাহায্য প্রার্থনা করতে লাগল | কিন্তু রৌণক কাছে এসে পৌঁছানোর সাথে সাথে মিত্রজিৎ অদৃশ্য হয়ে গেল |

মিত্রজিৎ নিজেকে সুবর্ণরেখার তীরে ভিজে জামা সমেত আবিষ্কার করল | চামড়ায় প্রচন্ড জ্বালা অনুভব করে সে গা ঝাড়া দিয়ে উঠলো | রৌণক এর নাম মাথায় আসতেই ওর নাম ধরে চারপাশে ডাকতে লাগলো | কোথাও পেল না | প্রচন্ড ভয় পেয়ে সে হোটেলে ফেরার চিন্তা করতে লাগলো | অনেক কষ্ট করে হোটেলের নামটা তার মনে এলো , “ দি রয়েল ” | গিয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না মিত্রজিৎ | হোটেলটার নাম ছাড়া বাকি সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে |

ঢোকার মুখে দেখতে পেল একটি মেয়ে তার দিকে “ জান জান , কোথায় গিয়েছিলে তুমি কোথায় গেছিলে ? ” বলে ছুটে আসছে |

রিসেপশনের ভদ্রলোক বললেন , “ গত তিন ঘন্টা ধরে আপনার স্ত্রী আপনাকে চারদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে | একটা খবর তো দিয়ে যাবেন অন্তত | ”

ঠিক পরমুহুর্তেই টেবিলে রাখা ক্যালেন্ডারে চোখ পড়তে মিত্রজিতের চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল | সাথে সাথে গায়ের সমস্ত রোম খাড়া হয়ে গেল | ক্যালেন্ডার এটা কি লেখা ? আজ নাকি 2033 সালের 31 শে ডিসেম্বর ?

ভদ্রলোক বললেন , “ প্রিয়া দেবী আপনার জন্য সত্যিই খুব চিন্তা করেন | ”

সিড়িতে উঠতে উঠতে ওই ভদ্র মহিলা বললেন , “ গত 15 বছরে এই প্রথমবার তুমি এমনটা করলে , কত চিন্তা জানো তোমার প্রিয়ার তোমাকে নিয়ে ? ”

মিত্রজিৎ যেন প্রচন্ড শক পেয়েছে এমনিভাবে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল সে |


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror